Role of EPZ in the Economic Development of Bangladesh
বাংলাদেশের রপ্তানি উন্নয়নের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতি পূরণ, দ্রুত শিল্পায়ন ও সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইপিজেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । নিম্নে সংক্ষেপে ইপিজেড-এর ভূমিকা আলোচনা করা হলো ।
১। EPZ গঠনের মাধ্যমে রপ্তানিমুখী শিল্পসমূহ নানা ধরনের আর্থিক ও প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে । ফলে রপ্তানি শিল্পের দ্রুত প্রসার এবং শিল্পোন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হচ্ছে।
২। EPZ এ. শিল্প স্থাপনকারীদের বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয়। ফলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা শিল্প কারখানা স্থাপনে আগ্রহী হয়। এতে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায়। ফলে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হয়।
৩।.EPZ এ যেহেতু শিল্পের বা কারখানার উৎপাদনের উপযুক্ত পরিবেশ বিরাজ করে, সেহেতু দেশী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসে । ফলে রপ্তানিযোগ্য দ্রব্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটে ।
৪ । EPZ এর মাধ্যমে আমাদের দেশে বিদেশি মূলধন, উন্নত উৎপদান কৌশল ও দক্ষ কারিগরদের আগমন ঘটে, যা আমাদের শিল্পোন্নয়নের জন্য খুবই প্রয়োজন ।
৫ । EPZ এর ফলে প্রচুর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। ফলে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা অনেকটা সমাধান করা সম্ভব হয় ।
৬। EPZ প্রতিষ্ঠার ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।
৭ । EPZ এর মাধ্যমে আমাদের দেশীয় শ্রমিকরা বিদেশি দক্ষ শ্রমিকদের সংস্পর্শে দক্ষ হয়ে উঠে
ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায় ।
৮। EPZ প্রতিষ্ঠার ফলে দেশের অবকাঠামোগত উন্নতি সাধিত হয় । এর ফলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত হয় ।
৯ । EPZ এর কারখানায় নিয়োজিত শ্রমিক কর্মচারীদের জন্য বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেমন- দোকান-পাট, উন্নত হোটেল, পার্ক, সিনেমা হল ও বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠে, যা নগরায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে ।
১০। EPZ এর আশে-পাশে অনেক ছোট ছোট শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে । ফলে শিল্পায়নের পথ প্রশস্ত হয় । উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, বাংলাদেশে EPZ এর ভূমিকা অর্থনৈতিক উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে EPZ এ বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ রক্ষা করতে পারলে ভবিষ্যতে আরো সুফল পাওয়া যাবে। EPZ এ বিনিয়োগের পরিবেশসহ আইন শৃংখলা রক্ষা করতে পারলে দেশের শিল্পায়ন ও রপ্তানিতে এ সংস্থা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে ।
সরকার দেশের সুষ্ঠু শিল্পায়ন প্রক্রিয়াকে অধিকতর শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে (এসএমই) অগ্রাধিকার খাত ও শিল্পায়নের চালিকা শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে প্রদত্ত সকল সুযোগ-সুবিধা শিল্পনীতিতে সন্নিবেশিত হয়েছে। দেশব্যাপী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠার বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা ও কৌশলগত সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার একটি পৃথক নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে । এছাড়াও বর্তমান শিল্পনীতিতে অধিক হারে মহিলা শিল্পোদ্যোক্তা সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু শিল্পায়নে মহিলা শিল্পোদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণের বিষয়টিকে যথেষ্ট প্রাধান্য দেয়া হয়েছে ।
বৃহৎ শিল্প
Large Industry
