পোলিও , যক্ষ্মা , এইডস , ভেকসিন

পোলিও

 পোলিও মাইলিটিজ এক ধরনের  ভাইরাসজনিত সংক্রামক রোগ। সচরাচর এটি পোলিও নামেই সর্বাধিক পরিচিত। এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তি এ ধরনের ভাইরাসের মাধ্যমে আক্রান্ত হন।এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সাময়িক কিংবা স্থায়ীভাবে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হন ও তার অঙ্গ অবশ বা পক্ষাঘাতে  আক্রান্ত হয়ে পড়ে।

সাধারণতঃ এ সংক্রমণ শিশুসহ  কিশোরদের মাঝে প্রবাহিত হয়ে থাকে। শতকরা ৯৫ ভাগেরও অধিক পোলিও আক্রান্ত রোগীর শরীরে কোন উল্লেখযোগ্য দৃশ্যমান উপসর্গ কিংবা স্বল্পমাত্রার উপসর্গ দেখা যায় না। কেবলমাত্র রক্তে প্রবাহিত হয়ে আক্রান্ত হবার মাত্র কয়েকদিন পূর্বে তা দৃশ্যমান হয়।এ ভাইরাসটি মানবদেহের স্নায়ুতন্ত্রে প্রবেশ করে ও মাংসপেশীকে নিয়ন্ত্রণকারী স্নায়ুকোষকে আক্রান্ত করে। এরফলে ব্যক্তির শরীর পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়। আক্রান্ত স্থানটি সাধারণতঃ পায়ে হয়ে থাকে। এছাড়াও এর ধ্বংসাত্মক প্রবণতা মানুষের মস্তিষ্কে ঘটে যা জটিল থেকে জটিলতর হয়। কখনো কখনো এটি মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেহেতু পোলিও শিশুদেরকেই অধিক আক্রান্ত করে, তাই এটি অপরিপক্ক পক্ষাঘাত নামে পরিচিত।এ রোগ প্রতিরোধে শিশুদের ওপিভি নামক টিকা দেয়া হয়। 

পোলিও একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা।আর তাই পোলিও মুক্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য WHO সারা বিশ্বকে কয়টি অঞ্চলে  ভাগ করে।বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ও বিভিন্ন দেশের মিলিত কার্যক্রমের ফলে বর্তমানে পোলিও রোগের প্রকটতা বিশ্বব্যাপী হ্রাস পেয়েছে।উল্লেখ্য,চীন ২০০০ সালে, বাংলাদেশ ২০০৬ সালে এবং ২০০২ সালে ইউরোপ পোলিও মুক্ত হয়।

মার্কিন যুক্ত্রাষ্ট্রের ৩২ তম রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট  পোলিও আক্রান্ত একমাত্র রাষ্ট্রপতি ছিলেন।

যক্ষ্মা

যক্ষ্মা বা টিউবার্‌কিউলোসিস্‌  বা টিবি) একটি সংক্রামক রোগ, যামাইক্রোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলসিস নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে  হয়ে থাকে।জার্মান বিজ্ঞানী রবার্ট কোচ ১৮৮২ সালে যক্ষ্মার জীবানু আবিষ্কার করেন।মুলত,অস্ব্যাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস যক্ষ্মা রোগ হয়।অস্ব্যাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস যক্ষ্মা রোগ হয়। 

"যক্ষ্মা" শব্দটা এসেছে "রাজক্ষয়" থেকে। ক্ষয় বলার কারণ এতে রোগীরা খুব শীর্ণ (রোগা) হয়ে পড়েন।

যক্ষ্মা প্রায় যেকোনও অঙ্গে হতে পারে (ব্যতিক্রম কেবল হৃদপিন্ড, অগ্ন্যাশয়,ঐচ্ছিক পেশী ও থাইরয়েড গ্রন্থি)। যক্ষ্মা সবচেয়ে বেশী দেখা যায় ফুসফুসে।BCG  (পূর্ণরূপ-Bacille calmette guerin)যক্ষ্মার প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়।

সংক্রমণ 

বাতাসের মাধ্যমে যক্ষা রোগের জীবাণু ছড়ায়। যক্ষা রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে রোগের জীবাণু বাতাসে গিয়ে মিশে এবং রোগের সংক্রমণ ঘটায়।

 

