স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন বলতে নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক জনগণের স্বশাসনকে বোঝায়। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা তা পরিচালিত হয় এবং ওই জনগণের নিকট তা দায়িত্বশীল থাকে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- ১ আইনগত ভিত্তি, ২ নির্বাচিত সংস্থা, ৩ সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ, ৪ করারোপের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের ক্ষমতা, ৫ বিস্তৃত ও বহুমুখী কার্যাবলি, ৬ কেন্দ্রীয়/বিভাগীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত থেকে স্বাধীনভাবে পরিচালনা। বাংলাদেশের স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন।
ইউনিয়ন পরিষদ এদেশের সর্বাপেক্ষা প্রাচীন স্থানীয় প্রতিষ্ঠান। সেই ব্রিটিশপূর্ব আমল থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির অগ্রযাত্রা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, গ্রাম এলাকায় সত্যিকার একটি জনপ্রতিনিধিত্বমূলক স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এটি কাজ করছে। ১৮৭০ সালে গ্রাম এলাকার আইনশৃংখলা রক্ষায় সহযোগিতা করার জন্য চৌকিদারি পঞ্চায়েত আইন ১৮৭০ প্রবর্তিত হয়। ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গ্রামে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা ও বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ পরিচালনা করার জন্য এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। ১৮৮৫ সালে স্থানীয় পর্যায়ে অধিক দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য বঙ্গীয় আইন স্থানীয়পাস করা হয়। এই আইনে ইউনিয়ন পর্যায়ে ইউনিয়ন কমিটি, মহকুমা পর্যায়ে মহকুমা কমিটি,জেলা পর্যায়ে জেলা বোর্ড গঠন করা হয়। ১৯১৯ সালের পল্লি আইনের চৌকিদারি পঞ্চায়েত ও ইউনিয়ন বোর্ড প্রতিষ্ঠা করা হয়। পাকিস্তান আমলে এর নাম হয় ইউনিয়ন কাউন্সিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৬ সালে স্থানীয় সরকার অধ্যাদেশে ইউনিয়ন পরিষদ, থানা পরিষদ ও জেলা পরিষদ এই তিন স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা চালু করা হয়। ১৯৯৭ সালে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) সংশোধিত আইনের মাধ্যমে ইউনিয়ন পরিষদ গঠনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়। গড়ে ১০-১৫ গ্রাম নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ গঠিত। এখানে নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছাড়াও নয়জন নির্বাচিত সাধারন সদস্য এবং সংরক্ষিত মহিলা আসন থেকে তিন জন সদস্য থাকেন। সংশোধিত আইনে ওয়ার্ড সংখ্যা নয়টিতে উন্নীত করা হয়েছে। মহিলা সদস্যগন প্রতি ৩ ওয়ার্ডে একজন এই ভিত্তিতে পুরুষ ও মহিলা সকলের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন এ পরিষদের কার্যকাল পাঁচ বছর। বাংলাদেশে সর্বমোট ৪,৪৬৬ টি ইউনিয়ন পরিষদ রয়েছে।
ইউনিয়ন পরিষদের কার্যাবলিকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়ঃ প্রধান কার্যাবলি ও ঐচ্ছিক কার্যাবলি।
১. জনশৃঙ্খলা রক্ষাঃ গ্রামে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা ইউনিয়ন পরিষদের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব পালনের জন্য প্রতিটি ইউনিয়ন কিছু চৌকিদার ও দফাদার নিয়োগ করা, অপরাধ, বিশৃঙ্খলা ও চোরাচালান বন্ধের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ,ঝগড়া-বিবাদ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা নিরসনে ভূমিকা পালন, গ্রাম আদালত সম্পকিত দায়িত্ব সম্পাদন, পারিবারিক বিরোধের আপোষ-মীমাংসার উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. জনকল্যাণমূলক কাজ ও সেবাঃ ইউনিয়নে অবস্থিত কৃষি, স্বাস্থ্য,মৎস্য, পশুপালন ও শিক্ষা বিষয়ক বিভিন্ন সরকারি, বেসরকারি সংস্থার সেবাও কার্যক্রম সম্বন্ধ জনগনকে অবহিতকরণ এবং গ্রামীন অবকাঠামো সংস্থার কর্মসূচীর অধীনে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, স্যানিটেশন, পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন, আত্মকর্মসংস্থান ও আর্থসামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা ইউনিয়ন পরিষদের প্রধানতম কার্যাবলির মধ্যে পড়ে।
