বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির উপায় ঃ রপ্তানি বাণিজ্যের সমস্যার সমাধান

বাংলাদেশের রপ্তানি বৃদ্ধির উপায় ঃ রপ্তানি বাণিজ্যের সমস্যার সমাধান Measures to Export Promotion in Bangladesh: Solution of
আমাদের রপ্তানি বাণিজ্য উন্নয়নের জন্য যে সকল নীতিমালা গৃহীত হয়েছে তা বাস্তবায়ন করে রপ্তানিকারকদের উৎসাহ দেয়া যেতে পারে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সম্পদসমূহকে একত্রিত করে রপ্তানির জন্য মজুদ করা এবং সেই সাথে কাঁচামালের পরিবর্তে তৈরি মাল রপ্তানি করার ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন । এ উদ্দেশ্যে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য যে সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হল ।
১। কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি ঃ একথা সত্য যে, আমাদের দেশের অর্থনীতি এখনও কৃষি নির্ভর । শিল্প কারখানাতে দেশ উন্নত না হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামাল রপ্তানির দ্বারা বাংলাদেশের অনুপ্রবেশ ঘটেছে । বিগত ৪২ বছরের মধ্যে শিল্পজাত পণ্য রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে এদেশের পরিচিতি পাওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তা হয়নি। তাই রপ্তানির জন্য আমাদের গতানুগতিক কৃষি পণ্যের উপর নির্ভরশীল হতে হচ্ছে । বাস্তবতাকে উপলব্ধি করার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য পাট, চা, চামড়ার মতো কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা উচিত ।
২। রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপন : আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের চেয়ে শিল্পজাত গণ্যের চাহিদা অনেক বেশি। তাই রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপন করার বিষয়ে আমাদের অধিক মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। বাংলাদেশে অধিক রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার সৃষ্টি, পোশাক শিল্প স্থাপন ইত্যাদি রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে নুতন সংযোজন বলে চিহ্নিত হয়েছে। এ শ্রেণীর শিল্প কারখানা বৃদ্ধির বিষয়ে প্রচেষ্টা অব্যহত রাখা বাঞ্ছনীয় ।
৩। রপ্তানিমুখী শিল্পখাতে শুল্কের হার হ্রাস : রপ্তানিমুখী শিল্প খাত থেকে শুল্ক হার হ্রাস করা উচিত । তাতে নতুন শিল্পোদ্যোক্তারা উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা পাবে এবং দেশে রপ্তানিমুখী শিল্পের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতামূলক পণ্য সরবরাহ করার জন্য রপ্তানি পণ্যের উপর শুল্ক নির্ধারণে শিথিলতা বজায় রাখা উচিত। কতিপয় অসাধু ব্যক্তি আর্থিক স্বার্থের জন্য রপ্তানিকারকদের হয়রানি করার ফলে তারা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে রপ্তানি করতে ব্যর্থ হয়। এতে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে । তাই যে কোন অবস্থায় রপ্তানি খাতে মুক্ত পরিবেশ বজার রাখা বাঞ্ছনীয় ।
৪। ঋণের সুবিধা ঃ প্রকৃত রপ্তানিকারকদের জন্য ঋণের ব্যবস্থা থাকা বাঞ্চনীয় । দেশের আর্থিক বাজারে সেবারত সরকারি কিংবা বেসরকাবি তর যে কোন ব্যাংক হতে ঋণ সরবরাহ করা উচিত । তাছাড়া রপ্তানিকারকগণ যেন প্রয়োজনীয় কাজগপত্র একই অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারে তার ব্যবস্থা থাকা উচিত ।
৫। পর্যাপ্ত পরিবহণ ব্যবস্থা ও দ্রুততার সাথে রপ্তানি পণ্য ডেলিভারি দেয়ার জন্য উন্নত পরিবহনের বিকল্প নেই। পরিবহণ ভাড়া যত কমানো যায় রপ্তানির পরিমাণ ততই বৃদ্ধি পাবে। ভাড়া নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সরকারি নিয়ন্ত্রণে রেখে সরকারি পরিবহণের পাশাপাশি বেসরকারি পরিবহণকে উৎসাহ প্রদান রপ্তানি নীতির একটি দিক বলে চিহ্নিত হওয়া উচিত ।
৬। চোরাচালান রোধ ঃ চোরাই পথে যে সকল পণ্য সীমান্তের ওপারে চলে যায় তা হতে উপার্জিত আয় দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এতে অর্থনীতিতে মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। মাছ, চা, চামড়াসহ নানা শ্রেণীর মূল্যবান সম্পদ এভাবে পাচার হওয়াকে রপ্তানি বলা যায় না। তাই চোরাচালান একটি সমস্যা এবং তা যে কোন মূল্যে প্রতিহত করা আইন রক্ষাকারী বাহিনী ও কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব ।
৭। পণ্যের মানোন্নয়ন ও রপ্তানি পণ্যের মানোন্নয়ন আবশ্যক, বিদেশে নিম্নমান সম্পন্ন পণ্যের ক্রেতা পাওয়া দুষ্কর । তাই রপ্তানির জন্য সকল পণ্যের মান উন্নত হওয়া বাঞ্ছনীয়। এতে বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়ে অধিক পরিমাণে আন্তর্জাতিক বাজার দখল করার পথ সুগম হবে ।
