(সংকেত: ভূমিকা, দূষণের মাত্রা শুরু, দূষণের প্রকারভেদ, শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, পরিবেশ দূষণের পরিণতি, প্রতিকার, গণসচেতনতা বৃদ্ধি, উপসংহার।)
ভূমিকা
মানুষ তথা জীবজগতের বসবাসের এলাকাকে বলে পরিবেশ। আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে এবং যা আমাদের জীবনধারনের সহায়ক সবকিছুকে একসাথে আমরা পরিবেশ হিসেবে আখ্যায়িত করি। মানুষ ও পরিবেশ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। পরিবেশের সাথে মিলেমিশে মানুষ এবং অপরাপর উদ্ভিদ ও প্রাণী জীবনের বিকাশ ঘটে। আবার পরিবেশের বৈরিতায় এদের সবারই অস্তিত্ব বিপন্ন হবার আশঙ্কা থাকে। মানুষ এবং অপরাপর উদ্ভিদ ও প্রাণী নিজ নিজ পরিবেশ থেকেই বাঁচার উপকরণ সংগ্রহ করে। যেসব উপকরণ থেকে প্রয়োজনীয় অংশ ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত অংশ আবার ফিরে যায় সে পরিবেশে। এভাবে জীবজগৎ ও তার পরিবেশের মধ্যে বেঁচে থাকার উপকরণের আদান-প্রদান চলে। আদান-প্রদানের ভারসাম্যের ওপর জীবনের অস্তিত্ব নির্ভরশীল। এ ভারসাম্য বিঘিœত হলে তাকে বলা হয় পরিবেশ দূষণ।
দূষণের মাত্রা শুরু
মানব সভ্যতা বিকাশের সাথে সাথে পরিবেশ দূষণের শুরু। মানুষ একদিন নিজেদের আত্মরক্ষার জন্য বন কেটে বসতি স্থাপন করল এবং উজাড় হল বনের পর বন। সভ্যতার ঊষালগ্নে মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখল। শুরু হল সভ্যতার বিবর্তন প্রক্রিয়া। ক্রমান্বয়ে যে অগ্নি স্ফুলিঙ্গকে পুঁজি করে মানুষ এগিয়ে চলল সামনের দিকে। অগ্রযাত্রা সূচীত হল মানব সভ্যতার, বিকাশ ঘটল নতুন যুগের, আবি®কৃত হল নতুন নতুন কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি, স্থাপিত হল নতুন নতুন অসংখ্য শিল্পকারখানা। এসব যন্ত্র হতে সৃষ্ট ধোঁয়া জন্ম দিল নব নব মারাত্মক গ্যাস, যার মধ্যে সালফার ডাইঅক্সাইড ও বেঞ্জোপাইরিন গ্যাস প্রধান। যানবাহনের প্রাচুর্য দেখা দিল পথে পথে, সবুজ বিপ্লব ঘটাতে আমদানি হল কীটনাশক। আণবিক ও পারমাণবিক বোমার তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ল আকাশে-বাতাসে। ফলে পরিবেশ দূষণ দেখা গেল ব্যাপকভাবে।
দূষণের প্রকারভেদ
মানুষ যেসব জিনিস ব্যবহার করে তার পরিত্যক্ত বিষাক্ত পদার্থই দূষণের সৃষ্টি করে। পরিবেশ বিভিন্নভাবে দূষিত হতে পারে। তন্মধ্যে শব্দ দূষণ, বায়ু দূষণ এবং পানি দূষণের নাম উল্লেখযোগ্য।
শব্দ দূষণ
আমরা আমাদের সৃষ্ট সভ্যতার বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে প্রতিনিয়ত শব্দ উৎপাদন করে চলেছি। যেমন : কলকারখানার শব্দ, গাড়ির শব্দ, হাইড্রোলিক হর্ন, মাইক প্রভৃতি শব্দ থেকে আমাদের পরিবেশ দূষিত হয়। এ দূষণকে শব্দজনিত পরিবেশ দূষণ বা শব্দ দূষণ বলে। এ শব্দ দূষণের ফলে নিদ্রাহীনতা, শিরঃপীড়া, মানসিক রোগ, স্নায়ু দুর্বলতা প্রভৃতি রোগ দেখা দিতে পারে।
বায়ু দূষণ
