অবাধ বাণিজ্য নীতি Free Trade Policy

বাণিজ্য নীতি Trade. Policy..
সহজ কথায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিচালনার জন্য একটি দেশে যে সকল নীতিমালা অনুসরণ করে সেগুলোকে একত্রে বলা হয় বাণিজ্য নীতি। বাণিজ্য নীতি প্রধানত দু'ধরনের হতে পারে । যথাঃ (ক) আমদানি নীতি এবং (খ) রপ্তানি নীতি। একটি দেশ কি কি পণ্য আমদানি করবে, কোন্ কোন্ দেশ থেকে আমদানি করবে, আমদানি পণ্যের উপর শুল্ক হার কি হবে, বৈদেশিক দেনা পাওনা কিভাবে মেটানো হবে, সরকারি পর্যায়ে নাকি বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা হবে। এতদ্বসংক্রান্ত যাবতীয় নীতিমালাকে আমদানি নীতি বলে । আবার, একটি দেশ কি কি পণ্য রপ্তানি করবে, কোন্ কোন্ দেশের কাছে রপ্তানি করবে, রপ্তানি শুল্কহার কি হবে, রপ্তানি বাড়ানোর জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এতদ্বসংক্রান্ত নীতিমালাকে বলা হয় রপ্তানি নীতি । একটি দেশের আমদানি নীতি ও রপ্তানি নীতিকে একত্রে বলা হয় বাণিজ্য নীতি ।
একটি দেশের বাণিজ্য নীতি কি রকম হবে তা সে দেশের ভৌগলিক অবস্থান, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো, দেশের চলমান অবস্থা, বিশ্ব অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক পরিস্থিতি এবং সরকারের রাজনৈতিক দর্শন এর উপর নির্ভর করে । একটি দেশের সরকার প্রতিনিয়ত বিশ্ব অর্থনীতির সাথে তাল মেলানোর জন্য তার বাণিজ্য নীতি তথা আমদানি-রপ্তানি নীতি সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করে । এক্ষেত্রে বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয় । বাংলাদেশও স্বাধীনতার পর ১৯৭৩-৭৪ সাল থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত বহুবার আমদানি-রপ্তানি নীতি তথা বাণিজ্য নীতি পরিবর্তন করেছে। তবে প্রতিবারেই বাণিজ্য নীতি পরিবর্তন এর ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য ছিল আমদানি ব্যয় হ্রাস ও রপ্তানি আয় বাড়ানোর মাধ্যমে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা ।
অবাধ বাণিজ্য নীতি Free Trade Policy
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উপর কোন প্রকার বিধিনিষেধ আরোপ করা না হলে তাকে অবাধ বাণিজ্য বলা হয় । অবাধ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানি ও রপ্তানির উপর কোন প্রকার বাধানিষেধ বা আমদানি শুল্ক এবং আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয় না। অর্থাৎ বিভিন্ন দেশের মধ্যে অবাধে পণ্য আমদানি ও রপ্তানি চলে। তবে অবাধ বাণিজ্য নীতির প্রচলন থাকলেও রাজস্ব আদায়ের উদ্দেশ্যে সরকার বিদেশী দ্রব্যের আমদানির উপর সামান্য শুল্ক আরোপ করতে পারে । বিদেশী দ্রব্যের উপর শুল্ক বসালে সরকার দেশীয় দ্রব্যের উপর উৎপাদন শুল্ক বসাতে পারে । অবাধ বাণিজ্যে রাজস্ব আদায়ের জন্য শুল্ক ধার্য করা হলে তা দেশী এবং বিদেশী উভয় দ্রব্যের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়ে থাকে । অর্থাৎ অবাধ বাণিজ্যে সরকার দেশী এবং বিদেশী উভয় দ্রব্যকেই একই দৃষ্টিতে দেখে থাকে । A. Smith, D Ricardo, J. S. Mill প্রমুখ ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদ অবাধ বাণিজ্যের সমর্থক ছিলেন । সর্বশেষে এক কথায় বলা যায়, “বিভিন্ন দেশের মধ্যে বাণিজ্য কোন প্রকার রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ বা হস্তক্ষেপ ব্যতীত অবাধে পরিচালিত হলে তাকে অবাধ বাণিজ্য বলে ।”
