কৃষিশিক্ষা কৃষি সংশ্লিষ্ট শিক্ষা, কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দেশে কৃষিশিক্ষার প্রথম ও মজবুত বুনিয়াদ গড়ে ওঠে ১৯৩৮ সালে তদানীন্তন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ.কে ফজলুল হক কর্তৃক ঢাকার মণিপুর ফার্মে (বর্তমানে শেরে-বাংলা নগর) বেঙ্গল কৃষি ইনস্টিটিউট (Bengal Agricultural Institute) প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। Royal Agriculture Commission-এর পরামর্শক্রমে প্রতিষ্ঠিত এ ইনস্টিটিউট ছিল তৎকালে প্রদেশে উচ্চতর কৃষিশিক্ষার একমাত্র প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদেরও মর্যাদা পেয়েছিল।পরবর্তী সময়ে এটি বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট (Bangladesh Agricultural Institute/BAI), নামে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যায়ের অধিভুক্ত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে।
কৃষিশিক্ষা, বিশেষত উচ্চতর কৃষিশিক্ষা বিভিন্ন সময়ে নানা বিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট থেকে দু’পর্যায়ে ডিগ্রি দেওয়া হতো, মৌলিক বিজ্ঞান বিষয়ে দু’বছরের বি.এসসি (কৃষি) এবং ফলিত কৃষি বিজ্ঞান বিষয়ে আরও দু’বছরের বি.এজি ডিগ্রি। পরবর্তীকালে ১৯৪৫ সালে ৩ বছরের বি.এজি ডিগ্রি চালু করা হয় এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত হওয়ার পর বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট চার বছরের বি.এসসি এজি কোর্স চালু করে। নতুন পরিবর্তিত বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধারা বহাল রয়েছে।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পেছনে ১৯৫৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর তদানীন্তন পাকিস্তান সরকার কর্তৃক গঠিত জাতীয় শিক্ষা কমিশনের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এ কমিশনই সর্বপ্রথম জরুরি ভিত্তিতে পাকিস্তানের দুই অংশে দুটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরামর্শ দেয়। কমিশন কৃষি কলেজে তৎকালীন প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে অভিমত রাখে যে, সরকারি বিভাগের বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মধ্যে কৃষিশিক্ষার পূর্ণ বিকাশ কখনই সম্ভব নয়, কেননা সকল উচ্চশিক্ষার জন্য অপরিহার্য যে গবেষণার পরিবেশ তা কলেজে বিদ্যমান নেই। বিভিন্ন বিষয় যথাযথ বিবেচনার পর কমিশন এ সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে, একমাত্র স্বায়ত্তশাসিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাই কৃষি বিষয়ে শিক্ষাদান ও গবেষণা কার্যক্রমের সর্বোচ্চ বিকাশ নিশ্চিত করতে পারে। সম্প্রসারণ কার্যক্রমের কথা উল্লেখ না করলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের কৃষিশিক্ষা ব্যবস্থায় গবেষণা, শিক্ষা ও সম্প্রসারণ একীকরণের বিষয়টি পর্যালোচনাকালে কমিশন মন্তব্য করে যে, ‘কৃষকদের কাছে ব্যবহার্য ও গ্রহণযোগ্যরূপে পৌঁছাতে না পারলে গবেষণার ফলাফলের মূল্য সামান্যই, আর তাই নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সবগুলি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষামূলক সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা করা উচিত। এভাবে কমিশন প্রথমবারের মতো কৃষিক্ষেত্রে গবেষণা, শিক্ষাদান ও সম্প্রসারণ একীভূত করার মতো তাৎপর্যপূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়েছিল।
পরিশেষে ১৯৬১ সালে ময়মনসিংহে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্তমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে উচ্চতর কৃষিশিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি ঘটে। এটির অধ্যাদেশ (১৯৬১) অনুযায়ী কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল ‘কৃষি ও কৃষির সকল শাখায় উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা।’ এ অধ্যাদেশের ২ পৃষ্ঠায় ৫ক অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে যে, জ্ঞানের যে কোনো শাখায় বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও জ্ঞানবিস্তারের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে।
