আফ্রিকা আয়তন ও জনসংখ্যা উভয় বিচারে বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মহাদেশ (এশিয়ার পরেই)। পার্শ্ববর্তী দ্বীপগুলোকে গণনায় ধরে মহাদেশটির আয়তন ৩০,২২১,৫৩২ বর্গ কিলোমিটার (১১,৬৬৮,৫৯৮ বর্গমাইল) । এটি বিশ্বের মোট ভূপৃষ্ঠতলের ৬% ও মোট স্থলপৃষ্ঠের ২০.৪% জুড়ে অবস্থিত। এ মহাদেশের ৬১টি রাষ্ট্র কিংবা সমমানের প্রশাসনিক অঞ্চলে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ, অর্থাৎ বিশ্বের জনসংখ্যার ১৪% বসবাস করে। আফ্রিকার প্রায় মাঝখান দিয়ে বিষুবরেখা চলে গেছে। এর বেশির ভাগ অংশই ক্রান্তীয় অঞ্চলে অবস্থিত। মহাদেশটির উত্তরে ভূমধ্যসাগর, উত্তর-পূর্বে সুয়েজ খাল ও লোহিত সাগর, পূর্বে ভারত মহাসাগর, এবং পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। উত্তর-পূর্ব কোনায় আফ্রিকা সিনাই উপদ্বীপের মাধ্যমে এশিয়া মহাদেশের সাথে সংযুক্ত।
আফ্রিকা একটি বিচিত্র মহাদেশ। এখানে রয়েছে নিবিড় সবুজ অরণ্য, বিস্তীর্ণ তৃণভূমি, জনমানবহীন মরুভূমি, সুউচ্চ পর্বত এবং খরস্রোতা নদী। এখানে বহু বিচিত্র জাতির লোকের বাস, যারা শত শত ভাষায় কথা বলে। আফ্রিকার গ্রামাঞ্চলে জীবন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একই রয়ে গেছে, অন্যদিকে অনেক শহরে লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
আফ্রিকা মানবজাতির আতুড়ঘর। বিজ্ঞানীরা মনে করেন আজ থেকে ৮০ থেকে ৫০ লক্ষ বছর আগে এখানেই আদি মানবেরা এপ-জাতীয় প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়। আজ থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ৯০ হাজার বছর আগে আধুনিক মানুষের উৎপত্তি ঘটে এবং এরা আফ্রিকা থেকে পৃথিবীর অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ৫ হাজার বছর আগে উত্তর-পূর্ব আফ্রিকায় বিশ্বের প্রথম মহান সভ্যতাগুলির একটি, মিশরীয় সভ্যতা, জন্মলাভ করে। এরপর আফ্রিকাতে আরও বহু সংস্কৃতি ও রাজ্যের প্রতিষ্ঠা ও পতন হয়েছে। ৫০০ বছর আগেও সারা আফ্রিকা মহাদেশ জুড়ে সমৃদ্ধ নগর, বাজার, এবং শিক্ষাকেন্দ্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল।
বিগত ৫০০ বছরে ইউরোপীয় বণিক ও ঔপনিবেশিকেরা ক্রমান্বয়ে আফ্রিকার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। ইউরোপীয় বণিকেরা লক্ষ লক্ষ আফ্রিকানদের দাস হিসেবে উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের প্ল্যান্টেশনগুলিতে পাঠায়। ইউরোপীয়রা আফ্রিকার প্রাকৃতিক সম্পদ নিজেদের দেশের কলকারখানায় কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের জন্য নিষ্কাশন করা শুরু করে। ১৯শ শতকের শেষ নাগাদ ইউরোপীয়রা প্রায় সমস্ত আফ্রিকা মহাদেশ দখল করে এবং একে ইউরোপীয় উপনিবেশে পরিণত করে।
কোথাও সহিংস যুদ্ধ, আবার কোথাও বা ধীর সংস্কারের মাধ্যমে প্রায় সমস্ত আফ্রিকা ১৯৫০ এবং ১৯৬০-এর দশকের মধ্যে স্বাধীনতা অর্জন করে। বিশ্ব অর্থনীতিতে উপনিবেশ-পরবর্তী আফ্রিকার অবস্থান দুর্বল। এখানকার যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থা অনুন্নত এবং রাষ্ট্রগুলির সীমানা যথেচ্ছভাবে তৈরি। নতুন এই দেশগুলির নাগরিকদের ইতিহাস ও সংস্কৃতিগত দিক থেকে একতা বলতে তেমন কিছুই ছিল না।
আফ্রিকাতে ৫৩টি রাষ্ট্র আছে। এদের মধ্যে ৪৭টি আফ্রিকার মূল ভূখণ্ডে এবং ৬টি আশেপাশের দ্বীপগুলিতে অবস্থিত। সাহারা মরুভূমির মাধ্যমে মহাদেশটিকে দুইটি অংশে ভাগ করা হয়। সাহারা বিশ্বের বৃহত্তম মরুভূমি; এটি আফ্রিকা মহাদেশের উত্তর অংশের প্রায় পুরোটা জুড়ে বিস্তৃত। সাহারার উত্তরে অবস্থিত অঞ্চলকে উত্তর আফ্রিকা বলা হয়। সাহারার দক্ষিণে অবস্থিত আফ্রিকাকে সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা বলা হয়। সাহারা-নিম্ন আফ্রিকাকে অনেক সময় কৃষ্ণ আফ্রিকাও বলা হয়। উত্তর আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে আছে আলজেরিয়া মিশর লিবিয়া মরক্কো এবং তিউনিসিয়া। সাহার-নিম্ন আফ্রিকাকে আবার পশ্চিম আফ্রিকা, পূর্ব আফ্রিকা, মধ্য আফ্রিকা এবং দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকা অঞ্চলগুলিতে ভাগ করা হয়। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলি হল বেনিন, বুর্কিনা ফাসো, ক্যামেরুন, চাদ, আইভরি কোস্ট , ঘানা , গিনি , গিনি-বিসাউ , লাইবেরিয়া , মালি , মৌরিতানিয়া , নাইজার , নাইজেরিয়া , সেনেগাল , সিয়েরা লিওন , গাম্বিয়া টোগো। পূর্ব আফ্রিকাতে আছে বুরুন্ডি , জিবুতি , ইরিত্রিয়া , ইথিওপিয়া , কেনিয়া , মালাউই , মোজাম্বিক , রুয়ান্ডা , সুদান , সোমালিয়া , তানজানিয়া এবং উগান্ডা। মধ্য আফ্রিকাতে আছে অ্যাঙ্গোলা , মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র , বিষুবীয় গিনি , গাবন, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র , গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র এবং জাম্বিয়া। দক্ষিণাঞ্চলীয় আফ্রিকার দেশগুলির মধ্যে আছে বতসোয়ানা , লেসোথো , নামিবিয়া , দক্ষিণ আফ্রিকা , সোয়াজিল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়ে। আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্রগুলির মধ্যে আছে আটলান্টিক মহাসাগরের কেপ ভার্দ এবং সাঁউ তুমি ও প্রিন্সিপি; ভারত মহাসাগরের কোমোরোস , মাদাগাস্কার , মরিশাস এবং সেশেল।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