দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলন / সমাজ জীবনে দুর্নীতি / দুর্নীতি উন্নয়নের অন্তরায়/ দুর্নীতি ও বাংলাদেশ /দুর্নীতি ও তার প্রতিকার



(সংকেত: ভূমিকা, দুর্নীতির প্রভাব, সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা, প্রারম্ভিক পদক্ষেপ মাত্র, রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন, আইনের শাসন, প্রশাসনে সংস্কার, বহুমুখী স্থায়ী উদ্যোগ, উপসংহার)
ভূমিকা
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং সর্বস্তরে, বিশেষ করে রাজনীতি ও নির্বাচনে দুর্নীতি ও কালো টাকার প্রভাব দূরীকরণের পথে অভূতপূর্ব প্রতিশ্রুতি, সম্ভাবনা ও প্রত্যাশার দুটি বছর ২০০৭ ও ২০০৮। উন্নয়ন, গণতন্ত্র, সুশাসন ও সমাজ পরিবর্তনের পথে অন্যতম অন্তরায় যে দুর্নীতি, একে কার্যকরভাবে চ্যালেঞ্জ করে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের অঙ্গীকার ও প্রয়াস জনমনে বিপুল প্রত্যাশার সৃষ্টি করেছিল। যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, তাদের বিচার প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে দেশে এই প্রথমবারের মতো উদ্যোগ এবং বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছিল।
দুর্নীতির প্রভাব
দুর্নীতি বাংলাদেশের এক অন্যতম জাতীয় সমস্যা। দুর্নীতি দারিদ্র্য ও অবিচার বাড়ায়। দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের সুবিধাবঞ্চিত, দরিদ্র, ক্ষমতাবলয়ের বাইরের জনগোষ্ঠী। দুর্নীতি উন্নয়নকে ব্যাহত করে, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে। দুর্নীতি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক। দুর্নীতি সমাজে অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য বাড়ায়। দুর্নীতি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিকে দুর্বল করে।
দুর্নীতির ব্যাপকতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বাংলাদেশের জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় শতকরা তিন ভাগ বেশি হতে পারত। শুধু নিম্নতর পর্যায়ে সরকারি সেবামূলক খাতে ঘুষের ব্যাপকতার ফলে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু গড় আয়ের প্রায় চার ভাগ ক্ষতি হয়। এ ধরনের ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাবের পাশাপশি মূলত দুর্নীতির কারণে এবং অনেকাংশে নির্বিঘ্নে দুর্নীতি করার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করে একধরনের ‘অপরাধবৃত্তির সংস্কৃতি’ প্রতিষ্ঠিত করতে গণতন্ত্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছিল বা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করে সেগুলো নির্বিচারে অকার্যকর করে রাখা হয়েছিল।
জাতীয় সংসদ, বিশেষ করে সংসদীয় কমিটি থেকে শুরু করে নির্বাচন কমিশন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, বিচার বিভাগ, প্রশাসন, সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ যেসব প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় একটি সুশাসিত গণতান্ত্রিক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হওয়ার কথা ছিল, সেগুলো আমরা অকার্যকর হতে দেখেছি।
সম্ভাবনা ও প্রত্যাশা
সেই পরিপ্রেক্ষিতে দেশে প্রথমবারের মতো যখন সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দুর্নীতি প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট প্রত্যয় ঘোষণা এবং তা বাস্তবায়নে আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার-প্রক্রিয়া শুরু হয়, তখন ব্যাপক জনসমর্থন ও প্রত্যাশার সঞ্চার হয়। এবং বাস্তবে এ ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক ইতিহাস ও অভিজ্ঞতার বিবেচনায় অভূতপূর্ব কিছু মৌলিক পরিবর্তনের উদ্যোগ গৃহীত হয়। এর মধ্যে একদিকে যেমন দুর্নীতিকে তা যে পর্যায়েই ঘটে