বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তনের গতিধারা

বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের বৈশিষ্ট্য ও পরিবর্তনের গতিধারা Characteristics and Trends of Changes of Imports in Bangladesh
বাংলাদেশ মূলত এখনও একটি আমদানি নির্ভর দেশ। প্রাথমিক পণ্য, শিল্পজাত পণ্য, খাদ্যসামগ্রী, ভোজ্য তেল, খুচরা যন্ত্রাংশ, তথ্য-প্রযুক্তি ইত্যাদি প্রধানত বাংলাদেশ আমাদানি করে থাকে । তবে একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের গতি প্রকৃতিতে বেশ পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশে আমদানি বাণিজ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য ও সাম্প্রতিক পরিবর্তনের গতিধারা নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো ।
১। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ঃ আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি,
মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং আমাদের আভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ও আমদানি ব্যয় ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে ২০০৩-০৪ অর্থবছর থেকে । ২০১০-১১ অর্থবৎসর পর্যন্ত এই সময়ে আমাদের আমদানি ব্যয় বেড়ে দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে । নিম্নে তালিকা থেকে বোঝা যাবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে কিভাবে আমদানি ব্যয় বেড়ে চলেছে ।
২। আমদানি পণ্যের সংখ্যা বৃদ্ধি ঃ এক সময় বাংলাদেশ গুটি কয়েক পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতো এবং বেশিরভাগ পণ্যই নিজ দেশে উৎপাদিত হত। কিন্তু বর্তমানে সুই-সুতা থেকে শুরু করে মোটরগাড়ী, বিমান পর্যন্ত এমন কোন পণ্য নেই যা বাংলাদেশ আমদানি করে না। এমনকি দিন যত যাচ্ছে আমাদের আমদানি পণ্যের সংখ্যা ততই বাড়ছে ।
৩। প্রাথমিক পণ্যের আমদানি হ্রাস : বাংলাদেশ আগে সিংহভাগ আমদানি করত প্রাথমিক খাদ্য যেমন- খাদ্য, তুলা, তৈলবীজ ইত্যাদি । এক সময় বাংলাদেশের মোট আমদানি ব্যয়ের ২৫% এর বেশি ব্যয় করা হতো প্রাথমিক পণ্য আমদানির জন্য । কিন্তু ২০১০-১১ সালে এসে বাংলাদেশের মোট আমদানি ব্যয়ের মাত্র ১৭% এর কম ব্যয় করা হয়েছে প্রাথমিক পণ্য আমদানির পেছনে ।
৪ । শিল্পজাত পণ্যের আমদানি বৃদ্ধি : বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল শিল্পজাত পণ্যের আমদানির পরিমাণ ও আমদানির ব্যয় ক্রমশ বেড়ে চলেছে । বিশেষ করে ২০১১ সালের পর থেকে শুরু করে বিগত বছরগুলোতে শিল্পজাত পণ্যের আমদানির পরিমাণ ও আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে আমাদের মোট আমদানি ব্যয়ের মাত্র ১৬ ভাগ ব্যয় হতো শিল্পজাত পণ্য আমদানি বাবদ । সেখানে ২০১০-১১ অর্থবছরে এসে মোট আমদানি ব্যয়ের ২২ শতাংশেরও বেশি ব্যয় করা হয়েছে শিল্পজাত পণ্য আমদানি বাবদ ।
৫ । উদার আমদানি নীতি গ্রহণ ঃ বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে উদার ও অবাধ আমদানি নীতি গ্রহণ । স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশ শুরুতে কঠোর আমদানি নীতি অনুসরণ করেছিল যেখানে সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছিল আমদানির উপর, সরকারী নিয়ন্ত্রণ আস্তে আস্তে শিথিল হতে থাকে ২০০০ সালের পর থেকে বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের সরকারগুলো উদার ও অবাধ আমদানি নীতি গ্রহণ করে ।
৬। সরকারী নিয়ন্ত্রণ হ্রাস : উদার আমদানি নীতি গ্রহণের ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমদানির উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়। বর্তমানে বাংলাদেশের বেশিরভাগ আমদানি বাণিজ্য বেসরকারিখাতে ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত হয় ।
৭। বিলাসজাত দ্রব্যের উপর আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি ঃ আমদানি ব্যয় কমিয়ে বাণিজ্য ঘাটতি দূর করার জন্য বাংলাদেশ সরকার বিলাসজাত দ্রব্যের আমদানির উপর শুল্ক হার হ্রাস করেছে। ক্ষেত্রবিশেষে (বিশেষ করে মোটর গাড়ী) ক্রয়মূল্যের উপর ৩০০% শুল্ক বসিয়েছে আমদানি নিরুসাহিত করার জন্য ।
৮। মূলধনী দ্রব্যের আমদানি বৃদ্ধি : বাংলাদেশে নগরায়ন ও শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবার কারণে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি ব্যয় বেড়েছে। বিশেষ করে গার্মেন্টস শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণের ফলে Backward linkage ও Forward linkage অনেক শিল্প স্থাপিত হবার ফলে ভারী মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি অনেকগুণ বেড়েছে।
৯। ভোগ্যপণ্যের আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি ঃ ফ্রীজ, টেলিভিশন, ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, কম্পিউটার, গাড়ি, মোবাইল সেট ইত্যাদি মূল্যবান ভোগপণ্য আমদানি বাবদ ব্যয় প্রচুর পরিমাণে বেড়েছে। ১৯৮৭-৮৮ অর্থবছরে যেখানে এ সকল ভোগ্যপণ্যের আমদানি বাবদ ব্যয় হতো মোট আমদানি ব্যয়ের মাত্র ২২ শতাংশ। কিন্তু ২০১০ সালে এসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশেরও বেশি।
১০। পোশাক শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ঃ পোশাক উৎপাদনের সকল কাঁচামালই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। বিশেষ করে স্টাফেল, ফাইবার, বোতাম, জিপার ইত্যাতি উল্লেখযোগ্য। ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ এ খাতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছিল ১৫৪ কোটি মার্কিন ডলার ।
১১। ওয়েজ আর্নার্স স্কীম এর আওতায় আমদানি ও বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ওয়েজ আর্নার্স স্কীম-এর সংযোজন । ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার এ স্কীম চালু করে যা এখনও অব্যাহত আছে। এ স্কীমের আওতায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা নিজেদের অর্জিত আয়ে বিদেশ থেকে সরাসরি পণ্যসামগ্রি আমদানি করতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের আমদানি নীতি
মেনে চলতে হবে ।
১২। খাদ্যশস্যের আমদানি ঃ কৃষি প্রধান হলেও বাংলাদেশ প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করে খাদ্য শস্য আমদানির জন্য। খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতি বছরই বাংলাদেশকে বিপুল পরিমাণে খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয় । খাদ্য ছাড়াও পেঁয়াজ, রসুন, আদা, মসলা ইত্যাদি তো আছেই । উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যের গতি প্রকৃতি বদলেছে । রপ্তানি আয় বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে আমদানির পরিমাণ ও আমদানি ব্যয় বেড়ে চলেছে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]