রক্তপাত এবং ক্ষত রক্তপাত: উপসর্গ, কারণ, চিকিৎসা, ঔষধ, প্রতিরোধ, রোগ নির্ণয়

কোনও কারণে দেহের কোনও টিস্যু যদি ছিন্ন হয়ে পড়ে, তবে তাকে ক্ষত বলা যেতে পারে । দেহে ক্ষত হলে রক্তপাত হতে পারে এবং দেহে জীবাণু সংক্রমণ ঘটতে পারে।'
বিভিন্ন কারণে মানবদেহে রক্তপাত হতে পারে। কোনও ধারাল অস্ত্র, ছুরি, ব্লেড বা ধারালো কোনও জিনিস দ্বারা যদি কেটে যায়।
এই রক্ত প্রবাহ শিরা না ধমনী থেকে আসছে তা দেখতে হবে। ধমনীর রক্ত হয় টকটকে লাল এবং তা ফিনকি দিয়ে বের হতে থাকে। শিরার রক্ত হয় বেগুনি কিংবা কালচে এবং তা আস্তে আস্তে বের হতে থাকে।
ধমনীর থেকে যদি রক্ত বের হয় তবে কাটা মুখের উপর দিকে অর্থাৎ হৃদপিন্ডের দিকে জোর দিয়ে চেপে ধরতে হবে।
শিরা থেকে যদি রক্তপাত আরম্ভ হয় তবে ক্ষতস্থানের নিচের দিকে অর্থাৎ হৃদপিন্ডের বিপরীত দিকে চেপে ধরতে হবে। এরপর হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রাথমিক চিকিৎসা কিভাবে করবেন
১। রোগীকে প্রথমে শুইয়ে দিতে হবে এবং নাড়াচাড়া কম করতে হবে। কারণ নাড়াচাড়া বেশি করলে রক্তপাত বেশি হবে।
২। ক্ষতস্থান এন্টিসেপটিক কোনও লোশন দ্বারা ধুয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। ৩। ক্ষতস্থান অনাবৃত রাখার চেষ্টা করতে হবে। কিছু কিছু রক্ত জমাট বেঁধে গেলেও তা সরানো উচিত নয় এতে করে রক্তপাত বেড়ে যাবে।
৪। ক্ষতস্থানের ভেতর যদি কিছু ঢুকে থাকে তবে তা আস্তে আস্তে বের করে ফেলতে হবে।
৫। কিন্তু যদি কোনও জিনিস শক্তভাবে ঢুকে থাকে তবে তা সরানো উচিত নয়। এতে করে রক্তপাত বেড়ে যেতে পারে ।
৬। ক্ষতস্থানটি হৃদপিণ্ড বরাবর উপরে তুলে রাখতে হবে এতে করে রক্তপাত বন্ধ হবে।
৭। সাবধানে থাকতে হবে যেন ক্ষতস্থানে ধুলো বালি বা ময়লা না লাগে । ৮। প্যাড, গঞ্জ এবং ব্যাণ্ডেজ লাগিয়ে ড্রেসিং করে দিতে হবে।
রক্তপাত বেশি হলে বুঝবেন কিভাবে
১। রোগীর মুখ ও ঠোঁটে রক্তশূন্য ও ফ্যাকাশে ভাব আসবে । ২। রোগীর সমস্ত শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমবে। ৩। রোগীর শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুতভাবে বইবে। ৪। নাড়ী দুর্বল হয়ে যাবে।
৫। অস্থিরতার সৃষ্টি হবে।
৬। শরীরের সমস্ত চামড়া ঠাণ্ডা ও স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে যাবে।
৭। রোগীর মাথা ঘুরবে এবং রোগী পিপাসার্ত বোধ করবে ।

৮। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর শাস কষ্ট আরম্ভ হবে এবং রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে।
ক্ষত থেকে রক্তপাত বন্ধ করবার উপায়