৮। কুটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন : আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পরিধি বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশের সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক থাকা আবশ্যক । রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতি বছর নতুন নতুন চুক্তি সম্পাদন করা অর্থনীতির জন্য মঙ্গলজনক । কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির কারণে আমাদের রপ্তানি পণ্যের অধিকাংশই কৃষি পণ্য দ্বারা মেটানো হয় । তাই মধ্যপ্রাচ্যের যে সকল দেশ কৃষির কাঁচামাল কিনতে প্রস্তুত এমন দেশের সংগে বাণিজ্যিক চুক্তি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করা উচিত ।
৯। বাণিজ্য মেলার আয়োজন : রপ্তানি বাড়ানোর জন্য তথা বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা বাড়ানোর জন্য বিদেশে রপ্তানি মেলার আয়োজন করা যেতে পারে। তাছাড়া বিদেশে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অংশগ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে এবং আমাদের দেশের অনুষ্ঠিত বাণিজ্য মেলায়ও বিদেশীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়াতে হবে। এমনকি বিভিন্ন দেশের সাথে যৌথভাবে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করার চেষ্টা করতে হবে ।
১০ । ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা : বিদেশে বাংলাদেশী রপ্তানি পণ্য ও এদের গুণাগুণ সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যবসায়ী প্রতিনিধি প্রেরণ করা যেতে পারে । তাছাড়া বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশী দুতাবাসের মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে এবং নতুন নতুন বাজার অনুসন্ধান করতে হবে ।
১১। গুদামজাতকরণ ও প্যাকেজিং : বাংলাদেশে রপ্তানি পণ্য বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে গুদামজাতকরণ করতে হবে যাবে পণ্যের গুণাগণ অক্ষুন্ন থাকে । তাছাড়া উৎপাদনের পর উপযুক্ত নমুনাকরণ ও শ্রেণীকরণের মাধ্যমে যথাযথ উপায়ে পণ্যের প্যাকেজিং করতে হবে ।
১২। রপ্তানি বহুমুখীকরণ ঃ গুটি কয়েক রপ্তানি পণ্যের উপর নির্ভর করে বসে থাকলে চলবে না । বরং রপ্তানি পণ্যের আইটেম বাড়াতে হবে। রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ ও বৈচিত্র্যকরণের মাধ্যমে রপ্তানির পরিমাণ ও রপ্তানি আয় বাড়ানো সম্ভব ।
১৩। জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি : এ কথা সত্য যে, বাংলাদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত । দেশে অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত। দেশের অতিরিক্ত শ্রমশক্তিকে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে
বৈদেশিক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব । যে সকল দেশে জনশক্তি রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেছে কুটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সেসব দেশে নতুন করে জনশক্তি রপ্তানি শুরু করতে হবে এবং নতুন নতুন দেশে জনশক্তি রপ্তানির বাজার অনুসন্ধান করতে হবে ।
১৪ । অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ ঃ রপ্তানি আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে বিদ্যমান প্রচলিত রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি নতুন নতুন অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি করার কথা ভাবতে হবে । যেমন- হস্ত ও কুটির শিল্প, অলংকার, শাকসব্জি, প্লাস্টিক সামগ্রী ইত্যাদি ।
১৫। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন : রপ্তানি বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন জরুরী । এজন্য হরতাল, অবরোধ, শ্রমিক ধর্মঘট, বন্ধর অচল কর্মসূচি, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, অসহযোগ ইত্যাদি নাশকতামূলক কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে এ সকল কর্মসূচি বন্ধের ব্যাপারে সরকারি ও বিরোধীদলসহ সকল রাজনৈতিক দলকে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে; প্রয়োজনে এ ব্যাপারে সংসদে বিল পাশ করতে হবে।
১৬। ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অবসান ও দুর্নীতি দমন ঃ রপ্তানী বাণিজ্যের সাথে জড়িত সরকারি ও বেসরকারি ব্যক্তিবর্গের দক্ষতা বাড়াতে হবে । নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতার উন্নয়ন করতে হবে । সেই সাথে রপ্তানি কার্যক্রমের সাথে জড়িত দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। তাছাড়া অহেতুক আমতান্ত্রিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা দূর করতে হবে যাবে রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুত ত্বরান্বিত করা যায় ।
উপরোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আমাদের উপরোক্ত সুপারিশসমূহ বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন না আসলেও রপ্তানি বাণিজ্যের সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাসমূহের অধিকাংশই দূর হবে এবং রপ্তানি বাণিজ্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]