বাংলাদেশের শিল্প কাঠামো Industrial Structure of Bangladesh

বাংলাদেশের শিল্প কাঠামো অত্যন্ত অনুন্নত ও দুর্বল। বিট্রিশ সরকার প্রায় ২০০ বছর এবং পাকিস্তান সরকার প্রায় ২৫ বছর বাংলাদেশকে শাসন ও শোষণ করে। এই সময়ে তারা বাংলাদেশকে কাঁচামালের উৎস ও নিজেদের শিল্পজাত পণ্যের বাজার হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে ঐ সময়ে এদেশে কোন বৃহদায়ন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। এমনকি তারা আমাদের কুটির শিল্পগুলোকেও সমূলে ধ্বংস করে দেয় । স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এদেশের বৃহদায়তন শিল্পসমূহ জাতীয়করণ করা হয় । ১৯৮৬ সাল নাগাদ এ জাতীয়করণকৃত শিল্পসমূহ প্রচুর পরিমাণে লোকসানের সম্মুখীন হয়। বাংলাদেশ সরকার ১৯৮৬ সালে “শিল্পনীতি ১৯৮৬” ঘোষণার মাধ্যমে শিল্পসমূহকে ব্যক্তিমালিকানার ছেড়ে দিতে শুরু করলে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং মুনাফার স্ফীতি ঘটে । বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে শিল্প নীতি-২০০৫ এ যে ধরনের দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে তাতে দেশে শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে শিল্পোয়নের কিছুটা প্রসার ঘটে । এর ফলে শিল্পখাতে অব্যাহত ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন (sustainable industrial growth) সম্ভব হয়। এ ধারাকে আরও সৃজনশীল, গতিশীল, মসৃণ এবং সুনির্দিষ্ট একটি ভিশন, লক্ষ্য অর্জনের জন্য গ্রহণ করা হয় 'শিল্পনীতি ২০১০' ।
-
শিল্পনীতি - ২০১০ এর আলোকে বাংলাদেশের শিল্পসমূহকে নয় ভাগে ভাগ করা যায় । যথাঃ
১। ক্ষুদ্র শিল্প : ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে "ক্ষুদ্র শিল্প" (small industry) বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৫০ লক্ষ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২৫-৯৯ জন শ্রমিক কাজ করে ।
সেবামূলক শিল্পের ক্ষেত্রে "ক্ষুদ্র শিল্প" বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৫ লক্ষ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০-২৫ জন শ্রমিক কাজ করে।
কোন একটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে একটি কর্মকাণ্ড ক্ষুদ্র শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও অন্য মানদণ্ডে সেটি মাঝারী শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে এ কর্মকাণ্ডটিতে মাঝারি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে।
২। মাঝারি শিল্প : ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে “মাঝারি শিল্প” (medium industry) বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১০ কোটি টাকার অধিক এবং ৩০ কোটি টাকার মধ্যে কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০০- ২৫০ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে।
সেবামূলক শিল্পের ক্ষেত্রে “মাঝারি শিল্প” বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১ কোটি টাকা থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ৫০-১০০ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে ।
কোন একটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে একটি কর্মকাণ্ড মাঝারি শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও অন্য মানদণ্ডে সেটি বৃহৎ শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে । সেক্ষেত্রে এ কর্মকাণ্ডটি বৃহৎ শিল্পের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে ।
৩। বৃহৎ শিল্প ঃ ম্যানুফ্যাকচারিং ক্ষেত্রে “বৃহৎ শিল্প (large industry) বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ (replacement cost) ৩০ কোটি টাকার অধিক কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২৫০ জনের অধিক শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে ।
সেবামূলক শিল্পের ক্ষেত্রে “বৃহৎ শিল্প” বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্টানকে বোঝাবে যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ১৫ কোটি টাকার অধিক কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০০ জনের অধিক শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে ।
৪। কুটির শিল্প : “কুটির শিল্প” (cottage industry) বলতে পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্য বিশিষ্ট সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৫ লক্ষ টাকার নিচে এবং পারিবারিক সদস্য সমন্বয়ে সর্বোচ্চ জনবল ১০ এর অধিক নহে এরূপ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝাবে ।