তৎকালীন পাকিস্তান খাদ্য ও কৃষি কমিশন শিক্ষা কমিশনের সুপারিশকৃত গবেষণা, শিক্ষা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম একীকরণ সমর্থন করে নি। তারা মতপ্রকাশ করে যে, সম্প্রসারণের সকল কার্যক্রম সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান দ্বারাই পরিচালিত হওয়া উচিত। ফলে বাস্তবে কোনো সম্প্রসারণ কার্যক্রম ছাড়াই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গতানুগতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পথ অনুসরণ করে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত মাত্র দু’বছর সময়ের মধ্যে গৃহীত হয়েছিল। অন্যদিকে ভারত বেশ কয়েক বছরের চিন্তাভাবনার পর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ সকল বিষয় স্থির করে এবং বিখ্যাত ল্যান্ড গ্রান্ট কলেজের মডেল অনুসরণে বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রমের সকল পর্যায়ে শিক্ষা, গবেষণা ও সম্প্রসারণকে সমন্বিত করে। অন্যদিকে ভারতীয় শিক্ষা কমিশন (১৯৬৪) সে দেশে প্রতি রাজ্যে অন্ততপক্ষে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দেয়। বাংলাদেশের সঙ্গে অবস্থাগত পার্থক্যের কারণেই ভারতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রাজ্য সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে এবং শুধু জ্ঞানচর্চা ও পান্ডিত্যের ক্ষেত্রে সীমিত না থেকে ক্ষেতখামারের সমস্যা সমাধানে কৃষকদের সহায়তা করতে এগিয়ে আসে। সম্প্রসারণ কার্যক্রমের সীমাবদ্ধতার কারণে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব বিজ্ঞানীদের গবেষণালব্ধ জ্ঞান কৃষক ও অন্যান্য প্রান্তিকফলভোগীদের কাছে হস্তান্তরে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পারে নি। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পুরনো প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বর্ধমান চাহিদা অনুযায়ী গত ২০ বছরে আরও কয়েকটি নতুন ইনস্টিটিউট/কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
১৯৮০ সালে বি.এসসি, এজি ডিগ্রি দানের লক্ষ্যে গাজীপুরের সালনায় বাংলাদেশ কৃষিবিজ্ঞান কলেজ (Bangladesh College of Agricultural Sciences/BCAS) প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি কয়েকবার পুনর্বিন্যস্ত হয়েছে। ১৯৮৩ সালে কৃষির বিভিন্ন শাখায় এম.এসসি, এজি এবং পিএইচ.ডি ডিগ্রি দেওয়ার জন্য এটির নতুন নামকরণ হয় স্নাতকোত্তর কৃষি শিক্ষা ইনস্টিটিউট (Institute of Post Graduate Studies in Agriculture/IPSA)। সর্বশেষ ১৯৯৮ সালে একে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নামে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নীত করে কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে বি.এসসি (কৃষি), এম.এসসি (কৃষি) ও পিএইচ.ডি ডিগ্রি প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়। এটি এখন কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানান্তরিত হয়েছে। ১৯৭৮ সালে পটুয়াখালীর দুমকীতে পটুয়াখালী কৃষি কলেজ এবং ১৯৮৮ সালে দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ কৃষি কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন এ দুটি কৃষি কলেজ শুধু ফসলবিদ্যায় বি.এসসি, এজি ডিগ্রি দিয়ে থাকে। বর্তমানে পটুয়াখালী ও দিনাজপুরের কলেজ দুটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পুনর্গঠিত হয়েছে এবং কৃষি একটি অনুষদ হিসেবে থাকছে, আর এইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানগুলি কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থানান্তরিত হয়েছে।
