কুটির শিল্প আমাদের গ্রামীন অর্থনীতিকে মজবুদ করার গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির মধ্যে একটি । বেকারদের অবসর সময়ের সামান্য আয় পারিবারিক স্বচ্ছলতা অর্জনের জন্য কুটির শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই কুটির শিল্প উন্নয়নের জন্য ব্যক্তিগত কিংবা দলগত এবং সরকারি উদ্যোগ বাড়ানো প্রয়োজন। দেশকে আধুনিকতার দিকে এগিয়ে নেয়ার বিষয়ে দ্বিমত নেই। তবে উৎপাদনের অংশীদার থেকে কোন শিল্পকে বিরত কিংবা অবলুপ্তির
মাধ্যমে তা করা উচিত নয়। এক সময়ের ঐতিহ্য লালিত এ দেশের কুটির শিল্পকে রক্ষার জন্য নিম্নোক বিষয়সমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে।
১। কাঁচামালের যোগান ও উৎপাদনকে আধুনিক ও রুচিশীল করার জন্য কিছু কিছু যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়।। কারিগরদের চাহিদানুসারে এ সকল যন্ত্রাংশ সহজলভ্য হওয়া বাঞ্ছনীয়। তা ছাড়া কাঁচামালের যোগানও নিশ্চিত করা দরকার। গ্রামের ধনী মহাজনদের দ্বারা যেন এ সকল মালামাল মুজত হতে না পারে তার প্রতি প্রশাসনিক সুদৃষ্টি থাকা আবশ্যক ।
২। বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যাপকতা ঃ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিদ্যুতের বিকল্প নেই। বিদ্যুৎ শক্তির অর্থনৈতিক ব্যবহারের সাথে উন্নয়ন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ভাবে অনুন্নত থাকার বহু কারণগুলোর মাঝে শক্তি সম্পদ হলো একটি। এ দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসমূহ প্রধানত পল্লী অথবা শহরতলীতে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। তা ছাড়া কোন দ্রব্য একান্ত ভাবে ঘরে বসেই তৈরি করা হয়। উভয় ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যবহার নানাভাবে প্রয়োজন হয়। তাই পল্লী বিদ্যুতায়নের কর্মসূচি দ্রুতগতিতে বাস্তবায়ন একান্ত অপরিহার্য ।
৩। মূলধন সরবরাহ ও উন্নয়নের জন্য মূলধন অপরিহার্য। ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগকারীদের পর্যাপ্ত ঋণ প্রদান করা উচিত। তাতে বিনিয়োগকারীরা নিজ নিজ পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি ও উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হবে।
৪। পণ্যের কাঠামোগত পরিবর্তন ও বিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে সাথে মুনাফার রুচিতে এসেছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। এটি একটি অব্যাহত প্রক্রিয়া। কুটির শিল্পকে ক্রেতার রুচি অনুসারে পরিবর্তন ও গতিশীল করা বাঞ্চনীয়। এতে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এ শিল্প পণ্যের চাহিদা অপরিবর্তীত রাখার সুযোগ থাকবে ।
৫। সংরক্ষণ নীতি ও বাংলাদেশের মত উন্নয়শীল দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি তথা শিল্প উন্নয়নের জন্য সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ অপরিহার্য। আভ্যন্তরীণ ভারী শিল্প ছাড়াও আমদানিকৃত বিদেশী পণ্য এ সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। তাই দেশীয় শিল্প উন্নয়নের জন্য সরকারকে বিদেশী পণ্যের উপর অতিরিক্ত কর ধার্য, সীমিত আমদানি ও স্থানীয় বাজারে বিদেশী পণ্য বিক্রি নিরুৎসাহিত করতে হবে। এতে স্থানীয় শিল্পসমূহ বিদেশী পণ্যের জোর প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে পারবে।
৬। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ ও কুটির শিল্পের উন্নয়নের জন্য গ্রামের কারিগরদের প্রশিক্ষণ প্রদান অপরিহার্য। বিভিন্নস্থানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গঠন করে আগ্রহী কারিগরদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করা দরকার। এতে দেশের বেকার যুব সমাজ স্বল্প পুঁজিতে নিজেদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে পারবে।
৭। সমবায় সমিতি গঠন ও কুটির শিল্পের উন্নয়নের জন্য সমবায় সমিতি গঠনের প্রয়োজন রয়েছে। উৎপাদকরা যেন মালিক মহাজনদের দ্বারা শোষিত না হয় সে জন্যই সমিতি গঠন করা উচিত। তা ছাড়া পণ্যের নায্য মূল্য লাভ, সমবায় বাজার সৃষ্টি, কাঁচামাল সংগ্রহ ইত্যাদির জন্য কারিগরদের যৌথ সমবায় থাকা বাঞ্ছনীয় ।
৮। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখার জন্য দেশের শহর ও গ্রামের মধ্যে ভাল যোগাযোগ থাকা উচিত। এতে পণ্য স্থানান্তরের কাজটি খুব দ্রুততার সাথে করা যায়। ফলে বাজারে পণ্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকবে এবং ক্রেতা ও বিক্রেতার মাঝে সমতা বিরাজ করবে। মুদ্রাস্ফীতি রোধসহ দেশের কুটির ও ক্ষুদ্রায়তন শিল্পের উৎপাদনকারীরা নিজ নিজ পণ্যের উপযুক্ত মূল্য লাভ করে অধিক মুনাফার আশায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হবে।
৯। প্রচার ঃ দেশের কুটির শিল্প পণ্যকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্য ব্যাপক প্রচারের প্রয়োজন। দেশে বিদেশের বিভিন্ন বাণিজ্য মেলাতে এ সকল পণ্যের নমুনা প্রদর্শনের মাধ্যমে ক্রেতাদের আগ্রহ সৃষ্টি করাতে হবে । তাছাড়া সরকারি প্রচার মাধ্যমসমূহের দ্বারা প্রচারণা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন ।
১০। নতুন বাজার সৃষ্টি ঃ কুটির শিল্পের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে বাজার সৃষ্টি করা উচিত । দেশের আভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর উদ্বৃত্ত মালামাল নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করার প্রয়োজন আছে। বাংলাদেশের অনেক পণ্যের গুণগত মান ইতোমধ্যে বিদেশী ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে । তাই আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য বিক্রির আশায় সাধারণ কারিগররা আগ্রহী হয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করবে।
১১। বৃহদায়ন শিল্পের প্রতিযোগিতা হ্রাস ঃ কোন একটি জিনিসের চাহিদা কুটির শিল্পের মাধ্যমে পূরণ সম্ভব হলে সেই জিনিস উৎপাদনের জন্য বৃহদায়ন শিল্পকে অনুমতি না দেয়া উচিত। বিশেষ কোন কারণে বৃহদায়তন শিল্প প্রতিষ্ঠা কার হলে সেক্ষেত্রে উৎপাদিত দ্রব্যকে আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রির জন্য উৎসাহিত করা উচিত । এর ফলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পসমূহ প্রতিযোগিতার হাত থেকে পরস্পরকে রক্ষা করবে ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত