বাংলাদেশের কাগজ শিল্পের বর্ণনা শিল্পের সমস্যা শিল্পের উন্নতির উপায়


৮.৪৭ বাংলাদেশের কাগজ শিল্পের বর্ণনা
Description of Paper Industries of Bangladesh
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় বাংলাদেশে কোন কাগজ কল ছিল না। ফলে বিদেশ হতে আমদানিকৃত কাগজ দ্বারা দেশের চাহিদা পূরণ করা হতো। ১৯৫৩ সালে পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন সংস্থার উদ্যোগে পার্বত্য চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীর তীরে চন্দ্রঘোনা নামক স্থানে বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও বৃহত্তম কর্ণফুলি কাগজ কল স্থাপিত হয়। এরপর ১৯৫৯ সালে খুলনার খালিশপুরে সুন্দরবনের গেওয়া কাঠের উপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের প্রথম নিউজপ্রিন্ট মিল স্থাপিত হয়। এটি আপাতত বন্ধ আছে। এর ১০ বছর পর ১৯৬৯ সালে পাবনার পাকশীতে উত্তরবঙ্গ কাগজ কল নামে আরও একটি কাগজ কল স্থাপন করা হয়। ১৯৭৫ সালে সুরমা নদীর তীরে সিলেটে প্লাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস স্থাপন করা হয়। এর ফলে বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রকার কাগজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে। এ চারটি কাগজের কলসহ বাংলাদশে বর্তমানে মোট ২০টি (সরকারি ও বেসরাকরি) কাগজ ও বোর্ড কারখানা স্থাপিত হয়েছে। এদের মধ্যে ৮টি কাগজ ও বোর্ড কারখানা উল্লেখযোগ্য ।
কাগজ শিল্প গড়ে ওঠার ক" " ারণসমূহ ঃ নিম্নে বাংলাদেশের কাগজ শিল্প গড়ে উঠার অনুকূল ভৌগলিক কারণসমূহ বর্ণনা করা হলো ।
১। সুলভ শ্রমিক সরবরাহ : বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় কাগজ শিল্পের প্রয়োজনীয় প্রচুর দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক সুলভে পাওয়া যায়।
২। শক্তি সরবরাহ ঃ কাগজ শিল্পে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যায় বলে কাগজ শিল্প সমৃদ্ধি লাভ করেছে ।
৩। কাঁচামালের প্রায়ুর্যতা ঃ কাগজ প্রস্তত করার কাঁচামাল তথা বাঁশ, নরম কাঠ, ঘাস, আখের ছোবড়া, খড়, পাট ও পাটখড়ি, পুরাতন কাগজ ও কাপড় ইত্যাদি বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় । ফলে বিভিন্ন প্রকার কাঁচামালের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের বিভিন্নাঞ্চলে ৮টি কাগজ ও বোর্ড মিলস গড়ে উঠেছে ।
৪। প্রচুর মিঠা ও স্বচ্ছ পানি : কাগজ মণ্ড তৈরির জন্য প্রচুর মিঠা ও স্বচ্ছ পানির প্রয়োজন । বাংলাদেশে প্রচুর স্বচ্ছ ও মিঠা পানি পাওয়া যায় ।
৫। পরিবহণ ঃ বাংলাদেশের কাগজ কলগুলোর সাথে কাঁচামালের উৎস এবং বাজারের সাথে নদী, সড়ক ও রেলপথের উত্তম যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা রয়েছে।
৬। মূলধন ঃ বাংলাদেশের কাগজের কলগুলো সরকারি মালিকানায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠিত বলে মূলধনের কোন অভাব হয়নি ।
৭। বাজার ঃ অভ্যন্তরীণ চাহিদাও এদেশের কাগজ শিল্প সমৃদ্ধির অন্যতম কারণ । পূর্বে ভারত ও পাকিস্তানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের কাগজের ব্যাপক চাহিদা ছিল ।
