বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নের উপায় Measures for Industrialization in Bangladesh

বর্ধিত জনসংখ্যার বাস্থানের জন্য এক দিকে আবাদী ভূমির পরিমাণ হ্রাস পেয়ে উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। অন্য দিকে কৃষির উপর নির্ভর করে দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয় । একথাও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাই এখন থেকেই বেশির ভাগ বিনিয়োগ শিল্প সম্পর্কিত হওয়াই যুক্তিযুক্ত।
এ দেশে শিল্পোন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলো গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়ন করতে হবে।
১। শিশু শিল্পকে সহায়তা দান ঃ দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদনে নিয়োজিত সকল ধরনের শিশু শিল্প প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব । শিল্পের উৎপাদিত মালামালের দ্রুত কেনাবেচার জন্য ব্যাপক হারে বিদেশী পণ্যের আমদানি বন্ধ করা অথবা সীমিত করা উচিত । বাংলাদেশে প্রযুক্তি জ্ঞানে উন্নত না হওয়ায় গুণগত দিক থেকে বিদেশী পণ্যের ন্যায় সমমানের পণ্য উৎপাদনে এখনো সক্ষম নয় । তাই বিক্রয়জনিত অসুবিধার কারণে কোন একটি শিল্প স্বাবলম্বী হতে পারে না । সে জন্যই দেশের শিশু শিল্পকে রক্ষা করার লক্ষ্যে বিদেশী পণ্যের আমদানি ও ব্যবহারের উপর সরকারি বিধিনিষেধ থাকা প্রয়োজন ।
২। সরকারি সহযোগিতা ঃ দেশকে শিল্পে উন্নত করতে হলে সরকারি সাহায্য সহযোগিতা আবশ্যক । দেশের বেশির ভাগ মানুষ দরিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে বলেই শিল্পের মত একটি বৃহদায়তন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের উৎসাহ প্রদানের জন্য সরকারকে এগিয়ে আসা উচিত। সহজ শর্তে ঋণ দেয়া, শিল্প কারখানার উৎপাদন অটুট রাখার সকল ব্যবস্থা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের বহন করা আবশ্যক ।
৩। কারিগরি শিক্ষার প্রসার : শিল্পোন্নয়নের জন্য দক্ষ শ্রমিকের দরকার। উৎপাদনের চারটি উপকরণের মধ্যে শ্রমের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। তবে বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে আজকাল সাধারণ শ্রমিকের চেয়েও দক্ষ শ্রমিকের চাহিদা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে কারিগরি শিক্ষার ব্যাপকতা আনা একান্তই দরকার ।
৪। শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দান : নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য প্রকৃত শিল্প উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দান করা দরকার। শিল্পাঞ্চলে আইনের শাসন প্রবর্তনসহ সকল ধরনের নিরাপত্তা বিধান অপরিহার্য। দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা শিল্প উৎপাদনকে এগিয়ে নিতে পারে। অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বরাবর উদ্যোক্তাদের নিরুৎসাহিত করে। দেশী বিদেশী পুঁজি বিনিয়োগকারীরা এ বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব থাকে । তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ ঋণ দানের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার।
৫ । বহির্বিশ্বে রপ্তানি বৃদ্ধি ও পণ্যের গুণগত মান উন্নত করে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানির জন্য বিদেশে আমাদের বাজার সৃষ্টি করা উচিত। উৎপাদিত মালামালের আন্তর্জাতিক চাহিদা বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সক্ষম হবে ।
৬। বৈদ্যুতিক সংযোগ ঃ শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিদ্যুতের বিকল্প নেই। আধুনিক শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ অপরিহার্য। পূর্বে বিদ্যুতের অভাবে এদেশের দূর দূরান্তে যেমন কোন শিল্প কারখানা স্থাপিত হতে পারেনি। বর্তমানে সরকারের পল্লী বিদ্যুতায়ন কর্মসূচির সুবিধা লাভ করে অনেক দুরদূরাঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প গড়ে উঠেছে ।
৭। উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ : উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ শিল্পোন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। যোগাযোগের ক্ষেত্রে দেশ যতই উন্নত হবে শিল্পক্ষেত্র ততই এগিয়ে যাবে। শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আনা নেয়ার সুবিধাসহ উৎপাদিত মালামালের বাজারজাতকরণ সম্ভব হবে। ভাল যোগাযোগ ও বাজারের সুবিধা পেলে দেশের নানান অঞ্চলে ধীরে ধীরে শিল্প কারখানা গড়ে উঠবে ।
