সড়ক পরিবহণ অতীতে বাংলাদেশের বিশাল অংশ জুড়ে নৌপরিবহণ ব্যবস্থার প্রাধান্য থাকার কারণে এখানে সড়ক পরিবহণ খাতে শ্লথগতিতে উন্নয়ন ঘটে। কয়েক দশক আগেও এদেশের অনেক এলাকায় নৌকাই ছিল একমাত্র পরিবহণ।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর সড়ক পরিবহণ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ খাত হিসেবে বিকাশ লাভ করে। খুব দ্রুত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির সড়ক, সেতু ও কালভার্টসমূহ পুনর্নির্মাণ করা হয়। পাশাপাশি জাতীয় মহাসড়কগুলিতে বেশ কয়েকটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হয়। ফলে সড়ক পরিবহণ ব্যবসায় একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিস্তৃত হতে থাকে। এই খাতে কয়েক হাজার শ্রমিক ও কর্মচারীর কর্মসংস্থান হতে থাকে। সড়ক পরিবহণের উন্নয়ন পরিকল্পনা, যানবাহন চলাচল ব্যবস্থাপনা এবং সড়ক ও মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পায়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মোটরযানের লাইসেন্স ও যাত্রীবাহী বাসের রুট পারমিট প্রদান করে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্পোরেশন (বিআরটিসি) রাষ্টী্রয় মালিকানাধীন যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক পরিচালনা করে থাকে। এছাড়া রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড মোটরযানের জ্বালানি হিসেবে কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস (সিএনজি) সরবরাহ করে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আওতাভুক্ত দেশব্যাপী বিস্তৃত সড়ক নেটওয়ার্কের দৈর্ঘ্য ২০০১ সালে প্রায় ২০,৮৫৪ কিলোমিটারে উন্নীত হয়। এর মধ্যে ৩,১৪৪ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক, ১,৭৪৬ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক এবং ১৫,৯৬৪ কিলোমিটার প্রথম শ্রেণির সংযোগ সড়ক। জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়কগুলির প্রায় সম্পূর্ণ অংশই পাকা। এছাড়া প্রথম শ্রেণির সংযোগ সড়কগুলির শতকরা ৫০ ভাগ পিচঢালা। স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) দেশের সদর উপজেলা, গ্রামগঞ্জ ও উৎপাদন কেন্দ্রগুলিকে ছোট ছোট সংযোগ সড়ক নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা হিসেবে জাতীয় সড়ক নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করে। ২০০১ সাল পর্যন্ত এলজিইডি কর্তৃক নির্মিত এ ধরনের সড়কগুলির মোট দৈর্ঘ্য ১,৪৯,১৬৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির (‘বি’ টাইপ) সংযোগ সড়কগুলির মোট দৈর্ঘ্য ১৪,৩৯৩ কিলোমিটার এবং আর-১, আর-২, ও আর-৩ নামে পরিচিত তিন ধরনের গ্রামীণ সড়কের দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৩৭,৮২৭ কিলোমিটার, ৪৯,৫৩৮ কিলোমিটার এবং ৪৭,৪০৯ কিলোমিটার।
