থ্রিজি/থার্ড জেনারেশন/তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক



(সংকেত: ভূমিকা; থ্রিজি কি; থ্রিজির উৎপত্তি; থ্রিজির সুবিধা; টুজির সাথে থ্রিজির পার্থক্য; বাংলাদেশে থ্রিজি; থ্রিজির বৈশিষ্ট্য; আসছে ফোরজি; থ্রিজির নেতিবাচক দিক; উপসংহার।)
ভুমিকাঃ তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষের জীবনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। তথ্য ও প্রযুক্তির নব আবিষ্কার মোবাইল ফোন তথা মুঠোফোন পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। এখন মানুষ পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মুহূর্তেই যোগাযোগ করতে পারে। আর মোবাইল ফোন তথা মুঠোফোনের জগতে নতুন দিক উন্মোচন করেছে থ্রিজি  তথা তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক। ফলে মানুষ কথা বলার পাশাপাশি তার ছবিও দেখতে পাচ্ছে, উন্নত গতির ইন্টারনেট সেবা নিচ্ছে। যোগাযোগ আরো সহজ করে দিয়েছে এই তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক বা থ্রিজি। মুঠোফোন জগতে থ্রিজি ঘটিয়েছে নতুন বিপ্লব।
থ্রিজি কিঃ থ্রিজি হলো থার্ড জেনারেশন (Third Genenation) এর সংক্ষিপ্ত রূপ। তারবিহীন মোবাইল নেটওয়ার্কের থার্ড জেনারেশন বা তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তিকে সংক্ষেপে থ্রিজি (3G) বলা হয়। এককথায় তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তির সেবাই থ্রিজি।
আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন সংস্থা ITU-এর সংজ্ঞানুসারে থ্রিজি হলো- ‘মোবাইল ভিডিও কল ও মোবাইল ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ট্রান্সপোর্টার নেটওয়ার্ক।’
আবার “ইউনিভার্সাল মোবাইল কমিউনিকেশন্স সিস্টেম”-এর মতে, যে নেটওয়ার্ক সেকেন্ডে কমপক্ষে ২০০ কিলোবাইট তথ্য স্থানান্তরে সক্ষম তাকেই বলা হয় থ্রিজি বা তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল টেলিকম নেটওয়ার্ক।
থ্রিজির উৎপত্তি বা থ্রিজির ইতিহাসঃ বিশ্বে জাপানই প্রথম দেশ যে সফলভাবে প্রথম থ্রিজি চালু করে ২০০১ সালের মে মাসে। ১৯৭৯ সালে জাপানে প্রথম ওয়ান জি চালু হয়। এরপর ১৯৯১ সালে ফিনল্যান্ডে টুজি প্রযুক্তি চালু হয়ার পর থ্রিজি নেটওয়ার্ক নিয়ে গবেষণা ও উন্নয়ন শুরু হয় ১৯৯২ সালে। ১৯৯৮ সালে জাপানের এনটিটি ডকোমো নামক প্রতিষ্ঠান থ্রিজি নেটওয়ার্কের কাজ শুরু করে। ২০০১ সালে সফলভাবে তারা থ্রিজি চালু করে। বর্তমানে জাপানই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে শতভাগ থ্রিজির সুবিধা রয়েছে। এরপর ২০০২ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থ্রিজি চালু করে। বর্তমান বিশ্বে ১৫৫টি দেশে থ্রিজি প্রযুক্তি সেবা চালু রয়েছে।
থ্রিজির সুবিধাঃ থ্রিজি বা তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্কের সুবিধা অনেক। সাধারণ নেটওয়ার্কের চেয়ে এখানে অনেক বেশি সুবিধা রয়েছে। যেমন, থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুঠোফোন তথা মোবাইলে ভিডিও কল করা যায়, টেলিভিশন দেখা যায়, উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পওয়া যায়। এছাড়া ই-কমার্স, ই-ব্যাংকিং, ই-শিক্ষা, ই-স্বাস্থ্য, ই-গভর্ন্যান্স ও টেলিকনফারেন্সের মতো সেবা পাওয়া যায় এই তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক তথা থ্রিজিতে।
টুজির সাথে থ্রিজি নেটওয়ার্কের পার্থক্যঃ টুজি বা টু জেনারেশন তথা দ্বিতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সুবিধা বা প্রযুক্তির সাথে থ্রিজি বা তৃতীয় প্রজন্মের প্রযুক্তির পার্থক্য অনেক। যেমন, তথ্য প্রবাহের দিক দিয়ে টুজিতে সেকেন্ডে ১৮৩ কিলোবাইট তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। অন্যদিকে থ্রিজিতে সেকেন্ডে ৪০ মেগাবাইট পর্যন্ত তথ্য আদান-প্রদান করা যেতে পারে। টুজি নেটওয়ার্কে শুধু ভয়েস কল করা যায়, কিন্তু  থ্রিজিতে উন্নত ভয়েস কলের পাশাপাশি ভিডিও কল ও ভিডিও কনফারেন্স করা যায়।
