পেটের সমস্যা দূর করতে চান? পেটের বিভিন্ন রোগ চিকিৎসা ও করণীয়

সাধারণত পেটের বেশির ভাগ সমস্যার কারণ হচ্ছে বেঠিক খাবার, অনিয়মিত ও অপরিমিত খাদ্য গ্রহণ, খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে উদাসীনতা, যথেচ্ছাচার ইত্যাদি। অথচ একটু যত্ন নিলেই এবং একটু নিয়ম মেনে চললেই পেটের কিছু কিছু সমস্যার আনেকাংশে সমাধান সম্ভব ।
কিন্তু এত কিছুর পরেও কিছু কিছু সমস্যা আছে যা আমাদের দেহকে ক্লান্ত, দুর্বল ও অসুস্থ করে তোলে। দৈনন্দিন জীবনে নিয়ম মেনে চলার পরেও আমাদের শরীর আমাদের সাথে প্রতারণা করে থাকে। প্রথমে সামান্যভাবে হলেও যত্ন ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে পরবর্তীতে তা জটিল আকার ধারণ করে থাকে। সেই ধরনের কিছু সমস্যা নিম্নে দেওয়া হলো :
বদহজম
বদহজমকে বলা চলে শারীরিক বিপত্তির এক ধরনের সংকেত। বদহজম নানারকম রোগের উপসর্গ। এটি বিশেষ কোনও রোগ নয়। যদি এমন দেখা যায় যে কারও বদহজম লেগেই আছে তবে বুঝতে হবে তার কোনও রকম শারীরিক বিপর্যয় আছে। বদহজম যদি হয় তবে নানা ধরনের রোগ দেখা দেয় । বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, বদহজম শুনলেই ডাক্তাররা গল ব্লাডারের কিংবা লিভারের সমস্যা ধরে থাকেন। এবং অনেক ক্ষেত্রেই ডাক্তারের ধারণা ঠিক হয়। বদহজমের সাথে আরও অন্যান্য যে সব সমস্যা দেখা দেয় তা হলো- খেলেই পেটে গ্যাস হয়, পেট ফেঁপে ওঠে, পায়খানা পরিষ্কার হয় না ইত্যাদি ।
বদহজমের কারণ হলো, লিভার থেকে যে এনজাইমগুলো আসে সেগুলো যদি লিভারের দুর্বলতার কারণে খাদ্যসামগ্রী হজম করাতে না পারে তাহলেই বদহজম হয় । যারা কায়িক পরিশ্রম বেশি করেন তাদের সাধারণত বদহজম হয় না। যারা পরিশ্রম করতে চান না তারাই বেশি বদহজমে আক্রান্ত হন। যারা উপর্যুপরি ভোজন করেন, রাত জাগেন কিংবা মদ্যপান করেন এরাই বদহজমে
আক্রান্ত হন বেশি। এছাড়াও ঘুমের ব্যাঘাত হলে, ব্লাড সুগার বাড়লে, দুশ্চিন্তা কিংবা লিভারের কোনও বড় অসুখ থাকলে বদহজম হয়ে থাকে। বদহজমের উপসর্গ হলো টক ঢেঁকুর, বমি-বমি ভাব, পায়খানার সঙ্গে গোটা গোটা সামগ্রী পড়া, বুক গলা জ্বালা করা, মাথার যন্ত্রণা এবং পেট ফাঁপা । বদহজম হলে শাক সবৃজি সেদ্ধ করে খাওয়ালে, বিশেষ করে দাঁত ওঠার বয়সটাতে একটু নজর দিলে ব্যাপারটা এড়ানো যায়। বৃদ্ধ মানুষরাও কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগতে পারে । তাদের খাওয়া দাওয়া এবং বিশ্রামের প্রতি একটু যত্ন নিলেই এ সমস্যা থাকবে না।
লিভারের অসুখ
অনেক সময়ে অনেক ভাইরাসের কারণে হঠাৎ করেই লিভার অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় দীর্ঘদিনের অনিয়মে এবং ক্ষতিকর খাদ্য পানীয়ের প্রভাবে লিভার ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে। হেপাটাইটিস হলে পেট ব্যথা, বমি ভাব, অরুচি, ক্ষুধাহীনতা, জন্ডিস ইত্যাদি দেখা যায়। এ সময় পুরোপুরি বেড রেস্ট দরকার । কেউ যদি এ্যালকোহল সেবন করে থাকেন তবে তা বন্ধ করতে হবে।
লিভারের সাথে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের সম্পর্ক
লিভার খারাপ হলে ত্বকের ওপর এর প্রভাব পড়ে। লিভার খারাপ হলে ত্বকের রঙ পরিবর্তন হয়। জন্ডিস হলে ত্বক হলদেটে হয়ে পড়ে।
পিগমেন্টেশন
লিভার খারাপ হলে মুখে ছিট ছিট দাগ হতে পারে। যাকে আমরা মেচতা বলি । শরীরে হরমোনের স্বাভাবিক ক্ষরণের তারতম্য ঘটলে (জন্মনিরোধক ওষুধ সেবন বা শারীরিক ব্যধি থেকে যা হতে পারে) লিভারে অনেক সময়ই তার প্রভাব পড়ে। এর ফলে শরীরে কালো ছোপ ছোপ দাগ হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে কালো ছোপ ছাড়া সাদা দাগও হতে পারে ।
চুলকানি
লিভার যদি কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে সমস্ত শরীরে চুলকানি হতে পারে। যেমন জন্ডিস হওয়ার আগে এবং জণ্ডিস চলাকালীন সময়ে অসম্ভব চুলকানি হয়। এই চুলকানি অন্য অসুখেও হয়ে থাকে। তবে লিভার স্বাভাবিক না থাকলেই এ রকম হয়ে থাকে ।
এলার্জি
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের আক্রমণের ফলে লিভার অনেক সময় অকেজো হয়ে পড়ে। এই রোগের প্রকোপ হলে মুখে, হাতে ও শরীরের অন্যান্য অংশে নানা ধরনের গুটি দেখা যায়। একে আমরা আমবাত বলে থাকি।
