ঘূর্ণিঝড়, জোয়ার ভাটা

ঘূর্ণিঝড়

নিম্নচাপ জনিত কারণে যখন বাতাসের গতি বৃদ্ধি পায় এবং ঘূর্ণনের আকারে বাতাস প্রবাহিত হয় তখন তাকে ঘূর্ণিঝড় বলা হয়। ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশি।এর  কেন্দ্র হালকা বাতাস ও হালকা মেঘ দিয়ে গঠিত এবং তা   অয়ন বা  Eye  নামে পরিচিত।ঘূর্ণিঝড় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পরিচিত। ভারত মহাসাগর অঞ্চলে উৎপন্ন ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় সাইক্লোন।ঘূর্ণিঝড়ে বাতাসের বেগ ঘন্টায় ৬৩ কি.মি বা তার বেশি হলে তা সাইক্লোন নামে পরিচিতি পায়। নিম্ন চাপ ও উচ্চ তাপমাত্রা এটি সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।সাইক্লোন তৈরিতে সাগরের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি বা ২৭ ডিগ্রি এর বেশি হতে হয়।সাইক্লোন শব্দটি গ্রিক শব্দ kyklos (কাইক্লোস) থেকে আগত। এর অর্থ সাপের কুণ্ডলী।জাপান ও পূর্ব এশিয়ায় একে টাইফুন বলা হয়। ঘূর্ণিঝড়ও অতিরিক্ত নিম্নচাপের কারণে সৃষ্টি হয়, এর উৎপত্তি সাধারণত মহাসাগরে। বাংলাদেশে যেসব ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে সেগুলো বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের উৎপন্ন নিম্নচাপ থেকে সৃষ্টি হয়।  নিম্নচাপের বায়ুর স্বল্পতা পূরনের জন্য চারিদিকের উচ্চচাপের বায়ু একসাথে ছুটে আসে। ফলে নিম্নচাপ এলাকায় বাতাসের ঘূর্ণন শুরু হয়। এই ঘূর্ণায়মান বায়ু প্রচুর জলীয়বাষ্পসহ স্থলের দিকে অগ্রসর হয়। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্নিঝড় বাংলাদেশের উপকূল বা ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানে।পৃথিবীতে বিভিন্ন সময় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে।যেমন-

নার্গিস  

এটি ২০০৮ সালের ২ মে মায়ানমারে আঘাত হানে।এটি ফারসি শব্দ,যার অর্থ ফুল।

আইলা

২৫মে, ২০০৯  বাংলাদেশে  আঘাত হানে।এর অর্থ ডলফিন বা শুশুক জাতীয় প্রাণী 

 

সিডর

১৫ নভেম্বর,২০০৭ সালে আঘাত হানে।সিডর সিঙ্ঘলি শব্দ,যার অর্থ চোখ।

মহাসেন

 ১৬ মে, ২০১৩  'মহাসেন' নামক   ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানে।

স্থল ভাগে প্রবেশ করার পর ঘূর্ণিঝড়, বাড়িঘর, গাছপালা ইত্যাদি পেয়ে দুর্বল হতে যেতে থাকে।  তবে দুর্বল হবার আগে পর্যন্ত বাড়িঘর, মাছের খামাড়, ক্ষেতের ফসল ও গাছপালা ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মানুষ ও গবাদি পশু মারা পড়ে।তখন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয় যেমন-১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর উপকূলীয় অঞ্চলে সরকার  'অপারেশন মান্না' নামে পরিচিত ত্রাণ তৎপরতা চালায়। এছাড়া ঘুর্ণিঝড়ের সাথে আসা জলীয়বাষ্পের কারণে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।এর ফলে প্রবল  বাতাস ও বন্যার সৃষ্টি হয়।  আবার ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে  সমুদ্র থেকে লবণাক্ত পানি ঢেউ আকারে  উপকূলীয় অঞ্চলে প্রবেশ করে। একে জলোচ্ছ্বাস বলে।যেহেতু ঘূর্ণিঝড়ের ফলে জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়ে থাকে তাই সাগরে ঘূর্ণিঝড়ের  তীব্রতা বৃদ্ধি পেলে জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।অনেক সময় জলোচ্ছ্বাস উপকূলীয় অঞ্চলের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

 

জোয়ার ভাটা

চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত মহাকর্ষীয় শক্তির (প্রধানত চাঁদের কেননা,জোয়ার  উৎপাদনে সূর্যের ক্ষমতা চন্দ্রের ৪/৯ ভাগ / প্রায় অর্ধেক।অর্থাৎচন্দ্রের ক্ষমতা  সূর্যের ক্ষমতা দ্বিগুণ। ) প্রভাবে   সমুদ্রপৃষ্ঠের পানি ফুলে ওঠাকে জোয়ার ও নেমে যাওয়ার ঘটনাকে ভাঁটা (একত্রে জোয়ার-ভাটা) বলা হয়।