রাজশাহী ও বগুড়ায় দুটি বেসরকারি কৃষি কলেজ আছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অধীনে চট্টগ্রামে অবস্থিত একটি College of Forestry বনবিদ্যায় বি.এসসি ডিগ্রি দিয়ে থাকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের Institute of Forestry and Environment স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি দেয়। এ ছাড়া পশুচিকিৎসায় ডিগ্রি দানের জন্য দুটি পশুচিকিৎসা কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়; একটি সিলেটে, অন্যটি চট্টগ্রামে। ব্যবস্থাপনা কাঠামো, পেশাগত সুযোগ-সুবিধা, স্বায়ত্তশাসন এবং তহবিল যোগানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি যে সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে, কলেজগুলি তা পায় না। শিক্ষাগত বিষয়ে কলেজগুলি অধিভুক্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এবং প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সরকারি বিভাগ বা ব্যবস্থাপনা বোর্ডের (বেসরকারি কলেজের ক্ষেত্রে) নিয়ন্ত্রণে। এ ধরনের দ্বৈত-নিয়ন্ত্রণ কলেজগুলিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ভোগকৃত পেশাগত সুযোগ, শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান এবং তহবিল যোগানোর সুবিধা থেকে দূরে রেখেছে। বর্তমানে এর দুটো কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (Agricultural Extension Training Institute/AETI) এবং বন ও পশুপালনের মতো কৃষির অন্যান্য উপখাতের প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলিও ডিপ্লোমা পর্যায়ের শিক্ষা দিয়ে থাকে।
ছাত্রভর্তি কৃষির সবগুলি উপখাত মিলিয়ে প্রতি বছর স্নাতক পর্যায়ে প্রায় ১২০০ এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ২০০-২৫০ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বনবিদ্যা ইনস্টিটিউট পিএইচ.ডি পর্যায়ে অধ্যয়নের সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ডিপ্লোমা কোর্সে প্রতি বছর কয়েকশ ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়ে থাকে।
পরীক্ষা-পদ্ধতি বিশ্বের অধিকাংশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোর্স ক্রেডিট পদ্ধতি এবং কঠোর অভ্যন্তরীণ মূল্যায়ন চালু হলেও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলি দীর্ঘদিন বার্ষিক পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ অব্যাহত রেখেছে। বিগত কয়েক বছরে এটি স্বীকৃত হয়েছে যে, সেমিস্টার পদ্ধতি ছাত্র ও শিক্ষক উভয়ের জন্যই ফলপ্রসূ। এ পদ্ধতিতে একজন শিক্ষক যেমন পাঠ্যসূচি বা পাঠ্যপুস্তক তৈরির জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন, তেমনি ছাত্রছাত্রীদেরও সর্বক্ষণ প্রস্ত্তত থাকার জন্য সারাবছর লেখাপড়া করতে হয়। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেমিস্টার পদ্ধতি প্রবর্তনের জন্য কাজ করছে। ইতিমধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাফল্যের সঙ্গে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হয়েছে।
অনুষদসমূহ ছয়টি অনুষদ নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় একমাত্র বহু-অনুষদীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এগুলি হচ্ছে কৃষিতত্ত্ব, পশুচিকিৎসা, মাৎস্যবিজ্ঞান, পশুপালন, কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিদ্যা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শুধু কৃষি অনুষদ থাকলেও অদূরভবিষ্যতে আরও নতুন অনুষদ খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। কৃষি/বনবিদ্যা/পশুপালন কলেজগুলিতে কয়েকটি বিভাগ নিয়ে শুধু একটি অনুষদ রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুষদ ছাড়াও আছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সিস্টেম নামে একটি গবেষণা ইউনিট এবং Graduate Training Institute (GTI)। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা সিস্টেম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রম/প্রকল্পে অর্থায়ন, সমন্বয় ও তদারকি করে থাকে আর GTI স্নাতক ডিগ্রিপ্রাপ্ত এবং কৃষি উন্নয়ন কর্মকান্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়।
