প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কৃষি ঋণের তুলনামূলক গুরুত্ব

প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের মধ্যে পার্থক্য Difference between Formal and Informal Credit
প্রাতিষ্ঠানিক ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায় ।
১ । প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুদের হার কম কিন্তু অ-প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুদের হার বেশি ।
। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উৎস হল সমবায় সমিতি, সরকার, বন্ধকী ব্যাংক,কৃষি ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ইত্যাদি। অন্যদিকে অ-প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উৎস হল গ্রাম্য মহাজন, ভূস্বামী, সাহুকার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন ইত্যাদি ।
৩। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পেতে Formalities থাকলেও নমনীয় শর্ত রয়েছে কিন্তু অ-প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে Formalities কম এবং শর্ত খুব চরম ও কঠিন। এধরনের ঋণের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে ঋণদাতা জামানতের মালিক হয়ে যায় । . •
৪। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ উৎপাদনশীল খাতে ব্যয় করার শর্ত আরোপ করা হয় কিন্তু অ-প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে ব্যয়ের ব্যাপারে তেমন কোন শর্ত থাকে না । যেখানে খুশি ব্যয় করা যায় ।
৫। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ সদ্ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা তদারকি করা হয় কিন্তু অ-প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে মুনাফাই মুখ্য উদ্দেশ্য কোন তদারকির প্রয়োজন হয় না ।
৬। মুনাফা অর্জনই প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উদ্দেশ্য নয়। বাংলাদেশে কৃষি ব্যবস্থার উন্নতি করে কৃষকদের অবস্থা উন্নত করাই প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের লক্ষ্য । ফলে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুদ কম লাগে এবং এরূপ ঋণ পরিশোধের শর্তও সহজ ।। এমনকি অনেক সময় প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও অন্যান্য কারণে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুদ মওকুফ করা হয়। কিন্তু যে কোন অবস্থা সৃষ্টি হোক না কেন অ-প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে কৃষকদেও সর্বস্বান্ত করে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনই ধূর্ত গ্রাম্য মহাজনের একমাত্র উদ্দেশ্য ।
৭ । অ-প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে দেখা যায় গ্রাম্য মহাজন কৃষকদেও চিরস্থায়ী দারিদ্র্যকে মূলধন করে ঋণ প্রদানে অসঙ্গত ও অসম্ভব শর্ত আরোপ করে এবং কোন কারণে সময়মত ঋণ ফেরত দিতে ব্যর্থ হলে তাকে নিজস্ব সম্পত্তি থেকে উৎখাত কওে দেয় । কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে কৃষকের এরূপ সর্বনাশ ঘটার সম্ভাবনা নাই ।
প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক কৃষি ঋণের তুলনামূলক গুরুত্ব ঃ কোটি কৃষকের জন্য অধিকতর মঙ্গলজনক
Relative Importance of Formal and Informal Credit: Which one is Moreuseful for Farmers?

বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থার উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অ-প্রাতিষ্ঠানিক উভয় উৎসের ঋণের ব্যবহার হয়ে থাকে । তবে কোন্ ঋণ আপেক্ষিকভাবে বেশি গুরুত্ব বহন করে তা এক কথায় বলা মুশকিল । এজন্য উভয় ধরনের ঋণের ভাল-মন্দ বিচার করতে হয়। নিমে প্রাতিষ্ঠানিক ও অ-প্রাতিষ্ঠানিক উভয় ধরনের ঋণের তুলনামূলক ব্যবহার/গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করা হল।
১। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের অসুবিধা এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুবিধা
(ক) প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উৎস হল কৃষি ব্যাংক, সরকার, সমবায় সমিতি, বন্ধকী ব্যাংক, বাণিজ্যিক ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ইত্যাদি। অন্যদিকে অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উৎস হল গ্রাম্য মহাজন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, ভূস্বামী ইত্যাদি । অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসসমূহ হতে ঋণ পেতে তেমন কোন সময়ের দরকার হ না । অথচ প্রান্তিক ঋণ পেতে অনেক আনুষ্ঠানিকতা পূরণ করতে অনেক সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর খ পাওয়া যায় ।
(খ) প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে অবশ্যই বন্ধকী বন্দোবস্ত এবং অনেক ক্ষেত্রে দালাল বা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মন-খুশী, নজরানা না দিলে ঋণ পাওয়া যায় না। কিন্তু অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে এ ধরনের কোন মধ্যস্বত্ব শোষণ নেই ।
(গ) প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পেতে যে সময়ের অপচয় হয় এ সময়ে কৃষক জমিতে স্বল্পকালীন সবজি জাতীয় ফসল ফলাতে পারে। অথচ অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ পেতে তেমন সময়ও লাগে না। এজন্য অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ দ্বারা অতি সহজে তাড়াতাড়ি বিনিয়োগ কার্য সম্পাদন করা যায় ।
(ঘ) বিভিন্ন গবেষণা ও জরিপ হতে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে গ্রামীণ অর্থব্যবস্থায় এবং কৃষি উন্নয়নে অ-প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের প্রয়োজনীয়তা বেশি। অর্থাৎ মোট সরবরাহকৃত ঋণের প্রায় ৯৫ ভাগই অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ । যেখানে এ ধরনের অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যবহার হচ্ছে সেখানে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের কোন ভূমিকা নাই বললেই চলে ।
