বাংলাদেশের প্রধান প্রধান অর্থকরী ফসল Main Cash Crops of Bangladesh

বাংলাদেশের প্রধান প্রধান অর্থকরী ফসল Main Cash Crops of Bangladesh
যে সকল ফসল বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করার উদ্দেশ্যে কৃষকেরা উৎপাদন করে সেগুলোকে বলা হয় অর্থকরী ফসল । বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে প্রধান হচ্ছে পাট, চা, তামাক ইত্যাদি । কৃষিপণ্য থেকে রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ এ তিন আইটেম থেকে উপার্জিত হয় ।
নিম্নে বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হলো ।
১। পাট (Jute) ঃ বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে পাট অন্যতম। এক সময় বিশ্বের মোট পাট উৎপাদনের ৯০ ভাগ উৎপাদন হতো বাংলাদেশে । পাট রপ্তানির মাধ্যমে বাংলাদেশ প্রতি বছর বিপুল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করে । দেখতে সোনার রঙ এবং বিদেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা আনয়ন করে বলে ব্রিটিশরা পাটকে সোনালী আঁশ (Golden fibre) বলত। বাংলাদেশের আবহাওয়া ও মৃত্তিকা পাট চাষের জন্য খুবই উপযোগী । তবে দিন দিন বাংলাদেশে পাটের উৎপাদন কমে যাচ্ছে । বর্তমানে ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, ঢাকা ও যশোর এলাকায় পাঠের চাষ হয় বেশি । ২০১২-১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে পাটের উৎপাদন হয় প্রায় ১৩.৮১ লক্ষ মেট্রিক টন এবং কাঁচাপাট রপ্তানী করে প্রায় ২৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে । বিশ্ববাজারে কাঁচাপাটের চাহিদা রয়েছে প্রচুর । ২০১৩-১৪ অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি ২০১৪ পর্যন্ত বাংলাদেশ কাঁচাপাট রপ্তানী করে প্রায় ৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে । তবে পাটের বিকল্প পণ্য যেমন- টেট্রন, পলিয়েস্টার, নাইলন ইত্যাদি আবিস্কার হবার ফলে বিশ্ব বাজারে পাটের চাহিদা কমে যায়। দেশের অভ্যন্তরে বেশিরভাগ পাট কল বন্ধ হয়ে পড়ে। এজন্য কৃষকেরা পাটের ন্যায্যমূল্য না পাবার আশংকায় পাট উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। তবে বর্তমানে সরকারের নানাবিধ প্রচেষ্টা গ্রহণের ফলে পাট উৎপাদনের পরিমাণ আবার বাড়তে শুরু করেছে । কৃষকেরাও আবার পাট চাষে ফিরে আসছে ।
২। চা (Tea) : বাংলাদেশের অর্থকরী ফসলের মধ্যে পাটের পরেই চা-এর স্থান। বাংলাদেশের পাহাড়ী ঢালু ভূমি চা চাষের জন্য খুবই উপযোগী । বিশেষ করে বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন জেলা যেমন- সিলেট হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, কুমিল্লা ও রাঙ্গামাটিতে চায়ের চাষ হয়। বাংলাদেশে মোট ১৫০টি চা বাগান আছে । তার মধ্যে বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে ১৩০টি ছোট-বড় চা বাগান এবং বাকী ২০টি চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে অবস্থিত। বাংলাদেশের চা দেশে এবং বিদেশে সমানভাবে সমাদৃত । আমাদের দেশে উৎপাদিত চা এর ৬০-৭০ ভাগ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয় । বাংলাদেশের চা প্রধানত কানাডা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ১ লক্ষ ৫০ হাজার একর জমিতে চায়ের চাষ হয় এবং উৎপাদন হয় প্রায় ৬২ হাজার টন চা। ২০১৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ চা রপ্তানি করে আয় করে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলাতে (যেমন- পঞ্চগড়, বগুড়া) চায়ের চাষ শুরু কর হয়েছে । তবে বাংলাদেশ ধীরে ধীরে বিশ্ব বাজারে চায়ের বাজার হারাচ্ছে ।
৩। ইক্ষু (Sugarcane) : বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল হচ্ছে ইক্ষু । ইক্ষু একদিকে খাদ্যশস্য হিসাবে যেমন ব্যহৃত হয়, পাশাপাশি চিনি শিল্পের চিনি উৎপাদনে কাঁচামাল হিসাবেও ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিচ্ছিন্নভাবে আখের চাষ করলেও মূলত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মাটি, জলবায়ু ও আবহাওয়া ইক্ষু চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। পাবনা, যশোর, রংপুর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও যশোর জেলায় আখের চাষ বেশি পরিমাণে হয়। তবে ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলাতেও ইক্ষুর চাষ করা হচ্ছে । বাংলাদেশে একর প্রতি আখের ফলন কম হয় । আখের আধুনিক চাষাবাদ সম্পর্কে চাষীরা অজ্ঞ বলেই এদেশের একর প্রতি আখের উৎপাদনের হার কম। ২০১৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ২৬৯ হাজার একর জমিতে প্রায় ৪,৪৬৮ হাজার মেট্রিক টন ইক্ষু উৎপাদিত হয় ।
