যুগের বিবর্তনের সাথে সাথে সারা বিশ্বেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে । সে সাথে মানুষের রুচিতেও পরিবর্তন এসেছে । উৎপাদনকে আরো সহজ ও দ্রুত করার লক্ষ্যে সৃষ্টি করা হচ্ছে মাঝারী ও বৃহদায়ন শিল্প । সংখ্যায় কম হলেও বাংলাদেশে কিছু কিছু এ জাতীয় শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশের অর্থনীতিতে অবাধ বাজার ব্যবস্থা স্বীকৃত থাকায় এ সমস্ত মাঝারী ও বৃহদায়তন শিল্পে ক্রেতার প্রায় সকল ধরনের বস্তুই তৈরি হয়ে থাকে যা পূর্বে কেবল কুটির শিল্পে উৎপন্ন হত। এ অবস্থার মাঝেও বাংলাদেশে কিছু কিছু কুটির শিল্প এখনো টিকে আছে যার বিবরণ নিম্নে দেয়া হলো ।
১। তাঁত শিল্প : বাংলাদেশের কুটির শিল্পের মাঝে তাঁত শিল্প হচ্ছে অন্যতম । তাঁত শিল্পে উৎপাদিত মসলিন শাড়ির সুনাম এক সময় বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল । বর্তমানে এ শাড়ির কোন অস্তিত্ব না থাকলেও রুচিশীল শাড়ি, লুঙ্গী, কিংবা অন্যান্য সামগ্রী উৎপাদনে এ দেশের তাঁত শিল্পের সুনাম সর্বত্রই রয়েছে। তাঁত শিল্পের জন্য বাংলাদেশের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কুমিল্লা, পাবনা, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, ভৈরব, টাঙ্গাইল ও রাজশাহী জেলা বিখ্যাত ।
২। বিড়ি শিল্প : বিড়ি উৎপাদন এবং বিড়ি পান করা স্বাস্থ্যসম্মত না হলেও এদেশে বিড়ি ও পান খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আর্থিক সঙ্গতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে স্বল্প আয়ভুক্ত লোকজন কমদামী বিড়ি
ব্যবহার করে এদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বিড়ি শিল্পের কাজ করে পারিবার পরিপালন করছে। বাংলাদেশের
রংপুর, দিনাজপুর, যশোর, কুষ্টিয়া ও
অন্যান্য স্থানে বিড়ি উৎপাদন কারখানা আছে ।
৩। চরকা শিল্প : চরকা দ্বারা সুতা কাটার নিয়ম বাংলাদেশের নতুন বিষয় নয়। চরকায় কাটা সুতার সাহায্যে বর্তমানে খুব জনপ্রিয় খদ্দর ও বিভিন্ন ধরনের রুচিশীল কাপড় তৈরি হয়। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে রাজশাহী অঞ্চলে গুটি পোকা দ্বারা উৎপাদিত গুটি থেকে সুতা উৎপাদন করে সাধারণ মানুষের ব্যবহারোপযোগী কাপড় তৈরি করা হচ্ছে । ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পোকা থেকে সুতা উৎপাদনের একটি গবেষণা প্রকল্পের কাজ সকলভাবে সমাপ্ত হয়েছে। তবে চরকা শিল্পের জন্য কুমিল্লা, নরসিংদী, টাঙ্গাইল ও রাজশাহী জেলা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।
৪ । চামড়া শিল্প ঃ বাংলাদেশের নানা স্থানে জুতা তৈরি করে বহু লোক জীবিকা নির্বাহ করছে। চামড়ার জুতার চাহিদা দিনে দিনে জনপ্রিয় হওয়ায় চামড়া শিল্পের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সকল শিল্পে জুতা ছাড়াও অন্যান্য রুচিশীল জিনিস উৎপাদন করা হয়। চামড়া শিল্পে কাজ করে এদেশের লক্ষ লক্ষ লোক জীবিকা নির্বাহ করে।
৫। রেশম শিল্প ঃ গুটি পোকা থেকে প্রাপ্ত রেশম দ্বারা উৎপাদিত শাড়ির জনপ্রিয়তা বাংলাদেশের সর্বত্রই রয়েছে । দেশের উত্তরাঞ্চলে বিশেষ করে রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা ও দিনাজপুরে বেশ কিছু রেশম উৎপাদন হয় । রেশন উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হয়েছে । বগুড়া, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ জেলায় গবেষণামূলকভাবে রেশম চাষ সফলতার দ্বারপ্রান্তে এসেছে। রেশমের সুতা থেকে হাতে বুনা চাদর ও অন্যান্য সামগ্রির বেশ চাহিদা রয়েছে ।
৬। বাঁশ ও বেত শিল্প : কুটির শিল্পের মাঝে বাঁশ ও বেত শিল্পটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছে। ঘরোয়া পরিবেশ তৈরি বাঁশ ও বেতের যে কোন পণ্য সকল শ্রেণীর ক্রেতার নিকট জনপ্রিয় । সিলেট, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং বিভিন্ন স্থানে উক্ত সামগ্রী দ্বারা রুচিশীল চেয়ার, মোড়া কিংবা অন্যান্য আসবাবপত্র তৈরি করা হয় ।
৭। শঙ্খ ও ঝিনুক শিল্প : ঝিনুক হতে বোতাম তৈরির প্রচলন এদশের নতুন না হলেও বর্তমানে এর ব্যবহার অনেকাংশ কমেছে । তবে ঝিনুক দ্বারা অনেক রুচিশীল পণ্য উৎপাদন করে সৌখিন ক্রেতাদের ঘর সাজানোর কাজে ব্যবহার করা হয়।
৮। সাবান শিল্প : মানুষের দৈনন্দিন জীবনে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য সাবানের প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করা যায় না । বাংলাদেশের সর্বত্রই সাবান তৈরির ছোট খাট কারখানা রয়েছে । দেশের প্রধান প্রধান শহরগুলোতে সাবান উৎপাদনের কারখানা রয়েছে ।
৯। ছোবা শিল্প : নারিকেলের ছোবার সাহায্যে বিছানার গড়ি, গাড়ির গদি, কিংবা অন্যান্য সামগ্রী উৎপাদন করে এ দেশের বেশ কিছু লোক জীবিকা নির্বাহ করেছে। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল বিশেষ করে বরিশাল, খুলনা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলায় এ শিল্পে নিয়োজিত লোক সংখ্যার পরিমাণ বেশি । ১০। মৃৎ শিল্প ঃ মাটির তৈরি হাড়ি পাতিল, বাসনপত্র, কলস ইত্যাদির এক কালে বেশ প্রচলন ছিল । এ সকল দ্রব্য সামগ্রী উৎপাদন করে একশ্রেণীর লোক বংশানুক্রমে জীবিকা নির্বাহ করত । বাংলাদেশের ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, পাবনা, বগুড়া এবং কুমিল্লা জেলা মৃৎ শিল্পের জন্য বিখ্যাত । কিছু কিছু মৃৎ শিল্পের ব্যবসা এখন বিলুপ্ত হতে চলেছে। মানুষের রুচি পরিবর্তনের কারণে মাটির তৈরি জিনিষের পরিবর্তে
এলুমিনিয়াম ব্যবহারে ক্রেতারা আগ্রহী হওয়ায় মৃৎ শিল্পের চাহিদা দিনে দিনে হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে কলস, ফুলের টব ও অন্যান্য সৌখিন সামগ্রী উৎপাদন করে মৃৎ শিল্পটি বেঁচে আছে। এটেল মাটির দুপ্রাপ্যতা, জ্বালানী সংকট ইত্যাদি পণ্যের উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে বিক্রয় মূল্য কম হওয়ার কারণে শিল্পটির অস্থিত্ব বিলুপ্তির সম্মুখীন হয়েছে ।
১১। কাঠ শিল্প ও মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সাথে গাছের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। গাছ থেকে প্রাপ্ত কাঠ দ্বারা হরেক রকমের মনোরম আসবাবপত্র তৈরি হয়। কাঠের ব্যবহার অনাদিকাল টিকে থাকবে। তাই বাংলাদেশের এক শ্রেণীর লোক এ শিল্পে কাজ করে পরিবার পরিপালন করছে। বর্তমানে কাঠের তৈরি বিভিন্ন আসবাবপত্র বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে। ফলে এ শিল্পের দ্রুত উন্নতি হচ্ছে।
১২। বুনন শিল্প ঃ ঘরোয়া পরিবেশে বুনন শিল্পের কাজ করে এ দেশের অনেক মহিলা অর্থ উপার্জন করছে। সুচ দিয়ে মনোরম নক্সা করা ব্যাগ, কাপড়, অন্যান্য সাজানোর উপকরণ এদেশের সৌখিন ক্রেতাদের আকৃষ্ট করে ।
১৩। কাঁসা শিল্প : নানা সমস্যা জর্জরিত প্রায় দু'শতাধিক বছরের পুরানো নাটোর জেলার কাঁসা শিল্পটি আজ বিলুপ্তির পথে। অতি সৌখিন সরঞ্জাম তৈরি করা হতো বলেই তৎকালীন ধনী ব্যবসায়ীরা কারিগরদিগকে অর্থ যোগান দিত । বর্তমানে পুঁজির অভাবে কাঁসা শিল্পে মন্দা ভাব দেখা দিয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে এলুমিনিয়াম ও স্টেনলেস এর তৈজস পত্র এখন কাঁসার স্থান দখন করেছে ।
১৪ । লোহা শিল্প ঃ লোহা দ্বারা তৈরি দা, কাস্তে, কোদাল কিংবা কৃষির অন্যান্য উপকরণাদি তৈরিতে এদেশের বহু লোক নিয়োজিত রয়েছে ।
১৫। অন্যান্য ঃ উপরিউক্ত শিল্প ছাড়াও এদেশের ঘরে ঘরে নানা পদের ব্যবহার্য জিনিস উৎপাদন হয়। কৃষির বিভিন্ন সরঞ্জাম, সাবান, পাট কিংবা অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রী তৈরি করে এদেশের বহু লোক জীবনযাপন করে ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত