বাংলাদেশের মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো তুলে ধর।

মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো Medium-term Macroeconomic Framework
মন্দা পরবর্তী বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে কতিপয় অন্তর্নিহিত অনুমানের ওপর ভিত্তি করে
মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো, 2015 - 2014 (Medium Term Macroeconomic Framework-MTMF, 2015-17) প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০০৮-২০০৯ সাল ব্যাপী বিশ্ব মন্দা থেকে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের পর জাপানে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ সুনামি ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিপর্যয়, ইউরো অঞ্চলে সৃষ্ট সার্বভৌম ঋণ সমস্যার ব্যাপ্তি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম ঋণমানের অবনয়ন বিশ্বকে আরো একটি মন্দার দিকে ঠেলে দেয়। ফলে ২০১১ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি (Global output) কমে যায়। তবে ইউরো অঞ্চলের ঋণ সমস্যা থেকে উত্তরণের সম্মিলিত নীতি-কৌশল গ্রহণ, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসা এবং বিকাশমান উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশসমূহের অভ্যন্তরীণ চাহিদা সমুন্নত রাখার সক্ষমতার কারণে ২০১২ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি, কৃষিখাতে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি বজার রাখা, বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিয়ম হারের স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরে আসা এবং মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করার প্রেক্ষাপটে আগামী অর্থবছর এবং মধ্যমেয়াদে সামষ্টিক অর্থনেতিক সূচকসমূহ হালনাগাদ করা হয়েছে ।
মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোতে আগামী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭.৩ শতাংশ এবং ক্রমান্বয়ে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছর নাগাদ ৭.৬ শতাংশ এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৮.০ শতাংশে উন্নীত হবে মর্মে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বিনিয়োগ ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জিডিপি'র প্রায় ২৭.৬ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৮.৮ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস প্রদান করা হয়েছে এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০.৫ শতাংশ হবে যার মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ২০.৮ শতাংশে এবং সরকারি বিনিয়োগ ৯.৭ শতাংশে দাঁড়াতে পারে। অভ্যন্তরীণ সঞ্চয় বর্তমানে জিডিপি'র প্রায় ২৩.২ শতাংশ থেকে মধ্যমেয়াদে ২৪.৬ শতাংশে এবং জাতীয় সঞ্চয় জিডিপি'র ২৭.৮ শতাংশ থেকে ৩০.৭ শতাংশে উন্নীত হবে মর্মে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ।
এ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে মূলত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, যোগাযোগ অবকাঠামো এবং কৃষিখাতের উন্নয়নের মাধ্যমে। বিদ্যুৎ খাতে সরকারের পথ নকশা অনুযায়ী কার্যক্রম গ্রহণ, জ্বালানির চাহিদা মেটাতে নতুন কুপ খনন এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদা পূরণ বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাবে বলে আশা করা হয়েছে। যোগাযোগ খাতের উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদায়িত্ব (পিপিপি) উদ্যোগকে এগিয়ে নেয়া এবং একই সাথে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির পূর্ত ও গুণগত বাস্তবায়ন মাধ্যমে অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা ( Infrastructure deficit ) দূর করা সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে। পিপিপি'র আওতায় ভবিষ্যতে যে সকল প্রকল্প গ্রহণ করা হবে, তার সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য একটি কর্মসূচি গ্রহণ এবং নীতিমালা ও নির্দেশিকা সরকার অনুমোদন করেছে ।
