স্নায়ুতন্ত্র স্নায়ুতন্ত্র মস্তিষ্ক

স্নায়ুতন্ত্র

নিউরন সমন্বতিত যে তন্ত্রের সাহায্যে দেহ বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনায় সাড়া দিয়ে বিভিন্ন দৈহিক ও শারীরবৃত্তিক কাজের সমন্বয় সাধন করে তাকে স্নায়ুতন্ত্র বলা হয়।এটি ভ্রূণের এক্টোডার্ম  থেকে উৎপন্ন হয়।নিউরন হল এর  গঠন ও কার্যিক একক।

মস্তিষ্ক কোটি কোটি স্নায়ুকোষ (নিউরন) দিয়ে তৈরি।নিউরন এক প্রকার রূপান্তরিত আবরনীয় টিস্যু  যেগুলো শত শত কোটি স্নায়ুতন্তু দিয়ে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত রয়েছে।

প্রতিটি নিউরনে দুটি অংশ থাকে। যথা : ১. কোষদেহ ও ২. প্রলম্বিত অংশ।

কোষদেহঃএটি নিউরনের মুখ্য অংশ এবং এটি গোলাকার, ডিম্বাকার, মোচাকার, সুচালো প্রভৃতি বিভিন্ন আকৃতির হয়ে থাকে। কোষদেহের ব্যাস ৬ মাইক্রন থেকে ১২০ মাইক্রন পর্যন্ত হতে পারে। কোষদেহ কোষপর্দা, সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস এ তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত।  

 প্রলম্বিত অংশঃদেহকোষ থেকে নির্গত বা বহির্গত শাখা-প্রশাখাকে প্রলম্বিত অংশ বলে। এটি দু’ধরনের যথা : ক. ডেনড্রাইট (Dendrite) ও খ. অ্যাক্সন (Axon)।

ডেনড্রাইটঃকোষদেহের চারদিকে সৃষ্ট ক্ষুদ্র তন্তুময় শাখাবিশিষ্ট অংশকে ডেনড্রাইট বলে। একটি নিউরনে বহু ডেনড্রাইট থাকে।ডেনড্রাইটগুলোই আসলে মূলত সেই অংশ যা মানব দেহের বিভন্ন ইন্দ্রিয় থেকে অথবা অন্য নিউরণ থেকে তথ্য গ্রহণ করে। ডেনড্রাইটের সংখ্যা যত বেশী হবে, একটি নিউরণের তথ্য গ্রহণের ক্ষমতাও তত বেশী হবে। একটি নিউরণের ডেন্ড্রাইটের সংখ্যা ৪,০০,০০০ পর্যন্তও হতে পারে! 

কোষদেহ থেকে উত্পন্ন বেশ লম্বা ও শাখাবিহীন তন্তুটির নাম অ্যাক্সন। অ্যাক্সনের চারদিকে চ্যাপ্টা সোয়ান কোষ নির্মিত পাতলা আবরণকে নিউরিলেমা বলে। নিউরিলেমা পরিবেষ্টিত অ্যাক্সনকে স্নায়ুতন্তু বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিউরিলেমা ও অ্যাক্সনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে স্নেহপদার্থের একটি স্তর থাকে। এ স্তরটিকে মায়েলিন (Myelin) আবরণ বলে। নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর অন্তর অ্যাক্সনে কিছু সঙ্কুচিত অঞ্চল দেখতে পাওয়া যায়, একে র্যানভিয়ের-এর পর্ব বলে। অ্যাক্সনের মূল অক্ষের আবরণীকে এক্সোলেমা বলে। অ্যাক্সনের শেষ প্রান্ত বিভক্ত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শাখা সৃষ্টি করে, সেগুলোকে টেলোডেনড্রিয়া বলে। টেলোডেনড্রিয়ার শেষ প্রান্তের স্ফীত অংশের নাম সিন্যাপটিক নব। পরপর দুটো নিউরনের প্রথমটার অ্যাক্সন এবং পরেরটার ডেনড্রাইটের মধ্যে একটি স্নায়ুসন্ধি গঠিত হয়, একে সিন্যাপস বলে। অ্যাক্সন লম্বায় এক মিটারের বেশি হতে পারে। বহুসংখ্যক নিউরণ মিলিত হয়ে একটি স্নায়ু (Nerve) গঠিত হয়।

নিউরনের (Nervous Tissue) কাজ :

১. নিউরন বিভিন্ন উদ্দীপনা গ্রহণ করে এবং তদনুযায়ী প্রতিবেদন সৃষ্টি করে।এটি আমাদের বিভিন্ন অনুভূতি জাগাতে সহায়তা করে।উল্লেখ্য, আমাদের চুলে নিউরন নেই।তাই আমরা চুল কাটলে ব্যাথা পাই না।

