ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) Small and Medium Enterprises (SMEs)

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময় একটি খাত। এ খাত অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণে ভূমিকা পালনসহ রপ্তানিযোগ্য উদ্বৃত্ত পণ্য তৈরির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। এ খাতের বিকাশ ও সম্প্রসারণের নিমিত্ত অর্থায়নের ক্ষেত্রে নানাবিধ উদ্যোগের পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাও ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। ফলে এ খাতের প্রচলিত ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক সঞ্চয়ভিত্তিক অর্থায়ন যেমন হচ্ছে, পাশাপাশি ব্যাংক ও ঋণদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ ঋণ সুবিধা নিয়ে এগিয়ে আসছে । বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে পুনঃঅর্থায়ন-এর লক্ষ্যে ৩টি তহবিল পরিচালিত হয়। এগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিল, আইডিএ তহবিল এবং এডিবি তহবিল । তহবিলগুলো ঘূর্ণায়মান পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। জুন ২০১১ তে এডিবি তহবিল-১ এর মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এ তহবিল থেকে বিতরণ বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
২০১১-১২ অর্থবছরের জানুয়ারী, ২০১২ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিল থেকে মোট ১,৬০১.৮২ কোটি টাকা (উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ১৯,০০৯টি), আইডিএ তহবিল থেকে মোট ৩১২.৬১ কোটি টাকা (উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ৩১৬০টি) এবং এডিবি তহবিল থেকে মোট ৪২৬.৩৮ কোটি টাকা (উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ৪,৯৩৪টি) পুনঃঅর্থায়ন করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিলের ক্ষেত্রে মোট উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ১৯,০০৯টির মধ্যে নারী উদ্যোক্তা ৪,৬৮৩ জন এবং পুনঃঅর্থায়নের অঙ্ক মোট ৩৩০.২৯ কোটি টাকা। তিনটি তহবিল থেকে জানুয়ারি, ২০১২ পর্যন্ত মোট ২৭,১০৩টি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে মোট ২,৩৪০.৮ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা প্রদান করা হয়েছে ।
আগেও বাংলাদেশ ব্যাংক। * সেপ্টেম্বর ২০০৯ এ তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এডিবি-১ তহবিল হতে বিতরণ বন্ধ রয়েছে। ** ডিসেম্বর ২০১৩ এ তহবিলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে এডিবি-২ তহবিল হতে বিতরণ বন্ধ রয়েছে।
অন্যান্য ঘূর্ণায়মান পুনঃঅর্থায়ন তহবিল : বাংলাদেশ ব্যাংক তহবিল, আইডিএ ও এডিবি তহবিলের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক-এর তত্ত্বাবধানে অন্যান্য তহবিলও পরিচালনা করা হচ্ছে । এগুলো হলো ।
কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে পুনঃঅর্থায়ন স্কিম ও এ স্কিমের আওতায় কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকে আরো উৎসাহিতকরণের লক্ষ্যে এ খাতে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। ২০১১- অর্থবছরে (জানুয়ারি, ২০১২ পর্যন্ত) ৬টি ব্যাংক ও ১১টি অ-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে মোট ১৪৬.১৯ কোটি টাকা পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। এ পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা ৯৪৮টি উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে প্রদান করা হয়েছে।
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেন এজেন্সি (জাইকা) তহবিল ঃ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে আগাম অর্থায়ন ও পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে জাইকা-এর অর্থায়নে জাইকা আগাম অর্থায়ন ও পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে । বর্তমান অর্থবছরে (২০১১-১২) জাইকা-এর অর্থায়নে “Financial sector project for the development of small and medium sized enterprise-BD-P67" শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। জাইকা তহবিলের আওতায় এসএমই খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ প্রদানের সক্ষমতা (মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি) উন্নয়ন এবং উৎপাদনমুখী এসএমই কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের লক্ষ্যে ৫,০০০ মিলিয়ন জাপনিজ ইয়েন বা প্রায় ৪০০ কোটি টাকা আগাম ও পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা প্রদান করা হবে । প্রাথমিক তহবিল হিসেবে ১,০০০ মিলিয়ন জাপানিজ ইয়েনের সমপরিমাণ অর্থ স্থানান্তরের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত অর্থায়ন ও পুনঃঅর্থায়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন তহবিল সুবিধা এসএমই খাতের উন্নয়নকে আরো বেগবান করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখছে ।
কুটির শিল্প Cottage Industry