কৃষিখাতে গত তিন বছরে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় ছিল। কৃষিখাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে ব্যাপক সরকারি সহায়তা যেমন - পর্যাপ্ত ভর্তুকি প্রদান, সেচের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, কৃষি ঋণের প্রবাহ বৃদ্ধি; প্রতিকূল আবহাওয়া ও লবণাক্ততা সহিষ্ণু বীজ উদ্ভাবন এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পের বিকাশে সহায়তা প্রদান প্রভৃতি কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে। কৃষিখাতে এ কার্যক্রমসমূহ ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে যা কৃষিখাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায় । এমটিএমএফ-এ ২০১১-১২ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণ প্রাক্কলন করা হয়েছে জিডিপি'র ১৩,৪ শতাংশ যা প্রতিবছর গড়ে জিডিপি'র ০.৬-০.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি'র ১৫.৮ শতাংশে উন্নীত হবে মর্মে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে । রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য যে আইনগত, পদ্ধতিগত, কাঠামোগত ও জনশক্তি সংক্রান্ত যেসব সংস্কার কার্যক্রম গত অর্থবছরে গ্রহণ করা হয়েছিল তা আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে । এছাড়া বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির প্রবর্তন, কর-বহির্ভূত রাজস্বের আইটেমসমূহের হার বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ করার যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা অব্যাহত থাকবে । অধিকন্তু, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ফলে বাজেট ভর্তুকির চাপ কমবে, যা সরকারের জন্য অতিরিক্ত রাজস্ব পরিসর (fiscal space) তৈরি করবে। গৃহীতব্য এ সকল সংস্কার বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজস্ব খাতে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে ।
সরকারি ব্যয় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা (জিডিপি'র ১৭.৭ শতাংশে এবং ক্রমান্বয়ে তা ২০১৬- ১৭ অর্থবছর নাগাদ জিডিপি'র ২০১ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ব্যয় জিডিপি'র ৪.৫ শতাংশ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপি'র ৬.৬ শতাংশ নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে । সার্বিকভাবে আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি জিডিপি'র ৫ শতাংশ এবং মধ্যমেয়াদি ঘাটতি ক্রমান্বয়ে হ্রাস পেয়ে ৪.৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে ।
ঘাটতি অর্থায়নে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ গ্রহণ হ্রাসের পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে পাইপ লাইনে থাকা প্রতিশ্রুতি বৈদেশিক সহায়তা ছাড়ের লক্ষ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও প্রয়োজনে সার্বভৌম ঋণ গ্রহণের বিষয়টি সরকারের বিবেচনায় রয়েছে। উল্লেখ্য Standard and Poor's (S&P ) এবং Moody's বাংলাদেশকে পরপর দু'বছর একই সার্বভৌম ঋণমান রেটিং তালিকায় রেখেছে। এ রেটিং তালিকায় S&P এবং Moody's বাংলাদেশকে যথাক্রমে BB এবং Ba3 মান প্রদান করেছে। এ রেটিং অনুযায়ী ঋণ পরিশোধের আর্থিক সক্ষমতার বিচারে বাংলাদেশ ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমকক্ষতা অর্জন করেছে। এরূপ রেটিং-এর ফলে ঋণপত্রের খরচ হ্রাস পাবে এবং এতে আমদানি ব্যয় সাশ্রয় হবে। দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে । অধিকন্তু, ব্যাংক বহির্ভূত উৎস থেকে অর্থায়ন বৃদ্ধির জন্য বর্তমান Diaspora বণ্ডসমূহকে আরো আকর্ষণীয় (Rebranding and repackaging) করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে । আশা করা যায় যে, এর ফলে এ বণ্ডসমূহে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে যা ব্যাংকিং খাতের উপর সরকারের নির্ভরশীলতা কমাবে। মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোতে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির অভিঘাত (Shock) বিবেচনা করা হয়েছে । ফলে বাজেট ঘাটতি নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে সীমিত রাখার লক্ষ্যে একটি পরিকল্পনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ট্যারিফ সমন্বয় করার প্রয়োজন হতে পারে ।