উৎপাদন : বাংলাদেশের কাগজ কলগুলোয় মোট উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি হলেও বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে ক্ষমতানুযায়ী কাগজ উৎপাদন সম্ভব হয় না। বাংলাদেশে ২০০৯-১০ সালে ২০টি কাগজের কলে মোট ১৮.৬৮ হাজার টন বিভিন্ন প্রকারের কাগজ উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশের কাগজ কলগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা অনেক বেশি হলেও বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে ক্ষমতানুযায়ী কাগজ উৎপাদন সম্ভব হয় না । এছাড়াও ১৫.৭০ লক্ষ বর্গ মিটার হার্ডবোর্ড এবং ২.০৮ লক্ষ বর্গ মিটার পার্টিকেল বোর্ড উৎপাদিত হয়। ২০১২-১৩ সালে কাগজের উৎপাদন ছিল ৫৬.৯৭ হাজার মেট্রিক টন । নিম্নে বিভিন্ন অর্থবছরে কাগজের উৎপাদন দেয়া হল ।
কাগজ শিল্পের বণ্টন : বাংলাদেশের প্রধান ৮টি কাগজ ও বোর্ড মিলের মধ্যে দু'টি রাঙামাটিতে, একটি সিলেটে, একটি পাবনায়, দু'টি খুলনায় এবং দু'টি ঢাকায় অবস্থিত। নিয়ে বাংলাদেশের কাগজ ও বোর্ড মিলগুলোর বর্ণনা দেয়া হলো ।
(ক) কর্ণফুলি কাগজ কল ঃ এটি বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ কাগজের কল । ১৯৫৩ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান শিল্পোন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক রাঙামাটি জেলার চন্দ্রঘোনা নামক স্থানে কর্ণফুলি নদীর তীরে কর্ণফুলি কাগজের কল প্রতিষ্ঠান হয় । তখন এর উৎপাদন ক্ষমতা ছিল বছরে ৩০ হাজার টন । বিভিন্ন ধরনের লেখার, ছাপার, প্যাকিং, ব্যাংক বণ্ড, পোস্টার, ক্রিম, লিড, লেজার, আর্ট ইত্যাদি কাগজ । বর্তমানে এর উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ হাজার টনে বৃদ্ধি করা হয়েছে ।
চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলি কাগজের মিল স্থাপনের কারণসমূহ : রাঙামাটির চন্দ্রঘোনায় কর্ণফুলি কাগজের মিল স্থাপনের অনুকূল ভৌগলিক কারণগুলো নিয়ে বর্ণনা করা হলো ।

১। পর্যাপ্ত কাঁচামাল ঃ কাগজ তৈরির জন্য প্রচুর বাঁশ ও নরম কাঠের প্রয়োজন হয়। রাঙামাটি জেলার চন্দ্রঘোনায় ও এর আশেপাশের এলাকায় নরম জাতের কাঠ ও বিভিন্ন প্রকারের বাঁশ পাওয়া যায় । তদুপরি এর পশ্চিম পার্শ্বের চট্টগ্রামের পাহাড়িয়া এলাকায়ও প্রচুর নরম কাঠ জন্মায় । ফলে এ অঞ্চলের পর্যাপ্ত বাঁশ ও নরম কাঠের ওপর ভিত্তি করে,চন্দ্রঘোনায় কাগজের কল স্থাপিত হয়েছে ।
২। পরিষ্কার পানি প্রাপ্তি ঃ বাঁশ ও কাঠ ভিজানো, ধোয়া ও মণ্ড তৈরির জন্য প্রচুর পরিস্কার মিঠা পানির প্রয়োজন । কর্ণফুলি নদীর তীরে এ কাগজের কল অবস্থিত হওয়ায় সবসময় পরিস্কার পানি পাওয়া যায় । ৩। শক্তি সম্পদের নৈকট্য ঃ চন্দ্রঘোনায় কাগজের কল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অন্যতম কারণ কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নৈকট্য ।
৪ । মূলধন ঃ সরকারি উদ্যোগে কাগজ কলটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মূলধনেরও কোন অভাব হয়নি । ৫। প্রচুর সুলভ শ্রমিক : বাংলাদেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার নিকটে অবস্থিত হওয়ায় মিলে প্রচুর সস্তা শ্রমিক সংগ্রহ করা যায় ।
৬। পরিবহণের সুযোগ ঃ কর্ণফুলি নদীর তীরে অবস্থিত হওয়ায় পাহাড়িয়া এলাকা হতে বাঁশ ও কাঠ সংগ্রহ করে নদীপথে কাগজের কলে আনা সম্ভব হয় । এতে খরচ কম হয় । আবার উৎপাদিত কাগজ স্থল ও কর্ণফুলি নদী দিয়ে সহজে চট্টগ্রাম বন্দর ও দেশের বিভিন্নাঞ্চলে প্রেরণ করা যায় ।
৭। নিশ্চিত বাজার ঃ কর্ণফুলি কাগজের কলে উৎপাদিত প্রায় সমুদয় কাগজ দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতেই শেষ হয়ে যায় । তাই নিশ্চিত বাজার সুযোগেও মিলটি গড়ে উঠেছে ।