রোগের  লক্ষণ

ফুসফুসে যক্ষ্মা হলে হাল্কা জ্বর ও কাশি হতে পারে। কাশির সঙ্গে গলার ভিতর থেকে থুতুতে রক্তও  বেরোতে পারে। মুখ না ঢেকে কাশলে যক্ষ্মা সংক্রমণিত থুতুর ফোঁটা বাতাসে ছড়ায়। আলো-বাতাসহীন অস্বাস্থ্যকর বদ্ধ পরিবেশে মাইকোব্যাক্টেরিয়াম অনেকক্ষণ বেঁচে থাকে।
সাধারনত-তিন সপ্তাহের বেশি কাশি,জ্বর,কাশির সাথে কফ এবং মাঝে মাঝে রক্ত বের হওয়া,ওজন কমে যাওয়া,বুকে ব্যথা, দুর্বলতা ও ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি ফুসফুসের যক্ষার প্রধান উপসর্গ।

 

 

 

  

এইডস

এইডস (AIDS: Acquired Immunodeficiency Syndrome) হচ্ছে এইচ।আই।ভি (HIV) নামক ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এক ব্যাধী, যা মানুষের শরীরের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা হ্রাস করে দেয়। এতে করে একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোন সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন, যা শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু ঘটাতে পারে।

এইচ.আই.ভি. সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই কিন্তু এইডস হয়না। কিন্তু যেহেতু একবার সংক্রামক এইচ.আই.ভি. শরীরে ঢুকলে তাকে পুরোপুরি দূর করা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি, তাই এইচ.আই.ভি. সংক্রমণ হলে এইডস প্রায় অনিবার্য। তবে বিনা চিকিৎসায় এইডস পর্যায়ে পৌছতে যদি লাগে গড়ে দশ বছর তবে চিকিৎসার দ্বারা তাকে আরো কিছু বছর পিছিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু "হার্রট"(HAART) নামে এইডস এর যে কম্বিনেশন ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা পদ্ধতি তা অত্যন্ত খরচ সাপেক্ষ।তাই একমাত্র সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমেই এই রোগ প্রতিরুধ করা সম্ভব।  

 

এইচ.আই.ভি যেভাবে ছড়ায় 

১ এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করলে, বা তার ব্যবহৃত ইনজেকশনের সিরিঞ্জ বা সূঁচ ব্যবহার করলে।

২ এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত গর্ভবতী মায়ের শিশুরও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা গর্ভধারণের  শেষদিকে বা প্রসবের সময় হতে পারে। তবে জিডুডোভিন ওষুধ ব্যবহার করে এই সম্ভাবনা কিছুটা কম করা যায়, এবং তা করলে মায়ের দুধও বাচ্চাকে দেওয়া যেতে পারে (কারণ মার দুধ না পেলে গরিব ঘরে জন্মানো বাচ্চার মৃত্যুসম্ভাবনা আরো বেশী)

৩ এইচ.আই.ভি. তে আক্রান্ত কারো সাথে অসংরক্ষিত (কনডম ব্যবহার না করে) যৌন সম্পর্ক করলে।অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের এ সম্পর্কে কোন ধারণা থাকে না। তাই এ রোগ সংক্রমনের জন্য  তারা সবচেয়ে  ঝুঁকিপূর্ণ।

এইডস একটি ভয়ানক ব্যাধি। ১৯৮১ সালে এই রোগ প্রথম সনাক্তকরণ হয় যুক্তরাষ্ট্রের সি ডি সি (Center of Disease Control and Prevention) দ্বারা। Pneumocystis carinii এবং Kaposi's sarcoma নামে দুটি বিরল রোগের ভয়াবহ বৃদ্ধি CDC কে সতর্কিত করে। অবশেষে ১৯৮৪ সালে ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা এই মহামারী রোগের ভাইরাস সনাক্ত করেন। ফ্রেঞ্চ বৈজ্ঞানিকরা এর নাম দেয় Lymphadenopathy-associated virus (LAV)। আর যুক্তরাষ্ট্র এর নাম দেয় Human T-cell Lymphotropic virus, strain III (HTLV III)। ১৯৮৬ সালে এই ভাইরাসের পুনঃনামকরণ হয় Human ImmunoDeficiency Virus (HIV)। HIV ভাইরাস মানুষের শরীরের T-helper cell কে আক্রান্ত করে যা শরীরের রোগ প্রতিরোধের জন্যে অতীব প্রয়োজনীয়।