বাংলাদেশ প্রতিবছর বন্যাকবলিত হয় বলে সড়কগুলি সাধারণত উঁচু বাঁধের উপর নির্মাণ করা হয়। জাতীয় মহাসড়কগুলি যে সকল বাঁধের উপর নির্মিত হয় সেগুলির প্রস্থ ১২.২ মিটার, সড়কের প্রস্থ ৭.৩ মিটার এবং উচ্চতা ১.৮৩ মিটার হয়ে থাকে। আঞ্চলিক মহাসড়কের ক্ষেত্রে এই তিনটি পরিমাপ যথাক্রমে ১০ মিটার, ৫.৫ মিটার এবং ১.৮৩ মিটার হয়ে থাকে। প্রথম (এ) ও দ্বিতীয় (বি) শ্রেণির সংযোগ সড়কগুলির জন্য বাঁধের উপরিতলের প্রস্থ ৭.৩ মিটার, সড়কের প্রস্থ ৩.৬৬ মিটার এবং বাঁধের উচ্চতা ১.৮৩ মিটার হয়ে থাকে। অবশ্য জাতীয় মহাসড়কগুলির দুই-তৃতীয়াংশেরই পরিমাপ এই নির্ধারিত মাপের চেয়ে কম।
১৯৯১-৯২ অর্থবছরে বাংলাদেশে ৩,৮৪,০০০ রিকশা, ৪৮,২৭২টি ঠেলাগাড়ি, ৭,০২,০০০টি গরুর গাড়ি, ২১,৫৭৮টি বাস ও মিনিবাস, ২,২৭৯টি মাইক্রোবাস, ৩০,৯৯৪টি ট্রাক, ৮,৯২৭টি জিপ, ৩৪,৮১৭টি কার, ২,১৪০টি ট্যাক্সি, ৩০,১৯৪টি অটোরিকশা এবং ১,১৬,৬৮৯টি মোটর সাইকেল ছিল। ১৯৯৯ সাল নাগাদ এসব সংখ্যা গড়ে ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
সরকারের গণপরিবহণ পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত সংস্থা বিআরটিসি ২০০০ সাল পর্যন্ত একটি লোকসানি প্রতিষ্ঠান ছিল। বিআরটিসির বহরে ছিল ২৭৩টি গাড়ি এবং দৈনিক এ সকল যানবাহনে ৮৪ হাজার যাত্রী যাতায়াত করত। ২০০১ সালে কয়েকটি দ্বিতল বাসসহ বিআরটিসির যাত্রীবাহী গাড়ির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬১টিতে। এখন এইসব বাহনে দৈনিক তিন লক্ষ যাত্রী পরিবহণ সুবিধা পাচ্ছে। এ বছরে বিআরটিসির পরিবহণ খাত থেকে মুনাফা হয়েছে ১৬৭.০১ মিলিয়ন টাকা। সড়ক ও মহাসড়কগুলির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন হওয়ায় বিআরটিসির সিটি সার্ভিস বাস এবং বেসরকারি খাতে সিটি সার্ভিস ও আন্তঃজেলা বিলাসবহুল কোচ সার্ভিসের চলাচল উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতকিছুর পরেও অবশ্য মহানগরীগুলিতে পরিবহণ ব্যবস্থায় তেমন উন্নতি ঘটে নি। রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি উভয়খাত মিলিয়ে যাত্রীবাহী বাস চলছে ১,৭০০টি। অথচ যাত্রীদের চাহিদাপূরণে প্রয়োজন কমপক্ষে ৫,০০০টি বাসের প্রয়োজন। ঢাকা নগরীতে চলাচলকারী মোট যানবাহনের সংখ্যা সাড়ে ছয় লক্ষ। এর মধ্যে যন্ত্রচালিত গাড়ির সংখ্যা মাত্র আড়াই লাখ, বাকি ৪ লাখই রিকশা। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকা নগরীর ৬৫ শতাংশ বাসিন্দা কোন ধরনের যানবাহনে চড়ে না, অথচ তাদের হাঁটার জন্য রয়েছে মাত্র ২২০ কিলোমিটার ফুটপাত। বাকি যে সকল নগরবাসী চলাচলের জন্য যানবাহনে চড়ে, তাদের মধ্যে বেশির ভাগ (৩৫%) রিকশায় আরোহণ করে। বাসে চড়ে শতকরা ২৭ ভাগ যাত্রী, বেবি ট্যাক্সি ও টেম্পুতে চড়ে শতকরা ১৫ ভাগ এবং মাত্র ১১ শতাংশ যাত্রী প্রাইভেট কারে যাতায়াত করে। বর্তমানে (২০০১) ঢাকায় চার লেনবিশিষ্ট সড়ক