কৃষি ঋণ আদায় মহুর কেন? Why is Agricultural Credit Collection Slow?

যে সমস্ত কারণে কৃষি ঋণ আশানুরূপ আদায় করা সম্ভব হয় না তার কয়েকটি কারণ নিম্নে উল্লেখ করা হল ।
প্রথমত ঃ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানের একদিকে যেমন সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে অন্যদিকে কৃষি ঋণ আদায় সংক্রান্ত আইন অনেকটা জটিল এবং অনেক ক্ষেত্রে আইনগত ফাঁকও রয়েছে।
দ্বিতীয়ত ও ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে স্বাভাবিক নীতিমালার অভাব এবং কোন কোন ক্ষেত্রে নীতিমালা বর্তমান থাকা সত্ত্বেও সময়মত উহার প্রয়োগের অভাব কৃষি ঋণ অনাদায়ের একটি অন্যতম প্রধান কারণ । ঋণগ্রহীতাদের পক্ষে ঋণ পরিশোধ সম্পর্কিত সাধারণ নীতিমালা না মেনে চলার একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে এই যে অতীতে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধ করতে অনীহা লোকদের বিরুদ্ধে কৃষি ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের কর্তৃপক্ষ যথাসময় উপযুক্ত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করত না, এখনও করে না। অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে যে আইনগত ব্যবস্থার মাধ্যমের ঋণ আদায় অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং খরচও বেশি। এই ধরনের এক বা একাধিক কারণে কর্তৃস্থানীয় লোকদের মধ্যেও কৃষি ঋণ অনাদায়ের ব্যাপারে একই অনুকূল মনোভাব গড়ে উঠে। বাংলাদেশ ব্যাংকের "Agricultural credit study project" এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে, বিভিন্ন ঋণ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ ঋণ আদায়ের জন্য আইনগত ব্যবস্থা অত্যন্ত বিলম্বে গ্রহণ করে এবং অনেক সময় এইরূপ ব্যবস্থা এমন সময় নেওয়া হয় যখন "Statute of limitations” আইনের আওতায় ঐ ঋণ পরিশোধের আর প্রশ্ন উঠে না ।
ইহা ছাড়া বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার অনতিকাল পূর্বে যে কৃষি ঋণ দেওয়া হয়েছিল উহার বেশির ভাগ অনাদায়ী রয়েছে। প্রকৃত ঋণ গ্রহীতার ঠিকানা অনেক ক্ষেত্রেই স্থানান্তরিত হয়েছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে স্বাধীনতা যুদ্ধের ফলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ধ্বংস হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৃত ঋণগ্রহীতাদেরকে চিহ্নিত করা সম্ভবপর হচ্ছে না । এই সমস্ত এক বা একাধিক কারণেও বিপুল পরিমাণ কৃষি ঋণ অনাদায়ী রয়েছে। এমনকি ১৯৯১ সালে নির্বাচিত সরকার পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণের সুদ ও আসল মওকুফ করে দিয়েছে উপরিউক্ত এক বা একাধিক কারণে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ আজ পর্যন্ত কোন সুসংহত ঋণ আদায় নীতি অনুসরণ করতে পারে নাই এবং প্রধানত এই কারণে তাদের ঋণের উল্লেখযোগ্য অংশ অনাদায়ী অবস্থায় পড়ে আছে ।
তৃতীয়ত ঃ ঋণ গ্রহীতাদের মন-মানসিকতা এবং পারিপার্শ্বিক অবস্থাও ঋণ অনাদায়ের জন্য অনেকটা দায়ী । অতীতে দেখা গিয়েছে যে, কৃষি ঋণ অনেক দিন পর্যন্ত অনাদায় থাকার পর তা সাহায্য বা অনুদান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এরূপ অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে অনেক ক্ষেত্রে কৃষি ঋণ পরিশোধ মওকুফ করা হতে পারে । যেমন ১৯৮৮ সালে সরকার কৃষি ঋণের পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের সুদ মওকুফ করেন।
উপরিউক্ত কারণগুলো ঋণ অনাদায়ের জন্য প্রধানত দায়ী। ইহা ছাড়াও কোন কোন ক্ষেত্রে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের অফিসার ও কর্মচারীদের স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি, ভুয়া ঋণ ইত্যাদি কারণেও কৃষি ঋণের একাংশ অনাদায় অবস্থায় পড়ে থাকে। এ জন্য ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ টাকা দেউলিয়া ঋণ বলে ঘোষণা করেতে হয়।
কিভাবে কৃষি ঋণ আদায় ত্বরান্বিত করা যায় ? How can the Agricultural Credit Collection Increase?