এইডস এখন বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পরেছে। ২০০৭ সালে শুমারি অনুযায়ী বিশ্বব্যাপি আনুমানিক ৩৩.২ মিলিয়ন মানুষ এইডস এ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে যার মধ্যে ৩৩০,০০০ জন ছিলো শিশু। এর ত্রি-চতুর্থাংশ মৃত্যুই ঘটেছে আফ্রিকার সাব-সাহারান অর্থনৈতিক প্রতিবন্ধি অঞ্চলে।

বেশীর ভাগ HIV রোগীই কোন লক্ষন ছাড়া এই রোগ বাহন করে। তবে কখনো কখনো এই ভাইরাসে আক্রান্ত হবার ৬ মাস পরে কিছু অনির্দিষ্ট লক্ষন দেখা দিতে পারে যেমন জ্বর, গলা ব্যাথা, মাথা ব্যথা, enlarged lymph node, ইত্যাদি। এইসব লক্ষন কোনরকম চিকিতসা ছাড়াই সেরে যায়, যার কারণে রোগী এ ভাইরাস সম্পর্কে অবগত হয়না। HIV কোনরকম লক্ষন ছাড়াই সর্বোচ্চ ১০ বছর মানুষের শরীরে নিরবে বাস করতে পারে।

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়।

 

ভেকসিন

Vaccine- শব্দের অর্থ প্রতিরোধক।এটি প্রাণীর দেহে রোগ প্রতিরোধকারী এন্টিবডি তৈরি করে রোগের হাত থেকে রক্ষা করে।১৯২৯ সালে আলেকজান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন নামক এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন।যার ফলে রোগ প্রতিরুধে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়।এটি ক্ষতিকর নয় এমন ছত্রাক ও ব্যাক্টেরিয়া থেকে প্রাপ্ত যেসব রাসায়নিক পদার্থ ব্যাক্টেরিয়ার মত ক্ষুদ্রক্ষুদ্র রোগ জীবানুকে ধ্বংস করে কিংবা এদের বংশ বৃদ্ধি রোধ করে।অন্যদিকে জীবানুর বৃদ্ধি ও বিস্তার সীমিত রেখে অসংক্রামক অবস্থায় রাখ্তে এন্টিসেপটিক ব্যবহৃত হয়।

বর্তমানে  পোলিও,হাম,হুপিং কাশি ইত্যাদি রোগের প্রতিরুধে ভ্যাকসিন ব্যবহৃত হয়। 

বাংলাদেশে ১৯৭৯ সালে প্রথম Vaccine বা টিকাদান কর্মসূচি চালু হয়।আর ১৯৮৫ সালে শুরু হয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি যা EPI(expanded program on immunization)নামে পরিচিত।

শিশুর জন্মের এক বছরের মধ্যে যক্ষ্মা, ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি, হেপাটাইটিস বি, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হাম,হেপাটাইটিস বি ও রুবেলা এ নয় রোগের টিকা নিতে হয়।

এসব নির্দিষ্ট রোগের প্রতিরুধে নির্দিষ্ট টিকা ব্যবহৃত হয়।যেমন-

রোগের নাম                          টিকা  

যক্ষ্মা                                 বিসিজি 

 

ডিপথেরিয়া, হুপিং কাশি         ডিপিটি 

    ও ধনুষ্টংকার  

 

হেপাটাইটিস বি                হেপাটাইটিস

 

পোলিও মাইলাটিস             ওপিভি 

 

হাম                     এমএমআর ভ্যাকসিন 

 

এসব টিকাদানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুসরণ করা হয়।এছাড়া নির্দিষ্ট সময়ানুসারে ৫ ডোজ টিটি টিকা নিতে হয়। টিটি টিকার প্রথম ডোজ নিতে হয় জন্মের পর পর, প্রথম ডোজ নেয়ার ১ মাস বা তারও পর দ্বিতীয় ডোজ নিতে হয়,দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ৬ মাস বা তারও পর তৃতীয় ডোজ নিতে হয়,তৃতীয় ডোজ নেয়ার ১ বছর বা তারও পর চতুর্থ ডোজ নিতে হয়, চতুর্থ ডোজ নেয়ার ১ বছর বা তারও পর ৫ম ডোজ নিতে হয়।এছাড়া পূর্বে কলেরা ভেকসিন নামে এক ধরণের টিকা শিশুদের দেয়া হত।কিন্তু, বর্তমানে এর কার্যকর ব্যবহার নেই। 

 

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]