থাকুক-একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস, অন্য দিকে বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার বাংলাদেশে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। বিচার বিভাগ পৃথককরণ, নির্বাচন কমিশন ঢেলে সাজানো, পরবর্তী সময়ে কমিশনের উদ্যোগে নির্বাচনী আইনের ব্যাপক সংস্কার ও কমিশন সচিবালয়ের স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণের উদ্যোগে, দুর্নীতি দমন কমিশনের নেতৃত্বের পরিবর্তনসহ আইনের কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইতিবাচক সংস্কার, সরকারি কর্মকমিশনের সংস্কার, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী সনদে বাংলাদেশের অনুস্বাক্ষর, চট্টগ্রাম বন্দরসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক দুর্নীতি প্রতিরোধক অভিযান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন গঠনে অগ্রগতি, জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি ঘোষণা এবং সর্বোপরি তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ-এগুলো শুধু দুর্নীতি প্রতিরোধে নয়, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের কাঠামোগত ভিত্তি সুদৃঢ় করতে ইতিবাচক পরিবর্তনের ভূমিকা করেছে।
প্রারম্ভিক পদক্ষেপ মাত্র
প্রশ্ন হচ্ছে, এই যে ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা সূচিত হয়েছিল, এর প্রাপ্তি কী, আর এর ভবিষ্যতই বা কী? বাংলাদেশে সর্বস্তরে দুর্নীতির যে বিস্তৃতি, এর পরিপ্রেক্ষিতে কোনো একটি সরকারের উদ্যোগে-তা যত শক্তিশালী ও অঙ্গীকারবদ্ধই হোক না কেন- স্বল্প মেয়াদে, অর্থাৎ দু-চার বছরে, ব্যাপকভাবে তা নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে, এমন আশা করা অমূলক। বস্তুত এক-এগারোর পরিবর্তনের পরও বাংলাদেশে দুর্নীতির ব্যাপকতা ও গভীরতা অব্যাহতই রয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার প্রক্রিয়া, বিশেষ করে যে নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে শীর্ষস্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের  কারাগারে পাঠানো হয়েছে, দীর্ঘদিন জামিন নামঞ্জুর করা হয়েছে, এবং অনেকটা একই নাটকীয়তায় আবার প্যারোল/জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে, এর ফলে সত্যিকার অর্থে আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেওয়া হলো কি না, অন্য কথায় ক্ষমতার অপব্যবহারের বিচার করতে ক্ষমতারই অপব্যবহার করা হলো কি না-এরূপ মৌলিক বিতর্কের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, যা দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের ভবিষ্যতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে বাধ্য। তবে আশাবাদী হিসেবে এটুকু বলা যায়, মামলাগুলো বিচারাধীন রয়েছে, এবং অন্তত এই বার্তাটুকু পরিষ্কার হয়েছে যে দুর্নীতি করলে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে।
দুর্নীতি প্রতিরোধে কোনো সংক্ষিপ্ত পন্থা নেই। দুর্নীতি প্রতিরোধ একটি দীর্ঘমেয়াদি ও বহুমুখী প্রক্রিয়া, যার প্রারম্ভিক পদক্ষেপ মাত্র গৃহীত হয়েছে বলা যায়। একে লালন করে দেশে একটি স্থায়ী ও কার্যকর দুর্নীতি প্রতিরোধক পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব সবার, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দল, সরকার প্রশাসন, গণতন্ত্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম, সুশীল সমাজ তথা দেশের সর্বস্তরের জনগণের যৌথ ও সমন্বিত প্রয়াস।
রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন
এই বহুমুখী প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যাদের নিতে হবে, তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দল। পৃথিবীর কোনো দেশেই দুর্নীতি প্রতিরোধ বা সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয় নি যতক্ষণ রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সদিচ্ছা, অঙ্গীকার ও সত্যিকারভাবে কার্যকর দুর্নীতিমুক্ত রাজনৈতিক নেতৃত্বের অভ্যুদয় না ঘটেছে। এক-এগারোর পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক সংস্কারের ওপর ব্যাপক ও বহুমুখী আলোচনা এবং উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ এমন একটি গুণগতভাবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক হবে বলে জনগণের প্রত্যাশা, যার ফলে বাংলাদেশে দুর্নীতিমুক্ত, স্বচ্ছ ও জনগণের কাছে দায়বদ্ধ সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু রাজনীতিতে যে গুণগত পরিবর্তনের প্রত্যাশা, যার মাধ্যমে রাজনীতিতে দুর্নীতি আর কালো টাকার প্রভাব প্রশ্রয় পাবে না, রাজনীতিকে যেকোনো মূল্যে ক্ষমতার উচ্চশিখরে পৌঁছানোর পুঁজি হিসেবে আর বিবেচনা করা হবে না; যে রাজনীতি হবে গঠনমূলক, ধ্বংসাত্মক নয়; যে রাজনীতি গণতন্ত্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর করবে না; যে রাজনীতি এক-এগারোর শিক্ষাকে গ্রহণ করে সূচিত পরিবর্তনসমূহের ইতিবাচক সম্ভাবনাকে লালন করে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে- তার আগমন হবে কি, কখন হবে, কীভাবে হবে- তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করবে দুর্নীতি প্রতিরোধে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। এক্ষেত্রে এটা খুব সহজেই ভাবা যায়, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে সূচিত পরিবর্তনসমূহ ব্যাপকভাবে হোঁচট খেতে পারে; কিন্তু আমরা আশাবাদী। কারণ, রাজনৈতিক নেতৃত্বই বাংলাদেশের সবচেয়ে গৌরবময় অর্জন, স্বাধীনতাসহ সব ইতিবাচক পরিবর্তনের কর্ণধার। তাঁরা আরো একবার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসিত সমাজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন, তাঁদের কাছে জনগণের এ প্রত্যাশাইতো স্বাভাবিক।
আইনের শাসন
দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের ভবিষ্যৎ-ভাবনায় দ্বিতীয় যে ক্ষেত্রটি জরুরি, তা হলো দুর্নীতিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যে প্রয়াস তার প্রক্রিয়াগত ও বিষয়বস্তুগত স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা ও জনমনে গ্রহণযোগ্যতা। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়- এ চিরন্তন সত্যটি প্রতিষ্ঠা করতে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আইনকে তার নিজস্ব প্রক্রিয়ায় চলতে দেওয়া। এক্ষেত্রে কোনো রকম বিচ্যুতি দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের গ্রহণযোগ্যতাকে বিনষ্ট করবে, যা হবে অতীব দুর্ভাগ্যজনক। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, বিশেষ করে বিচার বিভাগের সত্যিকার কার্যকর স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা ছাড়া কোনো সংস্কার-প্রক্রিয়াই কার্যকর হবে না।
প্রশাসনে সংস্কার
তৃতীয় যে ক্ষেত্রটি দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রমের ভবিষ্যৎ নিরূপণে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব বহন করবে, তা হলো সরকার ও প্রশাসনযন্ত্র  তথা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সরকারি অর্থে পরিচালিত সংস্থাসমূহের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কর্ণধারদের ভূমিকা। স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, যোগ্যতাসম্পন্ন প্রশাসন ও সরকারি খাত যেকোনো দেশে দুর্নীতি প্রতিরোধক পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। পৃথিবীর যেসব দেশে সাফল্যের সঙ্গে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে, তাদের অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। সরকারি বেসরকারি সব খাতের দুর্নীতি বিস্তারের বিষয়টি বিশ্লেষণ করলে মূলত দুই ধরনের মৌলিক কারণ দৃষ্টিগোচর হয়। এক. প্রয়োজনতাড়িত দুর্নীতি; দুই. লোভতাড়িত দুর্নীতি। অবশ্য একটি  থেকে অপরটি পৃথক করা প্রায় অসম্ভব। কারণ প্রয়োজনভিত্তিক অনিয়ম রূপান্তরিত হয়ে লোভভিত্তিক পর্যায়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তা সত্ত্বেও প্রশাসনসহ সরকারি অর্থে পরিচালিত খাতে বেতন-ভাতার যথার্থতা ও পর্যাপ্ততা নিশ্চিত না করে এ খাতে দুর্নীতি দূর করার প্রত্যাশা অবাস্তব।
