বাংলাদেশের কৃষির সমস্যা/কৃষি উন্নয়নে বাধা বা প্রতিবন্ধকতাসমূহ

বাংলাদেশের কৃষির সমস্যা/কৃষি উন্নয়নে বাধা বা প্রতিবন্ধকতাসমূহ Problems/Restrictions of Agriculture in Bangladesh
বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও কৃষির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি। বাংলাদেশের কৃষিতে ফসল একর প্রতি ফলন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম । নিম্নে একটি টেবিলের মাধ্যমে বিষয়টি দেখানো হলো ।
নিম্নে বাংলাদেশের কৃষির সমস্যাসমূহ আলোচনা করা হল ।
১। প্রাচীন চাষ পদ্ধতি ঃ বাংলাদেশের কৃষিতে এখনও পুরাতন চাষাবাদ পদ্ধতি চালু রয়েছে। বাংলাদেশের কৃষকরা এখনো কাঠের লাঙ্গল ও বলদ দিয়ে চাষাবাদ করে। ফলে জমিতে উৎপাদনের হার
অত্যন্ত কম হয় ।
২। জমির উপরিভাগ ও বিচ্ছিন্নতা : বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থায় ভূমির মালিকানা হস্তান্তরের সুযোগ থাকায় জমিগুলো ক্রমান্বয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমিতে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে এরূপ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জমিতে বৈজ্ঞানিক চাষাবাদ পদ্ধতি প্রবর্তন করা যায় না ।
৩। মৃত্তিকা ক্ষয় ঃ বাংলাদেশে প্রবল বৃষ্টিপাত, বন্যা, বায়ু প্রবাহ, নির্বিচারে বন উচ্ছেদ এবং অবৈজ্ঞানিক কৃষি ব্যবস্থার ফলে প্রতিনিয়ত মৃত্তিকা ক্ষয় হচ্ছে। মৃত্তিকা ক্ষয় হওয়ার ফলে উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে এবং উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
৪ । ভূমিহীন কৃষক : বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় যারা জমি চাষাবাদ করে ফসল ফলায়, তাদের বেশিরভাগের, নিজস্ব জমি নেই। আর যাদের জমি আছে তারা সরাসরি কৃষি কাজের সাথে জড়িত নয় । ফলে এই দেশের ভূমিহীন কৃষকরা উৎসাহের সাথে কাজ করে না । এর ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়
৫। অগ্র সেচ ব্যবস্থা : বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থার অন্যতম একটি হলো পর্যান্ত সেচ ব্যব অভাব। কৃষি ক্ষেত্রে উচ্চশী প্রযুক্তির জন্য নিয়মিত পানি সেচ অপরিহার্য। দেশে এখনো অনেক জমি সেরে আওতায় না আসায় ধানের উৎপাদন অনেক কম হচ্ছে। নিম্নে সেচকৃত জমির পরিমাণ দেখানো হলো।
৬। মৌসুমি বায়ুর উপর নির্ভরশীলতা ঃ বাংলাদেশের কৃষি অনেকটাই নির্ভর করে মৌসুমি বায়ুর উপর । ফলে কখনও অনাবৃষ্টি, কখনও অতিবৃষ্টির ফলে দেশের কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয় ।
৭। বন্যা ও পানি নিষ্কাশনের অভাব ঃ একদিকে পানির অভাবে যেমন ফসল নষ্ট হয়, তেমনি বন্যায়ও উৎপাদিত ফসল নষ্ট হয়। বন্যার পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় প্রতি বছর প্রচুর ফসল নষ্ট হয়।
৮। সনাতন পদ্ধতিতে সেচ ঃ বাংলাদেশের কৃষিতে এখনো সেচকৃত জমির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সনাতন পদ্ধতিতে সেচের ব্যবস্থা হয়ে থাকে। তাই ঐসব সেচকৃত জমিতে তুলনামূলকভাবে কম ফসল উৎপাদন হয় । নিম্নে একটি তালিকায় সনাতন পদ্ধতিতে সেচের ব্যবস্থা দেখানো হলো ।
৯। জলাবদ্ধতা ও লবণাক্ততা ঃ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল যেমন- সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে বহুমুখী জলাবদ্ধতার কারণে চাষের অযোগ্য হয়ে আছে। তাছাড়া সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অনেক জমি লবণাক্ততার জন্য ফসল উৎপাদনে অনুপযোগী হয়ে থাকে ।
উপকূলীয় এলাকাগুলোর লবণাক্ত পানি আর লবণাক্ত জমির পরিমাণ বেশি থাকায় প্রতি বছর এ অঞ্চলে মোট জমির বিশাল অংশ চাষাবাদের বাইরে রাখা হয়। এজন্য এ অঞ্চলে প্রকৃত উৎপাদন তুলনামূলকভাবে কম হয়। মৃত্রিকা সম্পদ উন্নয়ন বিভাগের বরিশাল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, তথ্য বিভাগের ছয় জেলাসহ গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর জেলায় লবণাক্ত জমি রয়েছে। কৃষি অঞ্চলের ১১টির মধ্যে মোট আটটি জেলায় চাষাবাদের জন্য মোট জমির পরিমাণ ১০ লাখ হেক্টরের কিছু বেশি। তার ৪০ ভাগই অর্থাৎ ৪ লাখ হেক্টরের কাছাকাছি জমি লবণাক্ত । আর মোট লবণাক্ত জমির মধ্যে পটুয়াখালী জেলায় রয়েছে দেড় লাখ হেক্টরের কিছু কম। বরগুনা ও ভোলায় লাখ খানেক হেক্টর। এসব উপকূলীয় এলাকার নদী ও খালে লবণের মাত্রা ৫ থেকে ১৮ পিগিটি (পানিতে লবণাক্ততা পরিমাপের একক) পর্যন্ত থাকে, যা বোরো চাষের জন্য সহনশীল নয় । নিমে একটি টেবিলে উপকূলীয় অঞ্চণের পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা দেখানো হল ।
১০। স্বল্প মূলধন ঃ বাংলাদেশের কৃষকেরা দরিদ্র হওয়ায় কৃষি ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ কম হওয়ার ফলে উন্নত যন্ত্রপাতি, বীজ, সার ব্যবহার করতে পারে না । এ কারণে জমিতে উৎপাদন কম হয় ।
