(সংকেত: ভূমিকা, বঙ্গবন্ধুর জন্ম, ছাত্রজীবন ও ছাত্র আন্দোলন, রাজনীতি ও কারাবাস, স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু, ১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ড, অবশেষে খুনি চক্রের বিচার, উপসংহার)
ভূমিকা
১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়। পলাশীর ওই যুদ্ধে মীর জাফর সিরাজদৌলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইংরেজদের পক্ষে চলে যায়। পলাশীর আম্রকাননে সিরাজদৌলার পক্ষে লড়াই করে দুই বীর মীর মদন ও মোহন লাল জীবন দেয়। ব্রিটিশদের প্রায় দু’শো বছরের শাসনে অসংখ্য ত্যাগী সংগ্রামী বিপ্লবী বাঙালি ব্রিটিশের কারাগারে অথবা ওদের ফাঁসির দড়িতে ঝুলে জীবন দিয়ে স্বাধীনতার সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়েছে। এরপরে ব্রিটিশরা এদেশ থেকে চলে যায় কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে পশ্চিম পাকিস্তানের হাতে আবার বাঙালিরা শাসন শোষণের শৃঙ্খলে বন্দি হয়। কিন্তু বাঙালিরা পরাধীন হয়ে বসে থাকে নি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছে। ওই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই বাঙালি তার ইতিহাসে এক কালজয়ী নেতার জন্ম দিয়েছে যিনি কখনো পাকিস্তানের জুলুমের কাছে মাথা নত করেন নি। আপোসহীন লড়াই করেছেন বাঙালির প্রিয় স্বাধীনতার জন্য। ২৪ বছরের সংগ্রামের বিশাল পথে ওই মহান নেতা নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনিই বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের মহান নেতা বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যার নেতৃত্বেই দুনিয়ার ইতিহাসে আর একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয় তার নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নামের সাথে, ইতিহাসের সাথে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মিশে আছে। যেমন আছে- রাশিয়ায় ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন। আমেরিকায় আব্রাহাম লিংকন। ভিয়েতনামে হো চি মিন। চিনে মাও সে তুঙ। তুরস্কে কামাল আতাতুর্ক। যুগোশ্লাভিয়ায় মার্শাল টিটো। ভারতবর্ষে মাহত্মা গান্ধী। দক্ষিণ আফ্রিকায় নেলসন ম্যান্ডেলা। কিউবায় ফিদেল ক্যাস্ট্রো, ফিলিস্তিনে ইয়াসির আরাফাত। এই মহান ব্যক্তিরা ইতিহাসের বাঁক ঘুরে ঘুরে কালকালান্তর মানুষের সাথে থাকবেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম
গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা শেখ লুৎফর রহমান, মা সাহেরা খাতুন।
ছাত্রজীবন ও ছাত্র আন্দোলন
বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ থেকে স্কুল জীবন শেষ করে কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৭ সালে ওই কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। শেখ মুজিব ছাত্রজীবন থেকেই তৎকালীন মুসলিম লীগ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই রাজনীতির পথ ধরেই তিনি ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন।
১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিম্ন বেতনভুক্ত কর্মচারীদের সমর্থনে ছাত্র আন্দোলন গড়ে তুলেন। ওই আন্দোলনের কারণে শেখ মুজিব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হন।
রাজনীতি ও কারাবাস
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সারা জীবনই ছিল আপোসহীন রাজনীতি আর এজন্য তাকে অসংখ্যবার কারা বরণ করতে হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হলে শেখ মুজিব যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৫৪ সালে তিনি পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদ ও ১৯৫৫ সালে গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পূর্ব পাকিস্তান সরকারের দুইবার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি হলে শেখ মুজিব গ্রেফতার হন। ১৯৫৯ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেও তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়।
স্বাধীনতা যুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ এক অভিন্ন ইতিহাস। বঙ্গবন্ধুর ডাকে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেন। ত্রিশ লক্ষ মানুষ শহীদ হন। জীবনের বিনিময়ে বাঙালিরা স্বাধীনতা অর্জন করেন। বঙ্গবন্ধু স্বাধীন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
১৯৭৫ সালের হত্যাকাণ্ড
স্বাধীন বাংলাদেশে দুষ্কৃতিকারী কিছু সংখ্যক সামরিক আমলা, ক্ষমতালোভী দেশ বিরোধীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে কালো অধ্যায়ের ভূমিকা করা হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড কেবল ব্যক্তি মুজিবকে হত্যা করে নি। এটি ছিল একটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। যার মাধ্যমে একটি রাজনৈতিক দর্শনকে নিশ্চিহ্ন করবার আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত ছিল। একাত্তুরের পরাজিত রাজাকার আলবদর, পরাজিত পাকিস্তান এবং সাম্রাজ্যবাদের নীল নকশায় ইতিহাসের এই জঘন্যতম নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র বিরোধী রাষ্ট্র কায়েম করে।
অবশেষে খুনি চক্রের বিচার
সেনা শাসক জিয়া ক্ষমতার মসনদে বসে পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের বিচার মানবতা বিরোধী ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করে দেয়। জাতীয় আন্তর্জাতিক দাবির প্রেক্ষিতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে ওই কালো আইন বাতিল করে বিচারের পথ খুলে দেয়। হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর মামলা করা সম্ভব হয়। তের বছর মামলা চলে। আদালত ১৫ জনের ফাঁসির আদেশ দেয়। হাইকোর্টে আপিল করলে ১৯ নভেম্ভর ২০০৯ তারিখে রায় বহাল রাখে। চৌত্রিশ বছর পর জাতির জনক হত্যকাণ্ডের বিচারের রায়ে প্রমাণিত হলো ওটি ছিলো জঘন্যতম অপরাধ।
উপসংহার
মহাকাল ধরে বাঙালি তথা বাংলাদেশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবে। এই হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে এক ভয়াবহ ট্র্যাজিডি।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