মূলত,বার্ষিক গতির ফলে দিন-রাত্রির হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে।উল্লেখ্য,২২ ডিসেম্বর  দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে বড় দিন  ও উত্তর গোলার্ধে বছরের সবচেয়ে বড়রাত হয়।আর ২১ জুন  উত্তর গোলার্ধে বছরের সবচেয়ে বড়দিন এবং দক্ষিণ গোলার্ধে সবচেয়ে বড় রাত হয়।অন্যদিকে  আহ্নিক গতির কারণে জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি হয়। 

আমরা জানি, চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। এটি পৃথিবীকে একটি নির্দিষ্ট উপ-বৃত্তাকার কক্ষপথে প্রতিনিয়ত প্রদক্ষিণ করে। এতে করে পৃথিবী-চন্দ্রের পারস্পরিক অবস্থানের অবিরত পরিবর্তন হচ্ছে।ফলে জোয়ার- ভাটার সৃষ্টি হচ্ছে। সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে। আবার মহাকর্ষ শক্তির প্রভাবে চাঁদ ও পৃথিবী একে অপরকে আকর্ষণ করে। পৃথিবীর উপর চাঁদের এই আকর্ষণের প্রভাব দূরত্বের উপর নির্ভর করে। পৃথিবীর যে পাশ চাঁদের দিকে থাকে সে পাশে চাঁদ থেকে দূরত্ব কম থাকায় আকর্ষণ বেশি থাকে, আর পৃথিবীর অপর পাশে চাঁদ থেকে দূরত্ব বেশি থাকায় আকর্ষণ কম থাকে।চাঁদ ও পৃথিবীর মধ্যকার এই আকর্ষণ ক্ষমতাই জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি করে।  

জোয়ার-ভাটার কারণঃ পৃথিবীর যে পাশে চাঁদ থাকে সে পাশে চাঁদের আকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠের সমুদ্রের পানি তার নিচের মাটি অপেক্ষা বেশি জোরে আকৃষ্ট হয়। এ কারণে চাঁদের দিকে অবস্থিত পানি বেশি ফুলে উঠে। একই সময়ে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে, সেদিকের সমুদ্রের নিচের মাটি তার উপরের পানি অপেক্ষা চাঁদ কর্তৃক বেশি জোরে আকৃষ্ট হয়। আবার চাঁদ থেকে পানির দূরত্ব মাটি অপেক্ষা বেশি থাকায় পানির উপর চাঁদের আকর্ষণ কম থাকে। ফলে সেখানকার পানি চারিদিকে ছাপিয়ে উঠে। এক্ষেত্রে ফুলে উঠার কাহিনীটিই ঘটে। ফলে একই সময়ে চাঁদের দিকে এবং চাঁদের বিপরীত দিকে পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির এই ফুলে উঠাকে জোয়ার বলে। আবার পৃথিবী ও চাঁদের ঘুর্ণনের কারণে চাঁদ পৃথিবী থেকে দূরে সরে গেলে ফুলে ওঠা পানি নেমে যায়। পানির এই নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। পৃথিবী যে সময়ের মধ্যে নিজ অক্ষের চারদিকে একবার আবর্তন করে (এক দিনে) সে সময়ের মধ্যে পৃথিবীর যেকোন অংশ একবার চাঁদের দিকে থাকে এবং একবার চাঁদের বিপরীত দিকে থাকে। এ কারণে পৃথিবীর যেকোন স্থানে দুইবার জোয়ার এবং দুইবার ভাটা হয়।জোয়ার ও ভাঁটা প্রত্যেকের স্থিতিকাল প্রায় ৬ ঘন্টা।

জোয়ার-ভাটার জন্য সূর্যের আকর্ষণও অনেকাংশে দায়ী। তবে অনেক দূরে থাকায় সূর্যের আকর্ষণ চাঁদের আকর্ষণের থেকে কম কার্যকর। সূর্য এবং চাঁদ যখন সমসূত্রে পৃথিবীর একই দিকে বা বিপরীত দিকে অবস্থান করে তখন উভয়ের আকর্ষণে সর্বাপেক্ষা উচু জোয়ার হয়, জোয়ারের পানি বেশি ছাপিয়ে পড়ে। এই অবস্থাকে ভরা কাটাল বা উঁচু জোয়ার বলা হয়।চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে তেজকটাল  অমাবস্যায়/  পূর্ণিমাতে হয়ে থাকে।তখন সূর্য,চন্দ্র ও পৃথিবী এক সরলরেখায় অবস্থান করে।আর পৃথিবীকে কেন্দ্র করে সূর্য এবং চাঁদের মধ্য কৌণিক দূরত্ব যখন এক সমকোণ পরিমাণ হয় তখন একের আকর্ষণ অন্যের আকর্ষণ দ্বারা প্রশমিত হয়। তাই সবচেয়ে নিচু জোয়ার হয় যাকে মরা কটাল বলে আখ্যায়িত করা হয়।মরাকটাল  হয় অষ্টমীতে । জোয়ার বলতে আমরা শুধুমাত্র সমুদ্রের পানির স্ফীতিকেই বুঝি। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চাঁদ-সূর্যের আকর্ষণে পৃথিবীর স্থলভাগেও অনুরুপ প্রভাবের সৃষ্টি হয়।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]