ব্যবস্থাপনা কাঠামো এতে রয়েছে সিন্ডিকেট, একাডেমিক কাউন্সিল, বোর্ড অব স্টাডিজ, উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক কমিটি এবং অন্যান্য বিশেষ কমিটি আর তা মোটামুটি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়য়ের অনুরূপ। কলেজ/প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটগুলির ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিয়ন্ত্রণকারী বিভাগ/মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে অর্থবরাদ্দ দেয় ও তাদের কার্যক্রম তদারক করে। সীমিত শাসনক্ষমতা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়েই পরামর্শ দেয়।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার সুযোগ না থাকা বা সুযোগের অপ্রতুলতা থেকে যে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে তা অনুমানক্রমে তৎকালীন পাকিস্তান খাদ্য ও কৃষি কমিশনের পরামর্শ ছিল- ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নের জন্য যাতে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির পরীক্ষাগার ও খামারে কাজ করতে পারে সেজন্য বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে একটা ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যকরভাবে এ ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছেন।
বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা শক্তিশালী করার জন্য গঠিত যৌথ পর্যালোচনা দল (১৯৭৮) নিম্নোক্ত মতামত প্রকাশ করে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়কে ভারতের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের ল্যান্ড গ্রান্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। এ তুলনা সঠিক নয়, কারণ ভারতে ১৯৫৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠিত কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গড়ে তোলা হয়েছিল কৃষি কলেজ ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রশিক্ষণকে গতানুগতিক বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থা থেকে আলাদা করার জন্য। ভারতে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সংশ্লিষ্ট রাজ্যের কৃষি বিভাগের (মন্ত্রণালয়) অধীন। একইভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেসময় পশ্চিম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ধাঁচে গড়া তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বিকাশমান কৃষির চাহিদা পূরণের উপযুক্ত বিবেচিত না হওয়ায় ল্যান্ড গ্র্যান্ট কলেজগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসব কলেজ (পরবর্তীকালে ১৮৮৭ সালে বিশ্ববিদ্যালয়) বোর্ড অব রিজেন্টস (Board of Regents)-এর অধীনে ছিল যা নিয়ন্ত্রণ করত বোর্ড অব গভর্নরস, আর সেটা ছিল রাষ্ট্রীয় আইন প্রণেতাদের নিকট দায়বদ্ধ। ভারতের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় বা মার্কিন ল্যান্ড গ্রান্ট কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়- কোনোটিই শিক্ষা বিভাগ/মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নয়।
কৃষি গবেষণা বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ব্যবস্থার উদ্ভব ও মূল্যায়নের একটি দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। ১৮৮০ সালের দুর্ভিক্ষ কমিশনের পরামর্শক্রমে ভারতবর্ষের তদানীন্তন ব্রিটিশ সরকার ১৯০৬ সালে কৃষি বিভাগ গঠন করে। পরবর্তী সময়ে ১৯০৮ সালে ঢাকা শহরের কয়েক মাইল উত্তরে তেজগাঁয় কৃষি গবেষণাগার গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার পার্শ্ববর্তী ৪০৩ একর জমির উপর একটি পরীক্ষণ কেন্দ্রও প্রতিষ্ঠিত হয়। এ গবেষণা কেন্দ্র ঢাকা-মণিপুর ফার্ম (বর্তমানে শেরে-বাংলা নগর) হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে স্থানীয় পর্যায়ে গবেষণা ও প্রদর্শনী কার্যক্রম চালানোর জন্য বাংলার তৎকালীন প্রত্যেকটি জেলায় জেলা কৃষিখামার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
১৯৬২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ফসল, মৃত্তিকা, সার ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের ওপর পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রম পরস্পর-বিচ্ছিন্ন ছিল। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬০-৬৫) গ্রহণের মাধ্যমে একক প্রতিষ্ঠানে, পূর্ব পাকিস্তান কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (East Pakistan Agricultural Research Institute/EPARI) বিচ্ছিন্ন গবেষণা কার্যক্রমকে প্রথমবারের মতো সমন্বিত করা হয়।
পাকিস্তানের ‘দ্বিতীয় রাজধানী’ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তদানীন্তন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার ষাটের দশকের প্রথম দিকে ঢাকা-ফার্ম অধিগ্রহণ করে। কিন্তু গবেষণা অবকাঠামো স্থানান্তরের জন্য কোনো বিকল্প স্থান বরাদ্ধ না দেওয়ায় ১৯৬০ সালের দিকে এ অঞ্চলে কৃষি গবেষণা এক বাধার সম্মুখীন হয়। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ঢাকার ৩২ কিলোমিটার উত্তরে জয়দেবপুরে একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯৭৩ সালে এ নবপ্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট কার্যক্রম শুরু করে। দেশে ইতোমধ্যেই ধান, পাট, ইক্ষু, চা, বন, মৃত্তিকা, মৎস্য ও পশুসম্পদের ওপর পৃথক পৃথক ইনস্টিটিউট/গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর (১৯৭৩) এসব ইনস্টিটিউট/কেন্দ্রের অধিকাংশই পুনর্গঠিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে ১০টি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের ফসল, পশুসম্পদ, মৎস্য ও বনবিদ্যার ওপর কাজ করছে। অধিকন্তু বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কয়েকটি কৃষি কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সবগুলি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটই স্বাধীনভাবে গড়ে উঠেছিল এবং পরস্পর বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করছিল। প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও তাঁর জ্যেষ্ঠ সহকর্মীগণ প্রধানত ওই ইনস্টিটিউটের গবেষণা কার্যক্রম তৈরি করতেন। সাধারণত আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক সংযোগের অভাব ছিল এবং সেজন্য ইনস্টিটিউটগুলির গবেষণা কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব দেখা দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পর্যায়ে সামগ্রিক কার্যক্রম গ্রহণ অপিরহার্য হয়ে ওঠে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব অনুধাবন করেই ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয়। সারা দেশে কৃষি গবেষণার সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন সহজতর করার জন্য কৃষি গবেষণা পদ্ধতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে কাজ করার জন্যই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের সৃষ্টি। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ফসল, পশুসম্পদ, মৎস্য ও বনবিদ্যার ওপর গবেষণারত ১০টি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সবগুলিতেই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের ভূমিকা সম্প্রসারিত রয়েছে এবং এগুলির সমন্বয়ে বাংলাদেশের জাতীয় কৃষি গবেষণা ব্যবস্থা (National Agricultural Research System/NARS) গঠিত হয়েছে। NARS-এ দেড় হাজারের মতো বিজ্ঞানী কর্মরত আছেন।