সংরক্ষণ/নিয়ন্ত্রিত বাণিজ্য Protection/Controlled Trade
বিদেশী প্রতিযোগিতার হাত হতে দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করার জন্য যখন আমদানিকৃত বিদেশী দ্রব্যের উপর শুল্ক আরোপসহ বিভিন্ন প্রকার নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তখন তাকে বলা হয় সংরক্ষণ । বিস্তৃত অর্থে দেশীয় শিল্পকে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ প্রদান, বিদেশী প্রতিযোগিতার হাত হতে দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করা কিংবা অন্য যে কোন অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক কারণে যখন এক দেশের সাথে অন্য দেশের বাণিজ্য প্রবাহে আমদানি শুল্ক, আমদানি কোটা, রপ্তানি ভর্তুকী, বিনিময় নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদির মাধ্যমে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় তখন তাকে বলা হয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সংরক্ষণ ।
অধ্যাপক Jhonson এর মতে, “সংরক্ষণ বলতে ঐসব নীতিকে বুঝায় যার দ্বারা দেশীয় ভোক্তা ও উদ্যোক্তাদের জন্য এবং বিশ্ব বাজারের জন্য দ্রব্যসামগ্রীর আপেক্ষিক দামের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করা হয় ।”
অবাধ বাণিজ্য বনাম সংরক্ষণ : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত Free Trade vs Protection : Bangladesh Chapter
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল ও কৃষিপ্রধান দেশ। শিল্পে তেমন একটা অগ্রসর নয় । এমতাবস্থায় বাংলাদেশের জন্য অবাধ বাণিজ্য নাকি সংরক্ষণ মূলক বাণিজ্য নীতি কোটি অনুসরণ করা উচিত তা আলোচনার বিষয় ৷
অবাধ বাণিজ্যের প্রবক্তা ক্লাসিক্যাল অর্থনীতিবিদগণের তত্ত্ব অনুসারে বলা যায় বাংলাদেশের পক্ষে ঔষধ, তৈরি পোশাক, চা, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত চিংড়ি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন ও রপ্তানি করা উচিত। কারণ এসব পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের তুলনামূলক সুবিধা রয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশে মূলধন অপ্রতুল এবং প্রযুক্তি ততটা উন্নত নয় তাই কোন ভারী শিল্পজাত পণ্য উৎপাদন না করে বরং বিদেশ থেকে আমদানি করা উচিত। এমনকি বাংলাদেশে যেহেতু প্রচুর জনশক্তি রয়েছে তাই বাংলাদেশের উচিত দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে মানবসম্পদ উন্নয়ন করে বিদেশে রপ্তানি করা। কিন্তু অবাধ বাণিজ্য বর্তমান থাকলে বাংলাদেশের যেসকল সম্ভাবনাময় মাঝারি ও ভারী শিল্প রয়েছে সেগুলো তীব্র বিদেশী প্রতিযোগীতার সম্মুখীন হবে। এতে করে উন্নত বিদেশী শিল্পের সাথে অসম প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অনেক শিল্প কলকারখানায় লালবাতি জ্বলবে। অথচ এসব শিল্পের সামাজিক উপযোগিতা অনেক বেশি। যেমন- ইস্পাত কারখানা, মেশিন ট্যুলস কারখানা, বস্ত্রকল, কাগজকল, চিনিকল ইত্যাদির কথা বলা যায়। তাই এসব শিল্পকে অবাধ বাণিজ্যের নামে আমরা উম্মুক্ত বিদেশী প্রতিযোগীতার হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। বরং উচ্চহারে আমদানি শুল্ক বসিয়ে এসব শিল্পকে বিদেশী প্রতিযোগিতার হাত থেকে সংরক্ষণ করা উচিত। তবে সংরক্ষণের নামে অপ্রয়োজনীয় এবং অদক্ষ শিল্প রক্ষা করা উচিত নয় । শুধুমাত্র যেসব শিল্পের সামাজিক উপযোগ বেশী এবং আয়, নিয়োগ ও উৎপাদনের দিক হতে যেগুলোর ভবিষ্যৎ উজ্জল সেগুলোকে বিদেশী প্রতিযোগিতার হাত হতে সংরক্ষণ করে অবশিষ্ট শিল্প পণ্যগুলোকে উম্মুক্ত প্রতিযোগিতায় ছেড়ে দেওয়া উচিত ।