কোন একটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে একটি কর্মকাণ্ড কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও অন্য মানদণ্ডে সেটি মাইক্রো শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে এ কর্মকাণ্ডটি মাইক্রো শিল্পের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে ।
৫। মাইক্রো শিল্প ঃ “মাইক্রো শিল্প” (micro industry) বলতে সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বোঝাবে যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৫ লক্ষ টাকা থেকে ৫০ লক্ষ টাকা কিংবা যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০-২৪ জন বা তার চেয়ে কম সংখ্যক শ্রমিক কাজ করে । কোনো একটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে একটি কর্মকাণ্ড মাইক্রো শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হলেও অন্য মানদণ্ডে সেটি ক্ষুদ্র শিল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে এ কর্মকাণ্ডটি ক্ষুদ্র শিল্পের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে ।
৬। হাইটেক শিল্প ঃ “হাইটেক শিল্প” বলতে জ্ঞান ও পুঁজি নির্ভর উচ্চ প্রযুক্তিভিত্তিক পরিবেশবান্ধব এবং আইটি/আইটিইএস বা গবেষণা ও উন্নয়ন (R&D) নির্ভর শিল্পকে বোঝাবে ।
কোন একটি শিল্প কারখানা সংশ্লিষ্ট পোষাক কর্তৃক নিবন্ধিত শিল্পের বেলায় যে কোন বিনিয়োগ সীমা হলেও তার দায় দায়িত্ব প্রাথমিক পোষাক কর্তৃপক্ষের আওতায় থাকবে ।
৭। অগ্রাধিকার শিল্প : "অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত শিল্প ( thrust sector)" বলতে সে সমস্ত উদীয়মান। শিল্পকে বোঝাবে যে সমস্ত শিল্পের প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধিসহ দারিদ্র্য বিমোচন উল্লেখযোগ্য অবদান রাখার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা/প্রেষণা প্রদানের মাধ্যমে পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য সরকার কর্তৃক একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অগ্রাধিকারমূলক নীতি সমর্থন যোগানো প্রয়োজন হয়।
৮। সংরক্ষিত শিল্প ও সরকারি নির্দেশের মাধ্যমে যে সকল শিল্প জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সংরক্ষিত রাখা প্রয়োজন এবং যেসব শিল্প স্পর্শকাতর ও সংবেদনশীল হিসাবে সরকারি বিনিয়োগের জন্য সংরক্ষিত সেসব শিল্পকে সংরক্ষিত শিল্প ( reserved industry) হিসেবে চিহ্নিত করা হবে ।
৯। নিয়ন্ত্রিত শিল্প ঃ প্রাকৃতিক/খনিজ সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকল্পে, দেশের স্বার্থে সেবামূলক/ বিনোদমূলক কিছু শিল্প স্থাপনের বিষয়ে সরকারের যথাযথ সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণকল্পে এবং জাতীয় নিরাপত্তা ও সংস্কৃতির প্রতি হুমকির কারণ হতে পারে বা অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন সকল শিল্প সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের/কমিশনের (যেমন- সংস্কৃতি/ধর্ম মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি ইত্যাদি) অনুমোদন/অনাপত্তি গ্রহণ সাপেক্ষে বেসরকারি খাতে স্থাপন করা যাবে ।
নিম্নের তালিকায় বাংলাদেশের দেশজ উৎপাদনে বিভিন্ন প্রকার শিল্পের খাতওয়ারী অবদান দেখানো হলো ।
উপরের তালিকায় দেখা যায়, বাংলাদেশের দেশজ উৎপাদনে বিভিন্ন শিল্পের খাওয়ারী প্রবৃদ্ধির হার অত্যন্ত কম এবং পরিবর্তনশীল যা আমাদের অনুন্নত শিল্প কাঠামোর পরিচয় বহন করে ।
৮.৭ বাংলাদেশের শিল্প কাঠামোর গতি প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য
Features and Trend of Industrial Structure in Bangladesh সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে র ক্রামাগত পরিবর্তনের ফলে এই দেশের শিল্প কাঠামোর আকার ও চরিত্র পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তিহীন বাংলাদেশ-এর স্থলে বর্তমান প্রযুক্তি নির্ভর বাংলাদেশ (২০১২-
এ) আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত শিল্প উৎপাদনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশের শিল্প কাঠামোর বৈশিষ্ট্য ও গতিপ্রকৃতি নিয়ে বর্ণনা করা হল।
১। বৃহদায়তন শিল্পের বিকাশ ও বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছরে বৃহদায়তন শিল্পের বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। ২০০৫ সালের শিল্পনীতি অনুসারে যে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠায় ১০ কোটি টাকায় অধিক মূলধন লাগে এবং ২৩০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করে, তাকে বৃহৎশিল্প বলে। এসংজ্ঞা অনুসারে বাংলাদেশে পাট, কাগজ, সার, ঔষধ, বস্ত্র, চিনি, তৈরি পোশাক প্রভৃতি শিল্পপণ্য উৎপাদনে অনেক বৃহদায়তন শিল্প গড়ে উঠেছে
২। ঔষধ শিল্পের বিকাশ ঃ সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে ঔষধ শিল্প যথেষ্ট উন্নতি করেছে। অনেক ঔষধ উৎপাদন কারী প্রতিষ্ঠান বিশ্বমানের ঔষধ উৎপাদন করছে এবং বিশ্বের অনেক দেশেই রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
৩। মাঝারি শিল্পের প্রাধান্য : শিল্পনীতি-২০১০ অনুসারে যে সকল শিল্পে স্থায়ী মূলধনের পরিমান ১০ কোটি টাকার কম এবং ২৩০ জনের কম শ্রমিক কাজ করে, সেগুলোকে বলা হয় মাঝারি শিল্প। বাংলাদেশে চামরা শিল্প, তামাকশিল্প, সবান শিল্প, কলম শিল্প, সিরামিক ও দিয়াশলাই শিল্প ইত্যাদি ক্ষেত্রে মাঝারি বহু শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে মাঝারি শিল্পের বিকাশ ও প্রাধান্য শিল্পের কাঠামোর এক উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য
1
৪। ভারী শিল্পের অভাব ঃ ভারী যন্ত্রপাতি উৎপাদন শিল্পকে বলা হয় ভারী শিল্প। বাংলাদেশে ভারী শিল্পের ভিত্তি খুবই দূর্বল । এটা বাংলাদেশের শিল্প কাঠামোর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য । যেমনঃ পাট শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল (কাঁচা পাট) বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। কিন্তু পাট শিল্পে ব্যবহৃত ভারী যন্ত্রপাতি বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না। এভাবে বাংলাদেশে ভিত্তি শিল্প বা ভারী শিল্প এখনও গড়ে উঠেনি ।
৫। পোশাক শিল্পের দ্রুত বিকাশ : বাংলাদেশের রপ্তানী শিল্পখাতের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পোশাক শিল্প । বিগত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে আমাদের পোশাক শিল্প দ্রুত বিকশিত হতে থাকে । সস্তা শ্রম এবং শ্রমের মজুরি কম হবার কারণে উৎপাদন খরচ কম হয় এবং বিদেশের বাজারে স্বল্পমূল্যে পোশাক রপ্তানি করা যায় । বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের ৯৫% ই হচ্ছে নারী শ্রমিক ।
৬। অর্থনীতিতে শিল্পখাতের অবদান ক্রমাগত বৃদ্ধি : তে শিল্পখাতের অবদান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় আয় নির্ণয়ে ১৫টি খাতের মধ্যে মাইনিং এবং কোয়ারিং, ম্যানুফ্যাকচারিং, বিদ্যুৎ গ্যাস ও পানি সরবরাহ এবং নির্মাণ-এ চারটি খাত সমন্বয়ে শিল্পখাত গড়ে উঠেছে। এ খাতগুলোর মধ্যে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অবদান সর্বোচ্চ। ১৯৮০-৮১ অর্থবছরে স্থির মূল্যে দেশজ উৎপাদনে বৃহৎ খাতগুলোর অবদান ছিল ১৭.৩১ শতাংশ এবং ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে এখাতের অবদান দাঁড়িয়েছে ২৯.৭৩ শতাংশ। ২০০৪-০৫ অর্থবছরের সাময়িক অবদান শতকরা ১৬.৫৮ ভাগ । ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ২০০৪-০৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার শতকরা ৮.৪৩ ভাগ প্রাক্কলন করা হয়েছে যা বিগত অর্থ বছরের চেয়ে শতকরা ১,৩৩ ভাগ বেশি। স্থিরমূল্যে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সাময়িক হিসাবে জিডিপি'তে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের অবদান ১৭.৭৮ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে যা আগের বছরের চেয়ে ০.২৩ শতাংশ বেশি। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ২০০৮-২০০৯ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৫.৯২ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১.২৯ শতাংশ কম। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের এ প্রবৃদ্ধির প্রবণতা অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাকে বেগবান করছে। এই প্রবৃদ্ধির চালিকা শক্তি হচ্ছে তৈরি পোশাক ও নীটওয়্যার শিল্প ।
৭'। অনুন্নত পরিবেশ ও বাংলাদেশের শিল্পখাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে আমাদের শিল্পখাতের পরিবেশ অনুন্নত ও স্বাস্থ্যকর। শিল্পকারখানার চারপাশে অস্বাস্থ্যকর বস্তি গড়ে উঠেছে। সেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করে শ্রমিকরা অসুস্থ্য হয়ে পড়ে, স্বাস্থ্যহানি ঘটে এবং শ্রমিকের কর্মদক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা কমে যায়।
