মৌমাছি চাষ

মৌমাছি চাষ

মৌমাছিকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এনে মৌচাকের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন করাকেই বলা হয় মৌমাছি পালন। পালনের জন্য ভারতীয় জাতের মৌমাছি সবচেয়ে উপযোগী। ছোট সোনালি বর্ণের ও সাদা ডোরাকাটা এ মৌমাছিরা গাছের গর্তে বা অন্য কোনো গহ্বরে একাধিক সমান্তরাল চাক তৈরি করে বসবাস করে। গর্তে প্রবেশ পথের সঙ্গে চাকগুলো সমান্তরালভাবে সাজানো থাকে। মৌমাছিদের এরূপ বাসস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয় কাঠের বাক্স। কাঠের মৌবাক্সে মৌমাছি পালনই আধুনিক ব্যবস্থা। 
প্রয়োজনীয়তা
প্রাকৃতিক মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের সময় সাধারণত চাকটিকে নষ্ট করে ফেলা হয়। এতে বিপুলসংখ্যক মৌমাছিও মারা পড়ে। এছাড়াও চাকে অবস্থিত ডিম ও বাচ্চা নষ্ট হয়। অন্যদিকে কৃত্রিম চাক নষ্ট না করায় কোনো মৌমাছি মারাও যায় না, আবার মধু সংগ্রহ করার পর পরই মধু জমা করতে পারে মৌমাছিরা। এছাড়া যেখানে এ চাষ করা হয় সেখানে ফসলের উৎপাদনও বেড়ে যায়। এসব সুবিধা বিবেচনা করেই আপনি শুরু করতে পারেন মৌচাষ।
উপযুক্ত পরিবেশ
মৌবাক্স রাখার জন্য নির্বাচিত স্থানটি ছায়াযুক্ত, শুকনা ও আশপাশে মৌমাছির খাদ্য সরবরাহের উপযোগী গাছ-গাছড়া দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়া আবশ্যক। প্রয়োজনে কিছু কিছু ঋতুভিত্তিক গাছ জরুরি ভিত্তিতে লাগানো যেতে পারে। নির্বাচিত স্থানের আশপাশে যেন বিকট শব্দ সৃষ্টিকারী এবং ধোঁয়া উৎপাদনকারী কোনো কিছু না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
পালন
যে কাঠের বাক্সে মৌমাছি পালন করা হয় সেটি বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে তৈরি। তলার কাঠ, বাচ্চাঘর, মধুঘর, ঢাকনা ও ছাদ হচ্ছে একটি মৌবাক্সে বিভিন্ন অংশ। মধুঘর ও বাচ্চাঘরে সারি সারি কাঠের ফ্রেম সাজিয়ে দেয়া হয়। এ ফ্রেমেই মৌমাছিরা চাক তৈরি করে। কোনো গাছের গর্ত থেকে মৌমাছি ও তাদের চাক সংগ্রহ করার পর বাক্স দেয়া হয়। একটি মৌমাছি পরিবারে থাকে মাত্র একটি রানী মৌমাছি, কিছু পুরুষ এবং অধিকাংশ শ্রমিক মৌমাছি। চাক তৈরি, বাচ্চাদের লালনপালন, মধু এবং ফুলের পরাগ সংগ্রহ ইত্যাদি সব কাজ শ্রমিক মৌমাছিরাই সম্পাদন করে। কিন্তু মৌমাছি পালন করে চাক থেকে মধু পেতে হলে একজন মৌমাছি পালককে মৌমাছিদের যত্ন নিতে হবে। বছরের বিভিন্ন ঋতুতে নানা প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এদের রোগ প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া মৌমাছি পালন তথ্য পরিচর্যার অন্তর্ভুক্ত। এখানে সংক্ষেপে এ নিয়ে কিছু আলোচনা করা হলো-
মৌসুমি ব্যবস্থাপনা
বিভিন্ন ঋতুতে মৌমাছির পরিচর্যাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-মৌমাছির বংশ বৃদ্ধির সময়ে, যখন প্রকৃতিতে প্রচুর খাদ্য পাওয়া যায় তখন এবং খাদ্যসংকট চলাকালে।
১. বংশ বৃদ্ধিকালে: রানী মৌমাছি যখন প্রচুর ডিম পেড়ে একটি মৌবাক্সে মৌমাছির সংখ্যা বাড়তে থাকে সে সময়টাই হলো বৃদ্ধিকাল। এ সময় প্রকৃতিতে ফুলের সমারোহ দেখা যায় এবং মৌমাছিরা প্রচুর পরিমাণে পরাগরেণু এবং ফুলের রস সংগ্রহ করে। বংশ বৃদ্ধিকালে বাচ্চাঘরে নতুন ফ্রেম দিতে হবে। বাক্সে কোনো পুরনো ও ত্রুটিপূর্ণ রানীকে সরিয়ে নতুন রানীর সংযোজন করতে হবে। সাধারণত বৃদ্ধিকালের শেষ দিকে মৌমাছিরা ঝাঁক বাঁধে। ঝাঁক বেঁধে মৌমাছিরা যাতে অন্য কোথাও উড়ে চলে না যায় এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। মৌমাছির সংখ্যা যদি অনেক বেশি হয় তবে তাদের একাধিক বাক্স ভাগ করে দেয়া উচিত। 