১১। অশিক্ষা ঃ বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষকই অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত, ফলে তারা উৎপাদন ক্ষেত্রে নতুন নতুন উৎপাদন কৌশল প্রবর্তন করতে পারে না । এ কারণে জমিতে উৎপাদন কম হয় ।
১২। জমির উর্বরতা হ্রাস ঃ বাংলাদেশে একই জমিতে বছরের পর বছর একই ফসল উৎপাদিত হওয়ার কারণে এবং জমিতে কোন্ উপাদানের সংকট সৃষ্টি হচ্ছে তা তদারকির ব্যবস্থা না থাকায় জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে । ফলে উৎপাদনের হার ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে ।
১৩। কীটপতঙ্গের আক্রমণ ও শস্য রোগ : বাংলাদেশে প্রতিবছর পোকা মাকড়ের আক্রমণে প্রচুর ফসল নষ্ট হয় । বিশেষজ্ঞদের মতে উৎপাদনের প্রায় ১০ ভাগ ফসল কীটপতঙ্গের আক্রমণে ও শস্য রোগে নষ্ট হয় ।
১৪ । প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঃ বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- বন্যা, জলোচ্ছাস ইত্যাদি কারণে শস্যের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় । ফলে উৎপাদিত ফসলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কৃষক ঘরে তুলতে
পারে না।
১৫। উত্তম বীজ, সার ও কীটনাশকের অভাব ঃ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সারের ব্যবহার খুব দরকার। কিন্তু আমাদের দেশের কৃষকরা দারিদ্রের কারণে এগুলো ব্যবহার করতে পারে না । তাছাড়া এসব উপকরণের যোগানও যথেষ্ট নেই । ফলে কৃষি জমিতে এসব উপকরণের ব্যবহার কম হয় । ফলে কৃষিতে উৎপাদন কম হয় ।
১৬। দুর্বল গ্রামীণ অবকাঠামো : আমাদের দেশের গ্রামীণ অবকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল । গ্রামঞ্চলে পয়ঃপ্রণালী, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ সরবরাহ, স্কুল কলেজ ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রভৃতির যথেষ্ট অভাব রয়েছে । ফলে আধুনিক পদ্ধতিতে কৃষি উৎপাদন কার্য পরিচালনা সম্ভব হয় না ।
১৭। ত্রুটিপূর্ণ বিপণন ব্যবস্থা : বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের বিপণন ব্যবস্থা অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ । বাংলাদেশের কৃষি বিপণন ব্যবস্থায় দালাল, ফড়িয়া, আড়তদার প্রভৃতি মধ্যস্বত্বভোগীদের অস্তিত্বের কারণে কৃষকরা ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়।
১৮। সহকারী পেশার অভাব ৪ বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের জন্য সহকারী পেশার ব্যবস্থা না থাকায় বছরের একটি বড় অংশ বেকার থাকে। ফলে কৃষকরা আর্থিক, মানসিক ও শারীরিক দিক দিয়ে
ক্ষতিগ্রস্থ হয় ।
১৯। ত্রুটিপূর্ণ ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা ঃ বাংলাদেশের ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থায় অধিকাংশ কৃষি জমি মুষ্টিমেয় জোতদার শ্রেণীর হাতে কেন্দ্রীভূত রয়েছে । যারা কৃষির সাথে সরাসরি জড়িত তাদের হাতে তেমন কোন জমি নেই। তারা বর্গাচাষী হিসাবে পরিচিত। এসব বর্গাচাষীরা উৎপাদন বাড়াতে আগ্রহী হয় না। কার উৎপাদনের বেশিরভাগ অংশ মালিককে দিতে হয় । ফলে কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে না ।
২০। সমন্বিত কৃষি নীতির অভাব ঃ বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কোন সমন্বিত কৃষি নীতি গ্রহণ করা হয়নি । ফলে এদেশে কৃষি ব্যবস্থার কোন কাঠামোগত সংস্কার হয়নি
২১। নগরায়ন ও রাস্তাঘাট নির্মাণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে আমাদের দেশে প্রতিবছর চাষযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। গত বিশ বছরে কৃষি জমি কমেছে ৫০ লাখ একর। প্রতিদিন প্রায় ২২০ হেক্টর কৃষি জমি ব্যবহৃত হচ্ছে নগরায়ন ও রাস্তাঘাট তৈরিতে । ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ।
.
২২। পতিত জমি ঃ বাংলাদেশে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ খুবই কম। তারপরও অনেক জমি এখনো পতিত অবস্থায় আছে ফলে কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ।
২৩। উপযুক্ত সংগঠনের অভাব : বাংলাদেশে কৃষকরা ক্ষুদ্র ও বিচ্ছিন্ন জোতে অপরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করে । তাদের মধ্যে উপযুক্ত কোন সংগঠন নেই অর্থাৎ কৃষি সমস্যা সমাধানে তারা কোন সমন্বিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে পারে না । ফলে কৃষির উন্নতি হচ্ছে না ।
উপরিউক্ত কারণে বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারছে না । কৃষি উৎপাদনে দিন দিন নিম্নগতি লক্ষ্য করা যায় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]