পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের প্রায় ৪ থেকে ৫ লক্ষ লোক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। বিদেশে কর্মবহ বসবাসকারী তাদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা যাতে দেশে পাঠাতে উৎসাহিত হয় এবং তা সহজে টাকার রূপান্তর করতে পারে সেজন্য সরকার ১৯৭৫ সালে “ওয়েজ আর্নারস স্কীম' নামে একটি কর্মসূচি গ্রহণ করে এ স্কীমের অধীনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বিদেশের বিভিন্ন ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রা একাউন্ট' (F.C. Account) এর মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাতে পারে।
তাদের এই প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের ওয়েজ আর্নারস বাজারে ক্রয় বিক্রয় হয়। আমদানিকারকগণ এ বাজার থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করে আমদানি মূল্য মিটাতে পারে। এ স্কীমের মাধ্যমে প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠাতে উৎসাহ দেওয়ার জন্য এ বাজারের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সরকারি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে রাখা হয়েছে । এ বাজারে বৈদেশিক মুদ্রার মূল্য প্রচলিত সরকারি বিনিময় হারের চেয়ে বেশি।
ওয়েজ আর্নারস স্কীমের ভূমিকা
Role of Wage Earner's Scheme
যেহেতু বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার যথেষ্ট অভাব রয়েছে, সেহেতু এদেশের অর্থনীতির উন্নতির জন্য ওয়েছ আনারস স্কীমের গুরুত্ব অপরিসীম। তে ওয়েজ আর্নারস স্কীমের ভূমিকা নিম্নে আলোচন করা হলো।
১। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন : এই স্কীমের আওতায় সরকার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্র অর্জন করতে সক্ষম হয় ।
২। সঞ্চয় বৃদ্ধি : এ স্কীমের আওতায় বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় মূল্য যেমন বেশি তেমনি কোন কোন ক্ষেত্রে সঞ্চয়ের জন্য প্রদেয় সুদের হারও বেশি। ফলে প্রবাসীরা সঞ্চয়ে আগ্রহী হয়ে উঠে। অর্থাৎ এ স্কীমের ফলে প্রবাসীদের সঞ্চয় প্রবণতা বৃদ্ধি পায় ।
৩। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ৪ এ স্কীমের আওতায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা তাদের অর্জিত অর্থ সহজে দেশে প্রেরণ করতে পারে । ফলে তাদের পরিবারের সদস্যদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায় ।
৪। শিল্পোন্নয়ন ঃ এ স্কীমের আওতায় অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার দ্বারা আমদানিকারকরা শিল্পোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও জ্বালানি সংগ্রহ করতে পারে । ফলে দেশে শিল্পোন্নয়ন ঘটে ।
৫। সম্পদের পুনর্বন্টন ঃ এ স্কীমের আওতায় অর্জিত অর্থ দ্বারা প্রবাসীরা নিজেদের পরিবারের জন্য বৈষয়িক সম্পদ ক্রয় ও বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে থাকে । ফলে সমাজে সম্পদের পুর্নবন্টন ঘটে । ৬। লেনদেনের ঘাটতি পূরণ ঃ এ স্কীমের আওতায় প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা দ্বারা লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হয় ।
৭। আমদানি ব্যয় ঃ এ স্কীমের আওতায় প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয় মেটানোর ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখে ।
৮। বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা ঃ এ স্কীম বিনিময় হার স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করে। কারণ আমাদের দেশের রপ্তানি আয় কম, আমদানি ব্যয় বেশি। ফলে বিনিময় হারে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়। এ অস্থিতিশীলতা রক্ষায় ওয়েজ আর্নারস স্কীমের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ ভূমিকা রাখে ।
৯। লাভজনক আমদানি : এ স্কীমের আওতায় বাংলাদেশী আমদানিকারকগণ সরকারের নিকট থেকে প্রাপ্ত বিশেষ সুযোগ সুবিধায় দ্রব্য সামগ্রী আমদানি করতে পারে ।
১০। সহজে ঋণ গ্রহণ ঃ ওয়েজ আর্নারের প্রতিনিধিরা এ প্রকল্পের আওতায় সহজে ব্যাংক থেকে
ঋণ গ্রহণ করতে পারে ।
১১ । মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ঃ এ স্কীমের আওতায় প্রবাসীরা ও দেশীয় আমদানিকারকরা দ্রব্য সামগ্রী আমদানি করতে পারে । ফলে দ্রব্যের যোগান বৃদ্ধি পায় এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ হ্রাস পায় ।
১২। কর্মসংস্থান ঃ এ স্কীমের আওতায় বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কারণে লোকজন বিদেশে চাকুরি করতে আগ্রহী হয় । ফলে জনসংখ্যা রপ্তানি বৃদ্ধি পায় এবং কর্মসংস্থান বাড়ে ।
১৩। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ঃ এ স্কীমের আওতায় বৈদেশিক মুদ্রার যোগান বৃদ্ধি পায় ৷ আবার আমদানিকারকগণ ওয়েজ আর্নারস বাজার থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয় করে আমদানিকৃত পণ্য সামগ্রীর মূল্য পরিশোধ করতে পারে । ফলে বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ হ্রাস পায়, রিজার্ভ বৃদ্ধি পায় ৷
১৪ । অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঃ এ স্কীমে অর্জিত অর্থ দ্বারা প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও ভোগ্যপণ্য
দ্রব্য সামগ্রী আমদানি করা যায় । ফলে সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয় ।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, ওয়েজ আর্নারস স্কীমে প্রাপ্ত অর্থ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা সাবিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে ।
ওয়েজ আর্নারস স্কীমের অসুবিধা
Disadvantages of Wage Earner's Scheme
১। এ স্কীমের আওতায় আমদানিকারকরা অন্যান্য আমদানিকারকদের চেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করলে আমদানি বাণিজ্যের উপর বিরূপ প্রভাব দেখা দিবে ।
২। এ স্কীমের আওতায় যদি বিলাস দ্রব্য আমদানি হয় তবে তা অর্থনীতির উন্নয়নের জন্য বিরূপ
প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে ।
৩। এ স্কীমের আওতায় প্রেরিত অর্থ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যয় না হলে দেশে মুদ্রাস্ফীতির
আকার প্রকট হবে ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত