বাংলাদেশের খাদ্য সমস্যা বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির কারণসমূহ Causes of Food Deficit in Bangladesh

খাদ্য নিরাপত্তা
Food Security<./b>
খাদ্য নিরাপত্তা বলতে সাময়িক কিংবা শুধুমাত্র ১ বছরের প্রয়োজনীয় খাদ্যের চাহিদা পূরণ করার জন্য খাদ্যের প্রয়োজনীয় মজুদ গড়ে তোলাকে বুঝায় না। বরং খাদ্য নিরাপত্তা ধারণাটি আরও ব্যাপক। বর্তমান খাদ্য চাহিদা পূরণ করা এবং ভবিষ্যতে খাদ্যের চাহিদা মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের উৎপাদন, মজুন ও সরবরাহ করার পরিকল্পনা গ্রহণ ও তদনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করাকে বলা হয় খাদ্য নিরাপত্তা । মানুষের যে কয়টি মৌলিক অধিকার আছে তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে খাদ্য। সাম্প্রতিককালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্য সংকট প্রকট হয়ে উঠায় খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তর বিষয়টি কোন দেশের একক সমস্যা নয় বরং এটা একটি গ্লোবাল ইস্যু। সাম্প্রতিককালে জাতিসংঘের স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্থা (WHO) এর মতে আগামী ৫ বৎসরের মধ্যে বিশ্বের অন্তত ৩০ টির মতো দেশে খাদ্য সমস্যা প্রকটভাবে দেখা দেবে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশের আয়তন অনুসারে জনসংখ্যা অনেক বেশি। তাছাড়া দিন দিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। তাই বাংলাদেশের জন্য খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য নিম্নলিখিত 'পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে ।
১। নিজ দেশের বার্ষিক খাদ্যের মোট চাহিদা নিরুপণ করা ।
২ । খাদ্য ঘাটতি মোকাবেলার জন্য আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানি করা ।
৩ । চাহিদা অনুসারে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা ।
৪ । সবসময় দেশের অভ্যন্তরে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য পণ্যের মূল্য পর্যবেক্ষণ করা।
৫ । অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ।
৬। খাদ্যের মজুত বৃদ্ধি করা ।
৭ । আন্তর্জাতিক খাদ্য উৎপাদন পরিস্থিতি ও নিজ দেশের খাদ্য উৎপাদন পরিস্থিতি সর্বদা পর্যবেক্ষণ করা । ৮। আধুনিক প্রযুক্তি ও উফশী বীজ ব্যবহার করে উৎপাদন বৃদ্ধি করা ।
৯ । কৃষকদের কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেওয়া ।
১০ । কৃষি জমি যাতে বাড়ী ঘর বা স্থাপন নির্মাণে ব্যবহৃত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা ইত্যাদি ।
১১ । কৃষিখাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি করা ।
বাংলাদেশের খাদ্য সমস্যা Food Problems of Bangladesh
কোন একটি দেশের একটি নির্দিষ্ট সময়ে জনগণের যে পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন তা অপেক্ষা খাদ্যের যোগান কম হলে খাদ্য সমস্যা দেখা দেয়। অন্যভাবে বলা যায়, খাদ্য উৎপাদন প্রয়োজনের তুলনায় কম হলে খাদ্য সমস্যা দেখা যায় ।
বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় । প্রতি বছর সরকারি ও বেসরাকরি খাতে হাজার হাজার মেট্রিক টন খাদ্য আমদানি করতে হয়। নিম্নে খাদ্য (গম ও চাল আমদানি সম্পর্কিত একটি সারণি দেয়া হলো ।