১। আঘাত প্রাপ্ত স্থানটি উঁচু করে ধরে রাখতে হবে ।
২। হাত দিয়ে কিংবা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থান চেপে ধরে রাখতে হবে যতক্ষণ না রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
৩। রক্ত পড়া যদি একেবারেই বন্ধ না হয় তবে ক্ষতস্থান চেপে ধরে রাখতে হবে।
৪। কাটা জায়গার খুব নিকটবর্তী স্থানে ফিতা কিংবা রুমাল দিয়ে শক্ত করে বাঁধতে হবে।
৫। বাঁধনের জন্য চওড়া ফিতা ব্যবহার করতে হবে। কখনও সরু দড়ি দ্বারা বাঁধা উচিত নয়।
সাবধানতা অবলম্বন করা নয় ।
১। রক্তপাত যদি একেবারেই বন্ধ না হয় তবেই এ বাঁধন দিতে হবে নতুবা
২। রক্ত চলাচলে যাতে করে বিঘ্ন না ঘটে তার জন্য আধ ঘণ্টায় একবার বাঁধন একটু ঢিলা করে দিতে হবে। কিছুক্ষণ পর পর দেখতে হবে রক্ত পড়া বন্ধ হলো কি-না। এই বাঁধন বেশি সময় ধরে রাখা যায় না।
৩। রক্ত বন্ধ করতে কেরোসিন, চুন ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত নয় ।
রক্তপাত বেশি হলে কি কি লক্ষণ প্রকাশ পাবে
১। রোগী শীত শীত বোধ করবে।
২। রোগী অত্যন্ত পিপাসার্ত হবে । ৩। শ্বাসকষ্ট হবে।
৪। রোগী অকারণে ভয় পাবে।
৫। রোগীর নাড়ী অত্যন্ত দুর্বল ও দ্রুততর হবে।
৬। নিশ্বাস প্রশ্বাস অতিদ্রুত বইবে।
বিভিন্ন অঙ্গের রক্তপাত
নাক দিয়ে রক্তপাত
১। নাক দিয়ে রক্ত পড়া রোগীকে শোয়ানো যাবে না। বসিয়ে রাখতে হবে। ২। যতক্ষণ রক্তপাত বন্ধ না হবে ততক্ষণ দুই আঙ্গুলে নাক চেপে ধরে রাখতে হবে।
৩। নাকের ভেতরে তুলোর পুঁটলি গুঁজে দিতে হবে এবং পুঁটলির কিছুটা নাকের বাইরে যেন থাকে। যাতে তুলা খুলতে সুবিধা হয়।
৪। নাকের ভেতরে খোঁটা যাবে না কিংবা জমে যাওয়া রক্ত বের করা যাবে
না। এতে পুনরায় রক্তপাত হতে পারে ।
৫। নাক টিপে ধরার পরও যদি রক্ত বন্ধ না হয়, তবে সে যেন একটি ছিপি ভাঁজ করা ছোট ছোট কাপড় দাঁতে চেপে ধরে রাখে। ছিপিটি ঢোক গেলা বন্ধ রাখতে সাহায্য করে । এই সময়টুকুতে রক্তটা জমাট বেঁধে যাবার সময় পায় ।
৬। রক্তপাত বন্ধ না হলে দ্রুত হাসপাতালে নেবার ব্যবস্থা করতে হবে।
কান দিয়ে রক্তপাত
কান দিয়ে রক্তপাত হলে জমাট রক্ত সরানো উচিত নয়। কানে কোনও জিনিস ঢুকানো যাবে না। রোগীকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে বা বসিয়ে রাখতে হবে।
দাঁত দিয়ে রক্তপাত
দাঁতে কোনও রূপ ধাক্কা কিংবা আঘাত খেলে দাঁত দিয়ে রক্তপাত ঘটে। রক্তপাত যুক্ত দাঁতের Socket এ ভুলোর একটি ছোট্ট প্লাগ ঠেলে দিয়ে তার ওপর প্রচুর পরিমাণে তুলো দিয়ে চেপে ধরে রাখতে হবে। রোগী থুথু ফেলতে পারবে না কিংবা মুখ ধুতেও পারবে না।