বাংলাদেশে কৃষি ঋণ অদায় সন্তোষজনক না হলেও উহা আদায় ত্বরান্বিত করার ব্যাপারে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি নেওয়া যেতে পারে ।
১। কৃষি ঋণ যাতে উৎপাদন খাতে প্রধানত ব্যবহার করা হয় সেদিকে ঋণ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকতে হবে। এজন্য ঋণ প্রদানের পর ঋণের ব্যবহার যে উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছে সে উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে কিনা তা দেখা দরকার । অফিসার বা কর্মচারীরা এ ব্যাপারে সরেজমিনে মাঝে মাঝে তদন্ত করলে ভাল হয়। কেননা উৎপাদন উদ্দেশ্যে ঋণ ব্যবহার করলে ঋণগ্রহীতার ঋণ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না এবং সেজন্য তার ঋণ পরিশোধের ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায় ।
২। সরকার এবং ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এই মর্মে জনণকে সচেতন করবে যে, কৃষি ঋণ প্রদানের মাত্রা ঋণ পরিশোধের উপর নির্ভর করে । রেডিও, টেলিভিশন এবং পত্রিকার সাহায্যে ব্যাপকভাবে উপরিউক্ত বিষয়টি প্রচার করতে হবে। এ ব্যাপারে গ্রামের হাটগুলোতে ঢাকঢোল পিটিয়ে জনগণকে সচেতন করা যায় ।
৩ । কৃষকদের সাথে ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের যোগাযোগ থাকলে ঋণ ফেরত প্রদানে তাগাদা এবং ব্যবহার সম্পর্কে উপদেশ প্রদান করতে পারে। এ ব্যাপারে কৃষকরা ঋণ ফেরত দিতে বেশ উৎসাহবোধ করে ।
৪। বর্তমান সমবায় ব্যাংকের এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে কেবলমাত্র “Public demand recovery act” প্রযোজ্য। আদায়ের ক্ষেত্রে ইহা কঠোর করার ব্যবস্থা করতে হবে । সরকার এই আইনের আওতাধীনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তাদের প্রদত্ত কৃষি ঋণ আদায়ের ব্যাপারে ক্ষমতা প্রদান করতে পারে ।
৫। প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট জারির ক্ষমতা সম্পন্ন অফিসারের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে ঋণ আদায়ের জন্য আইনগত ব্যবস্থা যথাসময়ে নেওয়া সম্ভবপর হচ্ছে না। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর থানা পর্যায়ের সার্টিফিকেট জারিকৃত কৃষি ঋণের ব্যাপারগুলো দ্রুত নিম্পন্ন করার ব্যাপারে সরকারের সার্টিফিকেট অফিসার নিয়োগ করা উচিত। এই ব্যাপারে সরকার সমবায় বিভাগের সহকারী রেজিষ্টারগণকে সার্টিফিকেট অফিসার হিেেসবে নিয়োগ করতে পারেন । এক্ষেত্রে কৃষি ঋণের অনাদায় সংক্রান্ত ব্যাপার তাড়াতাড়ি নিস্পন্ন করার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে ।
৬। ঋণ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষের উচিত যথাসময়ে ইচ্ছাকৃতভাবে ঋণ পরিশোধে অনাগ্রহী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা । দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ঋণ গ্রহীতারা যথাসময়ে ঋণ পরিশোধে আগ্রহী হবে ।
৭। কৃষি ঋণ অনাদায়ে ঋণ গ্রহীতার সম্পত্তি বা জমানতকৃত শস্য বা জমি ব্যাংকের মালিকানাধীনে . আনার ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃপক্ষ যেন ঋণ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য করে সেই ব্যাপারে সরকার সুস্পষ্ট নির্দেশ দিতে পারেন ।
৮। যে ক্ষেত্রে ঋণ আদায়ের ব্যাপারে বিশেষ সার্টিফিকেট জারির ক্ষমতা সম্পন্ন অফিসারেরর অভাব রয়েছে, সেক্ষেত্রে শাখা ব্যবস্থাপকদের ঋণ আদায়ের ব্যাপারে সীমিতভাবে হলেও আইন প্রয়াগের ক্ষমতা প্রদান করা হলে তাদের পক্ষে ঋণ আদ্রায়ের ব্যাপারে ঋণ গ্রহীতাদের উপর চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে এবং এর ফলে ঋণ আদায় বৃদ্ধি পাবে ।
৯ । তাছাড়া ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানকে ঋণ গ্রহীতার সাথে নিবিড় যোগাযোগ ব্যবস্থা রাখতে হবে । যাতে করে কোন দিক দিয়ে ঋণের অপব্যবহার না হয় ।
১০। ব্যক্তি বিশেষের পরিবর্তে যেখানে সম্ভব সেখানে গোষ্ঠীভুক্ত লোকদের কৃষি ঋণ প্রদান করা উচিত। যেমন-বিভিন্ন সমবায় সমিতিকে কৃষি ঋণ প্রদান করলে উহা পরিশোধের দায় একযোগে সবার উপর বর্তায়। ফলে কৃষি ঋণ আদায়ে সুবিধা হয়। কৃষি ঋণের সদ্ব্যবহারও অনেকটা নিশ্চিত হবে।
১১ । ঋণ ফেরত দানে কৃষকদের নোটিশ প্রদান করা । ইহা আবার তিনভাবে করা যেতে পারে। (i) Demand নোটিশ ৪ নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ঋণগ্রহীতাকে ঋণের কিস্তির টাকা ফেরত দানের জন্য অবহিত করা ।
(ii) লিগাল নোটিশ ৪ নির্দিষ্ট সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর পরবর্তী নির্দিষ্ট সময় দিয়ে উক্ত বিভিন্ন টাকা সুদ-আসলে ফেরত দেয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা। এ সময়ের মধ্যে কিস্তির অর্থ ফেরত না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে ।
(iii) বিশেষ নোটিশ : সর্বশেষ সময় সুযোগদানে ঋণগ্রহীতাকে নোটিশ প্রদান করা যেতে পারে। এ নোটিশে ব্যর্থ হলে আইন প্রয়োগকারী কর্তৃক ক্রোক জারি করে বিষয় সম্পত্তি আদায় করা যেতে পারে । উপরিউক্ত বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে কোটি সুষ্ঠু ও সহজ এবং কোটি তাড়াতাড়ি ঋণ আদায়ে সহায়ক হবে তা বলা মুশকিল । তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করলে ঋণ আদায়ে সক্ষম হবে এ কথা বলা যায়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]