যে সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে স্থায়ী সম্পদের মূল্য প্রতিস্থাপন ব্যয়সহ ৩০ কোটি টাকার অধিক এবং ২৫০ জনের বেশি শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে, সেগুলোকে বলা হয় বৃহৎ শিল্প। অন্যভাবে বলা যায়, যে শিল্প প্রতিষ্ঠানে বহুসংখ্যক শ্রমিক, প্রচুর কাঁচামাল, অধিক মূলধন, আধুনিক যন্ত্রপাতি ও কলা কৌশল প্রয়োগ করে বিপুল পরিমাণ দ্রব্য উৎপাদন করা হয়, তাকে বৃহৎ শিল্প বলে । যেমন- পাট শিল্প, বস্ত্র শিল্প, সার শিল্প, চিনি শিল্প, কাগজ শিল্প, লৌহ ও ইস্পাত শিল্প ইত্যাদি ।
বৃহৎ শিল্পের বৈশিষ্ট্যসমূহ
১। বৃহৎ শিল্প সাধারণত পুঁজিঘন (Capital intensive) প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে । তাই বৃহৎ শিল্পের প্রযুক্তি অনেকটাই বিদেশ নির্ভর ।
২। ২৫০ জনের অধিক শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে এবং স্থায়ী মূলধনের পরিমাণ ৩০ কোটি টাকার অধিক । ৩। বাংলাদেশে বৃহৎ শিল্পের মালিকানা দু'ধরনের হয়ে থাকে । যেমন- ব্যক্তিগত ও রাষ্ট্রীয়। তবে বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে যৌথ মালিকানা (Corporate ownership) বা রাষ্ট্রীয় মালিকানার উপস্থিতি অপেক্ষাকৃত অধিক ।
৪ । বৃহৎ শিল্পের একটি বড় অংশের বিনিয়োগ তহবিল সাধারণত আধুনিক ব্যাংক ঋণ বা শেয়ার বাজার থেকে সংগৃহীত হয় ।
৫ । বৃহৎ শিল্পে উৎপাদিত পণ্য প্রধানত ধনী ক্রেতারা ক্রয় করে থাকেন। এসব শিল্পের উৎপাদনের বৃহৎ অংশ হয় শহরে অথবা বিদেশি বাজারে বিক্রি/রপ্তানি হয়ে থাকে ।
তে বৃহৎ শিল্পের গুরুত্ব
Importance of Large Scale Industries in Bangladesh
বৃহৎ বা বৃহদায়ন শিল্প বলতে বড় ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বুঝায় । বাংলাদেশের শিল্প আইন অনুসারে, “যে শিল্পকারখানায় শ্রমিকের সংখ্যা ২৫০ জনের বেশি (সেবামূলক শিল্পের ক্ষেত্রে ১০০ জন), তাকে বৃহদায়তন শিল্প বলে ।” বৃহৎ শিল্পের উন্নয়ন ছাড়া কোন দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয় এ সত্যটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইংল্যাণ্ড, জাপান, ইতালি, জার্মানি প্রভৃতি দেশের উন্নয়নের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে উপলব্ধি করা যায়।
তে বৃহৎ শিল্পের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করা হল ।
প্রয়োজন। বাংলাদেশে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, যার পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ১। প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার ও প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য শিল্পোন্নয়ন
ঘটাতে শিল্প উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন ।
২। কৃষি উন্নয়ন ও বাংলাদেশে দ্রুত কৃষি উন্নয়নে বৃহৎ শিল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ, শিল্পোন্নয়ন ব্যতীত কৃষির আধুনিকারণ মোটেও সম্ভব নয়। কৃষির আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় আধুনিক যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার, প্রভৃতির যোগান শিল্পোন্নয়নের উপর নির্ভরশীল।
৩। বেকার সমস্যা সমাধান : বাংলাদেশের প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী বেকার। এই বিশাল বেকার সমস্যা সমাধান করা একমাত্র দ্রুত শিল্পায়নের মাধ্যমে সম্ভব।
৪। কৃষির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস ঃ বাংলাদেশে প্রতি বছরই প্রায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন অত্যন্ত অনিশ্চিত থাকে । অর্থনীতির সার্বিক উন্নয়নের জন্য কৃষির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করে বাংলাদেশকে শিল্পায়িত করে গড়ে তোলা প্রয়োজন ।
৫। ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠা : দ্রুত শিল্পোন্নয়নের জন্য দেশের অভ্যন্তরে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি উৎপাদনের জন্য ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন, যা স্থাপিত হলে বিদেশের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রাও বেঁচে যাবে ।
"
৬। জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ঃ জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি এবং জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার লক্ষ্যে দেশে বৃহৎ শিল্পের দ্রুত উন্নয়ন সাধান করা প্রয়োজন ।
৭। লেনদেন ভারসাম্যের প্রতিকূলতা দূরীকরণ ঃ আমাদের দেশের রপ্তানি বাণিজ্য কতিপয় 'কাঁচামালের উপর নির্ভরশীল। এ সমস্ত পণ্যের দাম বিশ্ববাজারে প্রায়ই ওঠানামা করে । এক্ষেত্রে রপ্তানিমুখী শিল্প স্থাপন করে লেনদেন ভারসাম্য অনুকূল করা যায় ।
৮। পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঃ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য উন্নত পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম । পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করতে হলে প্রয়োজনীয় যানবাহন ও সরঞ্জামাদি দেশের অভ্যন্তরে শিল্প কারখানার উৎপাদন করতে হবে ।
৯। শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা : শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অর্জনের জন্য বিপুল পরিমাণ অত্যাধুনিক অস্ত্র-শস্ত্র ও যানবাহনের প্রয়োজন । এসব অস্ত্র-শস্ত্রের জন্য সর্বদা বিদেশের উপর নির্ভর না করে দেশের অভ্যন্তরেই শিল্প কারখানা প্রস্তুত করার লক্ষ্যে ভারী শিল্প স্থাপন করা প্রয়োজন ।
১০। স্থিতিশীল অর্থনীতি ঃ কৃষি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল বলে তা স্থিতিশীল অর্থনীতি নির্দেশ করে
না । সেই প্রেক্ষিতে শিল্প নির্ভর অর্থনীতি স্থিতিশীল অর্থনীতি হয়ে থাকে ।
১১ । আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন : বাংলাদেশের আবাদযোগ্য জমির স্বল্পতা, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার উচ্চ হওয়ায় এই বিশাল আয়তনের জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন দ্রুত শিল্পোন্নয়নের উপর নির্ভরশীল।
১২। জীবযাত্রার মান উন্নয়ন ঃ বাংলাদেশে প্রায় ৩১.৫% মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করে জনগণের জীবযাত্রার মান উন্নত করতে হলে অবশ্যই শিল্পোন্নয়নের উপর নির্ভরশীল হতে হবে ।
১৩। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঃ যদিও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ খাত কৃষি কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দামের উত্থান-পতন প্রভৃতি নানা অনিশ্চয়তার কারণে দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের জন্য শিল্পোন্নয়নের কোন বিকল্প নেই ।
১৪। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও স্বল্পমূল্য কৃষিজাত পণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা প্রত্যাশিত পরিমাণে তথা বেশি পরিমাণে অর্জন করা যায় না। কিন্তু শিল্পোন্নয়ন সম্ভব হলে শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব হয় ।
8
১৫। স্বনির্ভরতা অর্জন ও বর্তমানে বিপুল পরিমাণ শিল্পজাত দ্রব্য বিদেশ থেকে আমদানি করার কারণে কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা বিপুল পরিমাণে আমাদের অপচয় হচ্ছে। এছাড়াও শিল্পপণ্যের জন্য আমরা বিদেশের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। এ প্রেক্ষিতে যদি আমরা নিজ দেশেই প্রয়োজনীয় শিল্প স্থাপন করতে পারি, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রার অপচয়সহ নানা ধরনের সংকট লোপ পাবে ।
উপসংহারে বলা যায়, শুধুমাত্র কৃষির উপর নির্ভর করে অর্থনৈতিক অগ্রগতি সম্ভব নয় । বাংলাদেশে শিল্পোন্নয়ন ঘটলে কৃষির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে এবং কাঁচামালের উপযুক্ত ব্যবহার ও পণ্যাদির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে । এছাড়াও শিল্পোন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, জাতীয় ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাবে এবং জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে ।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত