শিল্পের/ শিল্পখাতের গুরুত্ব Importance of Industrial Sector in the Economy of Bangladesh

ভূমিকা Introduction
২০১৪-১৫ অর্থবছরে শিল্প খাতের অবদান ৩০.৪২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে (বিবিএস, সাময়িক হিসাব)। ২০১২-১৩ অর্থবছরে স্থিরমূল্যে দেশজ উৎপাদনে জিডিপি বৃহৎ খাতসমূহের মধ্যে শিল্পখাতের অবদান ছিল ২৯.০০ শতাংশ খনিজ ও খনন; ম্যানুফ্যাকচারিং; বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সরবরাহ এবং নির্মাণ এ চারটি খাতের সমন্বয়ে শিল্পখাত গড়ে উঠেছে। এ সকল খাতের মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অবদান সর্বোচ্চ । স্থিরমূল্যে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে জিডিপি'তে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অবদান ৮.৬৮ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে । শিল্পায়ন উন্নয়নশীল দেশে দ্রুত ও টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সামাজিক অগ্রগতি অর্জনের একটি অপরিহার্য পূর্বশর্ত। এজন্য সরকার শিল্পায়নকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসাবে বিবেচনা করছে এবং উপযোগী সব ধরনের শিল্পের পরিবেশ বান্ধব বিকাশ ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করছে । একই সাথে দেশের সবধরনের শিল্পখাত যথা উৎপাদন শিল্প, জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য জ্বালানি শিল্প, কৃষি ও বনজ শিল্প, খনিজ সম্পদ আহরণ ও প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, পর্যটন ও সেবা শিল্প, নির্মাণ শিল্প, তথ্য ও প্রযুক্তি ভিত্তিক শিল্পসহ উপযোগী সব ধরনের শিল্পের পরিবেশ বান্ধব বিকাশ ও উন্নয়ন কল্পে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অব্যাহত রয়েছে । দেশের শিল্পায়নের গতিকে বেগবান করতে ‘শিল্পনীতি ২০১০' নামে একটি যুগোপোযোগী শিল্পনীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এ নীতির অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্যগুলো হচ্ছে- উৎপাদনশীল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, নারীদেরকে শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার মূলধারায় নিয়ে আসা এবং দারিদ্র দূরীকরণ । এ উদ্দেশ্যে যেখানে সম্ভব সেখানে পুঁজিঘন শিল্পের পরিবর্তে শ্রমঘন শিল্পকে অধিক গুরুত্ব দিয়ে শিল্পনীতিতে নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণসহ কুটির শিল্প, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রসারের কার্যক্রম গ্রহণ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে জমি ও অর্থায়ন এবং ব্যবসায় সহায়তামূলক সেবা লাভের ক্ষেত্রে নারীদের প্রবশাধিকার নিশ্চিত করার পদক্ষেপ শিল্পনীতিতে বিধৃত হয়েছে। মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসারে উৎসাহ প্রদানকল্পে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের মাধ্যমে শিল্পঋণ বিতরণ ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। ফলে শিল্পখাতে ঋণ বিতরণ ও আদায় ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে শিল্পখাতের দ্রুত বিকাশের জন্য ইপিজেড সমূহ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণসহ দেশে শিল্পখাত বিকাশে বিশেষ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। ইপিজেড'সমূহে বিনিয়োগ, রপ্তানি উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাট ও পাট শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কৃষক ও শ্রমিকের কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণ প্রভৃতি উদ্দেশ্যে সরকার বন্ধ পাটকল পুনরায় চালু করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে খুলনার পিপলস্ জুট মিলস লিঃ, খালিশপুর জুট মিলস লিঃ নামে এবং সিরাজগঞ্জের কওমি জুট মিলস লিঃ জাতীয় জুট মিলস নামে চালু করা হয়েছে।
