বাংলাদেশের শিল্প নীতি Industrial Policy of Bangladesh

শিল্প নীতি Industrial Policy
অর্থনীতির প্রতিটি খাতের মতো শিল্পখাতের উৎপাদন বৃদ্ধি ও পরিকল্পিত উপায়ে সার্বিক উন্নয়নের জন্য একটি যুগোপোযোগী ও টেকসই নীতি থাকা আবশ্যক । অর্থনীতির আধুনিকায়ন ও কাঠামোগত রূপান্তর, অর্থনৈতিক ভিত্তির বৈচিত্র্যায়ন, ক্রমবর্ধমান উৎপাদনশীলতা অর্জন, বাহ্যিক ব্যয় সংকোচন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি, ত্বরিৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জনগণের আয় ও জীবনযাত্রার উন্নয়ন কে সামনে রেখে শিল্পায়নকে বেগবান করতে যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় তাকে বলা হয় শিল্প নীতি। শিল্প নীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমৃদ্ধ ও আধুনিক শিল্পখাত গড়ে তোলার মাধ্যমে বেকারত্ব, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য পীড়িত জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত কমিয়ে আনা ।
বাংলাদেশের শিল্প নীতি Industrial Policy of Bangladesh
একটি দেশের শিরোন্নয়নের জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতিমালাকে শিল্প নীতি বলে। অন্যভাবে বলা যায়, শিল্পখাতের উন্নয়নে সরকার কর্তৃক গৃহীত অর্থনৈতিক কর্মসূচিকে শিল্প নীতি বলে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ সরকারও শিল্পখাতের উন্নয়নের জন্য স্বাধীনতার পর থেকে চেষ্টা করে আসছে এবং শিল্প নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করে আসছে। বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৭৩ সালে শিল্প নীতি গ্রহণ কর হয়। তারপর বিভিন্ন সময়ে শিল্প নীতিতে পরিবর্তন ও সংস্কার করে নতুন নতুন শিল্প নীতি ঘোষণা করা হয়েছে । সর্বশেষ বাংলাদেশ সরকার আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ও শক্তিশালী শিল্পখাত গড়ে তোলার জন্য ২০১০ সালে 'শিল্প নীতি-২০১০' ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের শিল্প নীতিতে যে সকল বিষয়কে প্রাধান্য বা অগ্রাধিকার দেওয়া হয় সেগুলো নিম্নরূপ ।
১। শিল্প মালিকানার ধরন;
২। শিল্পখাতে সরাসরি বিদেশী-বিনিয়োগ আকর্ষণ;
৩। শিল্পের সংরক্ষণ;
৪। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক;
৫। শিল্পখাতে নারীর অংশগ্রহণ;
৬। বেসরকারীকরণ;
৭। শিল্প উন্নয়নের কৌশলগত পরিবর্তন;
৮ । পুঁজি বিনিয়োগের সীমা;
৯ । আমদানি বিকল্পন ও রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন কৌশল;
১০। দেশের শিল্পখাতে গতিশীলতা ও প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা;
১১। বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা ।
১৯৯৬ সালের শিল্প নীতি Industrial Policy of 1996
একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দ্রুত সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন করা প্রয়োজন এজন্যই দেশের একটি সুপরিকল্পিত ও সময়োপযোগী শিল্প নীতি বাস্তবায়ন আবশ্যক ।
১। বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের সস্পষ্ট ও সার্বিক অর্থনৈতিক নীতিমালা ও দিক নির্দেশনা রয়েছে। যার মূলকথা হলো জনগণকে উৎপাদন কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত করে তাদেরকে স্বনির্ভর করে তোলা। সরকারের এই মৌলিক চিন্তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ১৯৯১ সালে শিল্প নীতির পাঁচটি মূল লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে, যেমন-
বাংলাদেশের শিল্প
(i) বিদ্যমান শিল্প ইউনিটসমূহের সমস্যা ও সম্ভাবনা পরীক্ষা এবং মূল্যায়নের পর একটি বাস্তবমুখী কর্মসূচি উদ্ভাবন:
(ii) একটি শক্তিশালী ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প এবং গ্রামীণ শিল্পখাত গড়ে তোলা ও উহা সম্প্রসারণ করা; (iii) একটি রপ্তানি কৌশল উদ্ভাবন করে রপ্তানিমুখী শিল্পের খাত গড়ে তোলা ও উহা সম্প্রসারণ করা ; (iv) বিগত শিল্পনীতি ও কৌশলসমূহের ব্যর্থতা ও সমস্যা হতে শিক্ষা গ্রহণ করে একটি লাগসই ব্যবস্থা গ্রহণ;