বাতাসে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান রয়েছে। জীবনাধারণের উপযোগী উপাদান হ্রাস পেয়ে, বাতাসে ক্ষতিকারক উপাদান বৃদ্ধি পেলে তাকে বায়ু দূষণ বলে। সাধারণত কলকারখানা ও মোটরগাড়ির কালো ধোঁয়া, ধুলোবালি, কীটনাশক, রাসায়নিক বর্জ্য গ্যাস, তেজস্ক্রিয় পদার্থ প্রভৃতি বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। বায়ু জীবন রক্ষাকারী এবং পাশাপাশি বিভিন্ন রোগের নির্ভরযোগ্য বাহনও বটে। তেলের দহনজাত ধোঁয়া থেকে সালফার ডাইঅক্সাইড, যানবাহনের ধোঁয়া থেকে বেঞ্জোপাইরিন নির্গত হয়। এগুলো হাঁপানি এবং ফুসফুস রোগের কারণ। ধুলাবালি ঘর নষ্ট করে এবং বিভিন্ন রোগ বহন করে। কীটনাশক হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। আণবিক ও পারমাণবিক তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্যানসার রোগের কারণ। এ থেকে অঙ্গ বিকৃতিও হতে পারে।
পানি দূষণ
সারা বিশ্বের শিল্পনগরীগুলো গড়ে উঠেছে নদী কিংবা সমুদ্রকে কেন্দ্র করে। এ সমস্ত শিল্পনগরীর বিভিন্ন কলকারখানার বর্জ্য পদার্থগুলো মিশে যাচ্ছে নদী ও সমুদ্রে। ফলে প্রতিনিয়ত দূষিত হয়ে চলছে নদী ও সমুদ্রের পানি। এছাড়া বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির ফলে বেশি পরিমাণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে। এ কীটনাশক পানিতে মিশে পানিকে দূষিত করছে। তেলবাহী জাহাজ থেকে তেল নিঃসৃত হয়ে সাগরের পানি দূষিত হচ্ছে। এছাড়াও অনুন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বের পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্মুক্ত ও অস্বাস্থ্যকর হওয়ায় বন্যায় বা সাধারণ সময়ে পানি দূষিত হয়।
পরিবেশ দূষণের পরিণতি
পৃথিবীর বাসিন্দারাই তাদের সৃষ্ট কার্যকলাপের দ্বারা প্রতি মুহূর্তে পরিবেশকে দূষিত করে চলছে। এভাবে মানুষের চারদিকের পরিবেশ দূষিত হয়ে জীবনকে সংকটাপন্ন করে তুলেছে। ব্যাপক হারে বৃক্ষ নিধন ও বনাঞ্চল উজাড় করার কারণে দেখা দিয়েছে গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়া’। বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের মতো বিষাক্ত গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় পৃথিবী নামের এ গ্রহটা মনুষ্য তথা প্রাণীকুলের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গ্রীন হাউজ প্রতিক্রিয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা দারুণভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বরফ গলার পরিমাণ বাড়বে। বাড়তে থাকবে সমুদ্রের পানি। ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উপকূলবর্তী ও নিম্নাঞ্চল বা সাগরের দীপাঞ্চলগুলো তলিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের ফলে পৃথিবী থেকে ৭৬ রকমের প্রাণী ও কয়েক হাজার রকমের গাছপালা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। ১৩২ রকমের স্তন্যপায়ী ও ২৬ রকমের পাখির বংশ বিলুপ্তির পথে। ব্যাপকহারে পরিবেশ দূষণের ফলে বহু স্বাভাবিক ভূখণ্ড মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে। কলকারখানা ও যানবাহন থেকে প্রতি বছর নির্গত হচ্ছে ১৫ কোটি টন সালফার ডাইঅক্সাইড, ২০ কোটি টন কার্বন ডাইঅক্সাইড, ৫ কোটি টন হাইড্রোকার্বন ও অন্যান্য মারাত্মক গ্যাস, যা পৃথিবীর প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। ফলে বর্ধিতাংশ পৃথিবী তার প্রাণীকুলের কাছে মৃত্যু ও ধ্বংসের পরোয়ানা হিসেবে ফেরত পাঠায়।
