শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ



(সংকেত: ভূমিকা; শিশু কারা; শিশুর প্রতি কর্তব্য; শিশুর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি; বর্তমান বিশ্বে শিশুদের অবস্থা; বাংলাদেশে শিশুদের অবস্থা; শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ; আন্তর্জাতিক শিশু দিবস ও বর্ষ; বাংলাদেশে শিশু আন্দোলন; উপসংহার।)
ভূমিকা: কিশোর কবি সুকান্ত বলেছিলেন
                “এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
                নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”
যদিও নবজাতকের আগমন ধ্বনি হলো কান্না তবুও এই কান্না আমাদেরকে আনন্দে ভাসায়। মনের মধ্যে সুখের সঞ্চার করে। আজকে যারা শিশু তারাই আগামী দিনে আভির্ভূত হবে সমাজ ও রাষ্ট্রের কর্ণধার হিসেবে। আর তাই শিশুদের হাতে ভবিষ্যৎ নির্মিত হবে বলে পৃথিবীকে তাদের বাসযোগ্য করে তুলতে এত প্রচেষ্টা। আজকে যে শিশু অবোধ, অবুঝ, আগামী দিনে সেই হবে দেশের বুদ্ধিজীবী কিংবা কীর্তিমান মহামানব/মানবী। তাদের হাতেই থাকবে দেশ ও দেশের ভবিষ্যৎ।
শিশু কারা: সাধারণত শিশু বলতে আমরা ৫-৬ বছর বয়সের বাচ্চাদের বুঝে থাকি। তবে জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী ০ থেকে ১৮ বছর বয়সী সকল ছেলে মেয়েই শিশু। ১৮ বছরের পরেই কেবল তারা প্রাপ্ত বয়স্ক হয়। আমরা অবশ্য শিশু বলতে ০-১২ বছর বয়সীদেরকে বুঝি। কারণ বাকিদেরকে আমরা নানা ভাগে ফেলে ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকি। যেমন আমাদের কাছে ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সীরা হলো কিশোর-কিশোরী। আবার ১৬-১৮ বছর বয়সীরা হলো তরুণ-তরুণী। তবে আইনের দৃষ্টিতে এরা সকলেই শিশু।
শিশুর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য: শিশুর প্রতি মানুষ অকৃত্রিম ভালোবাসা অনুভব করে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষেরই শিশুর প্রতি আবেগ মোটামুটি একই ধরণের হয়ে থাকে। প্রত্যেকেই তার শিশুকে সর্বোচ্চ আদর, স্নেহ, ভালোবাসা দিতে চায়। কিন্তু শিশুর জন্য শুধু মাত্র এই ভালোবাসাই যথেষ্ট নয়। শিশুর প্রতি আমাদের সকলের রয়েছে কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য। প্রথমত- শিশুর অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান নিশ্চিত করা। দ্বিতীয়ত- শিশুর শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য অধিকার ও সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা। তৃতীয়ত- শিশুর সামাজিককরণ নিশ্চিত করা। একটি শিশুকে সৎ, নিষ্ঠাবান ও পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাও আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। শিশুর প্রতি সকলেরই যত্নশীল হওয়া দরকার। কারণ আজকে আমরা শিশুকে যে শিক্ষায় গড়ে তুলব, যে দীক্ষায় দিক্ষিত করবো তার ভিত্তিতেই শিশুরা ভবিষ্যতকে নির্মাণ করবে। তাই শিশুদের জন্য বাসযোগ্য, স্বাস্থ্যকর, সংঘাতহীন একটি পৃথিবী গড়ে তোলা আমাদের কর্তব্য।
শিশুর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি: আগে মনে করা হতো শিশুরা দুর্বল। তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, মতামত থাকতে পারে না। থাকলেও সেগুলো এমন গুরুত্বপূর্ণ নয় যে সেগুলো শুনতে হবে বা মানতে হবে। তাদের প্রতি থাকত এক ধরণের অবহেলার দৃষ্টি। শিশুদের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তিত হয়েছে। এখন শিশুদেরকে আর নির্বোধ অপদার্থ ভাবা হয় না বরং তাদের মতামত ইচ্ছা-অনিচ্ছা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হয়।
বর্তমান বিশ্বে শিশুদের অবস্থা: সভ্যতা অনেক এগিয়ে গেলেও সবদিক থেকে অনেক উন্নত হলেও হাতে গোনা উন্নত কয়েকটি রাষ্ট্র ছাড়া বেশিরভাগ দেশেই শিশুদের সামগ্রিক অবস্থা খুবই করুণ। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় পঁচিশ শতাংশ হলো শিশু। অথচ পৃথিবীর নানা প্রান্তে এই শিশুরা কাটাচ্ছে বিভীষিকাময় জীবন। আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে যে সময়ে একটি শিশুর স্কুলে যাওয়ার কথা সে সময়ে তারা অস্ত্র হাতে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে যুদ্ধের। পুরো পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ শিশু বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে শিশুশ্রম আর শিশু পাচার এখন পরিণত হয়েছে ভয়ংকর এক সমস্যায়। এত বড় পৃথিবীতে হাজার হাজার শিশু ভুগছে নিরাপত্তাহীনতায়। প্রতিদিন বিশ্বে হাজার হাজার শিশু শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
