বাংলাদেশের পাট শিল্পের বর্ণনা বাংলাদেশের পাট শিল্পের সমস্যাবলি

Description of Jute Industries in Bangladesh
বাংলাদেশ বিশ্বের প্রধান পাট উৎপাদনকারী দেশ হলেও ১৯৫১ সালের আগে এ দেশে কোন পাট শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়নি । অথচ এ দেশের পাটের ওপর নির্ভর করে তখন ভারতে ১০৬টি এবং যুক্তরাজ্যে অনেকগুলো পাটকল গড়ে উঠেছিল। ১৯৫১ সালের ডিসেম্বর মাসে ১০০০ তাঁত বিশিষ্ট এক নম্বর আজমজী পাটকল স্থাপিত হয়। ১৯৫২ সালে আরও ৬০০০ তাঁত প্রতিষ্ঠা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। যা সম্প্রতি বন্ধ ও বিলুপ্ত করা হয়েছে । ১৯৭০/৭১ সালে বাংলাদেশে পাটকলের সংখ্যা দাঁড়ায় ৬৮-তে এবং লুমের সংখ্যা দাঁড়ায় ২৩,৭৮১ তে । ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী এ দেশের সকল পাটকল জাতীয়করণ করা হয় ।
গুরুত্ব ঃ পাট শিল্প বাংলাদেশের প্রধান শিল্প । বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৪.৪৩ শতাংশ পাট ও পাটজাত দ্রব্য হতে আসে। এ শিল্পে প্রায় ৩ লক্ষ শ্রমিক কর্মী ও ব্যবসায়ী প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নিয়োজিত রয়েছে । তন্মধ্যে স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ১৪ হাজার । এ ছাড়া বাংলাদেশের পাট চাষের সাথে প্রায় ১৫ লক্ষ লোক নিয়োজিত থেকে তাদের জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে। মোটকথা দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বেকার সমস্যা সমাধান, জাতীয় আয় বৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি, তথা দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে পাট শিল্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
পাট শিল্প গড়ে উঠার কারণ ঃ যে সমস্ত প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক কারণে বাংলাদেশে পাট শিল্প গড়ে ওঠেছে নিম্নে তার বর্ণনা দেওয়া হলো ।
১। প্রাকৃতিক কারণ
(ক) পর্যাপ্ত কাঁচামাল প্রাপ্তি ঃ বাংলাদেশের পাট শিল্প সমৃদ্ধির অন্যতম প্রধান কারণ হলো এ দেশে উন্নতমানের ও গুণের প্রচুর পাট উৎপাদিত হয়। ফলে কাঁচামালের পর্যাপ্ততার কারণে এ দেশে পাট শিল্প গড়ে ওঠেছে 1 (খ) শক্তি সম্পদ : বাংলাদেশ পাট শিল্পে উন্নতির অন্যতম কারণ হলো শক্তি সম্পদের সহজলভ্যতা, তন্মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ প্রধান ।
(গ) জলবায়ু ঃ বাংলাদেশের উষ্ণ ও আর্দ্র জলাবায়ু পাট শিল্প গড়ে উঠার বিশেষ সহায়ক ।
২। অর্থনৈতিক কারণ
(ক) সুলভ শ্রমিক সরবরাহ ঃ বাংলাদেশে প্রচুর সুলভ শ্রমিক পাওয়া যায়। যা এ দেশের পাট শিল্পের উন্নতির সহায়ক।
(খ) পরিবহণ ব্যবস্থা ঃ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাট উৎপাদিত হয় । নৌপথে অতি সহজে ও অল্প খরচে শিল্পকেন্দ্রে আনা যায় বলে পাট শিল্প নৌ-পরিবহণের সুবিধাজনক স্থানে গড়ে ওঠেছে। এছাড়া রেল ও সড়কপথেও পাট শিল্পকেন্দ্রগুলোর সাথে দেশের সকল এলাকার এবং রপ্তানি কেন্দ্রের উত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।
(গ) বাজার ঃ বাংলাদেশের উৎপাদিত পাট ও পাটজাত দ্রব্যের গুণ ও মান বিশ্বে সর্বোৎকৃষ্ট । এছাড়া এর উৎপাদন ব্যয়ও অত্যন্ত কম। ফলে বিশ্ববাজারে এর চাহিদা বেশি। যা এ দেশের পাট শিল্পের উন্নতির