শিরার স্ফীতি
অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে মুখের ত্বকে মাকড়সার মতো দেখতে লাল লাল ছোপ পড়ে। হাত লাল হয়ে ওঠে। এর কারণ ত্বকের নিচে রক্তবাহী শিরাগুলো স্ফীত হয়ে রক্তক্ষরণ হয় অথবা রক্ত জমে যায়।
নখ
লিভার খারাপ হলে নখও ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যেমন নখ ভেঙ্গে গিয়ে সাদা সাদা দাগ হওয়া ইত্যাদি লিভার খারাপেরই লক্ষণ ।
হরমোন
সব সময় লিভারের সমস্যায় ভুগলে হরমোনের গণ্ডগোল হয়ে থাকে। লিভার খারাপ হওয়ার কারণে হরমোনের স্বাভাবিক গতি প্রকৃতি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে করে ইস্ট্রোজেন হরমোন বেড়ে যেতে পারে। ফলে পুরুষের চুল পড়ে যায়। পৌরষহীনতা দেখা দেয়, যৌনতায় অনাসক্তি, স্তনের স্ফীতি ইত্যাদি রোগও দেখা দেয়। এভাবে লিভার খারাপ হলে ত্বকে এর প্রভাব পড়ে। আবার ত্বক খারাপ হলেও লিভারে এর প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে। লিভারের সমস্যা থাকলে মুখেও দুর্গন্ধ হয়।
যাদের লিভারের সমস্যা আছে
যাদের লিভারের সমস্যা আছে তারা তো বটেই, আবার যাদের লিভারের সমস্যা নেই তাদেরও প্রতিদিন খাওয়া দাওয়া ও নিত্যদিনের অভ্যাসের দিকে নজর দিতে হবে, তবেই আপনার লিভার থাকবে সুস্থ ও কার্যক্ষম।
১। যাদের লিভার খারাপ তারা প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এক টেবিল চামচ করলার রস খাবেন। আবার যাদের লিভার ভাল তারা ছোট চামচের এক চামচ রস খেলেই ভাল থাকবেন।
২। ভাজাভুজি যত কম খাওয়া যায় ততই ভাল।
৩। অতিরিক্ত তেল, ঘি, মাখন কোনও অবস্থাতেই খাওয়া যাবে না ।
৪। যে কোনও একটি শাকের রস (যেমন পালংশাক) খেতে পারলে ভাল। আর যদি শুধু রস খাওয়া না যায় তবে ফলের দু'একটা টুকরো কেটে তাতে
দেওয়া যায়।
৫। দুধ না খাওয়াই ভাল। আর দুধ খেতে চাইলেও ওপরের সরটা তুলে ফেলে তারপর খেতে হবে।
৬। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
৭। শুধু খাবার নিয়ে ভাবলেই হবে না। কিভাবে রান্না হচ্ছে সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে।
৮। নিয়মিত ভাবে খাদ্য গ্রহণের সাথে সাথে পর্যাপ্ত ব্যায়ামও করতে হবে। যারা খুব একটা শারীরিক পরিশ্রম করেন না তাঁদের জন্য ব্যায়াম অত্যাবশ্যক ।
শিশুদের ব্যাপারে সতর্কতা
শিশুদের খাবার দাবারের ব্যাপারে আমরা কড়াকড়ি করে থাকি- যখন শিশু নিতান্ত শিশু থাকে। এরপর যখন একটু বড় হয় তখন কড়াকড়ি শিথিল হয়ে যায়। প্রায়ই এমন দৃশ্য দেখা যায় যে, মা বাবা শিশুর মুখে রাস্তার খাবার তুলে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেন না। এটি ঠিক নয়, আবার অনেকে আছেন শিশুদের ফোটানো পানি খাওয়ান ঠিকই কিন্তু পানি ফোটানোর সঠিক নিয়ম তারা মেনে চলেন না। পানি ঠিক আধ ঘণ্টা ধরে ফোটাতে হবে তারপর সেই ফোটানো পানি শিশুকে খাওয়াতে হবে। এছাড়াও শিশুদের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় দেখা যায় শিশুরা পঁচা, বাসি এবং আঢাকা খাবার খেয়ে ফেলে। তাই এ ধরনের খাবার যাতে শিশুরা না খেতে পারে সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আবার এমনও দেখা যায় অত্যন্ত ছোট শিশু মাটিতে খেলাধূলা করতে করতে মুখে হাত দিয়ে দেয় এতে করে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়ে।

FOR MORE CLICK HERE
বাংলা রচনা সমূহ
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
English Essay All
English Grammar All
English Literature All
সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়াবলী
সাধারণ জ্ঞান আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী
ভূগোল (বাংলাদেশ ও বিশ্ব), পরিবেশ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা
বি সি এস প্রস্তুতি: কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি
বি সি এস প্রস্তুতি: নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সু-শাসন
বি সি এস প্রস্তুতি: সাধারণবিজ্ঞান
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়
ভাবসম্প্রসারণ

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]