প্রতিকার
মানুষের যে অসাবধানতা বা খেয়ালি মনের ফলশ্রুতিতে বিশ্ব আজ চরম বিপর্যয়ের সম্মুখীন, তার প্রতিকারের ব্যবস্থাও মানুষকে করতে হবে। প্রকৃতির মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার পথ বের করতে হবে। এজন্য নানা পদ্ধতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে থাকি, তাতে যেন অধিক শব্দ উৎপাদক এবং কালো ধোঁয়া বের না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। বিভিন্ন প্রকার পোকামাকড় ও মশামাছি নিধনে জৈব নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে। কলকারখানা ও শিল্পনগরীগুলো লোকালয় থেকে অনেক দূরে স্থাপন করতে হবে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ, মোটরযানে হাইড্রোলিক হর্নের পরিবর্তে সাধারণ হর্ন ব্যবহার করতে হবে। জনবহুল এলাকায় বা লোকালয়ে সভা-সমাবেশ করা থেকে বিরত থেকে তা জনশূন্য এলাকায় সম্পন্ন করা। আইন প্রণয়ন করে কালো ধোঁয়া নির্গমনকারী যানবাহন বন্ধ করে দিয়ে কিংবা শাস্তির ব্যবস্থা করে পরিবেশ দূষণ রোধ করা যায় আবার নগর ও গ্রাম বনায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে অধিক হারে গাছ লাগিয়ে পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
গণসচেতনতা বৃদ্ধি
পরিবেশ দূষণের ফলে আমাদের খাদ্যচক্রে যে সমস্যা প্রতিদিন সৃষ্টি হচ্ছে সে সম্পর্কে বেশির ভাগ মানুষের ধারণা অত্যন্ত কম। কিন্তু এ ব্যাপারে অবশ্যই আমাদের ধারণা থাকা প্রয়োজন। খাদ্যের ব্যাপারে জীবজগৎ একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। খাদ্যচক্র অনেক ধরনের হতে পারে; যেমন : পোকামাকড় ময়লা আবর্জনা খায়। ছোট মাছ পোকামাকড় খায়। বড় মাছ ছোট মাছ খায়। পাখিও মাছ খায়। মানুষ মাছ ও পাখির মাংস খায়। এভাবে গরু, ছাগল অনেক জীব ঘাস খায়। মানুষ এদের মাংস খায়। এছাড়া মানুষ সরাসরি বিভিন্ন ফসলাদি গ্রহণ করে। বর্তমানে জমিতে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত পোকার ওষুধ ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবে খাদ্যচক্রের মাধ্যমে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই সচেতন থাকা প্রয়োজন।
উপসংহার
পরিবেশ দূষণ মানব জাতি এবং মানব সভ্যতার জন্য অশুভ ইঙ্গিত। খরা, বন্যা, মহামারী প্রভৃতি মারাত্মক ও ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার আমাদের প্রতিনিয়ত হতে হচ্ছে। তবে শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানে অনুন্নত আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের পক্ষে এ দূষণ কখনই মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। তাই নিজেদের স্বার্থে, আমাদের ভবিষ্যৎ বংশধরদের স্বার্থে আমাদের পরিবেশ দূষণ কার্যকরভাবে মোকাবেলা করা উচিত।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