অন্যতম কারণ ।
(ঘ) মূলধন ৪ এ দেশে পাট শিল্পের উন্নতির অন্যতম কারণ হলো সরকারি ও ব্যক্তিগত উৎস হতে প্রচুর মূলধন সরবরাহ ।
পাট শিল্প ও এর বণ্টন : বাংলাদেশে বর্তমানে ৭৭টি পাটকল আছে। তন্মধ্যে সরকারের বিজাতীয়করণ নীতির আওতায় এ পর্যন্ত ৪২টি পাটকল বেসরকারি খাতে হস্তান্তর করা হয়। ২০০৯-১০ সালে বাংলাদেশের চালু ৭৪টি পাটকলের সংযোজিত মোট তাঁতের সংখ্যা ছিল ১৪,৫৭০ এবং চালু তাঁতের সংখ্যা ছিল ১৪,৩৪০ । বর্তমানে পাট শিল্পে ১ লক্ষ ২০ হাজার স্থায়ী শ্রমিক এবং প্রায় ২৫ হাজার কর্মচারী রয়েছে। এছাড়া প্রায় ৬০ হাজার বদলি ও অস্থায়ী শ্রমিক এ শিল্প নিয়োজিত রয়েছে ।
পাট শিল্প আলোচনার জন্য বাংলাদেশকে মোট ৪টি অঞ্চলে ভাগ করা যায় । যথাঃ
১। ঢাকা অঞ্চল ঃ বাংলাদেশের মোট ৭৭টি পাটকলের মধ্যে ৩৯টি ঢাকা অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত। তন্মধ্যে এ অঞ্চলে এবং বাংলাদেশের প্রধান পাটকেন্দ্র হলো নারায়নগঞ্জে । তদুপরি কঞ্চন, ডেমরা, পলাশ, টঙ্গী, কাঁচপুর, নরসিংদী ও ঘোড়াশা ও পাটশিল্প গড়ে উঠেছে। এছাড়া কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব বাজারে ২টি, জামালপুরের সরিষাবাড়িতে এবং মাদারিপুর জেলায় ১টি করে পাটকল রয়েছে ।
২। চট্টগ্রাম অঞ্চল ঃ পাট শিল্পে চট্টগ্রাম অঞ্চল বাংলাদেশে দ্বিতীয়। এ অঞ্চলে ২০টি পাটকল, রয়েছে, এর মধ্যে একমাত্র চট্টগ্রাম জেলাতেই ১৬টি পাটকল অবস্থিত। চট্টগ্রাম জেলার পাট শিল্প কেন্দ্রগুলো হলো ষোলশহর, সীতাকুণ্ডু, বারবকুণ্ডু, ফৌজদার হাট, কেশবপুর ও কালুর ঘাট। এছাড়া নোয়াখালী জেলার চৌমুহনীতে একটি এবং চাঁদপুর জেলার চাঁদপুরে ২টি ও হাজীগঞ্জে একটি পাটকল রয়েছে ।
৩। খুলনা অঞ্চল : খুলনা বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পাট শিল্প এলাকা। এ অঞ্চলে মোট পাটকলের সংখ্যা ১৫টি। এরমধ্যে একমাত্র খুলনা জেলাতেই ১১টি অবস্থিত। বাকি ৪টি পাটকল যশোর জেলায় কেন্দ্রীভূত রয়েছে। খুলনা জেলার পাটকলগুলো আটরা, দৌলতপুর ও খালিশপুরে কেন্দ্রীভূত হয়েছে । এদের মধ্যে ক্রিসেন্ট জুট মিলস, পিপলস জুট মিলস, দৌলতপুর জুট মিলস, স্টার জুট মিলস ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য । যশোর জেলার পাটকলগুলো নোয়াপাড়ায় অবস্থিত। খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ করে ।
৪। রাজশাহী অঞ্চল : রাজশাহী অঞ্চল পাট শিল্পে অত্যন্ত অনুন্নত। এ অঞ্চলে মাত্র তিনটি পাটকল আছে । এদের মধ্যে দু'টি রাজশাহীতে এবং অপরটি সিরাজগঞ্জে অবস্থিত ।
পাট শিল্পের উৎপাদিত সামগ্রী : পূর্বে বাংলাদেশের পাট শিল্পসমূহে নির্দিষ্ট কয়েকটি পণ্যসামগ্রী তৈরি করা হলেও বর্তমানে উৎপাদন ক্ষেত্রে বৈচিত্র আনয়ন করা হয়েছে। পাট শিল্পে উৎপাদিত সামগ্রী হচ্ছে চট, থলে, বস্তা, দড়ি, সুতলি, কাছি ইত্যাদি। এছাড়া কার্পেট, ত্রিপল, ক্যানভাস, তাঁবু ইত্যাদিও পাট হতে উৎপাদন করা হয় ৷
তদুপরি ব মানে বাংলাদেশের পাটকলগুলোতে পর্দার কাপড়, জায়নামাজ, গালিচা, উল, রেশম, লিনোলিয়াম, পাটের সুতা, জিওজুট, কটন ব্যাগিং, নার্সারী পাট, ফাইল কভার, হেসিয়ার স্যাকিং ও সেলুলেজ উৎপাদন করা হচ্ছে ।
