♦ সমভূমির সংজ্ঞা:- সমুদ্রপৃষ্ঠের একই সমতলে বা সামান্য উঁচুতে (৩০০ মিটারের মধ্যে) অবস্থিত সমতল স্থলভাগকে সমভূমি [Plain] বলে।
♦ সমভূমির [Plain] প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট :-
১) সমভূমির [Plain] উপরিভাগ সাধারণত সমতল হয়;
২) সমভূমি [Plain] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশি উঁচু হয়না;
৩) কোনো কোনো স্থানে সমভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ কিছুটা উঁচু হয়, যেমন- উত্তর আমেরিকার রকি পর্বতের পাদদেশের সমভূমি [Plain] সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ খানিকটা উঁচু ;
৪) কোনো কোনো স্থানের সমভূমি আবার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কিছুটা নীচে অবস্থিত হয়, যেমন- এশিয়া মহাদেশের কাস্পিয়ান সাগরের উপকূল ভাগের সমভূমি [Plain] সমুদ্রপৃষ্ঠের চেয়ে নীচু ;
৫) কখনও কখনও সমভূমি সামান্য কিছুটা ঢেউখেলানো হয়, যেমন- বর্ধ্মান জেলার সমভূমি কিছুটা ঢেউ খেলানো ।
৬) পৃথিবীর বেশিরভাগ সমভূমি সমুদ্র উপকূল এবং নদী অববাহিকায় গড়ে উঠেছে ।
৭) সমভূমি অতি ধীরে ঢালু হয়ে সাগর পৃষ্ঠের সঙ্গে মিশে ।
♦ সমভূমির উৎপত্তি ও শ্রেণিবিভাগ :
সমভূমি নানাভাবে সৃষ্টি হয় । পৃথিবীর যে অংশের বহিরাবরাণে এখানও ভাঁজ পড়ে নি, সেখানে সুবিস্তৃত সমতল ক্ষেত্র বিরাজ করছে । যেমন এশিয়ার উত্তরে সাইবেরিয়ার সমভূমি । অবনত ভূমি অনেক সময় নদী ও হিমবাহ বাহিত পলি ও মোরেণ দিয়ে ভরাট হয়ে সমভূমিতে পরিণত হয় । ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্র থেকে উপকূল সমভূমি জেগে ওঠে । উৎপত্তি অনুসারে বিভিন্ন সমভূমিকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
১) সঞ্চয়জাত সমভূমি,
২) ক্ষয়জাত সমভূমি এবং
৩) ভূ-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি।
সঞ্চয়জাত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: যুগ যুগ ধরে নদীর দু’পাশে বা নদী মোহনায় পলি জমে এই সমভূমির সৃষ্টি হয় । সঞ্চয়জাত সমভূমিকে প্রধানত ৮ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা—
ক) পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain]: উঁচু পর্বত থেকে নদী খরবেগে নীচে নামে । নামার সময়ে নুড়ি, পাথর, বালি,কাঁকর, কাদা নিয়ে আসে । নীচে নেমে নদীর স্রোতের বেগ কমে যায় । নদী তার নিম্নগতিতে সমুদ্রের কাছাকাছি চলে এলে নদীপথের ঢাল হ্রাস পায় এবং নদীবাহিত শিলাখন্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি নদী তার দুই তীরে জমা করতে থাকে । ক্রমশ এই পলিমাটি জমে নদীর দুই তীরের নিচু জায়গা ভরাট হয়ে যায় ও সমভূমির রূপ নেয় । পলি দিয়ে এই সমভূমি গঠিত হয় বলে এর নাম পলিগঠিত সমভূমি [Alluvial Plain] ।
খ) প্লাবনসমভূমি বা বন্যাগঠিত ভূমি [Flood Plain] সৃষ্টির কারণ- নদী তার নিম্নগতিতে সমুদ্রের কাছা কাছি চলে এলে নদীর ভূমির ঢাল হ্রাস পায় এবং নদী বাহিত শিলাখন্ড, নুড়ি, বালি প্রভৃতি নদীগর্ভে সঞ্চিত হতে থাকে যার ফলে নদীর গভীরতা ক্রমশ কমে যায় । বর্ষাকালে হঠাৎ নদীতে জল বেড়ে গেলে এই অগভীর নদী উপত্যকা অতিরিক্ত জল বহন করতে পারে না, এর ফলে নদীতে বন্যা দেখা দেয় । বন্যার জল দুকূল প্লাবিত করে এবং প্লাবিত অঞ্চলে বালি, কাদা, পলি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে এক নতুন ভূমিরূপ বা প্লাবন সমভূমির [Flood Plain] সৃষ্টি হয় ।
গ) ব-দ্বীপ সমভূমি [Deltaic Plain] সৃষ্টির কারণ- নদী যেখানে সমুদ্রে এসে পড়ে তাকে নদীর মোহনা বলে । এই মোহানাতে নদীর জলের সঙ্গে বাহিত পলি জমে ( নুড়ি, কাঁকর, কাদা, বালি) যে নতুন ভূভাগের সৃষ্টি হয় তাকে দ্বীপ বলে । দ্বীপের চারিদিকেই জল থাকে । এই দ্বীপকে দেখতে যখন অনেকটা বাংলা ‘ব’বা গ্রিক অক্ষর ডেল্টা -র মতো হয়, তখন তাকে বদ্বীপ বা ডেল্টা (Delta) বলে ।
ঘ) উপকূলীয় সমভূমি [Coastal Plain] সৃষ্টির কারণ- নানাভাবে উপকূল সমভূমি সৃষ্টি হয়, যেমন-
১) সমুদ্রস্রোতের মাধ্যমে আসা পলি, বালি, কাঁকর প্রভৃতি পদার্থ উপকূলের অগভীর সমুদ্রে ক্রমাগত সঞ্চিত হয়ে উপকূলে সমভূমির সৃষ্টি করে; আবার
