রক্ত , রক্তের গ্রুপ, কশেরুকা

রক্ত

রক্ত হল উচ্চশ্রেণীর প্রাণিদেহের এক প্রকার কোষবহুল, বহু জৈব ও অজৈব পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত সামান্য লবণাক্ত, আঠালো, ক্ষারধর্মী(কেননা মানবদেহের রক্তের মানবদেহে রক্তের ph ৭.২ -৭.৪) ও লালবর্ণের ঘন তরল পদার্থ।এটি এক প্রকার তরল যোজক কলা এতে হেপারিন নামক  সালফার সমৃদ্ধ এক প্রকার পলিস্যাকারাইড থাকে।ফলে রক্ত ঝমাট বাধে না।মানবদেহে রক্তের পরিমাণ দেহের মোট ওজনের শতকরা ৭ ভাগ।সে হিসেবে একজন পূর্ণবয়ষ্ক সুস্থ লোকের দেহে প্রায় ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে।প্রাণিভেদে রক্তের বর্ণ বিভিন্ন হয়ে থাকে।যেমন-মানুষের রক্ত লাল বর্ণের কিন্তু তেলাপোকার রক্ত বর্ণহীন।মানব রক্তে ফাইব্রিনোজেন নামক তন্তু থাকে যা  রক্ত জমাট বাধতে সাহায্য করে।রক্ত জমাট বাধার পর রক্তের হালকা  তরল অংশ অবশিষ্ট থাকে এই তরল অংশ সিকাম নামে পরিচিত। 

রক্তের মূল অংশ দুইটি। যথা:

১ রক্তরস ও 

২ রক্তকণিকা 

 

 

 রক্তরসঃরক্তের তরল অংশকে রক্তরস(plasma) বলে। রক্তকণিকা ব্যতীত রক্তের বাকি অংশই রক্ত রস। মানুষের রক্তের প্রায় ৫৫% রক্তরস, এটি ঈষৎ হলুদাভ। এতে প্রায় ৯১-৯২% জল এবং বাকি ৮-৯% জৈব ও অজৈব কঠিন পদার্থ থাকে।

কাজঃ 

১ এর মাধ্যমে পাচিত খাদ্যবস্তু, হরমোন, উৎসেচক ইত্যাদি দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়।

২ রক্তরসের প্রোটিনের পরিমাণ রক্তের সান্দ্রতা (ঘনত্ব), তারল্য (fluidity), প্রবাহধর্ম (rheology) বজায় রাখে এবং পানির অভিস্রবণিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

৩ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৪ অ্যান্টিবডি, কম্প্লিমেন্টস ইত্যাদি প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ উপকরণ ধারণ করে।

৫ টিস্যু থেকে ফুসফুসে বর্জ্য পরিবহন করে 

৬ ক্ষুদ্রান্ত থেকে কলাতে খাদ্যের সারবস্তু বহন করে 

 রক্তকণিকাঃ লোহিত অস্থিমজ্জা হতে উৎপন্ন রক্তের প্লাজমার মধ্যে নির্দিষ্ট আকার ও গঠন বিশিষ্ট উপাদান বা রক্ত কোষসমূহকে রক্তকণিকা বলে।মানবদেহে এদের সংখ্যার তারতম্য পরিলক্ষিত হয়।যেমন-  পূর্ণবয়ষ্ক পুরুষের দেহে প্রতি ঘনমিটার রক্তে ৫০ লক্ষ  রক্তকণিকা থাকে।পূর্ণবয়ষ্ক মহিলার দেহে প্রতি ঘনমিটার রক্তে ৪৫ লক্ষ রক্তকণিকা থাকে।শিশুর দেহে প্রতি ঘনমিটার রক্তে ৬-৭০ লক্ষ রক্তকণিকা থাকে।

রক্তে প্রায় তিন ধরণের কণিকা পাওয়া যায়। যথা:

লোহিত রক্তকণিকাঃলোহিত রক্তকণিকা দেখতে দ্বি-অবতল ও  চাকতির মতো লাল রঙের কোষ।প্রাথমিক অবস্থায় এতে নিউক্লিয়াস থাকে তবে হিমোগ্লোবিন সঞ্চিত হওয়ার পর নিউক্লিয়াস বিনষ্ট হয়। এটি রক্তের  সর্বপ্রধান কোষ বা কণিকা যা মেরুদন্ডী  প্রাণীর দেহের কলাগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহের প্রধান মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।ফুসফুসের  মধ্যের কৈশিক নালির মধ্যে সংবহণের সময় শ্বাসবায়ু থেকে লোহিত রক্তকণিকাতে অক্সিজেন সংগৃহিত হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড পরিত্যক্ত হয়। অন্যান্য কলায় কৈশিকনালীর মাধ্যমে রক্ত সংবাহনের সময় লোহিত রক্তকণিকা থেকে অক্সিজেন কলাকোষে স্থানান্তরিত হয় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বিপরীতে অর্থাৎ লোহিত রক্তকণিকাতে প্রবাহিত হয়।লোহিত রক্তকণিকার সাইটোপ্লাজম হিমোগ্লোবিন নামক এক ধরনের প্রোটিন অণুতে পূর্ণ থাকে। হিমোগ্লোবিন ‘হিম’ ও ‘গ্লোবিন’ এর সমন্বয়ে গঠিত। একটি হিমোগ্লোবিন অণুর মধ্যে চারটি হিম ও চারটি গ্লোবিন নামক জৈব রঞ্জক পদার্থ থাকে । হিম যৌগের মধ্যে লোহার পরমাণু উপস্থিতির কারণে লোহিত রক্তকণিকা ও রক্তের রঙ লাল। প্রতিটি লোহিত রক্তকণিকাতে প্রায় ২৭০ মিলিয়ন হিমোগ্লোবিন অণু থাকে। সব মিলিয়ে মানবদেহের সমস্ত হিমোগ্লোবিনে অবস্হিত লোহার পরিমাণ প্রায় ২.৫ গ্রাম। এই হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমেই দেহের ৯৮% অক্সিজেন পরিবাহিত হয়। বাকী ২% বহন করে রক্তরস। অক্সিজেন হিমোগ্লোবিনের সাথে যুক্ত হয়ে অক্সি-হিমোগ্লোবিন গঠন করে।