(v) বিদেশী বিনিয়োগকে দ্রুততর করার জন্য সকল বাধা অপসারণ ।
২। এই শিল্পনীতির মূল লক্ষ্য হলো বিরাজমান জরুরি সমস্যাগুলোর সমাধান এবং একই সঙ্গে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা প্রদান ।
৩। বেসরকারি খাতের আরো দ্রুত বিকাশ এবং অধিক প্রতিযোগিতামূলক বাজার অর্থনীতির প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করা । যেমন-
(i) নিয়মকানুনের জটিলতা হ্রাস;
(ii) আরো উদার ও সামঞ্জস্যপূর্ণ শিল্প কাঠামো গড়ে তোলা;
(iii) প্রতিযোগিতা মূল্য ও সুদের হার বাজার কাঠামোর ভিত্তিতে গড়ে তোলা;
(iv) প্রতিযোগিতামূলক দক্ষ ব্যাংকিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা ।
৪ । দেশে একটি গতিশীল ও প্রতিযোগিতামূলক শিল্প কাঠামো গড়ে তোলার জন্য সমন্বিত নীতির অনুসরণ করা । যেমন-
(i) উপযুক্ত প্রযুক্তি গ্রহণ, উহার সম্প্রসারণ এবং অধিক কর্মসংস্থানের সৃষ্টি;
(ii) রপ্তানি খাত ও আমদানি বিকল্প খাতের প্রসার;
(iii) দেশীয় মালামাল ব্যবহারকারী শিল্পকে উৎসাহ প্রদান;
(iv) উচ্চ ও আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োজনীয় শিল্পসমূহ ক্রমান্বয়ে বর্ধিত হারে মূল্য সংযোজন;
(v) শিল্পের ভৌগলিক প্রসারের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা
৫ । নতুন শিল্প নীতিতে যে কৌশল তুলে ধরা হবে তা দ্বারা যেন সৃজনশীল উদ্যোক্তা সৃষ্টি হয় যা ১৯৮২ এবং ১৯৮৬ সালের শিল্পনীতি ও উহার পরবর্তী কর্মসূচি সফলজনকভাবে অনুসৃত না হওয়ায় উক্ত দুটি শিল্প নীতর লক্ষ্য অর্জিত হয়নি ।
(i) শিল্পের বিকাশ ছিল ধীরগতি সম্পন্ন এবং বিগত নয় বছরে এই খাতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ২.৯ শতাংশ;
(ii) সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতই ছিল অদক্ষ;
(iii) ঋণ খাতে নৈরাজ্য ও বিশৃংখলার জন্য বিনিয়োগ কর্মসূচিকে সংকটময় করে তোলে;
(iv) আর্থিক ও শিল্প বাস্তবায়নে ছিল ব্যর্থতা ।
৬। দেশের শিল্পায়ন কর্মসূচি এবং তার প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহের সাফল্য অন্যান্য ক্ষেত্রের সংস্কারের উপর নির্ভরশীল। এলক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সাথে আলোচনাক্রমে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয় হবে ।
৭। সরকারি খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে পর্যায়ক্রমে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার বর্তমান নীতি ভবিষ্যতেও অনুসৃত থাকবে। সরকারি খাতকে ক্রমান্বয়ে ছোট করা হলেও একে আরো শক্তিশালী করার ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
৮। মানব সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করেই একটি গতিশীল শিল্প কাঠামো গড়ে তোলা ।
৯ । এখন বাংলাদেশে একটি মুক্ত ও উদার পরিবেশ বিরাজমান। এই পরিবেশ কার্যকরভাবে ফলপ্রসু করার জন্য দেশের অর্থনীতিকে বিশ্বের মুক্ত বাজার অর্থনীতির সংগে যথোপযুক্তভাবে সংযুক্ত করার ব্যবস্থা গ্রহণ । বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার সামাজিক অর্থনৈতিক অবকাঠামোতে ব্যক্তি মালিকানাকে অর্থনৈতিক উন্ন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে । ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে এ লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক শিল্প নীতি ঘোষিত হয়। সরকারের এ ঘোষিত শিল্প নীতিতে ব্যক্তি উদ্যোগকে সর্বাধিক গুরুত্ব এবং সমর্থন করা হয়েছে। বিসে ব্যক্তি উদ্যোগ, যৌথ ব্যক্তি মালিকানাধীন উদ্যোগকে সফল করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নতুন রূপে চেকে সাজানো হয়েছে। এর আওতায় ৫টি বৃহৎ ক্ষেত্রকে চিহ্নিত করা হয়েছে, কৃষি ক্ষেত্রও এর একটি। এর আওতায় কীটনাশক, সার, সেচ, সেচযন্ত্রকে ব্যক্তি মালিকানায় দ্রুত ছেড়ে দেয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ কর হয়েছে। পরিবহণ ও যোগাযোগ, ভৌত পরিকল্পনা এবং আবাসন, বাণিজ্য ও অন্যান্য সেবামূলক আর্থিক কার্যক্রম এই নীতির আওতায় পড়ে। এ যাবৎ ব্যক্তি মালিকানায় শিল্প উদ্যোগকে পরিবর্তন করার অগ্রগতির হার শতকরা ২২ ভাগে দাঁড়িয়েছে ।