নোট : সরকারি খাতের পাশাপাশি বেসরকারি খাতের আমদানিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ।
বাংলাদেশে খাদ্য ঘাটতির কারণসমূহ Causes of Food Deficit in Bangladesh
বাংলাদেশের খাদ্য ঘাটতির প্রধান কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো ।
১ । প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষাবাদ ঃ খাদ্যশস্য উৎপাদনে এখনো প্রাচীন চাষাবাদ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় । ফলে উৎপাদন কম হয় ।
২। নিম্ন প্রবৃদ্ধির হার ঃ কৃষিতে আধুনিক চাষ পদ্ধতির অভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদি কারণে, নিম্ন প্রবৃদ্ধির হার বিরাজ করছে। ফলে খাদ্য ঘাটতি হচ্ছে। নিম্নে কৃষিতে প্রবৃদ্ধির একটি সারণি দেওয়া হলো ।
উপরের সারণিতে লক্ষ্যণীয় যে, শস্যখাতের প্রবৃদ্ধির গড় আস্তে আস্তে কমছে । এমনকি 'কোন কোন বছর ঋণাত্মকও হচ্ছে ।
৩। ভূমির উর্বরতা হ্রাস ঃ বাংলাদেশে চাষযোগ্য জমির উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে । ফলে কৃষি উৎপাদনও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
৪ । একক প্রতি কম উৎপাদন ঃ বাংলাদেশে কৃষিতে একক প্রতি কম উৎপাদন হয়। ফলে নিম্ন উৎপাদনশীলতার জন্য প্রতি বছর আমাদের খাদ্য ঘাটতি হচ্ছে। জাপানে যেখানে একর প্রতি খাদ্যশস্য প্রায় ৬০ মণ, সেখানে বাংলাদেশে মাত্র ২০ মণ একর প্রতি খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয় । ফলে খাদ্য ঘাটতির সৃষ্টি হচ্ছে। |
৫। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঃ আমাদের দেশে প্রতি বছর বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, জলোচ্ছাস ইত্যাদি কারণে উৎপাদিত ফসলের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নষ্ট হয়। এর ফলে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয়।
৬। মূলধনের অভাব ঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক দরিদ্র তাদের পক্ষে কৃষি ক্ষেত্রে উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার সম্ভব হয় না । তাই কৃষি ফলন কম হয় ।
৭। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ঃ আমাদের দেশের দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি খাদ্য সমস্যার একটি প্রধান কারণ । আমাদের দেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে হারে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে না । ফলে প্রতি বছর খাদ্য ঘাটতি লেগে থাকে ।
৮। কৃষি ঋণের অভাব ঃ আমাদের দেশের কৃষকরা পর্যাপ্ত ঋণের অভাবে উন্নত জীব, সার ইত্যাদি ব্যবহার করেত পারে না। ফলে কৃষি শস্যের ফলন কম হয় । আমাদের দেশের মোট ঋণের মাত্র ৩ শতাংশ কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় ।
·
৯ । উপকরণের অভাব ঃ কৃষির শোক উপকরণ, যেমন – উন্নত বীজ, সার, কীটনাশক ইত্যাদির অভাবে আমাদের দেশে খাদ্যশস্যের ফলন বৃদ্ধি পায় না । ফলে প্রতি বছর খাদ্য ঘাটতি লেগে থাকে ।
১০। অনাবাদি জমি ঃ আমাদের দেশে এখানো অনেক জমি অনাবাদি রয়েছে। তাই খাদ্য ঘাটতি লেগে থাকে ।
১১। সেচ ব্যবস্থার অভাব ঃ আমাদের দেশের প্রায় ৪ ভাগ চাষযোগ্য জমি এখনো সেচের আওতায় আসে নি। ফলে ফসলের উৎপাদন কম হয় এবং খাদ্য ঘাটতি লেগে থাকে ।