৮। বেসরকারিকরণ ঃ বর্তমানে মুক্ত বাজার অর্থনীতি এবং বিশ্বায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকার বেসরকারি উদ্যোগে শিল্প প্রতিষ্ঠা এবং শিল্পকারখানাকে লাভজনকভাবে পরিচালনাকেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি হিসাবে গ্রহণ করেছে। এছাড়া সরকার ইতোমধ্যেই ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বহু গঠনমূলক এবং যুগোপোযোগী সংস্কার সাধন করে বাণিজ্য উদারীকরণ করেছে যাতে বেসরকারি উদ্যোক্তারা আশংকামুক্ত ও লাভজনকভাবে শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সুযোগ গ্রহণ করতে পারে ।
৯। শিল্পায়নে নারীর অংশগ্রহণকে উৎসাহিতকরণ ঃ শিল্পখাতে অধিক হারে মহিলা শিল্পোদ্যোগ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু শিল্পায়নে মহিলা শিল্পোদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের বিষয়টি যথেষ্ট প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
১০ । তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তির (আইসিটি) ব্যবহার ঃ তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তির (আইসিটি) এ যুগে শিল্প-কারখানা দক্ষ ও লাভজনকভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে আইসিটি ব্যবহার করে পণ্যের কর্ম ইফেকটিভনেসসহ গুণগত মান উন্নয়ন এবং নির্ভুলভাবে অতি দ্রুত কাস্টমার সার্ভিস এর নিশ্চয়তা বিধান করা সম্ভব । সে কারণে কোন কোন ক্ষেত্রে আইসিটি ব্যবহারকে অধিকমাত্রায় গুরুত্ব ও উৎসাহ প্রদান করা বর্তমান শিল্পনীতি ও শিল্প কাঠামোর একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ।
১১। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) কে প্রাধান্য : সরকার দেশের সুষ্ঠু শিল্পায়ন প্রক্রিয়াকে অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে (এসএমই) অগ্রাধিকার খাত এবং শিল্পায়নের চালিকা শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা শিল্পনীতিতে সন্নিবেশিত হয়েছে। দেশব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারি (এসএমই) শিল্প প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও কৌশলগত সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার একটি পৃথক এসএমই নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে এসএমই সংক্রান্ত নীতিমালায় সন্নিবেশিত যাবতীয় দিক-নির্দেশনা ও কৌশল এসএমই প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হবে ।
১২। ভোগ্যপণ্যের উৎপাদন : বাংলাদেশে বিরাজমান শিল্প প্রতিষ্ঠানে চূড়ান্ত ভোগ্যপণ্যের উৎপাদনই বেশি হয়। মাধ্যমিক পণ্য যেমন- পারটেক্স, প্লাইউড, গ্লাস, সুতা এবং মূলধনী পণ্য যেমন- রাসায়নিক উপাদান, মেশিনারীজ ইত্যাদি উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা খুবই কম ।
১৩। দ্বৈত মালিকানা ঃ বাংলাদেশের শিল্পখাতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দু'ধরনের মালিকানায় শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশ সরকার মুষ্টিমেয় কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান ছাড়া প্রায় সকল শিল্প কারখানা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব/জাতীয়করণ করে। কিন্তু ১৯৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্পকারখানায় ব্যর্থতার কারণে শিল্পখাতে বেসরকারীকরণ নীতি চালু হয়। এখনও সরকারী মালিকানায় শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকলেও বেশিরভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠান বেসরকারি মালিকানায় পরিচালিত হয়।
১৪। শ্রম নিবিড় ভিত্তিক শিল্পের আধিক্য : বাংলাদেশের বেশিরভাগ শিল্প কারখানায় বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্প এমনকি বৃহদায়তন শিল্পেও শ্রম নিবিড় উৎপাদন কৌশল ব্যবহার করা হয়। এর প্রধান কারণ হচ্ছে পুঁজির স্বল্পতা এবং সস্তা শ্রমের সহজলভ্যতা।
উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের শিল্পকাঠামো এবং শিল্পায়ন প্রক্রিয়া প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে । কারিগরী প্রযুক্তি নির্ভর মূলধনঘন উৎপাদন পদ্ধতির পরিবর্তে বাংলাদেশে শ্রম নিবিড় কৌশল ব্যবহার করে উৎপাদন করা হয়। মূলধনী যন্ত্রপাতি উৎপাদন করার মতো ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান এখনও বাংলাদেশে গড়ে উঠেনি । তবে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]