১৯৯৬ সালের শিল্প নীতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য Aims and Objectives of Industrial Policy of 1996
শিল্প নীতি ১৯৯৬-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ ।
১ । শিল্পখাতের উন্নয়নের মাধ্যমে মোট দেশজ উৎপাদন, আয়, সম্পদ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা; ২। শিল্প স্থাপনে দেশী ও বিদেশী বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা;
৩ । বেসরকারি খাতের উন্নয়নের উপর অধিকতর গুরুত্ব আরোপ করে শিল্পের বিকাশ সাধন এবং সে ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকা নিয়ন্ত্রণমূলক না রেখে সহায়তামুক করা;
৪ । রপ্তানিমূখী রপ্তানি অম্বয়ী (Export linkage) এবং সঠিক আমদানি-বিকল্প শিল্পের উন্নতি সাধন করা; ৫ । ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ উৎসাহ প্রদান করা;
৬। দক্ষ উৎপাদনের মাধ্যমে অত্যাবশ্যকীয় ভোগপণ্যে স্বনির্ভরতা অর্জন করা;
৭ । যথাযথ প্রযুক্তির উন্নয়ন করে শ্রমঘন শিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত করা;
৮ । কৃষিভিত্তিক এবং কৃষি সহায়ক শিল্পের উন্নয়নে উৎসাহ প্রদান করা;
৯। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্পের সুষম বিস্তারে উৎসাহ প্রদান করা;
১০। শিল্পে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা এবং স্থাপিত উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করা;
১১। মধ্যবর্তী এবং মৌলিক শিল্পে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান করা;
১২। রুগ্ন শিল্পের পুনরুজ্জীবন ও পুনর্বাসনের জন্য সম্ভাব্য সুযোগ সৃষ্টি করা;
১৩। সরকারি খাতের ভূমিকা সাধারণভাবে কৌশলগত (strategic) ও ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠা সীমিত
রাখা এবং সরকারি খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি করা;
১৪। শিল্পায়নে পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করা ও পরিবেশ দূষণ রোধ করা । এবং
১৫। শিল্প পণ্যের গুণগতমান উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা অধিকতর কার্যকর করা।

বাংলাদেশের শিল্প নীতি-২০০৫ এর বৈশিষ্ট্যসমূহ Characteristics of Industrial Policy - 2005 of Bangladesh
২০০৫ সালে বাংলাদেশ সরকার একটি শিল্প নীতি ঘোষণা করে। পূর্বের শিল্প নীতিগুলোর সম্পূর্ণ ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয় এই শিল্প নীতিতে। ২০০৫ সালের শিল্প নীতির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল ।
(ক) বিশেষ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা;
(খ)তৈরি পোশাক ও বস্ত্রশিল্প খাতকে অগ্রাধিকার প্রদান;
(গ) রুগ্ন শিল্পের পুণর্বাসন ও উন্নয়ন এবং
(ঘ) কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পের বিকাশ ।
বাংলাদেশের ২০০৫ সালের শিল্প নীতির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ ।
১। বেসরকারিকরণ ঃ ২০০৫ সালের শিল্প নীতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারি মালিকানায় ছেড়ে দেওয়ার নীতি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । এই উদ্দেশ্যে বেসরকারি মালিকদের কর অবকাশ, স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধাসহ বিভিন্ন ধরনের সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয় ।
২। পরিবেশ উন্নয়ন : শিল্পক্ষেত্রে বর্জ্য হ্রাস, বর্জ্য অপসারণ এবং সর্বোপরি পর্যায়ক্রমে দূষণমুক্ত পণ্য উৎপাদন করার লক্ষ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে সরকারের পক্ষ থেকে সম্ভব সবধরনের সহযোগিতা প্রদানের সিদ্ধান্ত হয় ।
৩। আমদানি বিকল্প শিল্প স্থাপন : আমদানি ব্যয় কমানো এবং স্থানীয় বাজারে শিল্প পণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আমদানি বিকল্প শিল্প স্থাপনের উপর জোর দেওয়া হয়েছে । আমদানি বিকল্প শিল্পের দক্ষতা ও সক্ষমতাকে অধিকতর শক্তিশালী ও উৎসাহিত করা হয় ।
