বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নে রেমিট্যান্স এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর ।

বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স Expatriate Employment and Remittances
বৈশ্বিক মন্দা ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানীতে বিরূপ প্রভাব পড়ে। মন্দা পরবর্তী সময়ে এসব দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোড়ালো হলেও সম্প্রতি উত্তর আফ্রিকার দেশসমূহে চলমান রাজনৈতিক সংকট এবং মধ্যপ্রাচ্য এবং ব্যপ্তি জনশক্তি রপ্তানীর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৪.২৭ লক্ষ জনশক্তি বিদেশ গমন করে যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ৩৪.৩১ শতাংশ কম । ২০১৩-১৪ অর্থবছরের মার্চ ২০১৪ পর্যন্ত ২.৯৬ লক্ষ জনশক্তি বিদেশ গমন করেছে, যা বিগত অর্থবছরে ছিল প্রায় ৪.৪১ লক্ষ। উদ্ভূত এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ এবং নতুন নতুন শ্রম বাজার সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকার কুটনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহণসহ বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতোমধ্যে আফ্রিকা, পূর্ব ইউরোপ ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশসমূহে জনশক্তি রপ্তানী পুরোদমে শুরু করার লক্ষ্যে কুটনৈতিক প্ৰক্ৰিয়া শুরু করার পাশাপাশি কয়েকটি দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে নতুন শ্রম উইং খোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিদেশে চাহিদা রয়েছে এমন কাজের উপযোগী দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার লক্ষ্যে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর সৌদি আরবে আবার জনশক্তি রপ্তানি শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, জানুয়ারি ২০১১ থেকে জনশক্তি রপ্তানি পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করা যায় যে, অদূর ভবিষ্যতে জনশক্তি রপ্তানির এ নিম্নমুখী প্রবণতা কেটে যাবে ।
২০০৯-১০ অর্থবছরের রেমিট্যান্স প্রবাহ প্রথমবারের মত ১০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। এ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স প্রবাহ এসেছে ১০,৯৬৭.৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলানায় ১৩.৪ শতাংশ বেশি । তবে ২০১১ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও ডিসেম্বর মাস থেকে তা কেটে গেছে এবং শ্লথ গতির হলেও অর্থবছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ ৪.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৯,৭৮৭.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে । ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহ এসেছে ১১,২৫৮.০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। রেমিট্যান্স প্রবাহের এ স্বল্প প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও বিশ্বের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রাপ্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নয়ন ঘটেছে। বিশ্ব ব্যাংক এর Migration and Remittance Trends 2009 প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৮ সালে বিশ্বের সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রাপ্ত দেশসমূহের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১২তম। বিশ্বব্যাংকের রেমিট্যান্স সংক্রান্ত ডাটাবেস অনুযায়ী ২০০৯ সালে বাংলাদেশের এ অবস্থান ৮ম স্থানে উন্নীত হয়। সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের Migration and Remittances Factbook, 2011, এর প্রাক্কলন অনুযায়ী বাংলাদেশের অবস্থান আরো এক ধাপ এগিয়ে ৭ম স্থানে উন্নীত হয়েছে ।