এক দিকে নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম ও রাজনৈতিক প্রভাব দূর করার নিশ্চয়তা, সেই সঙ্গে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুবিধার বাস্তববর্জিত চিত্রের পরিবর্তন না করলে দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম কখনোই সরকারি খাতে কার্যকর করা সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে শুধু মহার্ঘ ভাতার মতো সাময়িক সমাধানের ঊর্ধ্বে গিয়ে ব্যাপক ও বহুমুখী সংস্কার প্রয়োজন। সরকারি খাতে সুষম ও বহুমুখী ইতিবাচক সংস্কার-ব্যবস্থাবলি বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই কেবল দুর্নীতি প্রতিরোধে গৃহীত অন্যান্য পদক্ষেপের দীর্ঘমেয়াদে সাফল্য অর্জন সম্ভব। আবার, শুধু বেতন-ভাতার ওপর নির্ভর করে প্রশাসনে বা সরকারি খাতে অনিয়ম দূর করা সম্ভব নয়। প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে কঠোরভাবে বাস্তবায়নযোগ্য নৈতিক আচরণবিধি ও দুর্নীতি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আচরণবিধির যেকোনো রকম লঙ্ঘন বা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি প্রক্রিয়ায় যথাযোগ্য শাস্তির নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে।
বহুমুখী স্থায়ী উদ্যোগ
দুর্নীতি শুধু সরকারি খাতেই হয় না, বেসরকারি খাতেও ব্যাপক দুর্নীতি প্রসারের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়। তা ছাড়া সরকারি খাতের দুর্নীতিতেও বেসরকারি খাত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে। সরকারি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কখনোই পুরোপুরিভাবে সম্ভব হবে না, যদি বেসরকারি খাতে একইভাবে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়।
দুর্নীতি প্রতিরোধে চাই বহুমুখী ও দীর্ঘমেয়াদে স্থায়ী উদ্যোগ। দুর্নীতি দমন কমিশনের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ এর স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতার স্বাক্ষর সুপ্রতিষ্ঠিত করা। মনে রাখতে হবে, দুর্নীতি প্রতিরোধ করা দুর্নীতি দমন কমিশনের একক দায়িত্ব বা এখতিয়ার নয়। বস্তুত পৃথিবীর অনেক দেশেই সাফল্যের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে পৃথক দুর্নীতি দমনকারী প্রতিষ্ঠান ছাড়াই। যদি প্রশাসন দুর্নীতিমুক্ত না হয়, যদি বিচার বিভাগ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকর না হয়, যদি জাতীয় সংসদের স্থায়ী কমিটিগুলো অকার্যকর থাকে, তবে দুর্নীতি দমন কমিশন যত শক্তিশালী হোক না কেন দুর্নীতি প্রতিরোধ সুদূরপরাহতই থেকে যাবে।
উপসংহার
দুর্নীতি দমনে একইভাবে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে গণমাধ্যম, তথ্যের অবাধ প্রবাহ আর সেই সঙ্গে সার্বিকভাবে দুর্নীতিবিরোধী জনমত। তথ্যের গোপনীয়তা ক্ষমতার অপব্যবহারের অন্যতম মাধ্যম; তাই দুর্নীতি প্রতিরোধে সাফল্যের পূর্বশর্ত সরকার কর্তৃক অতিসম্প্রতি প্রণীত তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন। সর্বোপরি, দুর্নীতি প্রতিরোধে দেশের সাধারণ মানুষের ভূমিকাও অপরিসীম। জনগণের ব্যাপক সচেতনতা ও দুর্নীতিবিরোধী চাহিদা এবং তার ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক নেতা, সরকার, প্রশাসন ও গণতন্ত্রের মৌলিক প্রতিষ্ঠানসমূহের যথাযোগ্য কার্যকর ভূমিকার মাধ্যমেই কেবল একটি দুর্নীতিমুক্ত ও সুশাসিত গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রগতি সম্ভব।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]