২. এটি মস্তিষ্কে যাবতীয় স্মৃতি সংরক্ষণ করে।

৩. এটি দেহের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে।

৪. এটি পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং তার বাস্তবায়ন করে।

মস্তিষ্ক

সুষুম্নাকান্ডের অগ্রভাগে অবস্থিত ও করোটির দ্বারা সুরক্ষিত কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের স্ফীত যে অংশটিতে প্রাণীদের বুদ্ধি, চিন্তা, স্মৃতি ইত্যাদি স্নায়বিক আবেগ নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে মস্তিষ্ক বলা হয়।স্নায়ু কোষের কার্যক্রমের মাধ্যমে এর কার্যক্রম নিয়ন্ত্রিত হয়।তাই স্নায়ুকোষ ক্ষতিগ্রস্থ হলে মস্তিষ্কের কার্যক্রমেও ব্যঘাত ঘটে।হিসাব করে দেখা যায়,স্নায়ুকোষের এক-চতুর্তাংশ ধ্বংস হয়ে গেলে মস্তিষ্কের ক্ষমতা ক্ষয় পেতে থাকে।  মানুষের মস্তিষ্কের ওজন প্রায় ১.৩৬ কেজি এবং এতে প্রায় ১০০০ কোটি স্নায়ুকোষ এবং ততোধিক নিউরোগ্লিয়া থাকে।

মানুষের মস্তিষ্কটি করোটির মধ্যে মেনিনজেস নামে এক পর্দা দিয়ে ঢাকা থাকে । মানুষের মস্তিষ্ক তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত, যথা :

১ অগ্র মস্তিষ্ক 

২ মধ্য  মস্তিষ্ক

৩ পশ্চাৎ  মস্তিষ্ক

অগ্র মস্তিষ্কঃএটি তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা: (ক) সেরেব্রাম  (খ)থ্যালামাস এবং  (গ) হাইপোথ্যালামাস 

সেরেব্রামঃ সেরেব্রাম  হল মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ এবং করোটির প্রায় বেশির ভাগ অঞ্চল জুড়ে অবস্থিত ।সেরেব্রামের বহিঃস্তর ৩ সে.মি. পুরু ও গ্রে ম্যাটারে গঠিত যা সেরেব্রাল কর্টেক্স নামে পরিচিত।একে আবেগের আসন বলা হয়। এর বাইরের দিকে অসংখ্য খাঁজ (সালকাস) এবং ভাঁজ (জাইরাস) দেখা যায় । সেরেব্রাম একটি গভীর খাঁজ দিয়ে দুটি গোলার্ধে অর্থাৎ ডান ও বাম সেরিব্রাল হেমিস্ফিয়ারে  বিভক্ত থাকে । এই গোলার্ধ দুটি করপাস ক্যালোসাম নামে একটি প্রশস্ত স্নায়ু যোগক দিয়ে পরস্পর যুক্ত থাকে । সেরেব্রাম ৫ টি খন্ডে বিভক্ত, যথা: অগ্র খন্ড, মধ্য খন্ড, পশ্চাদ খন্ড, এবং দুটি পার্শ্ব খন্ড । এগুলিকে ফ্রন্টাল, প্যারাইটাল টেম্পোরোল, অক্সিপিটাল ও লিম্বিক লোব বলে । সেরেব্রা্মের বহির্ভাগ ধূসর পদার্থ ও অন্তর্ভাগ শ্বেত পদার্থ দিয়ে গঠিত ।

 সেরেব্রা্মের  কাজঃ 

(i) চাপ, তাপ, ব্যথা, ইত্যাদি স্পর্শবোধ; 

(ii) ভয়, আনন্দ প্রভৃতি চেতনাবোধ এবং 

(iii) স্মৃতি, চিন্তা, বুদ্ধি প্রভৃতি উন্নত মানসিক বোধ নিয়ন্ত্রণ করে ;

(iv) মানবদেহের বিভিন্ন অংশের নানা শারীরবৃত্তীয় কাজের মধ্যে সমন্বয়সাধন করে এবং 

(v) মানুষের বিভিন্ন সহজাত প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করে ।

থ্যালামাসঃসেরেব্রা্মের  নীচে অবস্থিত এবং ধূসর পদার্থ দিয়ে গঠিত অংশকে থ্যালামাস বলা হয় ।

কাজঃ এটি মানুষের ক্রোধ, লজ্জা বেদনা, ইত্যাদি মানসিক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।একে মস্তিষ্কের Relay station বলা হয়। 