৮। শ্রম নীতির প্রবর্তন ঃ শ্রম নীতি সম্পর্কে সরকারি দৃষ্টি সক্রিয় হওয়া উচিত। মালিকগণ কর্তৃক . জোরপূর্বক কোন শ্রমিককে নির্দিষ্ট সময়ের বেশি কাজ করাতে বাধ্য না করা, শ্রমিক কর্তৃক মালিকও যেন হয়রানি না হয় তার প্রতি সতর্ক দৃষ্টি রাখা সরকারের কর্তব্য। পরস্পর সমঝোতার ভিত্তিতে উৎপাদনকে অক্ষুণ্ণ রাখা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব ।
৯। মূলধন সৃষ্টি ঃ শিল্প কারখানা স্থাপনের জন্য পুঁজির প্রয়োজন সর্বাধিক। বাংলাদেশের শিল্পখাতে ঋণ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে । উৎসাহী উদ্যোক্তাদের দিনের পর দিন পুঁজি সংগ্রহের জন্য হয়রানি হতে দেখা যায় । তাই দেশে অধিক পরিমাণ ব্যাংক ও অর্থ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যেতে পারে । ঋণ প্রদানের শর্তসমূহকে আরো সহজ করা বাঞ্চনীয় ।
১০। ব্যক্তি পুঁজিকে বিনিয়োগে উৎসাহ দান : বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দেশী বিদেশী বিনিয়োগকারীদেরকে উৎসাহ প্রদানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিতে হবে। ব্যক্তিগত শিল্প প্রতিষ্ঠানকে কখনো রাষ্ট্রায়ত্ব করা হবে না এরূপ আইন প্রণয়নের মাধ্যমে পুঁজি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহ দেয়া যেতে পারে । স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ব শিল্পনীতির তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকে ১৯৭৭ সাল থেকে শিল্পনীতির সংশোধনী আনার চিন্তা করা হয় এবং কেবল বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানকে সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন রেখে বাদবাকীগুলোকে বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয় । বর্তমান সময় পর্যন্ত সরকারের এ নীতি অপরিবর্তীত থাকায় পুঁজি বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ ও আস্থা ফিরে পাচ্ছে ।
১১। শিল্প অনুমোদন সহজীকরণ ঃ শিল্প মন্ত্রণালয় ও শিল্প ডাইরেকটরেট থেকে শিল্প স্থাপনের নতুন প্রস্তাব যেন অতি সহজে অনুমোদন করা যেতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে উদ্যোক্তারা হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পাবে । তাছাড়া বিশ্ব বাজারের চাহিদামত দ্রব্য প্রস্তুত, দ্রব্যের গুণগত মান উন্নয়ন এবং সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে দেশীয় উদ্যোক্তাদের পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আমাদের দেশে শিল্প উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যেতে পারে ।
১২। কাঁচামালের যোগান : শিল্প কারখানা চালু রাখার জন্য কাঁচামালের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশ থেকে কাঁচামাল আমদানি করে যে পণ্য উৎপাদন করা হয় তার বিক্রয় মূল্য দ্বারা মালিকগণ আশানুরূপ লাভবান হতে পারে না। তাই দেশের কৃষি ব্যবস্থাকে বিজ্ঞান সম্মতভাবে উন্নীত করে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। যেমন- বাংলাদেশে তাঁত শিল্পের চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত সুতার অভাবে নতুন নতুন তাঁত শিল্প গড়ে উঠতে পারছে না। তাই সরকারি কর্মসূচীর পাশাপাশি বেসরকারিভাবে তুলা উৎপাদনের
জন্য জনসাধারণকে উৎসাহ প্রদান করা যায়।
১৩। সহজ কর নীতি ঃ উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের করনীতিতে আরো সংশোধনী আনা উচিত। ঋণের সর্বশেষ কিস্তি নেয়ার ৬ মাসের মধ্যে গ্রহীতাকে শিল্পের উৎপাদন বাধ্যতামূলক শুরু করতে হবে এবং উৎপাদন শুরু হলে তখন থেকে কেবল প্রদত্ত ঋণের সুদ গণনা করা উচিত। তাছাড়া মালামাল বিক্রয়ের উপর লক্ষ্য রেখে শুল্ক নির্ধারণ করা উচিত । করের হয়রানি থেকে রক্ষা পেলে ব্যক্তিগত পুঁজি বিনিয়োগে উদ্যোক্তারা আরো উৎসাহী হবে ।
১৪। সুষ্ঠু শিল্প নীতি প্রণয়ন ও যে কোন শিল্পের উন্নতি বিধান করতে হলে সুষ্ঠু শিল্পনীতি প্রণয়ন করা আবশ্যক । দেশের প্রকৃত চাহিদা নির্ণয় করত বহির্বিশ্বে দেশীয় শিল্প পণ্য রপ্তানি করা ইত্যাদির প্রতি নজর রেখে শিল্প কারখানা স্থাপনের অনুমতি প্রদান করা যায়। অপরিকল্পিত শিল্প কারখানা বরাবর অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। তাই শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পূর্বে বাজার ব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টি রাখা দরকার । এছাড়া অন্যান্য দিকগুলো ভালভাবে পরীক্ষা করা হলে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী শিল্প কারখানা গড়ে উঠার সুযোগ থাকবে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]