(ঙ) অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ অনেক সময় বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন প্রভৃতির কাছ থেকে পাওয়া যায়। তার জন্য কোন রকম সুদ দিতে হয় না। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে এক দিকে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের আমলাতান্ত্রিক মনোভাব ও নজরানা অন্যদিকে অবশ্যই নির্দিষ্ট সময়ে সুদ-আসলে ঋণ ফেরত দিতে হয়। এ থেকে সচেতন কৃষক সমাজ আমলাদের ভয়ে সহজে অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণকে গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়ে থাকে ।
(চ) গ্রামের গরিব, অশিক্ষিত কৃষক সমাজ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই সহজে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ পেতে পারে। অথচ এ ধরনের জনগণ প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের দ্বারপ্রান্তে পৌছলেই দালাল বা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী, কর্মকর্তাদের খপ্পরে পরতে হয়। তাই কৃষক সমাজ প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উপর গুরুত্ব না দিয়ে বরং অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
২। প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুবিধা ও অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের অসুবিধা
(ক) প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের সুদের হার কম হওয়ায় দরিদ্র জনগণের আয়ের বিরাট অংশ পুঁজি সৃষ্টি করে । অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উচ্চ সুদের হারে কৃষকদের শোষণের শিকার হতে হয় ।
(খ) প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করতে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসের মত চরম বন্ধকী এবং শর্ত দিতে হয় না । কোন সময়ে প্রান্তিক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে পুনঃঋণের বন্দোবস্ত হয়। অথচ অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে তা হয় না। এদিক থেকে সাধারণ জনগণ প্রাতিষ্ঠানিক ঋণকে অধিকতর গুরুত্ব সহকারে ব্যবহার করে।
(গ) প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদান কার্যক্রম গ্রহণের ফলে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে । অথচ অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ক্ষেত্রে কখনও সম্ভব নয় ।
(ঘ) প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ দ্বারা মুনাফা অর্জনই একমাত্র লক্ষ্য নয়। দেশের সার্বিক অবস্থার উন্নতির প্রতিও খেয়াল রাখে । কিন্তু অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের উদ্দেশ্য হচ্ছে একমাত্র মুনাফা। সাধারণ জনগণ যখন বুঝাতে পারে যে অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ দ্বারা তারা শোষিত হচ্ছে তখন অধিক সময় লাগলেও প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের অপেক্ষা করে ।
(ঙ) প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের শর্ত সহজ ও নমনীয় হওয়ায় জনগণ এই ঋণের উপর বেশী গুরুত্ব দেয়। তাছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক উৎস ঋণ প্রদান করার সময় ঋণ ব্যবহারের যাবতীয় পরামর্শ প্রদানসহ পরিশোধের কিস্তি সম্পর্কেও সচেতন করে দেয়। এজন্য কৃষক ঋণ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করতে পারে। অন্যদিকে অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ করলে এ ধরনের পরামর্শমূলক উপদেশ পাওয়া যায় না ।
(চ) প্রাতিষ্ঠানিক উৎস গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য যে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঋণ সরবরাহ করতে পারে, তা অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎসের পক্ষে সম্ভব নয়।
উপরোক্ত আলোচনায় প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক উভয় ধরনের ঋণের ভাল-মন্দ উভয় দিকই তুলে ধরা হল । ঋণের আপেক্ষিক গুরুত্ব বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, কেউ কেউ অপ্রাতিষ্ঠানিক বা আবার কেউ কেউ প্রাতিষ্ঠানিক ঋণকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
১৯৭৭ সালের পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি কুমিল্লা ও সিলেট জেলার কতগুলো নির্বাচিত গ্রানে যে জরিপ চালায় উহা হতে দেখা যায় 'যে, প্রাতিষ্ঠানিক উৎস হতে কৃষকরা মোট ঋণের ২৬.৬% পেয়েছিল। বাকিটা অপ্রাতিষ্ঠানিক উৎস হতে সংগ্রহ করেছিল।
বাংলাদেশের দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল যে, আমাদের মোট কৃষি ঋণের চাহিদার ১৫%-২০% প্রাতিষ্ঠানিক উৎসগুলো মিটিয়ে থাকে। আবার বিভিন্ন জরিপ হতে দেখা যায় যে, মোট ঋণের মাত্র ৮%-১০% ঋণ প্রাতিষ্ঠানিক উৎস সরবরাহ করে থাকে ।
উপরোক্ত বিভিন্ন জরিপ ও গবেষণা থেকে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে কৃষি ঋণ ব্যবহারের দিক থেকে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের চেয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণ বেশি ব্যবহার হচ্ছে। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের যে গুরুত্ব নেই একথা বলা ঠিক হবে না। বাংলাদেশের কৃষক সমাজ এখনও মান্দাতার আমলের নিয়ম ও রীতিনীতির সাথে স্পর্শকাতর । কাজেই সেই সূত্র ধরে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের ব্যবহার সম্পর্কে তারা এখন পূর্ণ সচেতন নয় । এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের প্রভাব কৃষিক্ষেত্রে তেমন দক্ষতার পরিচয় দিতে পারছে না । অতএব কোন উৎসের ঋণ এককভাবে ভূমিকা পালন করে না, তবে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের চেয়ে অপ্রাতিষ্ঠানিক ঋণের গুরুত্ব একটু বেশি একথা বলা যায় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]