হাইপোথ্যালামাসঃথ্যালামাসের নীচে অবস্থিত এবং শ্বেত ও ধূসর পদার্থ দিয়ে গঠিত অংশকে হাইপোথ্যালামাস বলে। 

কাজঃহাইপোথ্যালামাস হরমোন,রক্তচাপ ও শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রন করে।এটি মানসিক আবেগ ও ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে । এছাড়া নিদ্রা ও জাগ্রত অবস্থার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানও এটি মানসিক আবেগ ও ক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা প্রভৃতি নিয়ন্ত্রণ করে । এছাড়া নিদ্রা ও জাগ্রত অবস্থার মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানও হাইপোথ্যালামাসের অন্যতম প্রধান কাজ। এটি সয়ংক্রিয় স্নায়ুকেন্দ্রের কেন্দ্র নামে পরিচিত। 

মধ্য মস্তিষ্কঃঅগ্র ও পশ্চাদ মস্তিষ্কের মাঝখানে মধ্য মস্তিষ্ক অবস্থিত । এর প্রধান অংশগুলি হল-

(ক) ক্রুরা সেরিব্রাই,

(খ)  টেগমেনটাম  এবং

(গ) টেকটাম । 

কাজঃএই অংশটি দর্শন ও শ্রবণ নিয়ন্ত্রণ করে। 

পশ্চাৎ মস্তিষ্কঃপশ্চাৎ মস্তিষ্ক তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত, যথা:  (ক) লঘু মস্তিষ্ক,   (খ) পনস বা যোজক এবং  (গ) সুষুম্নাশীর্ষক

লঘু মস্তিষ্কঃএটি সুষুম্নাশীর্ষক ও পনসের পিছনে এবং পশ্চাদ করোটির খাঁজে অবস্থিত । লঘু মস্তিষ্কটি দুটি গোলার্ধে বিভক্ত থাকে । এই গোলার্ধ দুটি ভারমিস নামে একটি যোজক দিয়ে যুক্ত থাকে ।  

কাজঃ লঘু মস্তিষ্ক মানবদেহের ভারসাম্য রক্ষা করে। 

পনসঃমধ্য মস্তিষ্ক এবং সুষুম্নাশীর্ষকের মাঝখানে অবস্থিত অংশকে পনস বা যোজক বলে। 

কাজঃমস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশের মধ্যে সমন্বয়সাধন করা হল পনস বা যোজকের প্রধান কাজ।এটি সেরেবেলাম,সুষুম্নাকান্ড ও মস্তিষ্কের অংশের মধ্যে রিলে স্টেশন হিসেবে কাজ করে। 

সুষুম্নাশীর্ষকঃ এটি পনসের পরবর্তী অংশ এবং সুষুম্নাকান্ডের অগ্রভাগে অবস্থিত । এটি মস্তিষ্কের সবচেয়ে নীচের অংশ।  

কাজঃহৃদস্পন্দন, শ্বাসক্রিয়া, খাদ্যগ্রহণ, লালা ও ঘর্ম নিঃসরণ ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করা হল সুষুম্নাশীর্ষকের প্রধান কাজ। 

সুষুম্নাকান্ডঃ এটি সুষুম্নাশীর্ষক থেকে শুরু হয়ে মেরুদন্ডের গহ্বরের পৃষ্ঠ- মধ্যরেখা বরাবর প্রথম লাম্বার কশেরুকা পর্যন্ত বিস্তৃত । মানুষের সুষুম্নাকান্ডটি ১৮ ইঞ্চি বা ৪৫ সেন্টিমিটারের মতো লম্বা । প্রতি কশেরুকার সংযোগস্থলে সুষুম্নাকান্ডটি খাঁজবিশিষ্ট হয়েছে, সুষুম্নাকান্ডটি অনেকগুলি খন্ডক ৩১টি) নিয়ে গড়ে উঠেছে । প্রতি খন্ডক থেকে একজোড়া করে সুষুম্না স্নায়ুর (spinal nerves) উদ্ভব হয়েছে ।  সুষুম্নাকান্ডের অঙ্কদেশে একটি অঙ্কীয় স্নায়ু খাজ (ventral fissure) এবং পৃষ্ঠদেশে একটি পৃষ্ঠীয় স্নায়ু খাজ (dorsal fissure) সুষুম্নাকান্ডকে দুটি প্রতিসম অংশে বিভক্ত করেছে । সুষুম্নাকান্ডের ভেতরের অংশ ধূসর পদার্থ  এবং বাইরের অংশ শ্বেত পদার্থ  দিয়ে গঠিত। 

 

 

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]