৪। রূগ্ন শিল্পের পুনর্বাসন ও উন্নয়ন : ২০০৫ সালের শিল্প নীতিতে রুগ্ন শিল্পের পুনর্বাসন ও উন্নয়ন করার লক্ষ্যে স্থানীয় বাজারে রুগ্ন শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা নিরুপনের উদ্দেশ্যে সমীক্ষা কর্যক্রম গ্রহণ করা হয়। একই সাথে রুগ্ন শিল্পের উৎপাদন খরচ কমানোর লক্ষ্যে কার্যকর ব্যয় পদ্ধতি প্রয়োগসহ গুণগত মানোন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় ।
৫ । অবকাঠামোগত উন্নয়ন : বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, বন্দরের ব্যবহার, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, ব্যাংকিংখাত এবং মানবসম্পদ উন্নয়নসহ সার্বিক অবকাঠামোর উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় । এসব খাতে বেসরকারি বিনিয়োগকেও উৎসাহিত করা হয় ।
৬। অর্থনৈতিক জোন গঠন : ২০০৫ সালের শিল্প নীতিতে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন (special economic zone) গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । এর উদ্দেশ্য হচ্ছে স্থানীয় সম্পদের ব্যবহার বাড়ানো এবং অঞ্চল ভিত্তিক সম্পদকে কেন্দ্র করে শিল্প প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা ।
৭। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পকে অগ্রাধিকার : দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে বিশেষ অবদান রাখার কারণে ২০০৫ সালের শিল্প নীতিতে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পখাতকে অগ্রাধিকার খাত হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে ।
পাম পোশাক পক ও কৃষি সহায়ক শিল্প স্থাপন
৮। কৃষিভিত্তিক শিল্প ঃ এবং এর ক্রমবিকাশকে উৎসাহিত করার জন্য আর্থিক, কারিগরি, প্রযুক্তগত ও অবকাঠামোগত সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় । বিশেষ করে কোল্ড স্টোরেজ, পোল্ট্রি খামার, মৎস্য ও হ্যাচারী শিল্প স্থাপন ইত্যাদি কৃষিভিত্তিক শিল্পের উপর জোর দেওয়া হয় ।
৯। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ঃ শিল্পখাতে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য ২০০৫ সালের শিল্প নীতিতে মানব সম্পদ উন্নয়নের পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তি ও কারিগরি জ্ঞানের ব্যাপক ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
১০। বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদন ও দেশে ব্যাপক ভিত্তিতে সৌরশক্তি ও বিভিন্ন মিউনিসিপ্যাল গার্বেজ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প পরিচালনায় বিষয়ে প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে।
১১ । উৎপাদন ক্ষমতার ব্যবহার ঃ শিল্পক্ষেত্রে বিদ্যমান উৎপাদন ক্ষমতার সর্বাত্মক ব্যবহার নিশ্চিত করার সকল প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে এই শিল্প নীতিতে। বিশেষ করে অবকাঠামোগত অপ্রতুলতার কারণে উৎপাদন ক্ষমতার সর্বাত্মক ব্যবহার যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার ব্যবস্থা গৃহীত হয়।
১২। পণ্যের সংরক্ষণ ৪ বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য যাতে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সংরক্ষণ ও বাজারজাত করা যায় সেই লক্ষ্যে হিমায়িত, পাস্তুরিত কৌটাজাত কিংবা শুষ্ক খাদ্য হিসাবে শিল্পজাত বা প্রক্রিয়াজাত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় । যাতে দেশে এসব শিল্পে উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে আধুনিক ও মান সম্পন্ন সংরক্ষণ পদ্ধতির উন্নয়ন করে সারা বছরই বাজারে সরবরাহ ও বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভবপর হয়। ১৩। অর্থকরী শিল্প স্থাপনের ব্যবস্থা : দেশে যেসব প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ রয়েছে বিশেষ করে গ্যাস, কয়লা, কঠিন শিলা, চুনাপাথর এবং বিস্তীর্ণ বেলাভূমিতে বিদ্যমান সিলিকন, মোনাজাইট, জিরকন, রুটাইল, ঝিনুক, মুক্তা, প্রবাল, জীবাশ্ব, সামুদ্রিক শৈবাল ইত্যাদির যথোপোযুক্ত ব্যবহার করে যাতে নতুন নতুন অর্থকরী শিল্প স্থাপন সম্ভব হয় সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে শিল্পনীতি-২০০৫ এ।
১৪ । বৈদেশিক বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান ঃ প্রযুক্তি হস্তান্তর, দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন এবং বাজারজাতকরণের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০৫ সালের শিল্প নীতিতে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হয়েছে।
১৫। পুঁজি বাজারের উন্নয়ন : শিল্পনীতি-২০০৫ এ শক্তিশালী পুঁজিবাজার গঠন এবং শেয়ার বাজারের উন্নয়নে সরকারের সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয় ।
১৬। শিল্প পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ ঃ ইতোমধ্যেই দেশে বেশ কিছু সরকারী শিল্পকারখানা বেসরকারী খাতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এসব শিল্প-উপখাতে অর্থনৈতিকভাবে সম্ভাবনাময় শিল্প কারখানা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে শিল্প পার্ক স্থাপনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ।
১৭। মূলধন বাজার সম্প্রসারণ ও মূলধন সহায়তা : শিল্পোদ্যোক্তাদের পুঁজির স্বল্পতা দূর করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত মূলধন সরবরাহ ও ঋণ সহায়তা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে । তাছাড়া ২০০৫ সালের শিল্প নীতিতে মূলধন বাজার সম্প্রসারণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে ।
উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলো ছাড়াও তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, পণ্যের বহুমুখীকরণ, বিদ্যুত উৎপাদন ইত্যাদির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । তাছাড়া বেসরকারিকরণ ও উদারীকরণ প্রক্রিয়া আরও ত্বারান্বিত করার অঙ্গীকার করা হয়েছে ২০০৫ সালের শিল্প নীতিতে ।
শিল্প নীতি-২০০৫ এর মূল্যায়ন/সমালোচনা
Evaluation/Criticisms of Industrial Policy - 2005

২০০৫ সালের শিল্প নীতিতে বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়নের ব্যাপারে অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা থাকলেও এর বেশকিছু সমালোচনাও রয়েছে। নিম্নে শিল্প নীতি ২০০৫ এর কয়েকটি উল্লেখ সমালোচনা উল্লেখ করা হলো ।
১। শিল্প নীতি-২০০৫ এ যেভাবে ঢালাও বেসরকারীকরণ নীতি প্রস্তাব করা হয়েছে তা বাংলাদেশের বাস্তবতার নিরিখে গ্রহণযোগ্য নয় ।
২। ২০০৫ সালের শিল্প নীতিতে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই শিল্পগুলোর বেশিরভাগ উপকরণ ও কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় বলে আমাদের আমদানি ব্যয় বাড়বে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ পড়বে ।
৩। সরকার লাভজনক শিল্পকারখানা থেকে পুঁজি প্রত্যাহারের যে নীতি ঘোষণা করেছে তা সমর্থনযোগ্য নয় ।
৪ । আমদানী বিকল্পন শিল্পায়ন কৌশল এর পাশাপাশি রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন কৌশলও গ্রহণ করা উচিত ছিল ।
৫। ২০০৫ সালের শিল্প নীতি অনুসারে বেসরকারিকরণ হলে বেসরকারি মালিকেরা শ্রমিক কমচারি ছাঁটাই করা শুরু করবে। ফলে ব্যাপকভাবে বেকারত্ব বাড়বে এবং সামাজিক নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। উপরিউক্ত সমালোচনাগুলো থাকা সত্ত্বেও ২০০৫ সালের শিল্প নীতিতে যে সকল ভালো প্রস্তাব রয়েছে সেগুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে শিল্পায়ন ত্বরান্বিত হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মূল সমস্যা হলো ভালো নীতিমালা ও আইনকানুনের অভাব নেই কিন্তু নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়নটাই হল মূল সমস্যা ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]