শিল্পের/ শিল্পখাতের গুরুত্ব Importance of Industrial Sector in the Economy of Bangladesh
বাংলাদেশে কৃষির পাশাপাশি শিল্পের উন্নয়ন আবশ্যক। দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণের স্বার্থে শিল্পের
উন্নয়ন অনস্বীকার্য । বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পের ভূমিকা নিম্নে আলোচনা করা হলো ।
১। কৃষির আধুনিকীকরণ ঃ মূলত কৃষি ভিত্তিক । দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে আবাদী ভূমিকে বসত ভিটা হিসেবে রূপান্তর করায় দিনে দিনে চাষের জমির পরিমাণ কমে আসছে। তাই স্বল্প জমিতে অধিক উৎপাদনের লক্ষ্যে আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করা প্রয়োজন । কলের লাঙ্গল, সেচ যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন রাসায়নিক উপকরণ শিল্প থেকে সরবরাহ হয়ে থাকে । তাই শিল্পের উন্নতি ব্যতীত কৃষি আধুনিকীকরণ সম্ভব নয় ।
২। স্থিতিশীল অর্থনীতি গঠন : দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার জন্য সর্বক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি আবশ্যক । বাংলাদেশে কৃষি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল বলে উৎপাদনে বরাবর অনিশ্চয়তা থেকে যায়। তাই এককভাবে কৃষির উপর নির্ভর করে উন্নয়ন সম্ভব নয় । দেশের সার্বিক উন্নয়নকে গতিশীল করার লক্ষ্যে কৃষির পাশাপাশি শিল্প খাতকেও সমান গুরুত্ব দিতে হবে ।
৩। পণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণ ঃ কৃষি পণ্য উৎপাদনের পর ভোগের উপযোগী করে তোলার জন্য শিল্প কারখানার অবদান অনস্বীকার্য । কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে শিল্প পণ্য হিসেবে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয় । তা ছাড়াও ক্ষেতের ফসল শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয় ।
৪। বাণিজ্যিক ভারসাম্য রক্ষা ঃ দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য একদিকে যেমন কোটি কোটি টাকার শিল্পজাত দ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। অপরদিকে, রপ্তানি ক্ষেত্রে কাঁচামাল বিদেশে পাঠানো হচ্ছে বলে রপ্তানি বাণিজ্য হতে আশানুরূপ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হচ্ছে না । সে জন্যেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারসাম্য বরাবর দেশের প্রতিকূলে থাকে । তাই বাণিজ্যিক ভারসাম্য বজায় রাখার লক্ষ্যে দেশে শিল্প কারখানা স্থাপন করা উচিত ।
৫। কারিগরি শিক্ষার সম্প্রসারণ : দেশে যত বেশি শিল্প কারখানা স্থাপিত হবে ততই দক্ষ জনশক্তির চাহিদা বাড়বে। প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি তৈরি করার জন্যই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে দেশের বেশ কিছু বেকার যুবক প্রশিক্ষণ লাভে সক্ষম হবে। এতে সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটবে। ৬। বেকার সমস্যার সমাধান ঃ শিল্প কারখানা বৃদ্ধি পেলে দেশের বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান করা যায় । শিল্প কারখানায় সরাসরি নিয়োগ লাভ ছাড়াও শিল্পে কাঁচামাল সরবরাহ করে এবং শিল্প পণ্য বিক্রয় করে অনেক বেকার জীবনধারণ করতে পারে । ৬. গড়া কৃষিক্ষেত্রে মৌসুমী বেকার সমস্যার সমাধানের জন্য শিল্পের প্রসার একান্ত প্রয়োজন ।

