বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের বিবরণ

বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের বিবরণ Description of Food Grains of Bangladesh
যে সকল শস্য মানুষের দৈনন্দিন খাবারের প্রয়োজন মেটায় এবং নিয়মিত খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে সেগুলোকে বলা হয় খাদ্যশস্য। যেমন- চাল, ডাল, গম, আলু, তৈলবীজ, ইক্ষু ও বিভিন্ন জাতের ফলমূল বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য । নিম্নে বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো ।
১। ধান (Rice) : বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত। তাই ধান আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য। বাংলাদেশের জমি ধান চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী । বাংলাদেশে বছরের প্রায় সবসময়ই ধ চাষ করা হয় মোট আবাদী জমির ৮০% জমিতে। বর্তমানে বাংলাদেশে চার ধরনের ধান চাষ করা হয় । যথাঃ আউশ, আমন, বোরো ও ইরি। বাংলাদেন মোট খাদ্যশস্য উৎপাদনের মধ্যে ৯০% হচ্ছে ধান। ১৯৬০ কিংবা ৭০ এর দশকে একর প্রতি যেখানে ৭-৮ মন ধান হতো মাত্র সেখানে বর্তমানে উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ধানের একর প্রতি ফলন অনেক বেড়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে একর প্রতি ধান উৎপাদন হয় প্রায় ৩০-৩৫ মন। ২০১১ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে ২০০৯-২০১০ অর্থবৎসরে ২৬৭.৫৮ লক্ষ একর জমিতে মোট 322.৫২ লক্ষ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে। ২০১৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে ২০১৩-১৪ অর্থবৎসরে মোট ৩৪২.৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়েছে।
২। গম (Wheat) ঃ বাংলাদেশে খাদ্যশস্যের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে গম। অর্থাৎ ধানের পরেই গমের স্থান। এ দেশের অধিকাংশ মানুষের প্রধান কিংবা দ্বিতীয় প্রধান খাদ্য হচ্ছে গম। বৃষ্টিবহুল ও নিম্নভূমিতে গম ভাল হয় না বলে শীতকালেই গমের চাষ করা হয়। বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই গম চাষ করা সম্ভব হলেও মূলত উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে (যেমন- রাজশাহী, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর) গমের চাষ বেশি হয়। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু গমের চাষ হয়ে থাকে। কারণ ধান উৎপাদনে বেশি মনোযোগী হবার কারণে গম চাষ কম হয়। ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রায় ২০ লক্ষ একর জমিতে গমের চাষ করে প্রায় ৯.৬৯ লক্ষ টন উৎপাদন পাওয়া যায় যা দেশের মোট খাদশস্য উৎপাদনের মাত্র ৭ ভাগ । এজন্য আমাদের গমের চাহিদা পূরণ করার জন্য গম বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ২০১৩- ১৪ অর্থবছরে প্রায় ১২.৮১ লক্ষ মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ।
৩। ডাল (Pulses) : বাংলাদেশের মানুষের অন্যতম প্রধান খাদ্যশস্য হচ্ছে ডাল । তাইতো একটা কথা প্রচলিত রয়েছে ডালে-ভাতে বাঙ্গালী । ডালকে গরীবের প্রোটিন বলা হয় । বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই ডাল উৎপাদন হয় । বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৮/১০ রকমের ডাল উৎপাদন হয়। এর মাঝে ছোলা, মটরশুটি, মুগ, মশুর, মাসকালাই, অড়হর, খেসারি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকায় বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগে এক শ্রেণীর বার্মীজ প্রজাতির ডাল উৎপাদন হয় । স্থানীয়ভাবে ডালটি খুব বেশি জনপ্রিয় হলেও মুগ, মশুর সারা দেশের জনগণের নিকট অধিক জনপ্রিয়। চিকিৎসকদের মতে, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য একজন লোকের প্রতিদিন ৯০ গ্রাম ডাল খাওয়া উচিত । সে হিসাবে বাংলাদেশে প্রতি বৎসর প্রায় ৩৫ লক্ষ টন ডালের প্রয়োজন । কিন্তু ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ৭০১ হাজার একর জমিতে মাত্র ২৬৫ হাজার মেট্রিক টন ডাল উৎপাদন হয়। তাই প্রতি বৎসর বাংলাদেশকে প্রচুর ডাল বিদেশ থেকে আমদানি করে।
৪। ভুট্টা (Maize) : ভুট্টার ব্যবহার বাংলাদেশে খুব বেশি জনপ্রিয় না হলেও বর্তমানে এর চাষ শুরু হয়েছে এবং ধীরে ধীরে উৎপদনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাসমূহে বিশেষ করে রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, টাঙ্গাঈল ময়মনসিংহে ভুট্টার চাষ শুরু হয়েছে। ভুট্টা চাষে আবহাওয়া ও জলবায়ুর তারতম্যের প্রভাব কম বলে বাংলাদেশে যে কোন মাসে ভুট্টা চাষ করা যায়। ২০০৯-১০ অর্থবছরে প্রায় ২.৮ লক্ষ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করে ৪ হাজার মেট্রিক টন ভুট্টার উৎপাদন হয় । ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২২.৩৬ লক্ষ মেট্রিক টন ভুট্টার উৎপাদন হয় । ধীরে ধীরে বাংলাদেশের ভুট্টার উৎপাদন বাড়বে বলে আশা করা যায় ।