কুটির শিল্প বলতে পরিবারের সদস্যদের প্রাধান্য বিশিষ্ট সেসব শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বোঝায় যেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৫ লক্ষ টাকার নীচে এবং পারিবারিক সদস্য সমন্বয়ে সর্বোচ্চ জনবল ১০ জনের অধিক নয়। কুটির শিল্পের মালিকেরা হচ্ছেন ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র পরিবার । প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই এদের মালিকানা “অংশীদারি বা যৌথ” বা রাষ্ট্রীয় মালিকানার মত হয় না। কুটির শিল্পের মালিকরা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সম্পত্তির মত তাদের শিল্পের সঙ্গে জড়িত থাকেন এবং এখানে মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ থাকে। কুটির শিল্পের অধিকাংশ প্রযুক্তি স্থানীয় চরিত্রের এবং দেশের ভেতরেই তা মূলত নির্মাণ ও মেরামত সম্ভব । কুটির শিল্পে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী গ্রামীণ দরিদ্র জনগণের বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। এই শিল্পের প্রাথমিক বিনিয়োগ অধিকাংশ ক্ষেত্রে পারিবারিক সঞ্চয় থেকেই আসে। সম্প্রতি এনজিও কর্তৃক ক্ষুদ্র ঋণ প্রকল্পের বিস্তারের ফলে কুটির শিল্পের জন্য কিছু বিকল্প পুঁজির ঋণের উৎস সৃষ্টি হয়েছে।
ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মধ্যে পার্থক্য Differences between Small and Cottage Industry
ক্ষুদ্র শিল্প : যে শিল্প আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে ক্ষুদ্রায়তন কারখানায় উৎপাদন কার্য পরিচালিত হয় তাকে ক্ষুদ্র শিল্প বলে। কারখানা আইন অনুযায়ী, যে শিল্পে স্থায়ী মূলধনের পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকার কম তাকে ক্ষুদ্র শিল্প বলা হয়।
কুটির শিল্প ও সাধারণ স্বল্প মূলধন ও সহজলভ্য কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি দ্বারা পরিবার ভিত্তিক যে উৎপাদন কার্য পরিচালিত হয় তাকে কুটির শিল্প বলে। বাংলাদেশের কারখানা আইন অনুযায়ী, যে শিল্পে ২০ জন বা এর কম লোক কাজ করে তাকে কুটির শিল্প বলে।
পার্থক্যের বিষয়
১. সংজ্ঞাগত পার্থক্য
ক্ষুদ্র শিল্প কুটির শিল্প স্বল্প মূলধন, কাঁচামাল ও দ্বারা পরিচালিত ছোট স্বল্প মূলধন, স্বল্পসংখ্যক শ্রমিক নিয়ে অপরদিকে, ক্ষুদ্র আয়তনের কারখানা ভিত্তিক যন্ত্রপাতি উৎপাদন ব্যবস্থাকে ক্ষুদ্র শিল্প বলে । আয়তনের পরিবার ভিত্তিক উৎপাদন কার্যক্রমকে কুটির শিল্প বলে ।
২. মালিকানাগত পার্থক্য ক্ষুদ্র শিল্প একক বা যৌথ মালিকানায় অপরদিকে, কুটির শিল্পের মালিক হতে পারে ।
৩. আয়তনগত পার্থক্য ক্ষুদ্র আয়তনের কারখানা উৎপাদকে ক্ষুদ্র শিল্প বলা হয় । সাধারণত গৃহকর্তা বা পরিবারের সদস্যগণ হয়ে থাকে । ভিত্তিক অন্যদিকে, পরিবার ভিত্তিক ক্ষুদ্রায়তন বিশিষ্ট উৎপাদন ব্যবস্থাই হলো কুটির শিল্প ।
৪. অবস্থানগত পার্থক্য ক্ষুদ্র শিল্পের অবস্থান কারখানা ভিত্তিক অপরদিকে,
৫. শ্রমিকের সংখ্যাগত পার্থক্য কুটির শিল্পের অবস্থান পরিবার ভিত্তিক হয় । হতে পারে । ক্ষুদ্র শিল্পে শ্রমিকের সংখ্যা সাধারণত অন্যদিকে, কুটির শিল্পের সাধারণত ২০ ২০ জনের অধিক হয় ।
জনের কম শ্রমিক কাজ করে ।
৬. কারিগরি ও কৌশলগত ক্ষুদ্র শিল্পে উন্নত যন্ত্রপাতির ব্যবহার অন্যদিকে, কুটির শিল্পে সাধারণত পার্থক্য
৭. ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনাগত পার্থক্য সনাতন পদ্ধতিতে উৎপাদন করা হয় । হয়ে থাকে । ক্ষুদ্র শিল্পে ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার অপরদিকে, কুটির শিল্পের ব্যবস্থাপনা ও
জন্য আলাদা জনবল থাকতে পারে ।
পরিচালনা সাধারণত পরিবারের কর্তা দ্বারা বা পরিবারের সদস্য দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় ।

৮ যন্ত্রপাতি ও মুলধনগত ক্ষুদ্র শিল্পে তুলনামূলক উন্নত যন্ত্রপাতি অন্যদিকে, কুটির শিল্পে সনাতন পার্থক্য ও অধিক মূলধন বিনিয়োগ করা । যন্ত্রপাতি প্রয়োগ করা হয় এবং মূলধনের পরিমাণ স্বল্প ।
৯. কর্মসংস্থানগত পার্থক্য ক্ষুদ্র শিল্পে কর্মসংস্থানের সুযোগ কুটির অন্যদিকে, কুটির শিল্প গড়ে উঠে শিল্পের চেয়ে বেশি । পরিবার ভিত্তিক তাই কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সুযোগ তেমন নেই । ক্ষুদ্র শিল্পে বিদ্যুতের ব্যবহারসহ শক্তি অপরদিকে, সাধারণত কুটির শিল্পে শক্তি সম্পদের ব্যবহার বেশি হয়।
১০. শক্তি সম্পদের ব্যবহারগত পার্থক্য
১১. ঋণের সুবিধাগত পার্থক্য হয় ।
১২. বাজারগত পার্থক্য সম্পদের ব্যবহার বিশেষ করে বিদ্যুতের ব্যবহার কম হয় । ক্ষুদ্র শিল্পে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদান করা অপরদিকে, কুটির শিল্পে সাধারণত প্রাতিষ্ঠানিক ঋণ প্রদান করা হয় না । ক্ষুদ্র শিল্পের যোগান বেশি হয় ফলে অন্যদিকে, বাজার সম্প্রসারিত হয় ।
কুটির শিল্পের বাজার সাধারণ সংকীর্ণ হয় ।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তবে কোন কোন কুটির শিল্পকে ক্ষুদ্র শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করা যায় । কিন্তু ক্ষুদ্র শিল্পকে কুটির শিল্পের অন্তর্ভুক্ত করা যায় না । ক্ষুদ্ৰ ও কুটির শিল্পের মধ্যে পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও এ দুটি শিল্পই কাছাকাছি ধারণা দিয়ে থাকে । তাই এদের এক সাথে আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]