NARS–এ কৃষি গবেষণার পরিকল্পনা, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন পরস্পর-বিচ্ছিন্ন প্রায় ডজন খানেক প্রতিষ্ঠানে দেশের কৃষি গবেষণা ছড়ানো ছিটানো থাকার দুর্বল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ গড়ে তোলা হয়। উপখাতগুলির (বিভিন্ন ফসল, পশুসম্পদ, মৎস্য ও বনবিদ্যা) সমস্যার অগ্রাধিকার নিরূপণ এবং পুরো গবেষণা ব্যবস্থার জনবল, ভৌত ও আর্থিক সম্পদ বরাদ্দের সমন্বয় বিধানে সমর্থ, কৃষি গবেষণার এমন কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা না থাকায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম গ্রহণ করে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে ছিল জাতীয় কৃষি গবেষণা পরিকল্পনা (National Agricultural Research Plan/NARP) প্রণয়ন, চাষাবাদে জরুরি সমস্যাসমূহের ওপর চুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রকল্প প্রস্ত্তত, গবেষণা ব্যবস্থার মানবসম্পদ জরিপ, জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন এবং কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও দলিল প্রস্ত্তত কেন্দ্র (Documentation Centre) প্রতিষ্ঠা।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন দাতাগোষ্ঠির সাহায্যপুষ্ট গবেষণা কার্যক্রমের পরিকল্পনা পরিবীক্ষণ, মূল্যায়ন ও সমন্বয়ের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের মধ্যে ১৯৮১-৮২ সালে কারিগরি সহায়তা সেবা বিভাগ (Technical Support Services Division) নামে একটি বিভাগ গড়ে তোলা হয়। ১৯৮২-৮৩ সালে চুক্তিভিত্তিক গবেষণা কার্যক্রমের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন শুরু হয়। এ মূল্যায়নলব্ধ ফলাফল বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের বিশ্বাসযোগ্যতা ও সুনাম বৃদ্ধি করে। বস্ত্ততপক্ষে এটিই ছিল বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নের প্রথম পদক্ষেপ। ১৯৮৩-৮৪ সালে কারিগরি সহায়তা সেবাপ্রদান বিভাগ ‘পরিকল্পনা ও মূল্যায়ন বিভাগ’ হিসেবে পুনর্গঠিত হয়। এ বিভাগের কার্যক্রম বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সেগুলির শিক্ষাদানমূলক বিভাগ/অনুষদসমূহের সাফল্য মূল্যায়ন পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ প্রথম জাতীয় কৃষি গবেষণা পরিকল্পনা (১৯৭৯-৮৩) প্রণয়ন করে। ১৯৮৩-৮৪ সালে দ্বিতীয় NARP (১৯৮৪-৮৮) প্রণয়নের জন্য আরেকটি কমিটি গঠিত হয়। এ ছাড়া ১৯৮৩-৮৪ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ ‘চুক্তিভিত্তিক গবেষণার জন্য ম্যানুয়াল’ প্রকাশ করে যাতে ছিল প্রকল্প নির্বাচনের রীতি, প্রকল্প পরিকল্পনার ধাপসমূহ, প্রকল্পের গুরুত্ব নির্ধারণ, প্রকল্প পরিবীক্ষণ, প্রতিবেদন তৈরি ও গবেষণালব্ধ ফলাফল মূল্যায়ন ও সদ্ব্যবহার। ১৯৮৪-৮৫ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ ম্যানুয়ালে বর্ণিত নীতিমালার ভিত্তিতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নকৃত চুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রকল্পসমূহের জন্য অর্ধবার্ষিক পরিবীক্ষণ পদ্ধতি প্রচলন করে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের একদল বিজ্ঞানী কর্তৃক অতঃপর মাঠপর্যায়ে পরিবীক্ষণের সূচনা ঘটে।