২. খাদ্য সঞ্চয়কালে: এ সময়ে প্রকৃতিতে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়। মৌমাছিদের সংগৃহীত পরাগরেণু বাচ্চা মৌমাছিদের খাওয়ানো হয়। ফুলের রস দিয়ে মৌমাছিরা মধু তৈরি করে মধুঘরের চাকে জমা করে। মধু রাখার স্থানের যাতে অভাব না হয় এজন্য মধু ঘরে আরও নতুন চাক দিতে হবে। চাকের শতকরা ৭৫টি কুঠুরি যখন ঘন মধুতে ভরে যাবে তখন মৌমাছিরা ঢাকনা দিয়ে ফেলবে, এসময় সে চাক থেকে মধু নিষ্কাশন করে নিতে হবে। প্রয়োজনবোধে মৌমাছি পালনক্ষেত্র থেকে কিছু মৌবাক্স সরিয়ে অন্য স্থানে নিতে হবে যাতে বিশেষ কোনো এলাকা থেকে মৌমাছিরা আরও বেশি মধু সঞ্চয় করতে পারে। শীতের প্রচণ্ড প্রকোপে মৌমাছিদের যেন কষ্ট না হয় এজন্য শীতের রাতে মৌবাক্সটি চট বা ছালা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।
৩. খাদ্য সংকটকালে: এ সময়ে প্রকৃতিতে খাদ্য সংগ্রহ করার মতো ফুল খুব কম থাকে, ফলে মৌমাছিরা খাদ্য সংকটে পড়ে। খাবারের অভাব মিটাতে এ সময় চিনির সিরাপ দিতে হবে। যে পাত্রে সিরাপ পরিবেশন করা হবে সেটি বাক্সে ভেতরে রেখে সিরাপের পরে একটি কাঠি বা পাতা দিতে হবে, যাতে মৌমাছিরা তার ওপরে বসে রস খেতে পারে। সিরাপ রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সন্ধ্যা) পরিবেশন করা উচিত, যাতে অন্য বাক্সে মৌমাছিরা এসে খাবারের জন্য মারামারি না বাধায়। ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে মৌবাক্সটির প্রবেশ পথ বাতাস ও বৃদ্ধির বিপরীতমুখী করে নিরাপদ, শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে। অন্যথায় বাক্সে ছাদের ওপর আবরণ দিয়ে প্রবল বৃষ্টি হাত থেকে মৌমাছিদের রক্ষা করতে হবে। 
শত্রু এবং রোগ
বিভিন্ন প্রকার শত্রু ও রোগের আক্রমণে মৌমাছি কলোনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে একটি হলো মোমপোকা। ভিজে, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় মোমপোকার আক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়। চাকের কুঠুরির উপরে মাকড়সার জালের ন্যায় আবরণ দেখেই বোঝা যায়। একটি মোপোকারয় আক্রান্ত ঢাকনাযুক্ত পিউপার কুঠুরির মুখ খোলা এবং ভেতরে মৃত পিউপা পাওয়া যায়। এ সমস্যার প্রতিকার হল- মৌবাক্স পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পুরনো ও ময়লা চাক সরিয়ে ফেলা এবং পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে বাক্সে মেঝে পরিষ্কার করা। মোমপোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্যারাডাইক্লোরো বেনজিন নামক ওষুধ সামান্য পরিমাণে বাক্স কোনায় রেখে দিলে এই পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ ময়ে রাতে বাক্সের গেট বন্ধ করে রাখতে হবে এবং সকালে খুলে দিতে হবে। অ্যাকারাইন রোগ সাধারণত পূর্ণবয়স্ক মৌমাছিদের হয়ে থাকে। রুগ্ণ মৌমাছির ডানাগুলো বিভক্ত হয়ে ইংরেজি অক্ষর ‘কে’-এর মতো হয়ে যায় এবং অনেক মৌমাছিকে বাক্সে সামনে বুকে হাঁটতে দেখা যায়। বাক্সে সামনে আমাশয় এর মতো হলুদ পায়খানা পড়ে থাকে। মৌমাছিরা কলোনির মধ্যে বিশৃঙ্খলভাবে ঝাঁক বেঁধে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্যারালাইসিস হতে দেখা যায়। আক্রান্ত রানী ডিম দেয়া বন্ধ করে দেয়। এ রোগের প্রতিকার হলো- মৌবাক্সে ভেতরে মিথাইল স্যালিসাইলেটের বাষ্প দেয়া। এজন্য ছোট একটি বোতলে মিথাইল স্যালিসাইলেট নিয়ে রবার কর্ক দিয়ে মুখ বন্ধ করতে হবে। 

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]