৫। তৈলবীজ (Oil seeds) : মানুষের দৈনন্দিন আহারের সাথে ভোজ্যতেলের ব্যবহার অপরিহার্য্য। সুতরাং ভোজ্যতেলের চাহিদাও মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি বলে বিবেচিত। বাংলাদেশে প্রধানত সরিখা, তিসি, বাদাম, নারকেল, সায়াবিন প্রভৃতি তৈলনীয় কম-বেশি উৎপদন হয়। খুব বেশি দিন আগে নয় এদেশের মানুষ ভোজ্যতেল হিসেবে সরিষার তেল ব্যবহার করতো। কিন্তু বর্তমানে সরিষাসহ বিভিন্ন তৈলবীজের উৎপাদন ব্যপক হারে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে ২০১১- ২০১৩ অর্থবছরে প্রায় ৯৮০ হাজার একর জমিতে তৈলবীজের চাষ হয় এবং মাত্র ৪৩৩ হাজার মেট্রিক টন তৈলবীজ উৎপাদন হয় যা বাংলাদেশের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। এজন্য ভোজ্য তেল আমদানিতে বাংলাদেশেকে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হয়।
৬। আলু (Potato) ঃ বর্তমানে বাংলাদেশে আলু তৃতীয় প্রধান খাদ্য হিসাবে বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ যথেষ্ট অগ্রগতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের চরাঞ্চলের দোঁআশ ও বেলে দোঁআশ মাটি আলু চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। সারা বছর পানি থাকে এমন জমি ছাড়া বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলেই কম বেশি আলুর চাষ হয়। তবে কুমিল্লা, মুন্সীগঞ্জ, দিনাজপুর, বগুড়া, ঢাকা ও রাজশাহীতে ব্যাপকভাবে আলুর চাষ হচ্ছে। ২০১৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ১০৯৮ হাজার একর জমিতে প্রায় ৮,৬০৩ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। প্রচারের মাধ্যমে আলু ব্যবহারের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারলে এদেশের খাদ্য সমস্যার অনেকখানি সমাধান হতে পারে ।
৭। ফলমূল (Fruits) : মানুষের দৈনন্দিন পুষ্টি ও খাদ্যের চাহিদা মেটাতে ফলমূলের বিকল্প নেই । - বাংলাদেশের প্রায় সকল জেলায় পারিবারিকভাবে এবং বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের ফলমূলের চাষ করা হয় । আমাদের দেশীয় ফলের মধ্যে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, তরমুজ, পেয়ারা, বেল, বরই ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । তারমধ্যে কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল । এগুলোর পাশাপাশি আপেল, আঙ্গুর, খেজুর, নাশপাতি ইত্যাদি ফলেরও ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া এ সকল ফল চাষের উপযোগী নয় বলে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে অর্থ এ সকল ফল আমদানিতে ব্যয় করা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজশাহী ও দিনাজপুর জেলার আম, নরসিংদী, জেলার কলা, গাজীপুর ও সাভারের কাঁঠাল, রাঙ্গামাটির পেঁপের কদর দেশে ও বিদেশে সমানভাবে রয়েছে। ২০১১ সালের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশে ২০০৯-২০১০ অর্থবৎসরে প্রায় ৩ লক্ষ টন আম, ৪ লক্ষ টন কাঁঠাল এবং ২ লক্ষ টন অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের ফল উৎপন্ন হয় ।
৮। মসলা (Spices) : খাদ্যশস্যের মধ্যে মসলা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ । কারণ মসলা ছাড়া খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করা বা রান্না করা সম্ভব নয়। একমাত্র গরম মসলা ছাড়া নিত্যব্যবহারের অন্যান্য মসলা যেমন- পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, মরিচ, তেজপাতা, ধনেপাতা ইত্যাদি মসলা বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। জিরা, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি ইত্যাদি বাংলাদেশে উৎপন্ন হয় না । তাই প্রচুর পরিমাণে মসলা প্রতিবছর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ২০১৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ৫৫৩ হাজার একর জমিতে প্রায় ১,৭২০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের মসলা জাতীয় খাদ্যশস্য উৎপাদিত হয় ।
৯। শাক-সব্জি (Vegetables) : বাংলাদেশের খাদ্যশস্যের তালিকায় অন্যতম স্থান দখল করে আছে বিভিন্ন ধরনের শাক-সব্জি । ভাত ও রুটির পরিপূরক হিসাবে আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কোন না কোন শাক-সব্জি থাকে । বাংলাদেশের সর্বত্রই শাক-সব্জি উৎপাদন হয় প্রচুর পরিমাণে । আমাদের চাহিদা মিটিয়ে আমরা শাক-সব্জি এখন বিদেশেও রপ্তানি করছি । চট্রগ্রামের মীরেরসরাই ও সীতাকুন্ডু, যশোর, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা প্রভৃতি অঞ্চলে শাক-সব্জির চাষ ও ফলন বেশি হয়। তবে প্রতিবছর বাংলাদেশে ঠিক কি পরিমাণে শাক-সব্জির উৎপাদন হয় তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই ।
২০১৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্যের উৎপাদন ও আবাদী জমির পরিমাণ নিমের সারণীতে দেখানো হল ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]