বাংলাদেশের কৃষি নীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ

বাংলাদেশের কৃষি নীতি Agricultural Policy of Bangladesh
যে কোন খাতের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় নীতিমালা থাকা দরকার। কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি, কৃষিতে আধুনিকায়ন, কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণ ইত্যাদির জন্য যে সকল নীতিমালা গ্রহণ করা হয় সেগুলোকে বলা হয় কৃষি নীতি । একইভাবে বাংলাদেশের কৃষিখাতের উন্নয়নে সহায়ক যে সকল নীতিমালা গ্রহণ করা হয়, সেগুলোকেও বাংলাদেশের কৃষি নীতি নামে আখ্যায়িত করা হয় । কৃষি নীতির সাথে কৃষি পণ্যের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, মৎস্য ও প্রাণীজ সম্পদের উন্নয়ন, কৃষি ঋণের সমস্যা দূরীভূতকরণ, বনায়ন ও বনজ সম্পদের উন্নয়ন, ভূমি উন্নয়ন, সেচ ব্যবস্থা, সার ও কীটনাশক সরবরাহ, কৃষি বিষয়ক গবেষণা এবং কৃষির সাথে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কযুক্ত । উপরোক্ত প্রতিটি খাতের উন্নয়নের জন্য পৃথক নীতিমালা গ্রহণ করা হয়। উপরোক্ত প্রতিটি খাতের পৃথক নীতিমালাগুলোর সমন্বয় সাধন করে কৃষির সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি সার্বিক নীতিমালা প্রণয়ন করে কৃষি মন্ত্রণালয় । উক্ত কৃষি নীতি বাস্তবায়নের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং পর্যবেক্ষণ করে ।
৭.১৮ বাংলাদেশের কৃষি নীতির বৈশিষ্ট্যসমূহ Characteristics of Agricultural Policy of Bangladesh
বাংলাদেশের কৃষি নীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানো। কারণ, বাংলাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মোকাবেলা করার জন্য খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। সে লক্ষ্যে সরকার নিম্নোক্ত নীতি গ্রহণ করেছে।
১। ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য জমিতে এক ফসল উৎপাদনের পরিবর্তে অন্তত দুই বা তিন হাসল উৎপাদন এবং আন্তঃফসল উৎপাদনের সহায়ক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে।
২। শস্য বহুমুখীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ। উক্ত কর্মসূচির আওতায় ধান ছাড়া অন্যান্য ফসল যেমন- আলু, ডাল, শাকসব্জি, ফলমূল, তৈলবীজ, মসলা ইত্যাদির উৎপাদন ক্রমবৃদ্ধির জন্য সরকারীভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
৩। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী ফসল উৎপাদনের কর্মসূচি গ্রহণ
৪। দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত পানি সহিষ্ণু ফসল উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ।
বীজ সংরক্ষণ Seed Preservation
ফসল উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন উন্নত মানের বীজ। সরকার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (BADC) এর সাহায্যে উন্নতমানের বীজ সংরক্ষণ করে স্বল্পমূল্যে কিংবা বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করে থাকে। তবে সরকারিভাবে বীজ সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তাই কৃষকরা নিজেরাও ব্যক্তিগতভাবে তাদের উৎপাদিত ফসলের একটা অংশ বীজ হিসাবে সংরক্ষণ করে থাকে। তাছাড়া বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিও কৃষকদের মাঝে উন্নতমানের বীজ সরবরাহ করে। বেসরকারি খাতে বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ, বিপণন ও উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে জাতীয় বীজ নীতিমালা ঘোষণা করেছে । জাতীয় বীজ নীতিমালার আওতায় সরকার নিম্মোক্ত নীতিসমূহ গ্রহণ করবে ।
১। প্রচলিত আইন ও বীজ নীতিমালার আওতায় সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে বীজ উৎপাদন, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করার যে সুযোগ দেওয়া হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে ।