১২। জলাবদ্ধতা ঃ আমাদের দেশের অনেক জমি এখনো জলাবদ্ধতার কারনে চাষাবাদের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে খাদ্য ঘাটতি লেগে থাকে ।
১৩। নতুন নতুন বাসস্থান নির্মাণ ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে নতুন নতুন বাসস্থান তৈরির ফলে দিন দিন চাষযোগ্য জমির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। ফলে কৃষি উৎপাদন কম হচ্ছে এবং খাদ্য ঘাটতি দেখা দিচ্ছে ।
১৪ । লবণাক্ততা ঃ আমাদের দেশের সমুদ্র উপকূলর্তী এলাকায় বিরাট অঞ্চল লবণাক্ততার জন্য ফসল ফলানো যায় না। ফলে খাদ্যঘাটতি হয় ।
১৫। চালের উপর অধিক নির্ভরতা ঃ আমাদের দেশের মানুষ এখনো ভাতের উপর অধিক নির্ভরশীল । তাই গম ও আলু বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষবাদ হয় না । এর ফলে খাদ্য ঘাটতি হয় ।
১৬। খাদ্যের যোগান রেখা ঃ কৃষি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেলে কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পায়। কিন্তু সেই আয় একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছালে কৃষকেরা অতিরিক্ত পরিশ্রম করে ফসলের উৎপাদন বাড়ায়ে আয় বাড়াতে চায় না । ফলে কৃষি উৎপাদন হ্রাস পায় ।
১৭। জমির খণ্ড-বিখণ্ডতা ঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ জমি খণ্ড-খণ্ড এবং বিচ্ছিন্ন, ফলে আধুনিক চাষ পদ্ধতি প্রবর্তন করা সম্ভব হয় না ।
১৮ । অশিক্ষিত কৃষক ঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ কৃষক অশিক্ষিত ও আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জড়িত নয় । ফলে খাদ্য উৎপাদন কম হচ্ছে এবং খাদ্য ঘাটতি লেগে আছে ।
১৯। ত্রুটিপূর্ণ ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থা : ত্রুটিপূর্ণ ভূমিস্বত্ব ব্যবস্থার কারণে ভূমিহীন কৃষকরা উৎপাদন বৃদ্ধিতে উৎপাহ দেখায় না । ফলে প্রতি বছর খাদ্য ঘাটতি দেখা যায় ।
২০। কীটপতঙ্গের আক্রমণ : বাংলাদেশের কৃষিতে প্রতি বছর প্রায় ৫% থেকে ১০% খাদ্যশস্য কীটপতঙ্গের আক্রমণ নষ্ট হয় । ফলে প্রতি বছর খাদ্য ঘাটতি দেখা যায় ।
২১ । মজুত ও চোরাচালান : খাদ্যশস্যের মজুত ও চোরাচালনের জন্য প্রতি বছর খাদ্য ঘাটতি হয় । ২২। বণ্টন নীতি : বাংলাদেশের কৃষিতে সুষ্ঠু বন্টন ব্যবস্থার অভা েঅধিক খাদ্যশস্য উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় ৷
২৩। অর্থকরী ফসলের প্রতি আগ্রহ : বাংলাদেশের কৃষকরা অর্থকরী ফসল উৎপাদনে বেশি আগ্রহী । ফুলে খাদ্য উৎপাদন কম হয় এবং প্রতি বছর খাদ্য ঘাটতি দেখা যায় ।
২৪ । জীবন নির্বাহী কৃষি ঃ বাংলাদেশের কৃষিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করা হয় না । ফলে উৎপাদন কম হয় এবং প্রতি বছর খাদ্য ঘাটতি দেখা যায়।
২৫। সরকারি নীতি ঃ সরকারি দামনীতি ও উপকরণনীতির অভাবে কৃষক অধিক ফসল ফলাতে আগ্রহী হয় না ।
২৬। গুদামজাতকরণের অভাব ঃ বাংলাদেশে খাদ্য শস্যের গুদামজাতরণের অভাবের কারণে মৌসুম শেষে খাদ্য ঘাটতি দেখা দেয় ।
২৭ । চাষযোগ্য জমির অসম বন্টন ৪ বাংলাদেশের কৃষিতে চাষযোগ্য জমির বেশির ভাগ বড় বড়
কৃষকদের হাতে । ফলে তারা তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী উৎপাদন করে । এর ফলে কৃষিতে অধিক উৎপাদন হয় না ।
এসব কারণে প্রতি বছর আমাদের দেশে বিপুল খাদ্য ঘাটতি দেখা যায় । ফলে অর্থনৈতিক উন্নতি ব্যহত হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]