উল্লেখ্য,রক্তে লোহিত রক্তকণিকার অভাবে অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা দেখা দেয়।এটি মূলত, রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যাওয়াকে নির্দেশ করে। আর লোহিত কণিকাসমূহের অতিরিক্ত ভাঙন হিমোলাইসিস নামে পরিচিত।মানবদেহে লোহিত রক্তকণিকার  আয়ুষ্কাল প্রায় ১২০ দিন। 

শ্বেত রক্তকণিকাঃমানবদেহের রক্তে বর্নহীন,নিউক্লিয়াসযুক্ত এবং তুলনামূলকভাবে স্বল্পসংখ্যক ও বৃহদাকার যে কোষ দেখা যায় এবং যারা দেহকে সংক্রমন থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে তাকে শ্বেত রক্তকণিকা বলে।লিম্ফোসাইট নামক শ্বেত রক্তকণিকা অ্যান্টিবডি তৈরি করে।লিম্ফোসাইটের আয়ুষ্কাল কয়েক ঘন্টা-১ দিন পর্যন্ত হতে পারে।

মানবদেহে প্রতি ঘন মিলিলিটার রক্তে শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা প্রায় ৫০০০-৯০০০।রক্তে এদের সংখ্যা বেড়ে গেলে তাকে লিউকোমিয়া বলা হয়।আর এদের সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলে ব্লাড ক্যান্সার হয়। লোহিত রক্তকণিকার তুলনায় শ্বেত রক্তকণিকার সংখ্যা অনেক কম হয়। লোহিত রক্তকণিকা ও শ্বেত রক্তকণিকার অনুপাত প্রায় ১ : ৭০০ 

অনুচক্রিকাঃ নিউক্লিয়াসবিহীন, গোলাকার বা ডিম্বাকার বা রড্ আকৃতির বর্ণহীন সাইটোপ্লাজমীয় চাকতি বিশিষ্ট রক্তের ক্ষুদ্রতম কোষকে অণুচক্রিকা বলা হয়।মানবদেহের প্রতি ঘনমিটারে এদের পরিমাণ প্রায় ২.৫ লক্ষ থেকে ৫ লক্ষ।এতে কোন নিউক্লিয়াস থাকে না এবং এদের  আয়ুষ্কাল প্রায় ৫-১০ দিন। 

রক্তের কাজঃ

১ এর মাধ্যমে পাচিত খাদ্যবস্তু, হর্মোন, উৎসেচক ইত্যাদি দেহের বিভিন্ন অংশে পরিবাহিত হয়।

২ রক্তরসের প্রোটিনের পরিমাণ রক্তের সান্দ্রতা (ঘনত্ব), তারল্য (fluidity), প্রবাহধর্ম (rheology) বজায় রাখে এবং পানির অভিস্রবণিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

২ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

৩ অ্যান্টিবডি, কম্প্লিমেন্টস ইত্যাদি প্রাথমিক রোগ প্রতিরোধ উপকরণ ধারণ করে।

৪ দেহে তাপমাত্রা পরিবহনে অংশ নেয়।উল্লেখ্য,মানবদেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট। 

 

রক্তের গ্রুপ

বিজ্ঞানীরা রক্তের উপাদানগত বৈশিষ্ট্যের বিচারে রক্তকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। রক্তের এই শ্রেণিবিন্যাসকে ব্লাড গ্রুপ (Blood Group) বলা হয়। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দে জীববিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার প্রথম মানুষের রক্তের শ্রেণিবিন্যাস করেন। এই শ্রেণীবিন্যাসকে সংক্ষেপে ABO ব্লাড গ্রুপ বা সংক্ষেপে ব্লাড গ্রুপ বলা হয়।

রক্তের লোহিত কণিকার প্লাজমা মেমব্রেনে এ্যান্টিজেনের উপস্থিতির উপর ভিত্তি করে রক্তের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়ে থাকে।