রয়েছে ৪৩৬ কিলোমিটার এবং দুই লেনবিশিষ্ট রাস্তা রয়েছে ১,৪০৮ কিলোমিটার। প্রায় দশ মিলিয়ন জনসংখ্যা অধ্যুষিত এই নগরীতে মাত্র ৮ শতাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে সড়ক, জনপথ ও অলিগলি। অথচ যে কোন নগরীর সুষ্ঠু সড়ক পরিবহণের জন্য কমপক্ষে ২৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে রাস্তা থাকা প্রয়োজন। রাজধানী ঢাকার গণপরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে দশ হাজার মিলিয়ন টাকা ব্যয়ে সরকার এখন ঢাকা আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রজেক্ট নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
বাংলাদেশের সড়কগুলিতে সংখ্যার দিক থেকে সবচেয়ে শীর্ষে রয়েছে রিকশা। দেশে রেজিস্টার্ড রিকশার সংখ্যা ৫ লক্ষ ৭০ হাজার। এর মধ্যে ৪ লক্ষ ৭০ হাজারই শহরে চলাচল করে। বাকি এক লক্ষ পল্লী অঞ্চলে চলাচল করে। ঢাকা মহানগরীতে লাইসেন্সকৃত রিকশার সংখ্যা মাত্র ১,২৮,০৮৫, অথচ প্রকৃতপক্ষে নিবন্ধন ছাড়াই এর কয়েকগুণ বেশি রিকশা অবৈধভাবে চলাচল করে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে মোটরগাড়ি বৃদ্ধির বার্ষিক গড় হার ছিল ১০ শতাংশ যা জনসংখা বৃদ্ধির হারের চেয়ে অনেক বেশি। এই পাঁচ বৎসরে বিআরটিএ ৫০,৩৫০টি ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করে। পরবর্তী পাঁচ বছরে এই সংখ্যা বেড়ে ৮২,৬৮৮-তে দাঁড়ায়। ১৯৯০-৯৫ মেয়াদে বিআরটিএ ৮৬,১৭৪টি মোটরগাড়ির রুট পারমিট প্রদান করে। অথচ ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত যানবাহনের দেওয়া রুট পারমিটের সংখ্যা গড়ে দাঁড়ায় ১,১৫,৭৮৬টিতে। বিআরটিএ ১৯৯০-এর দশকের প্রথম পাঁচ বছরে ৯৬,৬২৩টি এবং পরবর্তী পাঁচ বছরে ১,৬০,৬২৬টি মোটরগাড়ি নিবন্ধন করে। ২০০০ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের সড়কগুলিতে চার লক্ষ ছয় হাজারেরও বেশি বিভিন্ন ধরনের যান্ত্রিক মোটরযান চালু ছিল। এর মধ্যে বাস ও মিনিবাস ২৬,৭০৭টি, মাইক্রোবাস ১২,৫৮০টি, ট্রাক ৪২,৭৫০টি, জিপ ১০,৩৪৬টি, কার ৫৬,৩৭৭টি, ট্যাক্সি ২,৩৭৬টি, অটোরিকশা ও অটো টেম্পু ৮৯,৩১৭টি এবং মোটর সাইকেল ১,৬৫,৪৬০টি। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে দেশের প্রায় সকল বড় শহরে বেসরকারি ট্যাক্সি ক্যাব চালু হয়েছে। বিদেশী সহায়তায় স্থানীয় উদ্যোক্তারা ঢাকায় শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস সার্ভিস চালু করেছে। ভারতের প্রতিবেশী রাজ্যগুলির রাজধানীর সাথে ঢাকার সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা থেকে কলকাতা ও আগরতলায় নিয়মিত বিলাসবহুল কোচ সার্ভিস চলাচল করছে এবং যানবাহনের সংখ্যা আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় অনিবার্যভাবে নগরী ও বড় শহরগুলিতে যানজট সৃষ্টি একটি দৈনন্দিন বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