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ P. A. Samuelson যথার্থই বলেছেন, “যেসব দেশ কৃষি থেকে শিল্প জীবন পদ্ধতিতে পৌছাতে চেষ্টা করে সেখানে শিশু শিল্প সংরক্ষণ যুক্তি প্রবলতর।” মোটকথা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, স্বনির্ভরতা অর্জন, প্রতিরক্ষা শিল্প গড়ে তোলাসহ নানা কারণে বাংলাদেশের শিল্প সংরক্ষণ নীতি গড়ে তোলা প্রয়োজন । '
শুল্ক কাঠামো সহজীকরণ Simplification of Tariff Structure
সরকারের আমদানি নীতির সুষম বাস্তবায়নের সুযোগ সৃষ্টি নিমিত্ত ২০০০-০১ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ মোস্ট ফেডারড নেশন (এমএফএন) ট্যারিফ হার অনুসরণ করে আসছে। নিম্নের সারণিতে ২০০৫-০৬ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত ট্যারিফ কাঠামো উপস্থাপন করা হল ।
২০০০-০১ অর্থবছর থেকে ২০১৪-১৫ অর্থবছর পর্যন্ত ট্যারিফ কাঠামো ।
তত্ত্ব আইনের সিডিউলে বর্ণিত এমএফএন শুল্ক হারের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে পৃথকভাবে শুল্ক আইনের ২০১ ধারা অনুসারে প্রয়োগকৃত এমএফএন হারের উপর ৩ প্রকার রেয়াতি শুল্কহার কার্যকর রয়েছে, যথাঃ (১) বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক/আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় আমদানি, (২) রপ্তানিমুখী শিল্পসহ নিবন্ধনকৃত শিল্পের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি এবং (৩) নির্দিষ্ট কাজের জন্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, যেমন- গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগী, ঔষধ, চামড়া ও বস্ত্রশিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক কাঁচামাল আমদানি। বর্তমানে এমএফএন শুষ্ক হারের পাশাপাশি নিম্নলিখিত পণ্যসমূহের ক্ষেত্রে শুল্ক রেয়াত সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে,
(ক) রপ্তানিকারক শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানিকৃত মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং যন্ত্রাংশ, (খ) নিবন্ধিত শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক আমদানিকৃত মূলধনী যন্ত্রণাতি এবং যন্ত্রাংশ;
(গ) ঔষধ শিল্প কর্তৃক আমদানিকৃত কাঁচামাল
(ঘ) টেক্সটাইল শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল;
(ঙ) কৃষিখাতে ব্যবহৃত উপকরণ;
(চ) কম্পিউটার এবং কম্পিউটারের আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি;
(ছ) চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা উপকরণ;
(জ) সংবাদপত্র ও সাময়িকী প্রকাশকগণ কর্তৃক আমদানিকৃত নিউজপ্রিন্ট;
(ঝ) কৃষিকাজে ব্যবহার্য কীটনাশক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যবহৃত কাঁচামাল; এবং
(ঞ) হাঁস মুরগী খামার কর্তৃক আমদানিকৃত যন্ত্রপাতি, যন্ত্রাংশ ও উপকরণ ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]