বাংলাদেশে শিশুদের অবস্থা: দারিদ্র্য পীড়িত বাংলাদেশ যেমন পিছিয়ে আছে তেমনি পিছিয়ে আছে এদেশের শিশুরাও। আমাদের দেশের শিশুরা সবসময়ই নানা রকম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। এমনকি নূন্যতম অধিকারটুকুও অনেক সময় তারা ভোগ করতে পারে না। শিশুদের জন্য সরকারিভাবে অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা চালু থাকলেও আমাদের সকল শিশু শিক্ষার আলো পায় না। এছাড়া স্কুলে ভর্তি হয়েও দারিদ্র্য আর ক্ষুধার কাছে পরাজিত হয়ে প্রত্যেক বছর হাজার হাজার শিশু ঝরে পড়ে। এখনো গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ শিশু এবং শহরাঞ্চলেরও বড় অংশের শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে। আমাদের দেশ পারে না এ সকল শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে। আবার এক শ্রেণির অসৎ মানুষ তাই অসহায় কর্মজীবী শিশুদেরকে ব্যবহার করছে টাকা আয়ের হাতিয়ার হিসেবে। ফলে এই শিশুরা তাদের শিশু বয়সেই হয়ে যচ্ছে অপরাধী, জড়িয়ে যাচ্ছে ভয়ঙ্কর সব কর্মকান্ডে। ভবিষ্যতে যাদের দেশের মুখ উজ্জ্বল করার কথা তারা এখনই তলিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারে।
শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ: ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে। শিশুর উপরেই নির্ভর করছে আমাদের ভবিষ্যৎ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানও এক সময় শিশু ছিলেন। অথচ তার হাত ধরে বাঙালি পেয়েছে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। একদিন যিনি শিশু ছিলেন, তিনি হয়েছেন জাতির পিতা। আজকে যে শিশু আগামীতে সে হবে দেশের সুনাগরিক। শিশুদের ভেতরে সুপ্ত-প্রতিভা থাকে। আমাদেরকে কেবল এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে করে তাদের সেই প্রতিভা বিকশিত হতে পারে। এমন হতে পারে তাদের মাঝে থেকেই আমরা পেয়ে যাব ভবিষ্যতের বঙ্গবন্ধু, ভাসানী কিংবা শের-ই-বাংলার মতো নেতৃত্ব। জগদীশ চন্দ বসুর মতো কোনো বিজ্ঞানী, রবীন্দ্র-নজরুলের মতো কবি-সাহিত্যিক, রফিক-শফিকের মতো ভাষাপ্রেমিক, মতিউর-হামিদুরের মতো দেশপ্রেমিক বীর যোদ্ধা। তাই যারা দেশের ভবিষ্যৎ তাদেরকে তৈরি করতে হবে ভবিষ্যতের যোগ্য নির্মাতা হিসেবে।
আন্তর্জাতিক শিশু দিবস ও বর্ষ: অবহেলিত, অনাদৃত শিশুদের নিরাপদ জীবন দিতে, তাদের অধিকার সুরক্ষিত করতে জন্ম হয় আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের। শিশুর জন্য নিরাপদ বিশ্ব গড়াই এই দিবসের অঙ্গীকার। ১৯৫৩ সাল থেকে প্রতিবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার এই অঙ্গীকার নিয়ে বিশ্ব শিশু দিবস পালিত হয়। বর্তমানে জাতিসংঘ ঘোষিত শিশু অধিকার সনদ পালনের অঙ্গীকার নিয়ে জাতিসংঘের উদ্যোগে প্রতিবছর ২০ নভেম্বর সার্বজনিন শিশু দিবস পালিত হচ্ছে। ১২ জুন বিশ্ব শিশু শ্রম প্রতিরোধ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। ১৯৭৯ সাল আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষ হিসেবে ঘোষিত হয়। বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবহেলিত শিশুদের কল্যাণ ও শিশুর প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ও চেতনার উন্মেষ ঘটানো ছিল এই শিশুবর্ষের উদ্দেশ্য। কারণ শিশুরা মানসম্মত শিক্ষা, সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠলে আমরা পাব আমাদের কাক্সিক্ষত ভবিষ্যৎ কারিগর।
বাংলাদেশে শিশু আন্দোলন: হাজার সংকটের মধ্যে থেকেও বাংলাদেশেও এখন শিশুদের প্রতি মনোযোগী হওয়ার এবং শিশু অধিকার সনদ মেনে চলার অঙ্গীকার করা হয়েছে। বাংলাদেশে তাই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী’র মতো প্রতিষ্ঠান। যা শিশুদের উন্নয়নের জন্য কার্যকরী ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। শিশুদের অধিকার, সুরক্ষা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বেসরকারিভাবে সেইভ দ্য চিলড্রেন এর মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দেশব্যাপী নতুন কুড়ি, শাপলা শালুক, ফুলকুড়ি, কঁচিকাচার মেলা, খেলাঘর এর মতো শিশু সংগঠন গড়ে উঠেছে। নিয়মিত প্রকাশিত হচ্ছে বিভিন্ন শিশু পত্রিকা। রেডিও-টেলিভিশনে প্রচারিত হচ্ছে শিশুদের উপযোগী বিভিন্ন অনুষ্ঠান। দৈনিক পত্রিকাগুলোতেও থাকে শিশুদের জন্য বিশেষ পাতা। ফলে মানুষ এখন শিশুদের অধিকার নিয়ে সচেতন হচ্ছে এবং শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে কাজ করে যাচ্ছে।
উপসংহার: শিশুরাই আমাদের ভবিষ্যৎ। তাই সকলের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হলে আমাদেরকে শিশু অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। শুধুমাত্র আইন করে বা সনদ গৃহীত হলেই শিশুরা সুরক্ষা পাবে না। বরং সেগুলোর প্রয়োগ থাকতে হবে। আর এ জন্য দরকার কেবল আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সদিচ্ছা। একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য শিশুদেরকে গড়ে তুলতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে তাদের বাঁধাহীন আনন্দময় শৈশব।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]