গবেষণা পরিকল্পনা জাতীয় পর্যায়ে কৃষি গবেষণার পরিকল্পনা প্রণয়নের দায়িত্ব বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ পালন করে থাকে। জাতীয় প্রয়োজন ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি গবেষণার পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা, জাতীয় কৃষি গবেষণা ব্যবস্থার গবেষণা সামর্থ্য উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা এবং যথাযথ গবেষণা অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রযুক্তি হস্তান্তর কৌশল পরিকল্পনা প্রণয়ন সবকিছুই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের দায়িত্ব। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো জাতীয় কৃষি গবেষণা পরিকল্পনা প্রণয়ন। এ ধরনের পরিকল্পনায় সাধারণত অগ্রাধিকারের পর্যায়িক হালনাগাদের অবকাশসহ পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য গবেষণার ক্ষেত্র নির্ধারিত হয়ে থাকে। জাতীয় কৃষি গবেষণা পরিকল্পনা কৃষি গবেষণার দিকনির্দেশনা দেয় এবং জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনায় সহায়তা যোগানোর ভিত্তিতে গবেষণার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য, অগ্রাধিকার ও সুযোগ বর্ণনা করে।
কৃষি গবেষণার কৌশলগত পরিকল্পনা বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ ২০১০ সাল ও তৎপরবর্তী সময়ে জাতীয় কৃষি গবেষণার জন্য ৬টি ব্যাপক কার্যক্ষেত্রভিত্তিক যে কৌশলগত পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে, তাতে আছে ১. উদ্ভিদ উৎপাদন প্রণালী; ২. পশুপালন প্রণালী; ৩. প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রণালী; ৪. কৃষি উৎপাদন সহায়তা প্রণালী; ৫. কৃষিনীতি সহায়তা প্রণালী; এবং ৬. কৃষিতথ্য সহায়তা প্রণালী। বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ পর্যায়িকভাবে কৃষি গবেষণারত জনবলের অবস্থান সম্পর্কে সমীক্ষা চালায় এবং সে ভিত্তিতে কৃষি গবেষণা কর্মীদের জন্য যথাযথ জনবল উন্নয়ন পরিকল্পনা (দীর্ঘ ও স্বল্প উভয় মেয়াদি প্রশিক্ষণ কার্যক্রম) গ্রহণ করে যাতে দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ থাকে।
গবেষণার জন্য যথাযথ অবকাঠামো গড়ে তোলার চাহিদার বিষয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ কর্তৃক পরীক্ষিত হয় এবং চালু গবেষণা প্রতিষ্ঠান/কেন্দ্রগুলিকে শক্তিশালী করার এবং চাহিদা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা দক্ষতা ও অর্থযোগানের ভিত্তিতে নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পদক্ষেপ গৃহীত হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ কর্তৃক নির্ধারিত অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ইনস্টিটিউট পর্যায়ে গবেষণা প্রকল্প তৈরি হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদের অর্থায়ন প্রত্যাশী কৃষি গবেষণা প্রকল্পসমূহের জন্য নির্দিষ্ট কয়েকটি মাপকাঠি বিবেচনাধীন থাকে।
গবেষণা পরিকল্পনা গ্রহণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ৯টি অঞ্চলে বিভক্ত হয়েছে। এগুলি ১. রংপুর ও দিনাজপুর; ২. বগুড়া, রাজশাহী ও পাবনা; ৩. কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা; ৪. বরিশাল, পটুয়াখালী ও ফরিদপুর; ৫. জামালপুর, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জ; ৬. কুমিল্লা ও সিলেট; ৭. নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম; ৮. পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ৯. ঢাকা ও টাঙ্গাইল।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কোনো অঞ্চলের কৃষি সম্পর্কিত সমস্যার নিরূপণের জন্য NARS ইনস্টিটিউটগুলির সঙ্গে যৌথভাবে আঞ্চলিক কর্মশালা আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এসব কর্মশালায় কৃষির ৪টি উপখাতের সবগুলি শস্য, মৎস্য, বন ও পশুসম্পদ নিয়ে আলোচনা হয়। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের NARS বিজ্ঞানীগণ, কৃষি কারিগরি কমিটির (Agricultural Technical Committee/ATC) সদস্যবর্গ, সম্প্রসারণ কর্মকর্তা এবং নেতৃস্থানীয় কৃষকগণ কর্মশালায় যোগ দেন। কর্মশালায় প্রদর্শনী প্লটসমূহের সমস্যা ও সম্ভাবনা এবং শস্য, মৎস্য, বন ও পশুসম্পদ ক্ষেত্রে বিরাজমান স্থানীয় সমস্যা নিয়ে পর্যালোচনা চলে। এভাবে মাঠপর্যায় থেকে গবেষণাযোগ্য বিষয়গুলি শনাক্ত করা হয়।
চুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রকল্প চুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত গবেষণার বিষয় একটি অঞ্চলের জন্য হলে ATC তা পরীক্ষা করবে এবং প্রকল্পটি একাধিক অঞ্চলের জন্য হলে এটি National Agriculutural Techinical Coordination Committee/NATCC কর্তৃক পরীক্ষিত হবে। ATC/NATCC-তে পরীক্ষার পর প্রকল্পটি অর্থসংস্থানের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদে পেশ করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ বিভাগীয় পর্যায়ে প্রকল্পটি পর্যালোচনার পর স্ব স্ব বিষয়ে বিশেষজ্ঞের কাছে পর্যালোচনার জন্য পাঠায়। পরে প্রকল্পটি পর্যালোচকের মন্তব্যসহ কারিগরি পরামর্শ কমিটিতে (Technical Advisory Committee/TAC) উপস্থাপন করা হয়। TAC-এ রয়েছেন ১. স্ব স্ব বিষয়ের সদস্য পরিচালক; ২. সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ২-৩ জন বিশেষজ্ঞ সদস্য; ৩. সদস্য-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) এবং ৪. সদস্য পরিচালক (কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজতত্ত্ব)। TAC-এর সকল সদস্য কোনো সংশোধন ছাড়া বা সংশোধিত আকারে প্রকল্পটি অনুমোদন করলে এটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য কার্যনির্বাহি পরিষদে পেশ করা হয়। কার্যনির্বাহি পরিষদের মন্তব্য/পরামর্শের ভিত্তিতে প্রকল্পগুলি সংশোধন করতে হয় এবং চেয়ারম্যান অর্থসংস্থানের জন্য সেটা পেশ করেন।
মূল্যায়ন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ বিভিন্ন পর্যায়ে ইনস্টিটিউটগুলির গবেষণা কার্যক্রমের মূল্যায়ন করে থাকে। ১৯৮৬ সালে পরিকল্পনা কমিশনের অনুরোধে ইক্ষু গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (Sugarcane Research and Training Institute/SRTI) কার্যক্রমের ফলাফল (performance) মূল্যায়ন করা হয়েছিল এবং ওই একই বছরে বিশেষ মুল্যায়ন কমিটির মাধ্যমে USAID/ Winrock International এবং ARP-III (বিশ্ব ব্যাংক) প্রকল্পসমূহের কর্মকান্ডও মূল্যায়ন করা হয়েছিল। এ ছাড়া আমন্ত্রিত বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ চুক্তিভিত্তিক গবেষণা প্রকল্পসমূহের বার্ষিক পর্যালোচনা করে থাকে।
জাতীয় কৃষি গবেষণা ব্যবস্থার আওতাভুক্ত গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলি সাধারণভাবে এখনও সম্পূর্ণ দলিলকৃত পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রক্রিয়া গড়ে তুলতে পারে নি। উদাহরণস্বরূপ NARS-এর সর্ববৃহৎ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে বছরে একবার বার্ষিক কার্যক্রম পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে সভায় পরবর্তী বছরের গবেষণা কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা চলে। অন্যসব NARS ইনস্টিটিউটে একই অবস্থা বিরাজমান, ব্যতিক্রম শুধু BRRI যেখানে বার্ষিক পর্যালোচনা সভায় কার্যক্রম ও প্রকল্পসমূহের অপেক্ষাকৃত বিশদ আলোচনা চলে এবং বিজ্ঞানীদের জবাবদিহিতা তুলে ধরা হয় এবং প্রতি তৃতীয় বছরে একবার বহিঃপর্যালোচনার ব্যবস্থা থাকে। বহিরাগত পর্যালোচকদল BRRI-র গবেষণা কার্যক্রম ও ফলাফল মূল্যায়ন করে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা পরিষদ প্রণীত পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা অনুসরণে ইনস্টিটিউটগুলি যথাসময়ে যাতে গবেষণা পরিকল্পনা প্রস্ত্তত করে বর্তমানে তেমন পদক্ষেপ গৃহীত হয়েছে। ইনস্টিটিউটগুলি কর্তৃক গৃহীত গবেষণা কার্যক্রম এখন অনেক সুশৃঙ্খল ও প্রয়োগধর্মী।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