২) সমুদ্রের ঢেউ এবং জোয়ার-ভাটার প্রভাবে উপকূলের ভূমির ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ অগভীর সমুদ্রে সঞ্চিত হয়ে সমভূমির সৃষ্টি করে । এছাড়া
৩) উপকূলের কাছাকাছি সমুদ্রের অগভীর অংশ নদীবাহিত পলি দ্বারা ভরাট হয়ে বা ভূমিকম্পের ঊর্ধ্বচাপের প্রভাবে উঁচু হয়েও উপকূলীয় সমভূমি সৃষ্টি হতে পারে।
ঙ) হ্রদ সমভূমি সৃষ্টির কারণ- নদীবাহিত বালি, নুড়ি, কাঁকর, পলি প্রভৃতি দ্বারা কোনো হ্রদ ভরাট হলে কালক্রমে যে সমভূমির সৃষ্টি হয় তাকে হ্রদ সমভূমি বলে। কাশ্মীর উপত্যকা ও উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার তাল সমভূমি অঞ্চল হ্রদ ভরাট হয়ে সৃষ্টি হয়েছে ।
চ) লাভা সমভূমি [Lava Plain] সৃষ্টির কারণ- আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ফলে পৃথিবীর ভিতরকার গলিত লাভা ভূগর্ভের ফাটল দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে অনেক সময় যে সমতল ভূমির সৃষ্টি করে, তাকে লাভা সমভূমি [Lava Plain] বলে। দাক্ষিণাত্যের উত্তর-পশ্চিম দিকের কিছু অংশে লাভা সমভূমি [Lava Plain] দেখা যায়।
ছ) হিমবাহ সমভূমি সৃষ্টির কারণ- যেসব সমভূমি হিমবাহের প্রবল চাপ, ঘর্ষণ প্রভৃতি কারণের ফলে সৃষ্টি হয়, তাদের হিমবাহ সমভূমি বলে । ভারতের কাশ্মীর ও কুমায়ুন অঞ্চলে এই ধরনের সমভূমি দেখা যায়। উত্তর আমেরিকার প্রেইরি অঞ্চলের সমভূমি হিমবাহ সমভূমির উদাহরণ ।
জ) লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] : বায়ুপ্রবাহের পরিবহন ও সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । অতিসূক্ষ্ম বালিকণা, মাটির কণা বা মৃত্তিকা বায়ুর দ্বারা পরিবাহিত হয়ে মরুভূমি সীমানার অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে জমা হয়ে যে সমভূমি গঠন করে তাকে লোয়েস সমভূমি [Loess Plain] । এর রং হলদে । কিন্তু এই মাটি খুবই উর্বর ।
ক্ষয়জাত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: নীচু মালভূমি ও পার্বত্য অঞ্চলে বহুদিন ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ক্ষয়জাত সমভূমির সৃষ্টি হয়। ক্ষয়জাত সমভূমি দু ধরনের হয় যথা— ক) সমপ্রায় ভূমি এবং খ) পাদদেশীয় সমভূমি।
ক) সমপ্রায় ভূমি সৃষ্টির কারণ: নদীর জলপ্রবাহ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে প্রাচীন মালভূমি এবং উচ্চভূমি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষয় পেতে পেতে এক সময় উঁচু-নীচু ঢেউ-খেলানো ভূমি বা প্রায় সমতলভূমিতে পরিণত হলে তাদের সমপ্রায় ভূমি বলা হয়।
খ) পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট সৃষ্টির কারণ- বায়ু এবং জলের ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের ফলে মরুভূমি অঞ্চলের পর্বতের ঢাল ও পাদদেশভাগ পাথরে ঢাকা ঢালু সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে পাদদেশীয় সমভূমি বা পেডিমেন্ট সৃষ্টি হয় (অ্যাটলাস পর্বতের পাদদেশের সমভূমি )।
ভু-আন্দোলনের ফলে গঠিত সমভূমি সৃষ্টির কারণ: ভূ-আন্দোলনের ফলে সাধারণত দু’রকমের সমভূমির সৃষ্টি হয়, যথা— ক) উন্নত সমভূমি ও খ) অবনত সমভূমি । ভূমিকম্পের ফলে নীচু স্থান উঁচু হয়ে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, ভারতের করমন্ডল উপকূল) এবং উঁচু স্থান নীচু হয়ে অবনত সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, তুরানের নিম্ন সমভূমি)।
ক) উন্নত সমভূমি:- ভূমিকম্পের ফলে নীচু স্থান উঁচু হয়ে উন্নত সমভূমির সৃষ্টি হয় (যেমন, ভারতের করমন্ডল উপকূল)
খ) অবনত সমভূমি:- ভূমিকম্পের ফলে উঁচু স্থান নীচু হয়ে অবনত সমভূমি সৃষ্টি হয় (যেমন, তুরানের নিম্ন সমভূমি)।
♦আউট-ওয়াস সমভূমি [Out-Wash-Plain]:- হিমবাহের সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, বহিঃধৌত সমভূমি বা আউট-ওয়াশ সমভূমি [Out-Wash-Plain] হল তাদের মধ্যে অন্যতম ভূমিরূপ । উচ্চ পর্বতের পাদদেশে হিমবাহ এসে পৌঁছালে তা গলে নদীর সৃষ্টি হয় এবং সেখানে হিমবাহ-বাহিত পাথরের টুকরো, নুড়ি, কাঁকর, বালি, কাদা প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে বিস্তীর্ণ সমভূমি গঠন করে তাকে আউট-ওয়াশ প্লেন বা বহিঃধৌত সমভূমি [Out-Wash-Plain] বলে ।
FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