প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা । এমটিএমএফ-এ আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার হ্রাস পেয়ে ৭.৫ শতাংশে এবং মধ্যমেয়াদে তা প্রায় কমিয়ে ৫ শতাংশে আনার পূর্বাভাস করা হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, সরবরাহ ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন রাখা এবং খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত কার্যক্রমসমূহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হয়েছে। মুদ্রানীতিতে মুদ্রা ও ঋণ যোগান সংযত রেখে অনুৎপাদনশীল ও অপচয়মূলক খাতে ঋণের যোগান নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ খাতসহ উৎপাদশীল এবং অগ্রাধিকার খাতে ঋণের পর্যাপ্ত যোগান নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ৭ শতাংশ থেকে ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং ৫ শতাংশ থেকে ৭.৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা এবং মুদ্রার আয় গতির পরিবর্তন বিবেচনায় রেখে মধ্যমেয়াদে ব্যাপক মুদ্রার সরবরাহ ১৫ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে এমটিএসএফ- এ প্রক্ষেপন করা হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ ১৬ শতাংশের মধ্যে রেখে প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে বলে এমটিএমএফ-এ অনুমান করা হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতির সংকোচনের প্রভাবে রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে যার কিছুটা ইতোমধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। তবে ইউরো সংকট নিরসনে দেশগুলোর সম্মিলিত প্রয়াস এবং এ লক্ষ্যে যে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে তার ফলে সঙ্কট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া, নতুন বাজার অন্বেষণ ও রপ্তানি পণ্য বৈচিত্রকরণের যে কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছিল তার সুফল সীমিত পর্যায়ে হলেও দেখা গেছে। এসব বিবেচনায় এমটিএমএফ- এ চলতি অর্থবছরে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ১৪.৫ শতাংশ এবং পরবর্তী বছরসমূহে তা ১৫ শতাংশে থাকবে বলে আশা করা হয়েছে। গত অর্থবছরে আমদানি খাতে যে উচ্চ প্রবৃদ্ধি ছিল তা চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বজায় থাকলেও প্রয়োজনীয় নীতি কৌশল গ্রহণের ফলে আমদানির প্রবৃদ্ধি কমে এসেছে। আগামী অর্থবছরে আমদানি প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশে এবং মধ্যমেয়াদে তা ১৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে অনুমান করা হয়েছে । রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে ১১ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে, যা পরবর্তী বছরসমূহে ১২- ১২.৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে বলে প্রক্ষেপন করা হয়েছে। নতুন নতুন শ্রম বাজার অন্বেষণের প্রচেষ্টা বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারা বজার রাখবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে । চলতি হিসাবের ভারসাম্যের উদ্বৃত্ত হ্রাস পেলেও তা ঋণাত্মক অবস্থায় থাকবে বলে এমটিএমএফ-এ প্রক্ষেপণ করা হয়েছে । সম্প্রতি মুদ্রার বিনিময় হার ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর যে চাপ সৃষ্টি হয়েছিল তা কার্যকর রাজস্ব ও মুদ্রানীতির ফলে নিরসন করা সম্ভব হয়েছে । বর্তমানে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে এবং রিজার্ভ পরিস্থিতিও স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। যৌক্তিক রাজস্ব ও মুদ্রানীতির সমন্বয়ের ফলে অভ্যন্তরীণ ও বহিঃখাতের অভিঘাত মোকাবেলা করে সামষ্টিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখাসহ কাঙ্খিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে বলে আশা করা যায়। নিম্নের সারণিতে মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর কতিপয় সূচকের পূর্বাভাস

বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি World Economic Scenario

