সুশাসনের জন্য আইনের প্রয়োজনীয়তা

সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আইনের অনুশাসন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রে আইনের অনুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে সকল নাগরিক সমানভাবে স্বাধীনতা ও রাষ্ট্র প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা পেতে পারে। কেউ কারও অধিকার ক্ষুণ্ণ করতে পারে না। সাধারনভাবে আইনের অনুশাসন ২টি ধারণা প্রকাশ করে।  যথা- আইনের প্রাধান্য ও আইনের দৃষ্টিতে সকলের সাম্য।

আইনের প্রাধান্য বজায় থাকলে সরকার স্বেচ্ছাচারী হতে পারে না এবং ক্ষমতা অপব্যবহার করতে সচরাচর সাহস করে না। আইনের প্রাধান্য নাগরিক স্বাধীনতার রক্ষাকবচ। সমাজের আইনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হলে কেউ আইন অমান্য করে অন্যের অধিকারের হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সরকারও কারও ব্যাক্তিস্বাধীনতায় অযৌক্তিক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে সাহস পাবে না।

আইনের দৃষ্টিতে সাম্য মানে সমাজে ধনী- দরিদ্র, সবল- দুর্বল, জাতি, ধর্ম সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকলেই সমান। আইনের চোখে কেউ বাড়তি সুবিধা পাবে না। সকলের জন্য একই আইন প্রযোজ্য। রাষ্ট্রে ব্যাক্তি স্বাধীনতা তখনই খর্ব হয় যখন আইনের অনুশাসন থাকে না। আইনের অনুশাসনের অভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সচরাচর নাগরিকদের হয়রানি করে, বিনা অপরাধেও আটক করে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি না হলে আইনের শাসন কায়েম হয় না। 

ধর্ম

মানুষের ওপর ধর্মের প্রভাব অপরিসীম। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ঐশ্বরিক আইন অনুসরণ করে আসছে। তাই ধর্ম, ধর্মীয় অনুশাসন ও ধর্মগ্রন্থ আইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ন্যায়- অন্যায় পাপ পূন্য ইত্যাদি মূল্যবোধসমূহ ধর্ম চিহ্নিত করেছে বলে প্রাচীন ও মধ্যযুগে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ধর্মীয় রীতিনীতি প্রভাব বিস্তার করে। ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্রে ধর্মীয় বিধানই রাষ্ট্রীয় আইন হিসেবে বিবেচিত হয়। ইসলামিক রাষ্ট্রের আইন প্রধানত কুরআন ও শরিয়ার ওপর নির্ভরশীল। হিন্দু আইনও মূলগতভাবে হিন্দুদের ধর্মীয় বই যেমন- বেদ, গীতা, রামায়ণের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান যুগেও ধর্মীয় রীতিনীতি আইনরূপে গ্রহণ করে রাষ্ট্রীয় আইন প্রবর্তন করা হয়। বিবাহ, উত্তরাধিকার প্রভৃতি বিষয়ে মুসলমান ও হিন্দুরা নিজ নিজ ধর্মীয় আইন মেনে চলে।

জনসমষ্টি

রাষ্ট্রের প্রাথমিক উপাদান হচ্ছে জনসমষ্টি। জনসমস্টি বলতে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত জনগণকে বোঝায়। রাষ্ট্র গঠনের জন্য জনসমষ্টি একান্ত অপরিহার্য। জনসমষ্টির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক থেকে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে। তবে রাষ্ট্র গঠনের জন্য জনসংখ্যা কত হবে তার কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। রাজনৈতিকভাবে রাষ্ট্রের জনসংখ্যা কয়েক কোটি হতে পারে আবার কয়েক হাজারও হতে পারে। যেমন- গণচীন ও ভারতে জনসংখ্যা একশত কোটির উপরে। অন্যদিকে, স্যানম্যারিনো, মোনাকো প্রভৃতি ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের জনসংখ্যা যথাক্রমে বিশ হাজার ও চৌদ্দ হাজার। 

কল্যাণমূলক কাজ

রাষ্ট্রের বিশাল কর্মবাহিনীকে পরিচালনা করা এবং সুস্থ রাখা  রাষ্ট্রের ঐচ্ছিক কাজ। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য শ্রমনীতিমালা প্রণয়ন, ন্যূনতম সঠিক মজুরি নির্ধারণ, কাজের সময় নির্ধারণ, কাজের পরিবেশ সৃষ্টি, বোনাস, ইন্সুরেন্স এবং পেনশন সুবিধা প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ শ্রমিক তৈরি, বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য শ্রম অফিসার নিয়োগ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