৭। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও কৃষির চেয়ে শিল্পের উৎপাদন হার অনেক বেশি। কৃষির উৎপাদন লাভের একটি নির্দিষ্ট কাল অপেক্ষা করা বাধ্যতামূলক। অপরপক্ষে শিল্প উৎপাদনের বিষয়টি প্রধানত মালিকের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল বলেই উন্নয়নের জন্য তা সহায়ক। দেশীয় চাহিদা মিটানোর পর আস্ত জাতিক বাজারে প্রবেশের মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে জাতীয় আয়কে বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাই উন্নয়নের দ্রুততার কথা চিন্তা করে এদেশে শিল্প স্থাপনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া উচিত ।
৮। দেশীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার : বাংলাদেশে বিভিন্ন কৃষি উপকরণ সরবরাহকারী ছোট ছোট শিল্প গড়ে তোলা আবশ্যক। আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের চেয়ে তৈরি মালের চাহিদা অনেক বেশি। পৃথিবীতে পাট, চা, চামড়া উৎপাদনে বাংলাদেশ প্রথম কাতারে থাকলেও এসব কাঁচামালের খুব সামান্যই দেশের স্থানীয় শিল্পে ব্যবহার হয়। বাংলাদেশ প্রথম থেকেই বিদেশী বাজারে কাঁচামাল রপ্তানি করে প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। এছাড়া প্রাপ্ত খনিজ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার শুরু করার প্রয়োজনে দেশে শিল্প কারখানা স্থাপন করা দরকার ।
৯। স্বনির্ভর অর্থনীতি গঠন ঃ দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে অনেক ছোট খাট শিল্প পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে দেশের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার সিংহ ভাগ খরচ হয়ে যায়। তাই ভোক্তার নিত্য ব্যবহারের জন্য পণ্য সামগ্রী স্থানীয়ভাবে তৈরি করা আবশ্যক। ব্যবহার্য দ্রব্যের গুণগত মান উন্নত ও পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে স্থানীয় ক্রেতারা বিদেশী পণ্যের উপর থেকে নির্ভরশীলতা কমিয়ে আনবে । এতে দেশের আমদানির তালিকায় ভোগ্যপণ্যের পরিমাণ ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে। তাই স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য শিল্প কারখানা স্থাপন করা আবশ্যক ।
১০। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি : দেশে শিল্প কারখানার উন্নতির সাথে সাথে যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি হবে । শিল্প এবং কৃষি যন্ত্রের আমদানি রপ্তানির জন্য উন্নত যোগাযোগ অপরিহার্য। তাছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা বিশেষ ভূমিকা পালন করে । তাই শিল্পের সম্প্রসারণ ছাড়া দেশের পরিবহণ ব্যবস্থা উন্নতি সম্ভব নয় ।
১১ । আইন শৃঙ্খলা ও প্রতিরক্ষা ঃ দেশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষা এবং বাহ্যিক যে কোন হুমকি প্রতিহত করার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আবশ্যক। বিদেশ থেকে আমদানির উপর নির্ভর করে একটি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যায় না। তাই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে দেশের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় শিল্প কারখানা তৈরি করা দরকার ।
কৃষি ও শিল্পের পারস্পরিক নির্ভরশীলতা : কৃষি ও শিল্প একে অপরের পরিপূরক - কোটি অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য?
Interdependency of Agriculture and Industry: Agriculture and Industry are Complementary to Each Other: Which one is to give priority?