ছোটখাটো ক্ষত হতে অল্প রক্তক্ষণের প্রাথমিক চিকিৎসা
১। মানুষের শরীরে ছোটখাটো কাটা ছেঁড়া হয়ে ত্বকের ক্ষত থেকে রক্তপাত হলে প্রাকৃতিক নিয়মেই রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। যদি স্বাভাবিক নিয়মে না হয় তবে ড্রেসিং বা ব্যান্ডেজ দ্বারা রক্তপাত বন্ধ করতে হবে।
২। প্রথমে সাবান ও পরিষ্কার পানি দ্বারা ক্ষতস্থান ধুতে হবে। ক্ষতস্থানে যদি ময়লা, কাঁচ কিংবা বালুকণা থাকে তবে তা পরিষ্কার করতে হবে। এরপর পরিষ্কার হয়ে গেলে এন্টিসেপটিক লোশন ব্যবহার করতে হবে।
৩। গজ তুলা কিংবা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে ড্রেসিং করতে হবে। ৪। ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধ ব্যবহার করতে হবে।

১। সকালের নাস্তার পর এবং রাতে ঘুমোতে যাবার পূর্বে নিয়মিত দু'বেলা দাঁত মাজতে হবে।
২। দাঁতের মাড়ি, জিহ্বা কিংবা গলায় কোনও ক্ষত থাকলে তা অতিসত্বর চিকিৎসা করাতে হবে।
৩। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মাউথ ওয়াশ দিয়ে কুলি করতে হবে । ৪। ধুমপান করা ও মদ্যপান করা বর্জন করতে হবে।
৫। পাথর, প্ল্যাক দাঁতের গোড়ায় জমলে তা পরিষ্কার করতে হবে ।
৬। দীর্ঘদিন যাবৎ যদি কাশি, গলাব্যথা ও বুক ব্যথা হয় তবে তার চিকিৎসা করতে হবে।
৭। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৮। রোগাক্রান্ত দাঁতের চিকিৎসা করতে হবে।
৯। ভাঙ্গা দাঁত থাকলে তা তুলে ফেলতে হবে।
১০। মুখ দিয়ে শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
১১। মাঝে মাঝে টক জাতীয় লজেন্স খাওয়া উচিত যাতে মুখের লালা নিঃসরণ ঠিক থাকে।
ঠোঁটের কোণে ঘা
ছেলেমেয়ের ঠোঁটের কোণে ঘা সাধারণত অপুষ্টির লক্ষণ বোঝায়। তাই ঘা হলে ছেলেমেয়েদের ভিটামিন এবং প্রোটিন যুক্ত খাবার যেমন- দুধ, মাছ, মাংস, ডিম, ফল ও শাক সব্জি খেতে দিতে হবে।
মুখের থ্রাশ
মুখের ভেতরে জিভের ওপরে দইয়ের মতো সাদা সাদা টুকরো প্রলেপ দেখা যায়। এটি ছত্রাক সংক্রমণের জন্য হয়ে থাকে। ছোট শিশুদের মধ্যে এবং কিছু এন্টিবায়োটিক বেশি পরিমাণে সেবন করার ফলে এরূপ হয়ে থাকে। এন্টবায়োটিক খাওয়া খুব জরুরী না হলে তা বন্ধ করে দিতে হবে ৷ সাংঘাতিক অবস্থা হলে নিট্যাটিন ব্যবহার করতে হবে ।
জিহ্বার ওপরে সাদা পর্দা পড়া
----
সাধারণত জ্বর হওয়ার পরে জিহ্বা ও টাকরার ওপরে সাদা পর্দা পড়ে। এটি গুরুতর কোনও কিছু নয়। অল্প গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচা করলে ভাল হয়ে যায় ।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]