৩. স্থানীয় অর্থনেতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নঃ এলাকার কৃষি উন্নয়নের জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ, গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়ন সাধন, বাজার সৃষ্টি, মৎস্য চাষ ও পশুপালনের উন্নত পদ্ধতি সর্ম্পকে জনসাধারণকে অবহিতকরণ, উন্নত বীজ, চারা ও সার বিতরণের সুষ্ঠ ব্যবস্থা সৃষ্টি করা, জনগণের আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের পরামর্শ প্রদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বাঁধ নির্মাণ প্রভৃতি কাজ ইউনিয়ন পরিষদ সম্পাদন করে।
৪. প্রশাসনিক কাজঃ সচিব, গ্রাম পুলিশ ও পরিষদের অন্যান্য কর্মচারীদের পরিচালনা, তদারকি ও নিয়ন্ত্রন করা, সকল সভা আহবান, বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রেরণ করা, কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দায়িত্ব পালন ইত্যাদি ও ইউনিয়ন পরিষদ করে থাকে।
পৌরসভার শিক্ষা সংক্রান্ত কাজঃ পৌরসভায় শিক্ষাসংক্রান্ত কাযৃাবলি হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হোস্টেল নির্মাণ, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি, বিনামূল্যে বই বিতরণ, বাধ্যতামূলক ও গণশিক্ষার ব্যবস্থাকরণ ইত্যাদি।
সেক্রেটারিয়েট বা সচিবালয় বাংলাদেশ প্রশাসন ব্যবস্থার কেন্দ্রে অবস্থিত যা শাসনব্যবস্থার স্নায়ুকেন্দ্র স্বরূপ।সরকারি যাবতীয় সিদ্ধান্ত সর্বপ্রথম সচিবালয়ে গৃহীত হয়। সাধারণত বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও তাঁর বিভাগসমূহের অফিসগুলোকে যৌথভাবে সচিবালয় বলে। প্রধানমন্ত্রীর পছন্দানুযায়ী প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও তাঁর বিভাগসমূহের অফিসগুলোকে যৌথভাবে সচিবালয় বলে। প্রধানমন্ত্রীর পছন্দানুযায়ী প্রতিটি মন্ত্রণালয় একজন মন্ত্রী নিযুক্ত হন। মন্ত্রী হলেন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি ও মন্ত্রণালয়ের প্রধান। মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন একজন সচিব। সরকারি কর্মকমিশন কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে সেবা, যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ এবং নির্দিষ্ট পদসোপানের মধ্যে দিয়ে তিনি সচিব পদে উন্নীত হন। মন্ত্রণালয়ের যাবতীয় কাজের ভার সচিবের ওপর ন্যস্ত থাকে। তিনি যাবতীয় কাজে সহায়তা করেন। মন্ত্রণালয় পরিচালনার ব্যপারে মন্ত্রী সচিবের নিকট হতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পরামর্শ গ্রহণ করেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিষয়ে সচিব মন্ত্রীর সহচর হিসেবে কাজ করেন। আলাপ- আলোচনা ও পরামর্শের ভিত্তিতে উভয় উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখতে সচেষ্ঠ হন। এ দৃষ্টিতে মন্ত্রী ও সচিব একে অপরের ওপর নির্ভরশীল ও আস্থাভাজন।
স্থানীয় শাসন বলতে স্থানীয় পর্যায়ের বিভাগীয়/জেলা এবং উপজেলা শাসন ব্যবস্থাকে বুঝায়। প্রশাসনের সুবিধার্থে এর সৃষ্টি। এ প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় শাসন ও নিয়ন্ত্রণ নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, রাজস্ব আদায় ও সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নই এর মুখ্য উদ্দেশ্য। এ ব্যবস্থায় স্থানীয় শাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিবৃন্দ সরকারের এজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য। যেমন- আমাদের দেশে বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসক এবং থানা নির্বাহী অফিসার।
সরকারের ৩ টি বিভাগের একটি হচ্ছে আইন বিভাগ। আইন বিভাগের প্রধান কাজ হল দেশের জন্য নতুন আইন প্রণয়ন ও আইনের পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধন করা। আইন বিভাগের একটি অংশ হল আইনসভা। আইনসভা নির্বাচিত এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মনোনীত সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয়। এটি আইন প্রনয়ণ করে। আইনসভার প্রণীত আইন রাষ্ট্রপ্রধানের সম্মতি লাভের পর কার্যকর হয়।প্রত্যেক রাষ্ট্রের আইনসভা আছে এবং তা বিভিন্ন নামে পরিচিত। বাংলাদেশের আইনসভার নাম জাতীয় সংসদ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেস। ব্রিটেনের আইনসভা পার্লামেন্ট এবং অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রের আইনসভা মজলিশ নামে পরিচিত। কোন দেশের আইনসভা এক কক্ষবিশিষ্ট এবং কোন দেশের আইনসভা দ্বি কক্ষবিশিষ্ট। দ্বি কক্ষবিশিষ্ট আইনসভায় উচ্চ পরিষদ ও নিম্ন পরিষদ থাকে। বাংলাদেশের আইনসভা অবশ্য এক কক্ষবিশিষ্ট। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনের আইনসভা দ্বি কক্ষবিশিষ্ট।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