কৃষি উন্নয়ন ও শিল্প উন্নয়ন যে কোন দেশের জন্য একে অপরের পরিপূরক হিসাবে কাজ করতে পারে। আর এ জন্যই শিল্পোন্নয়ন যেমন কৃষি উন্নয়নের উপর নির্ভরশীল, তেমনই কৃষি উন্নয়নও শিল্পোন্নয়নের উপর নির্ভরশীল হয়ে দ্বৈত উন্নয়ন ধারায় উন্নয়নের গতি হওয়া উচিত।
(ক) কৃষির উপর শিল্পের নির্ভরশীলতা (Dependency of industry on agriculture) কৃষি উন্নয়ত ব্যতীত শিল্প উন্নয়ন চিন্তা করা কঠিন। নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে শিল্প কৃষির উপর নির্ভরশীল।
কাঁচামালের উপর নির্ভর করেই চিনি শিল্প, কাগজ শিল্প, পাট শিল্পগুলো গড়ে উঠেছে। কাজেই কুমির ১। কৃষি শিল্পের কাঁচামাল যোগায় ও কৃষি শিল্প-কারখানার কাঁচামাল যোগান দেয়। কৃষিজাত
প্রসারতার উপর শিল্পের প্রসারতা নির্ভর করে।
২। কৃষি খাদ্যের যোগান দেয়, বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচায় এবং শিল্পে বিনিয়োগ করে ও অনেক উন্নয়নশীল কৃষি প্রধান দেশে আছে যাদের প্রতি বছর খাদ্য আমদানির জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ বৈদেশিক য্যয় করতে হয় । এসব দেশে কৃষি উন্নয়ন দ্বারা দেশীয় খাদ্য চাহিদা মেটাতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচে। এসব উদ্বৃত্ত অর্থ শিল্পের জন্য বিনিয়োগ সুবিধার সৃষ্টি করে।
৩। কৃষি পণ্য রপ্তানি দ্বারা শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি : কৃষি প্রধান দেশগুলোর শিল্পোন্নয়নের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির জন্য বিদেশের উপর নির্ভর করতে হয় । কিন্তু এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন পড়ে । আর কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করেই অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দ্বারা শিল্পোন্নয়নের জন্য যন্ত্রপাতি ও স্পেয়ার পার্টস্ আমদনি করতে হয় । সুতরাং শিল্পোন্নয়নের জন্য কৃষির উন্নয়ন একান্ত অপরিহার্য।
৪। কৃষি উন্নয়নে শিল্পের শ্রমিক যোগান দেয় : কৃষি উন্নয়নের ফলে শিল্পে শ্রমিকের চাহিদা বাড়বে । কারণ কৃষি উন্নয়নের ফলে শিল্পোন্নয়ন হয়, ফলে শিল্পে অতিরিক্ত শ্রমিক চাহিদা দেখা দেয় । এতে বেকারত্ব হ্রাস পায়। এ ব্যাপারে Prof. W. Arther Lewis ১৯৫৪ সালে তার 'Economic Development with Unlimited Supply of Labour' প্রবন্ধে উল্লেখ করেন যে, অনুন্নত দেশের অর্থনীতিতে অসীম শ্রমিক কৃষিখাত হতে শিল্পখাতে নিয়োগের মাধ্যমে অনুন্নত দেশে বিশেষ করে কৃষি প্রধান দেশের অথনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব । তিনি দেখান যে, কৃষিতের চেয়ে শিল্পখাতে শ্রমিকের মজুরি কিছু বেশি হলেই শ্রমিকের শিল্পে নিয়োগ বাড়বে, অর্থাৎ কৃষিখাতে ছদ্মবেশী বেকারত্ব দূর হবে । অর্থাৎ কৃষি থেকে শিল্পে শ্রমিক সরবরাহ সৃষ্টি হবে ।
৫। কৃষি উন্নয়নে শিল্পের কাঁচামালের খরচ কম হয় : অধিক কৃষি উন্নয়ন ঘটলে কৃষিজাত কাঁচামালের মূল্য হ্রাস পাবে । ফলে শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের গড় খরচ কম পড়বে । এতে কম মূল্যে শিল্প পণ্য পাওয়া যাবে । ফলে ভোগ উদ্বৃত্ত সৃষ্টি হবে । যার দ্বারা অতিরিক্ত বিনিয়োগ সম্ভব ।
৬। কৃষি উন্নয়ন শিল্পজাত পণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করে : কৃষি উন্নয়ন ঘটলে কৃষকদের মাথাপিছু আয় বাড়বে এবং শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। ফলে গ্রামাঞ্চলে শিল্প পণ্যের চাহিদা ও যোগান বৃদ্ধি পাবে । সুতরাং শিল্পজাত পণ্যের বাজার বিস্তৃত করতে হলে কৃষির উন্নয়ন একান্ত আবশ্যক । (খ) শিল্পের উপর কৃষির নির্ভরশীলতা (Dependency of agriculture on industry) নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে শিল্পের উপর কৃষির নির্ভরশীলতা রয়েছে।