জনসাধারণের স্বাস্থ্য

জনসাধারণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং সমস্ত বিদ্যমান বিভিন্ন বৈষম্য ও কুপ্রথা দূরীকরণে রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় এবং অসুস্থদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান (বিনামূল্যে ও স্বল্প খরচে), হাসপাতাল, দাতব্য চিকিৎসালয়, শিশুসদন, মাতৃমঙ্গল কেন্দ্র, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র, দেশব্যাপী অস্থায়ী হেলথ ক্যাম্পেইন প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করে। তাছাড়া জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের সুব্যবস্থা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, রোগ প্রতিরোধক ও প্রতিষেধক টিকা প্রদান প্রভৃতি সেবা রাষ্ট্র প্রদান করে। এছাড়া যৌতুক ও বর্ণপ্রথা দূরীকরণ, বাল্যবিবাহ রোধে, জেন্ডার সমতা প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

রাষ্ট্রের কার্যাবলি

সমাজের অঙ্গ হিসেবে রাষ্ট্র কী কাজ করে কিংবা কী কাজ করতে পারে তা আমাদের জানা দরকার। অর্থাৎ জনগণের জন্য রাষ্ট্র কী ধরণের সেবা প্রদান করে এবং এর সামর্থ্য কতটুকু এ পাঠ থেকে তা আমরা জানব। আমরা জানি মানুষের প্রয়োজনেই রাষট্র গড়ে উঠেছে। মানব জীবনের সামগ্রিক কল্যাণই রাষ্ট্রের কাজ।বিশ্লেষকদের মতে, রাষ্ট্র প্রধানত দুই ধরণের ভূমিকা পালন করে।যথাঃ নিয়ন্ত্রণমূলক ও কল্যাণমূলক। এ দুই ধরণের ভূমিকার ভিত্তিতে আধুনিক রাষ্ট্রের কার্যাবলিকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন, অপরিহার্য বা মুখ্য কার্যাবলি এবং কল্যাণ মূলক বা ঐচ্ছিক কার্যাবলি। 

আইনসভা

আধুনিক রাষ্ট্রের আইনসভাই আইনের প্রধান। সকল গণতান্ত্রিক রাষ্টেরই আইনসভা বা আইন পরিষদ আছে। এ আইনসভায় দেশের মানুষের স্বার্থকে লক্ষ রেখে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও সংশোধন হয়ে থাকে।

নির্দিষ্ট ভূখন্ড

নিদিষ্ট ভূখন্ড হচ্ছে রাষ্ট্রের অপরিহার্য দ্বিতীয় উপাদান। প্রত্যেক রাষ্ট্রই একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা পরিবেষ্টিত। ভূখন্ড বলতে স্থলভাগ, সমুদ্রসীমা, আকাশসীমাও বোঝায়। রাষ্ট্রের জনগণের বসবাসের জন্য নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের উপর নিয়ন্ত্রণ আবশ্যক। জনসমষ্টি ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, সংগ্রাম ও যুদ্ধের মাধ্যমে অথবা সাংবিধানিকভাবে নির্দিষ্ট ভূখন্ডের ওপর নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করে। প্রতিটি রাষ্ট্রেই ভূখন্ডের  সীমানাকেন্দ্রিক নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তোলে। ভূখন্ডে বিশাল বড় বা ছোট হতে পারে। যেমন- রাশিয়ার বিশাল আয়তন অথবা ছোট আয়তনের রাষ্ট্র হল দারুস সালাম, সুইজারল্যান্ড, ব্রুনাই ইত্যাদি। ১৯৭১ সালের স্বাধীন যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভূখন্ডটি পৃথিবীর মানচিত্র স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্থান পেয়েছে। অনেক সময় রাষ্ট্রেে নির্দিষ্ট ভূখন্ড বেশ কয়েকটি দ্বীপের সমষ্টি ও হতে পারে। যেমন- জাপান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া। 

ন্যায়বোধ

বিচারক যখন প্রচলিত আইনের মাধ্যমে কিংবা উপযুক্ত আইনের অভাবে ন্যায়বিধান করতে ব্যর্থ হয়ে নিজস্ব সামাজিক নীতিবোধের আলোকে ন্যায় রায় প্রদান করেন, তখন তার নীতিবোধের দ্বারা প্রণীত আইন দেশের আইনের পূর্ণ মর্যাদা লাভ করে। তাই ন্যায়নীতি ও ন্যায়পরায়ণতা আইনের একটি প্রকৃষ্ট উৎস। 

শিক্ষিত

রাষ্ট্রের জনগণকে শিক্ষিত করে তোলা রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শিক্ষিত জনগণ রাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সম্পদ। শিক্ষিত নাগরিক অধিকার, কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন থাকেন এবং দেশপ্রেমে উদ্ভুব্ধ হন। এজন্য রাষ্ট্র শিক্ষা বিস্তারের প্রতি অধিক গুরুত্ব প্রদান করে এবং শিক্ষা সুবিধা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। সরকার বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন, নারী শিক্ষার উপর গুরত্বসহ বয়স্ক শিক্ষার ব্যবস্থা করে, নিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য বিভিন্ন ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]