.পাটজাত দ্রব্যের বাণিজ্য : বাংলাদেশ বিশ্ব বাজারে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের অন্যতম বিক্রেতা । বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৪.৪৩ ভাগ কাঁচাপাট ও পাটজাত দ্রব্য হতে আসে ।
শিল্পপণ্য হিসেবে পাটজাত দ্রব্য হতে আয় (মিলিয়ন মার্কিন ডলার)
২০১৩-২০১৪ সালে পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রায় ৪৫৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। বৃটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া, জাপান, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, বেলজিয়াম, কানাডা, ইতালি, জার্মানি, মায়ানমার,
লিবিয়া, মিশর প্রভৃতি দেশ বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ক্রেতা ।
বাংলাদেশের পাট শিল্পের সমস্যাবলি Problems of Jute Industries in Bangladesh
বাংলাদেশ পাট উৎপাদনে বিশ্বে প্রথম এবং মেস্তা জাতীয় পাটসহ বিশ্বে তৃতীয় স্থানের অধিকারী হলেও এ দেশের পাট শিল্প কতিপয় সমস্যার সম্মুখীন। এ সকল সমস্যাবলি জন্য একদিকে যেমন পাট শিল্পের উৎপাদন কমে যাচ্ছে, অপরদিকে এর উৎপাদন ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের পাট শিল্পের সমস্যাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো ।
১। তুলনামূলক কম মূল্য ঃ বাংলাদেশে পাট অপেক্ষা ধান ও অন্যান্য শস্যের বিক্রয় অনেক বেশি। ফলে কৃষকগণ পাট চাষ ছেঁড়ে অন্যান্য ফসল উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছে ।
২। আধিপত্য হ্রাস : পাট উৎপাদনে বাংলাদেশ, ভারত ও চীন হতে প্রবল প্রতিযোগিতা সম্মুখীন হচ্ছে এবং দিন দিন এর আধিপত্য হ্রাস পাচ্ছে। পাট ও মেস্তা উৎপাদনে বর্তমানে ভারত প্রথম ও চীন দ্বিতীয় । এছাড়া থাইল্যান্ড, মায়ানমার, ব্রাজিল, নেপাল, তাইওয়ান প্রভৃতি দেশেও পাটের আবাদ শুরু হয়েছে।
৩। পাটকল স্থাপন : ভারত এবং চীন ছাড়াও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বিশেষ করে পাকিস্তান, মালেয়শিয়া, তুরস্ক ও ইরানে পাটকল স্থাপিত হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
৪ । খাদ্য ঘাটতি : বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান খাদ্য ঘাটতি এ দেশের কৃষিকদিগকে অধিকমাত্রায় ধান উৎপাদনে উৎসাহিত করছে । ফলে দেশের পাটের আবাদি জমি মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে ।
৫। কৃত্রিম আঁশের ব্যবহার ঃ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশ পাটজাত দ্রব্যের পরিবর্তে কৃত্রিম আঁশের ব্যবহার শুরু করেছে । বর্তমানে বিশ্ববাজারে পাটের বিকল্প হিসেবে হেম, শিসাল, রেসীন, কোনোফ, কাগজ, কাপড়, পলিথিন ব্যাগ, সিনথেটিকস প্রভৃতির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের পাটজাত দ্রব্যাদির ব্যবহার সংকুচিত হয়েছে।
উল্লিখিত কারণগুলো ছাড়াও খুচরা যন্ত্রপাতির অভাব, মূলধনের অভাব, দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, শ্রমিক অসন্তোষ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, পরিবহনের অভাব এবং সর্বোপরি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবে বাংলাদেশে পাট শিল্পের দিন দিন অবনতি ঘটছে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]