১। শিল্পোন্নয়নে কৃষি পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি : শিল্পোন্নয়নের ফলে কৃষিজাত কাঁচামালের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে কৃষকদের কাঁচামালের যোগান বেড়ে যাবে এবং কৃষকদের আয় বৃদ্ধি পাবে। এরূপ পরিস্থিতিতে তারা কৃষিতে অধিকতর বিনিয়োগ সমর্থ হবে । ফলে শিল্পোন্নয়নের দরুন কৃষি উন্নয়নের গতিবেগ ত্বরান্বিত হবে।
২। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবর্তন ও কৃষি উন্নয়ন : আধুনিক অর্থনীতিতে কৃষিক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রবর্তন ছাড়া কৃষি উন্নয়ন সম্ভব নয় । কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি দেশের শিল্পোন্নয়নের উপর নির্ভর করে । এছাড়া রাসায়নিক, পানি সেচের যন্ত্রপাতি, কীটনাশক ঔষধ ইত্যাদি প্রস্তুতের জন্য শিল্পের প্রয়োজন । কাজেই কৃষি শিল্পের উপর নির্ভর করে ।
৩। শিল্পে কৃষি পণ্যের পূর্ণ ব্যবহার : শিল্পোন্নয়ন না হলে কৃষির উৎপাদিত পণ্য অপচয়, অপূর্ণ ব্যবহার ঘটে । অর্থাৎ সংরক্ষণের অভাবে অনেক পচনশীল পণ্য নষ্ট হয় । এক্ষেত্রে শিল্পের উন্নয়ন ঘটলে কৃষির কাঁচামাল, কৃষিজাত উৎপাদিত পণ্যের সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবহার দ্বারা কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনে নিশ্চয়তা দিতে পারে ।
৪ । শিল্প ও গ্রামীণ ছদ্মবেশী বেকারত্ব ঃ কৃষি ক্ষেত্রে অধিক শ্রমিক সরবরাহ আছে বলে বেকারত্ব ও ছদ্মবেশী বেকারত্ব বিদ্যমান রয়েছে। W. Arther Lewis, Fei and Ranis এর মতে, শিল্পের উন্নয়ন ও কারিগরি কৌশলিক উন্নয়নের ফলে শিল্পের প্রসার ঘটে, ফলে শিল্পক্ষেত্রে অধিক শ্রমিকের প্রয়োজন হয় । আর এ শ্রমিক কৃষিখাত থেকে অপসারিত হলে কৃষিক্ষেত্রে বেকারত্ব ও ছদ্মবেশী বেকারত্ব দূর হবে । কাজেই শিল্পের উন্নয়ন কৃষিক্ষেত্রের সমস্যা সমাধান করতে পারে ।
৫। শিল্পোন্নয়ন ও কৃষি পণ্যের রপ্তানি ঃ অনেক উন্নয়নশীল দেশ আছে যারা কৃষি পণ্য কাঁচামাল হিসেবে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। এটা একটি দুর্বল বিকল্প । এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে দেশীয় শিল্পোন্নয়ন কৃষি পণ্যের/কাঁচামালের সদ্ব্যব্যহার করতে হবে এবং শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সহজ হবে ।
(গ) কৃষি ও শিল্পের আন্তঃনির্ভরশীলতা (Inter-dependency of agriculture & industry) উপরের আলোচনায়' দেখা যায় যে, কৃষি যেমন শিল্পের উপর নির্ভরশীল, তেমনই শিল্পও কৃষির উপর নির্ভরশীল । একটি ব্যতীত অন্যটির উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না । অর্থাৎ কৃষি ও শিল্প নিবিড় সম্পর্কে আবদ্ধ । এ বিষয়ে স্যামুয়েলসনের কৃষিখাত ও শিল্পখাতের আন্তঃসম্পর্কের উল্লেখ করে উপসংহার টানা যায়- তার মতে, জনগণ যারা আত্মতোষণ খাতের সাথে জড়িত, এই আত্মতোষণ খাত শিল্পের জন্য কাঁচামাল, শ্রম সরবরাহ করছে । শিল্পখাতও সেই জনগণ এবং আত্মতোষণ খাতের বিনিময়ে কাঁচামালের মূল্য ও শ্রমিকের মজুরি প্রদান করছে । অন্যদিকে শিল্পের উৎপাদিত দ্রব্য জনগণ এবং আত্মতোষণ খাত ব্যবহার করছে, বিনিময়ে শিল্প পাচ্ছে বাজার দরে মূল্য। এভাবে শিল্প ও কৃষি/ আত্মপোষণ খাত একে অপরের পরিপূরক হয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]