৪ । তামাক (Tobacco) : তামাক বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল । বিড়ি ও সিগারেট শিল্পে বিড়ি, সিগারেট তৈরির কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের মোট তামাক উৎপাদনের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ উৎপাদন হয় বৃহত্তর রংপুর জেলায়। তবে দিনাজপুর, যশোর, কুষ্টিয়া, ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলায়ও বেশ তামাক উৎপন্ন হয় । এদেশে 'জাতি' ও 'মতিহারী' জাতীয় তামাক বেশি উৎপন্ন হয় । 'জাতি' তামাক তুলনামূলকভাবে উন্নত বলে এটা সিগারেট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। মতিহার জাতের পাতা বিড়ি এবং হুক্কার কাজে ব্যবহার করা হয়। উন্নতমানের তামাক উৎপাদনের লক্ষ্যে বর্তমানে রংপুরে ‘ভার্জিনিয়া' জাতের তামাকও উৎপাদন হচ্ছে। ২০১৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ১২০ হাজার একর জমিতে তামাকের চাষ হয় এবং মোট উৎপাদন হয় প্রায় ৭৯ হাজার মেট্রিক টন ।
৫। তুলা (Cotton) ঃ তুলা বংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাংলাদেশে তুলার উৎপাদন কম হয় । বাংলাদেশের আবহাওয়া তুলা চাষের জন্য উপযোগী নয় । তবে পাহাড়ি অঞ্চলে যেখানে পানি থাকে না সেখানে তুলা চাষ ভাল হয় । তুলা চাষ উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার একটি তুলা উন্নয়ন বোর্ড গঠন করেছে । এ বোর্ড দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তুলা উৎপাদনের চেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছে । বাংলাদেশের ঢাকা, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রংপুর, কুমিল্লা, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, কুষ্টিয়া ও যশোরে কিছু কিছু তুলার চাষ হয়ে থাকে। ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে বাংলাদেশে প্রায় ৭ হাজার একর জমিতে তুলার চাষ করে ৭ হাজার মেট্রিক টন তুলা উৎপাদন হয়। কিন্তু এই যৎসামান্য তুলা বাংলাদেশের চাহিদার তুলনায় নগণ্য। এজন্য প্রতি বৎসর সুতা উৎপাদনের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার করার জন্য প্রচুর তুলা আমদানি করতে হয় ।
৬। পান-সুপারী ঃ বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল হচ্ছে পান-সুপারী। বাংলাদেশের বন্যামুক্ত দোঁ-আশ মাটি ও আবহাওয়া পান-সুপারী উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, খুলনা, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, নোয়াখালী জেলায় প্রচুর পান উৎপন্ন হয় । কক্সবাজারের মহেশখালির মিঠা পান পৃথিবী বিখ্যাত । নোয়াখালী, লক্ষীপুর, সিলেট, কক্সবাজার, খুলনা ও ফরিদপুর জেলায় প্রচুর পরিমাণে সুপারি উৎপন্ন হয়। পাকিস্তান, ভারত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ থেকে পান-সুপারি রপ্তানী হয় এবং প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় ।
৭। রেশম (Silk) ঃ বাংলাদেশের অন্যতম অর্থকরী ফসল হলো রেশম। রেশম তন্তু তুঁত গাছের গুটি পোকা থেকে সংগ্রহ করা হয় । বাংলাদেশের প্রধান রেশম উৎপাদনকারী কেন্দ্র রাজশাহীতে অবস্থিত । এ জেলায় প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে তুঁত গাছের চাষ হয় । অন্যান্য রেশম উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলো হচ্ছে যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, বগুড়া ও ঢাকা জেলা। বাংলাদেশ সরকারের সেরিকালচার বিভাগের তত্ত্বাবধানে এ সমস্ত জেলায় তুঁত গাছ চাষের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে । রেশম দ্বারা উন্নমানের অত্যন্ত মসৃণ ও মূল্যবান বস্ত্র তৈরি করা হয় । বর্তমানে এদেশে প্রায় ১৬ লক্ষ পাউন্ড রেশম উৎপন্ন হয় । নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ কিছু রেশম বিদেশে রপ্তানি করে ।
৮। রবার (Rubber) : বাংলাদেশে ১৯৬৫ সালে সর্বপ্রথম পরীক্ষামুলকভাবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও সিলেট জেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৭ হাজার একর পাহাড়ি জমিতে রবারের চাষ আরম্ভ করা হয় এবং ১৯৭০ সাল হতে এ সমস্ত বাগানের গাছ হতে রস সংগ্রহ শুরু হয় । প্রকল্পের সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ১৯৭৭-৭৮ সালের দিকে বাংলাদেশ সরকার ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, বান্দরবান, সিলেট, ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইলে প্রায় ৩৭ হাজার ৫ শত একর জমিতে রাবার চাষের প্রকল্প গ্রহণ করে । এ প্রকল্প হতে ১৯৮১ সালে রস সংগ্রহ গুরু হয় ৷
বাংলাদেশ সরকারের বন শিল্প উন্নয়ন সংস্থা ইতিমধ্যেই মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড হতে উচ্চ . ফলনশীল রাবার চারা সংগ্রহ করে । উপরোক্ত এলাকাসমূহে রাবারের আবাদ শুরু করেছে। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম ও বান্দরবন এলাকায় ১০ হাজার একর জমিতে বেসরকারি উদ্যোগে এবং সরকারি সহযোগিতায় রাবার চাষ শুরু হয়েছে। এ সমস্ত বাগানে রাবার উৎপাদন আরম্ভ হলে বাংলাদেশে বছরে প্রায় ২ হাজার মেট্রিক টনের বেশি কাঁচা রাবার উৎপাদিত হবে এবং ১৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে। ২০০২- ২০০৩ সালে বাংলাদেশে প্রায় ১২১০ মেট্রিক টন রাবার উৎপাদিত হয়।
এছাড়া বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল, শন, মিষ্টি আলু ইত্যাদি অর্থকরী ফসলও উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশে ২০১২-১৩ অর্থবৎসরে উৎপাদিত কয়েকটি অর্থকরী ফসলের উৎপাদন ও আবাদী জমির পরিমাণ নিম্নের তালিকায় দেখানো হলো ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]