নিরাপত্তার দিক থেকে টুজির তুলনায় থ্রিজির নেটওয়ার্কের তথ্য আদান-প্রদানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশি শক্তিশালী। এছাড়া টুজি প্রযুক্তিতে মোবাইলে টেলিভিশন দেখা যায় না। থ্রিজি প্রযুক্তিতে মোবাইলে টেলিভিশন দেখা যায়। পথ নির্দেশনামূলক জিপিএস শুধু থ্রিজিতেই সম্ভব। আবার আধুনিক সব স্মার্টফোনের অনেক অ্যাপ্লিকেশন থ্রিজি ছাড়া চলে না।
বাংলাদেশে থ্রিজিঃ সার্কভুক্ত ৮টি দেশের মধ্যে শ্রীলংকা ও ভারতের পর তৃতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশে শুরু হয় থ্রিজি প্রযুক্তির সেবা। ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মোবাইল অপারেটর কোম্পানি টেলিটক এটি চালু করে। এরপর ২০১৩ সালের ৮ সেপ্টেম্বর আরো ৪টি মোবাইল অপারেটর কোম্পানিকে থ্রিজি চালুর অনুমতি দেয়া হয়। আর এই মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো হচ্ছে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক ও এয়ারটেল। বর্তমানে বাংলাদেশে থ্রিজি নেটওয়ার্কের জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বাংলাদেশে প্রায় ৯ কোটির মতো মোবাইল ফোন গ্রাহক রয়েছে। আর এসব গ্রাহকদের কাছে উত্তমসেবা তথা তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো।
থ্রিজি প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্যঃ তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক তথা থ্রিজির অনেকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (আইটিইউ) থ্রিজি প্রযুক্তির ৬টি বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছে। এগুলো হলো-
(১) কম্পাটিবিলিটি বা সুসঙ্গত
(২) ফ্লেক্সিবিলিটি বা নমনীয়তা
(৩) অ্যাপোরডাবিলিটি বা বহনযোগ্যতা
(৪) মডুলার ডিজাইন
(৫) হাই ডাটারেটস বা উচ্চ গতির ডাটা
(৬) এবং সিকিউরিটি তথা নিরাপত্তা ব্যবস্থা
আসেছে ফোরজিঃ ২০০১ সালে কয়েকটি দেশে চালু হয়েছে LTE (Long Term Evolution)| এটিকেই ফোরজি প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এটি চালু হলে মোবাইল নেটওয়ার্ক জগতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে যাবে। এর ফলে ইন্টারনেটের গতি বহুগুণ বেড়ে যাবে। এখানে সেকেন্ডে ২ মেগাবাইট থেকে ৪০ মেগাবাইট পর্যন্ত গতিতে তথ্য আদান-প্রদান করা যাবে। থ্রিজি তরঙ্গ বরাদ্দের লাইসেন্স দিয়েই মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো ফোরজি প্রযুক্তি বা LTE সেবা দিতে পারবে এবং এজন্য আলাদা কোনো লাইসেন্স নিতে হবে না।
থ্রিজির নেতিবাচক দিকঃ সবকিছুর ভালোমন্দ কিছু দিক রয়েছে। তেমনি থ্রিজি প্রযুক্তিরও কিছু মন্দ দিক রয়েছে। যেমন- উচ্চগতির ইন্টারনেট সুবিধার ফলে ছেলেমেয়েরা মোবাইল ফোন নিয়ে সময় বেশি কাটাবে, বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সাইট যেমন ফেসবুক, টুইটার, মাইস্পেস, ব্লগ এসবে সারাক্ষণ মেতে থাকতে চাইবে। রাত জাগার প্রবণতা বাড়বে, যা পড়াশুনার ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এছাড়া অশ্লীল ভিডিও বা পর্ণ ছবির প্রতিও আসক্ত হতে পারে। এছাড়া থ্রিজি প্রযুক্তিসম্পন্ন স্মার্টফোনগুলো দামও অনেক বেশি সাধারণ মোবাইলের চেয়ে। থ্রিজি প্রযুক্তির প্রধান সীমাবদ্ধতা হলো এটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক ব্যান্ড ব্যবহার করে না। ফলে দুর্গম স্থানে এ সেবা দেয়া তুলনামূলক কঠিন।
উপসংহারঃ বর্তমান বিশ্ব হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। মানুষ এখন পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে লোকজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারছে তথ্য ও প্রযুক্তির কল্যাণে। আর তথ্য ও প্রযুক্তির বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো মোবাইল ফোন তথা মুঠোফোন। মুঠোফোন সারাবিশ্বকে বদলে দিয়েছে। থ্রিজি প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ আরো সহজভাবে যোগাযোগ করতে পারছে তাদের প্রিয়জনদের সাথে। কথা বলার পাশাপাশি তাদের ছবি দেখা, টেলিভশন দেখা, উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবাসহ নানারকম সব অত্যাধুনিক সেবা দিচ্ছে এই থ্রিজি তথা তৃতীয় প্রজন্মের নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই এই প্রযুক্তির সেবার ক্ষেত্রে।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]