রক্তের গ্রুপ বিচারের ক্ষেত্রে এ্যান্টিবডি ও এ্যান্টিজেন  বিশেষ ভূমিকা রাখে।

এ্যান্টিবডিঃ দেহের বহিরাগত পদার্থের প্রতি সাড়া দিয়ে প্লাজমা কোষ থেকে উৎপন্ন প্রোটিনধর্মী পদার্থ যা এ্যান্টিজেনের সুনির্দিষ্ট বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাকে নিষ্ক্রিয় করতে সহায়তা করে। একে ইম্যুনোগ্লোবিউলিন (immunoglobulin) নামেও অভিহিত করা হয়। এর আকার ইংরেজি ওয়াই বর্ণের মতো। থাইমোসিন এটি গঠনে সহায়তা করে। 

এ্যান্টিজেনঃ সাধারণত রক্তের লোহিত কণিকার প্লাজমা মেমব্রেনে দেখা যায়। কখনো কখনো কোনো বিশেষ কলার কোষসমূহের উপর এ্যান্টিজোন থাকতে পারে। মানুষের রক্তে দুই ধরনের এ্যান্টিজেন দেখা যায়। এগুলো হল, anti-A ও anti-B। A ও B এ্যান্টিজেনের মধ্যে রক্তরসের কতকগুলো স্বতঃস্ফূর্ত এ্যান্টিবডি রয়েছে।

সাধরাণভাবে এ্যান্টিবডি ও এ্যান্টিজোনের ভিত্তিতে মানুষের রক্তকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:  A, B, AB ও O।

যে নির্দিষ্ট রক্তে যে এ্যান্টিজেন নেই, শুধু সেই এ্যান্টিবডি সেখানে পাওয়া যাবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, A ব্লাড গ্রুপ Aএ্যান্টিজেন, B ব্লাড গ্রুপে B এ্যান্টিজেন বিদ্যমান। আবার, AB ব্লাড গ্রুপে A ও B উভয় ধরনের এ্যান্টিজেন থাকে। Oব্লাড গ্রুপে রক্তের কণিকাঝিল্লিতে কোনো এ্যান্টিজেন নেই। তবে anti -A ও anti-B দু’রকমের এ্যান্টিজেনই থাকে।A গ্রুপের রক্তে থাকা এ্যান্টিবডি B গ্রুপের রক্তে মিশে গেলে, লোহিত রক্তকণিকা জমাট বেধে যায়। একইভাবে Bগ্রুপের রক্তের এ্যান্টিবডি A গ্রুপের রক্তের লোহিত রক্তকণিকাকে জমিয়ে ফেলে। অতএব, A রক্তের গ্রুপের গ্রহীতা কোনওভাবেই B রক্তের গ্রুপের দাতার রক্ত নিতে পারবে না। একইভাবে B রক্তের গ্রুপের গ্রহীতাও A রক্তের গ্রুপের দাতার রক্ত নিতে পারবে না।

আবার, AB গ্রুপের রক্তে কোন এ্যান্টিবডি পাওয়া যায় না। অতএব, এরা অন্য গ্রুপের রক্তের লোহিত কণিকাকে জমিয়ে দিতে পারে না। তাই AB রক্তের গ্রুপের গ্রহীতা চারটি রক্তের গ্রুপের প্রত্যেকেরই( A, B, AB  O) রক্ত গ্রহণ করতে পারবে। এজন্য এ গ্রুপের গ্রহীতাকে সার্বজনীন গ্রহীতা বলে। তবে, দাতা হিসেবে এরা নিজ গ্রুপ ব্যতীত অন্য কোন গ্রুপকে রক্ত দিতে পারবে না।

অপরদিকে, O রক্তের গ্রুপে কোন এ্যান্টিজেন থাকে না। তাই এরা একমাত্র নিজ গ্রুপ ছাড়া অন্য সকল গ্রুপের রক্তের লোহিত রক্তকণিকাকে জমিয়ে ফেলে। তাই রক্ত গ্রহনকালে O রক্তের গ্রুপের গ্রহীতা কেবল নিজ গ্রুপের রক্ত গ্রহণ করতে পারে। তবে, দাতা হিসেবে এরা প্রত্যেক গ্রুপকে (A, B, AB  O) রক্ত দিতে পারে। তাই, এই গ্রুপের দাতাকে বলা হয় সার্বজনীন দাতা।

কশেরুকা

মানব মেরুদন্ডে কতগুলো গোল গোল হাড় দেখতে পাওয়া যায় যা কশেরুকা নামে পরিচিত।মানবদেহে মোট ৩৩ টি কশেরুকা দেখতে পাওয়া যায়।যাদের  মোট ৫ টি নিম্নোক্ত অঞ্চলে ভাগ করা

অঞ্চল  সংখ্যা 
গ্রীবাদেশীয় কশেরুকা ৭ টি 
বক্ষদেশীয় কশেরুকা ১২টি 
কটিদেশীয় কশেরুকা-    ৫ টি 
শ্রোণীদেশীয় কশেরুকা-  ৫ টি 
পুচ্ছদেশীয় কশেরুকা ৪ টি 
মোট  ৩৩ টি 

 

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]