কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ

বালাই ব্যবস্থাপনা
কৃষি পণ্য যাতে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ থেকে এবং বিভিন্ন ধরনের রোগ-বালাই এর হাত থেকে রক্ষা করা যায় উহাই হচ্ছে বালাই ব্যবস্থাপনার মূলনীতি। কৃষি নীতির আওতায় সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার অধীনে নিম্নোক্ত কর্মসূচিগুলো গ্রহণ করতে হবে।
১। সনাতনী চাষ পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক চাষ পদ্ধতি চালু করা যাতে কৃষি পণ্যে রোগ-বালাই
এর প্রকোপ কম হয় ।
২। বালাই ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সার্ভেইল্যাপ ও মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করা।
৩। বালাই প্রতিরোধী ফসলের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা।
৪। প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর এমন বালাইনাশক ঔষধ ব্যবহারে কৃষকদের নিরুৎসাহিত করা এবং পর্যায়ক্রমে তা উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।
৫। ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি উন্নয়ন কমিটি স্থানীয় পর্যায়ের কৃষকদের সাথে সমন্বিত বালাই বিষয়ক কর্মশালা ও মত বিনিময়ের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং এ ব্যাপারে কৃষকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা।
৬। যান্ত্রিক ও আধুনিক পদ্ধতিতে পোকা-মাকড় দমন ( যেমন- আলোর ফাঁদ পেতে, হাত জাল ব্যবহার করে ইত্যাদির মাধ্যমে) পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং এগুলোর ব্যবহার আরও জনপ্রিয় করে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে ।
৭ । বালাইনাশক যে কোন রাসায়নিক ঔষধ বাজারজাতকরণের পূর্বে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হবে ।
৮ । জৈবিক পোকা-মাকড় দমন পদ্ধতি ব্যবহার এর মাধ্যমে ক্ষতিকর পোকা-মাকড় হ্রাস করতে হবে এবং ফসলের জন্য ও পরিবেশের জন্য উপকারী পোকা-মাকড়গুলো সংরক্ষণ করতে হবে।
৯ । অনুমোদিত বালাইনাশক রাসায়নিক ঔষধের কার্যকারীতা পরীক্ষা করার জন্য নিয়মিত মনিটরিং এর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
কৃষি গবেষণা Agricultural Research
কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এবং কৃষির সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত উপায়ে উৎপাদন এবং নিয়মিত গবেষণা । বাংলাদেশের কৃষি মন্ত্রানালয়ের অধীনে একটি পৃথক কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে তার মাধ্যমে কৃষি বিষয়ক গবেষণার জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে ।
১। মৃত্তিকা ও কৃষি পরিবেশ ভিত্তিক গবেষণা পরিচালনা ।
২ । মাটির গুণগত মান ও পরিবেশ সহায়ক সারের উদ্ভাবন ও ব্যবহারের বিষয়ে গবেষণা ।
৩। বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উন্নতজাতের বীজ উদ্ভাবন নিয়ে গবেষণা পরিচালনা । ৪। পার্বত্য চট্টগ্রাম এর পাহাড়ী অঞ্চলের সকল অব্যবহৃত ভূমি কৃষির আওতায় কিভাবে আনা যায় সে ব্যাপারে গবেষণা ।
৫ । ফসলের মান ও ব্যবহার উপযোগীতা বাড়ানোর বিষয়ে গবেষণা
৬। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ত জমিতে চাষের উপযোগী ফসলের জাত উদ্ভাবন । ৭। ফসল সংরক্ষণ প্রক্রিয়াজাতকরণ ও অপচয় বন্ধ করা বিষয়ে গবেষণা। ৮। গভীর পানিতে চাষযোগ্য ধানের জাত উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনমূলক গবেষণা । ৯। সমন্বিতভাবে মৎস্য ও ফসল উৎপাদনের জন্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন সংক্রান্ত গবেষণা । ১০। ফসলের বৈচিত্র্য বৃদ্ধির মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টির প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণ সংক্রান্ত গবেষণা। ১১। বিভিন্ন ফসলের বিদ্যমান জীব বৈচিত্র্য সংক্রান্ত গবেষণা ।
১২ । খরা ও বন্যার উপযোগী ফসলের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনের গবেষণা।
১৩। ফসলের বাজারজাতকরণ ও দামের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ নিয়ে গবেষণা ।
১৪ । অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে বিভিন্ন ফসলের উপযোগীতা অনুসারে বিভক্ত করা । ১৫ । বিভিন্ন অঞ্চলের মাটির উৎপাদনশীলতা সংরক্ষণ ও উন্নয়ন সংক্রান্ত গবেষণা ।
১৬ । কৃষিকাজে মহিলাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা এবং মহিলাদের দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির গবেষণা ।
কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণ Agricultural Education and Training Extension Programme কৃষি উৎপাদন বাড়ানো এবং কৃষির সার্বিক উন্নয়নের জন্য কৃষির সাথে সম্পৃক্ত কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের দক্ষ জনবল হিসাবে গড়ে তোলা কৃষি নীতির অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। এই জন্য প্রয়োজন বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, ইনস্টিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা যেন কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কর্মসূচিকে সম্প্রসারণ করা যায় ৷ জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ এর আলোকে কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সম্প্রসারণের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতিমালা হচ্ছে,
১। সকল কৃষি কলেজ সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের পাঠ্যসূচি ও পরীক্ষা বিধি অনুসারে পরিচালিত হবে। ২ । দেশের ১৩টি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (Agricultural training institute) এর কারিগরী মান, প্রশাসনিক দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা যোগ্যতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ।
৩। কৃষি মন্ত্রণালয়ে কর্মরত বিভিন্ন বিভাগের কর্মচারি ও কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ আরও জোরদার
করতে হবে।
৪ । কৃষি কলেজসমূহে কর্মরত শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের লক্ষ্যে উচ্চ শিক্ষা, গবেষণা ও পদোন্নতি সংক্রান্ত বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।
৫। মাঠ পর্যায়ে ব্লক সুপারভাইজারদের ব্যবহারিক জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য চাকরিকালীন সময়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে ।
কৃষি ও পরিবেশ সংরক্ষণ Agriculture and Environmental Protection
কৃষির সাথে পরিবেশের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কৃষিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহারের কারণে প্রাকৃতিক পরিবেশের দূষণ হয়। তাং জাতীয় কৃষি নীতির আওতায় পরিবেশ সংরক্ষণের ব্যাপারে সরকার নিম্নোক্ত নীতিমালাসমূহ গ্রহণ করছে ।
১। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষিক্ষেত্রে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারের কারণে তা পরিবেশের জন্য কোন ক্ষতির কারণ না হয় সে ব্যাপারে কৃষকদের সচেতন করা কৃষি নীতির অন্যতম উদ্দেশ্য ।
২ । কৃষকদের শস্যাবর্তন ও পালাক্রমে জমিতে ফসল ও মৎস্য চাষে উদ্বুদ্ধ করা।
৩। উপকূলীয় কৃষি জমিতে লবণাক্ততা প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং লবণ সহিষ্ণু জাতের ধান ও অন্যান্য ফসলের জাত উদ্ভাবন করা ।
৪ । কৃষিজমিতে জলাবদ্ধতা দূর করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
৫। দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ী ঘেরগুলোর বর্জ্য যেন পরিবেশ দূষণের কারণ না হয় সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।
কৃষিতে নারীর অংশগ্রহণ Women Participation in Agriculture
বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় কৃষি নীতির আলোকে কৃষিকাজে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর জন্য সরকার কর্তৃক নিম্নোক্ত নীতিমালাসমূহ গ্রহণ
করা হয়েছে।
১। ফলস তোলার পরবর্তী কাজ, শাকসব্জি চাষ, হাঁস-মুরগী পালন, বীজ সংরক্ষণ, কুটির শিল্প ও হস্তশিল্প, নার্সারি ব্যবসায় ইত্যাদি কাজগুলো নারীদের জন্য খুবই উপযোগী। এসব কাজ নারীরা যেন আরও দক্ষতার সাথে করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন ও মূলধনী সহায়তা প্রদান করতে হবে ।
২। সরাসরি ফসল উৎপাদনের কাজে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর জন্য মহিলা কৃষকদের পৃথক কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং এক্ষেত্রে সম্ভাব্য অসুবিধাগুলো দূরীকরণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, জাতীয় কৃষি নীতির আলোকে উপরিউক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা গেলে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষির সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হবে । এমনকি কৃষিকে আরও বাস্তব উপযোগী ও গতিশীল করা সম্ভব হবে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]