রেমিট্যান্স Remittances

Remittance ইংরেজি শব্দ। এর বাংলা প্রতিশব্দ হল প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ বা বৈদেশিক মুদ্রা । অর্থাৎ কোন প্রবাসী বা বিদেশে কর্মরত ব্যক্তিবর্গ তাদের অর্জিত অর্থ নিজেদের প্রয়োজনে খরচ করার পর উদ্বৃত্তের যে অংশ দেশে প্রেরণ করে তাকে বলা হয় রেমিট্যান্স। অন্যভাবে বলা যায়, দেশীয় নাগরিকগণ যারা বিদেশে অবস্থান করে তারা বর্তমান সুখ শাস্তি ত্যাগ করে ভবিষ্যতের সুখের আশায় অর্জিত আয়ের যে অংশ নিজ দেশে প্রেরণ করে তাকে বলা হয় রেমিট্যাগ। অনেক উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশের বেকার শ্রমিকগণ বেশী মজুরীতে কাজের আশায় মধ্যপ্রাচ্য, দূরপ্রাচ্য, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বৈদ কিংবা অবৈধভাবে বিদেশে অবস্থান করছে। তাদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা প্রতিনিয়তই দেশে আসছে। দিন দিন প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে এবং GDP প্রবৃদ্ধিতে রেটিম্যান্সের গুরুত্ব বেশি। ১.১৯.৫ বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নে রেমিট্যাগের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা
Role and Importance of Remittance in National Development of Bangladesh বাংলাদেশ একটি উন্নয়শীল দেশ। এদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হল পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব। তাছাড়া দেশের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে এত মূলধনের যোগান দেয়া সম্ভব নয়। এজন্য বিদেশী মূলধনের উপর নির্ভর করতে হয়। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিমে বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নে রেমিট্যান্স এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সংক্ষেপে বর্ণনা কর হল।
১। মূলধন গঠন : বাংলাদেশের মূলধন গঠনে রেমিট্যান্সের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স যেমনিভাবে তাদের পরিবারের সদস্যদের মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি করে তেমনিভাবে দেশের সামগ্রীক মূলধন গঠনের হারও বাড়াতে সাহায্য করে ।
২। জাতীয় আয় বৃদ্ধি : বাংলাদেশের জাতীয় আয়ের একটি অন্যতম বৃহৎ খাত হচ্ছে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্সের গুরুত্ব বুঝতে পেরে বাংলাদেশ সরকার ২০০২ সালে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় নামক পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করে। ১৯৭৫-১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৪-১৫ (মার্চ ২০১৫ পর্যন্ত) বাংলাদেশের প্রাপ্ত রেমিট্যান্স এর হিসাব নিম্নের তালিকায় দেখনো হল ।
৩। কর্মসংস্থান সৃষ্টি ঃ বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার একটি বিশাল অংশ বেকার। এদের অধিকাংশ আবার শিক্ষিত ও কর্মক্ষম। এমতাবস্থায় এই বেকার তরুণেরা বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচানোর জন্য প্রতিবছর বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যাগ এর মাধ্যমে অনেক শিল্প কল-কারখানা গড়ে উঠেছে যেখানে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থানের।
৪। মানব সম্পদ গঠনে সহায়তা ঃ বাংলাদেশে প্রচুর বেকার জনশক্তি রয়েছে। এমতাবস্থায়, এদেশের বেকার শ্রমশক্তিকে বিদেশে পাঠিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে পারলে একদিকে বেকারত্ব কমবে এবং অন্যদিকে তাদের পাঠানো রেমিট্যান্স এর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা যাবে। সেসব প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে অদক্ষ শ্রমশক্তিকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অধিক দক্ষ করে গড়ে তোলা যাবে এবং বাংলাদেশে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে উঠবে
৫। বৈদেশিক সাহয্যের উপর নির্ভশীলতা হ্রাস ও স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশ বিদেশী সাহায্যের উপর ক্রমশ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এতে করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিভিন্ন ক্ষতিকর শর্ত ও বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। তাই বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনতে হবে। আর বিদেশী সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে চাইলে অবশ্যই রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
৬। বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স দেশে মূলধন গঠনে সাহায্য করে। আর রেমিট্যান্সের মাধ্যমে মূলধন গঠন বাড়াতে পারলে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে শিল্প কারখানা স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
৭। জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স যেহেতু দেশের অভ্যন্তরে মূলধন গঠন বাড়ায় তাই উক্ত মূলধনকে যদি কার্যকর বিনিয়োগ করা যায় তাহলে কৃষি, শিল্প কল-কারখানা, ব্যবসায় বাণিজ্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। ফলে আমাদের জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ।
৮। ভোগ প্রবণতা বৃদ্ধি ঃ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স তাদের পরিবারবর্গের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে তাদের ভোগ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এর মাধ্যমে দেশের সামগ্রীক ভোগও বাড়ে যা পরবর্তীতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ভূমিকা পালন করে ।
৯। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও রেমিট্যান্স এর মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের ভোগ আচরণ ও ভোগ অভ্যাস উন্নত হয়েছে, রুটীর অনুকূল পরিবর্তন হয়েছে এবং জীবনযাত্রার মানও যথেষ্ট উন্নত হয়েছে। রেমিট্যান্সের মাধ্যমে এদেশের মানুষের মাথাপিছু জি.ডি.পি ও জীবনযাত্রার মান ক্রমশ বৃদ্ধি হচ্ছে ।
১০। শিল্পোন্নয়ন ও শিল্পায়নের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। তাই রেমিট্যান্স এর মাধ্যমে দেশে একক মালিকানায় এবং যৌথ উদ্যোগে বহু শিল্প কল-কারখানা গড়ে উঠেছে । এভাবে রেমিট্যান্স বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে।
১১। নগরায়ন ও প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের মাধ্যমে তাদের পরিবারবর্গ নতুন নতুন আবাসন তৈরীর প্রয়োজন অনুভব করে। তাদের চাহিদার কথা বিবেচনা করে দেশে বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট কোম্পানী গড়ে উঠেছে। এভাবে বাংলাদেশের শহরায়ন ও নগরায়ন বাড়ছে ।
১২। আয় বৈষম্য দূরীকরণে : সাধারণত বাংলাদেশ থেকে যে সকল শ্রমিক বিদেশে কাজ করতে যায়, অধিকাংশ দ্ররিদ্র পরিবারের। তাই প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স দরিদ্র পরিবারগুলোর আয়
বাড়াতে সাহায্য করছে। এভাবে রেমিট্যান্স এর মাধ্যমে যদি দরিদ্র পরিবারগুলোর আয় ও সম্পদ বাড়ানো যায় তাহলে সমাজে আয় বৈষম্য কমে আসবে।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নে রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে । কারণ রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের দারিদ্র দূরীকরণ, শিল্পোন্নয়ন, কৃষির উন্নয়ন, জাতীয় আয় বৃদ্ধি, মূলধন গঠন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও বেকারত্ব দূর করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা সহজ হবে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]