২০১০ সালে বিশ্ব অর্থনীতি মন্দা থেকে বেরিয়ে আসার পর ইউরো অঞ্চলের কয়েকটি দেশে সার্বভৌম ঋণ (Sovereign debt) সমস্যার বিস্তার এবং যুক্তরাষ্ট্রের সার্বভৌম ঋণমানের অবনয়ন মন্দা পুনরাবির্ভাবের (Double dip recession) যে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল তা কিছুটা কাটানো সম্ভব হয়েছে। ২০১১ সালের দ্বিতীয়ার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির চাঙ্গা ভাব এবং ইউরো অঞ্চলের অর্থনীতিকে পুনরায় মন্দার প্রভাব থেকে রক্ষা করার জন্য যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয় তার ফলে মন্দার প্রভাব কিছুটা প্রশমিত হলেও বিশ্ব অর্থনীতিতে এখনও নিম্নমুখী ঝুঁকি রয়েছে। তবে উন্নত অর্থনীতির দেশসমূহে প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ ধারায় হলেও বিকাশমান ও উন্নয়শীল অর্থনীতির অধিকাংশ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০১১ এর তুলনায় সামান্য হ্রাস পেলেও তুলনামূলকভাবে ভাল অবস্থানে রয়েছে ।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর World Economic Outlook (WEO), এপ্রিল ২০১২ অনুযায়ী ২০১২ সালে বিশ্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২০১১ সালের ৪০ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ৩.৫ শতাংশে দাঁড়াতে পারে । ইউরো অঞ্চলের সার্বভৌম ঋণমানের অবর্ণয়ন এবং ব্যাংকিং খাতে এর প্রভাবে ২০১১ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে ২০১২ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ গতির কারণে সার্বিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে । তবে ২০১৩ সালে প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৪.১ শতাংশে দাঁড়ানোর পূর্বাভাস করা হয়েছে। উন্নত অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২০১১ সালে ১.৬ শতাংশ থেকে সামান্য হ্রাস পেয়ে ২০১২ সালে ১.৪ শতাংশে দাঁড়ালেও ২০১৩ সালে তা ২.০ শতাংশে উন্নীত হওয়ার পূর্বাভাস করা হয়েছে । ইউরো অঞ্চলে সীমিত আকারের মন্দার পূর্বাভাস করা হয়েছে, যেখানে প্রবৃদ্ধি ২০১২ সালে ০.৩ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে, যা ২০১৩ সালে ০.৯ শতাংশে উন্নীত হওয়ার পূর্বাভাস করা হয়েছে। অন্যদিকে বিকাশমান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ২০১১ সালে ৬.২ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে ২০১২ সালে ৫.৭ শতাংশে এবং ২০১৩ সালে ৬.০ শতাংশে উন্নীত হওয়ার প্রত্যাশা করা হয়েছে । ইউরো অঞ্চলের কয়েকটি দেশে সরকারের কৃচ্ছতা সাধনের ফলে সে সকল দেশের আমদানি কমে যাওয়া এবং মন্দার সময়ে গৃহীত সম্প্রসারণশীল রাজস্ব ও মুদ্রানীতির স্বাভাবিকরণের (Normalisation) ফলে ২০২১ সালে বিকাশমান ও উন্নয়নশীল অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পাবে । এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক প্রকাশিত Asian Development Outlook, April 2012-এ বিশ্বব্যাপী চাহিদা হ্রাস পাওয়া সত্ত্বেও এশীয় অঞ্চলে প্রবৃদ্ধির ধারা বজায় থাকবে বলে পূর্বাভাস করা হয়েছে। এডিবি'র পূর্বাভাস অনুযায়ী এশীয় অঞ্চলের প্রবৃদ্ধি ২০১১ সালের ৭.২ শতাংশ থেকে সামান্য হ্রাস পেয়ে ২০১২ সালে ৬.৯ শতাংশ এবং ২০১৩ সালে প্রবৃদ্ধি আবার ৭.৩ শতাংশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হয়েছে । অভ্যন্তরীণ চাহিদা বজার থাকা এবং ২০১১ সালের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে পণ্যমূল্য হ্রাস পাওয়ায় এশীয় অঞ্চলের মূল্যস্ফীতিও নিম্নমুখী হতে পারে । তবে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতা থাকায় মূল্য পরিস্থিতিতে ঊর্ধ্বমুখী ঝুঁকি রয়েছে। সার্বিকভাবে ইউরো অঞ্চলের সমস্যা থেকে উত্তরণে গৃহীত কার্যক্রমের সফলতা, উন্নয়নশীল ও বিকাশমান অর্থনীতির দেশসমূহের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বজায় রাখার পাশাপাশি পুঁজির আন্তঃপ্রবাহ অব্যাহত থাকা এবং জ্বালানি তেলের মূল্য পরিস্থিতির উপর বিশ্ব অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের গতি নির্ভর করছে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]