২। বীজের সর্বোচ্চ মান নিশ্চিত করার জন্য বীজ সংরক্ষণে নিয়োজিত বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় কর্মশালা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । অর্থাৎ, কি পরিমাণ আলো, বাতাস ও আদ্রতার মাঝে বীজ সংরক্ষণ করলে বীজের সর্বোচ্চ মান বজায় থাকবে সে ব্যাপারে বেসরকারি কারিগরী দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
৩। প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা অন্য কোন দুর্যোগ-দুর্বিপার্কের সময় প্রধান প্রধান ফসলের বীজ সরবরাহের জন্য চালুকৃত বাফার স্টক কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে।
৪। বর্তমান শিল্পনীতিতে বীজ উৎপান, বীজ বর্ধন ও বিভিন্ন কৃষি খামার, পোলট্রি খামার, গরুর খামার ইত্যাদিকে শিল্প হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। বীজ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সকল সহায়তা দেওয়া হবে এবং এই নীতি অব্যাহত থাকবে ।
৫। ধানের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বেসরকারিভাবে যে হাইব্রীড জাতের ধানের বীজ আমদানির
অনুমতি বেসরকারি খাতকে দেওয়া হয়েছে তা বিচার বিশ্লেষণ করে আরও ত্বরান্বিত করতে হবে ।
৬। বেসরকারি খাতে বীজ উৎপাদন বাড়াতে আরও উৎসাহ প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা প্রদান ও সহায়ক সম্পূরক নীতি গ্রহণ করতে হবে ।
সার সরবরাহ ও বণ্টন Fertilizer Supply and Distribution
কৃষি উপকরণসমূহের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হচ্ছে সার । বর্ধিত খাদ্যের চাহিদা পূরণ করার লক্ষ্যে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য কৃষি জমিতে জৈব সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ব্যবহার অনেক বেড়েছে । কিন্তু কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের সুষম ব্যবহার না হবার কারণে কৃষি ভূমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে এবং কৃষিতে ফসলের নিবিড়তা (Intensity) বাড়ছে না। তাই কৃষি ভূমির উর্বরতা শক্তি বাড়ানো, ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি এবং কৃষি জমিতে ফলন বাড়ানোর লক্ষ্যে সারের উৎপাদন, সরবরাহ ও ব্যবহারের জন্য সরকারীভাবে নিম্নোক্ত কর্মসূচি/পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা হয়েছে ।
১। গুটি ইউরিয়া সারের ব্যবহার বাড়িয়ে ইউরিয়া সারের ব্যবহার হ্রাস করার লক্ষ্যে সরকার ইতিমধ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে । তা আরও জোরদার করতে হবে ।
২। মাটি ও পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন সারের উৎপাদন, বিক্রয়, আমদানি ও বিতরণ নিষিদ্ধকরণ করা ।
৩। মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটকে শক্তিশালী করে মৃত্তিকা ও কৃষি পরিবেশ অঞ্চল (AEZ) ভিত্তিক মৃত্তিকা পরীক্ষার কার্যক্রম শুরু করা ।
৪ । মাটির গুণগত মান বৃদ্ধি কল্পে ইতিমধ্যে প্রবর্তিত Soil health card এর ব্যবহার সম্প্রসারণ করা ৷
৫ । বর্তমানে প্রচলিত সারের বাফার স্টক প্রথা চালু রাখা ।
৬। কৃষকরা যেন সময়মতো সার পায় তা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সার সরকারিভাবে আমদানীর ব্যবস্থা করা ।
৭। সারের বিতরণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা। প্রয়োজনে প্রচলিত ডিলার প্রথার মাধ্যমে সরকারিভাবে সার বিতরণের অনিয়ম দূর করার জন্য বেসরকারিভাবে সার বিতরণের ব্যবস্থা করা ।
৮। কৃষক সময়মতো যাতে পর্যাপ্ত সার পেতে পারে তা মনিটরিংয়ের জন্য সরকারীভাবে গঠিত থানা
ও জেলা পর্যায়ে কমিটির কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ।
৯ । সুষম সারের ব্যবহার সম্পর্কে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যবস্থা করা ।
১০। মিশ্র সার (blended fertilizer) এর ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার পাঁচটি গ্রেডের যে বিধি নির্দেশ জারি করেছে তা অব্যাহত রাখা ।
১১ । রাসায়নিক সারের পাশাপাশি কৃষকদের জৈব সার ব্যবহারে উৎসাহিত করা ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]