(খ) উত্তরবঙ্গ কাগজ কল : ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান শিল্পোন্নয়ন সংস্থা পাবনা জেলার পাকশী নামক স্থানে দেশের তৃতীয় প্রধান কাগজের কলটি স্থাপন করে। এর বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা প্ৰায় ১৬ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন ।
পাকশী কাগজের কলে প্রধানত চিনিকলের পরিত্যক্ত ইক্ষুর ছোবড়া, পাতা, পাটখড়ি ইত্যাদি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তদুপরি কিছু কাঠের মণ্ড বিদেশ হতে আমদানি করা হয়। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ভেড়ামারা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ, প্রচুর সস্তা শ্রমিক, উন্নত যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থা, সরকারি অর্থানুকূল্য, বাজারজাতকরণের সুযোগ ইত্যাদিও এ কাগজ কলটি স্থাপনের সহায়ক হয়েছে। উত্তরবঙ্গ কাগজ কলে প্রধানত উন্নতমানের লেখার ও ছাপার কাগজ প্রস্তুত করা হয় । বর্তমানে বছরে এ মিলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৯৫০০ টনে ধার্য করা হয় ।
(গ) খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস : এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কাগজের কল । ১৯৫৯ সালে খুলনা শহরের অনতিদূরে অবস্থিত খালিশপুরে পূর্ব পাকিস্তান শিল্পোন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলটি স্থাপিত হয়। তখন এর উৎপাদন ক্ষমতা ছিল বাৎসরিক ৩ হাজার মেট্রিক টন নিউজপ্রিন্ট এবং ১২ হাজার মেট্রিক টন ছাপা ও মেকানিক্যাল কাগজ । পরবর্তীকালে এর উৎপাদন ক্ষমতা ৬৮ হাজার মেট্রিক টনে বৃদ্ধি করা হয়। তন্মধ্যে ৪৫ হাজার টন নিউজপ্রিন্ট, ১৩ হাজার মেট্রিক টন ছাপার কাগজ এবং ১০ হাজার টন উন্নতমানের মেক্যানিক্যাল ও টিসু পেপার। এ মিলে বিভিন্ন ধরনের ব্রাউন ক্রাপ পেপার এবং মোড়কের কাগজও প্রস্তুত করা হয়। এ মিলে উৎপাদিত নিউজপ্রিন্ট দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা হতো । এটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।
(ঘ) সিলেট পায় অ্যান্ড পেপারস মিলস : সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা নদীর তীরে ছাতক নামক স্থানে এটি স্থাপিত হয়। এ মিলে প্রধানত স্থানীয় হাওর এলাকার নলখাগড়া, সাবাই ঘাস, একরা প্রভৃতি তৃণাদি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় । এছাড়া বাঁশ, পাটখড়ি, পাটের টুকরাও কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। হরিপুরের গ্যাস এবং ট্যাকেরহাটের চুনাপাথর যথাক্রমে শক্তি ও মত্ত ব্লিচিং করার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে তদুপরি মিলের সাথে রেল, সড়ক ও নৌপথে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। সিলেট পাল্প এন্ড পেপার মিলের মোট বাৎসরিক উৎপাদন ক্ষমতা ৪৫ হাজার মে. টন। তন্মধ্যে ১৫ হাজার মে. টন উন্নমানের পাতলা কাগজ এবং ৩০ হাজার মে. টন মণ্ড। এ মিলে উৎপাদিত মও পাকশী কাগজের মিলে এবং খুলনা নিউজপ্রিন মিলে ব্যবহার ছাড়াও বিদেশে রপ্তানি করা হয়। ১৯৭৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে এ মিলে উৎপাদন আরম্ভ করা হয়েছে। এ মিলে প্রধানত মণ্ড, উন্নতমানের লেখার কাগজ, কার্বন কাগজ, সিগারেট পেপার, প্যাকিং কাগজ, ডুপ্লেক্স বোর্ড, সেলোপিন পেপার, হার্ডবোর্ড তৈরি করা হয় ।
(ঙ) আদমজী পার্টিকেল বোর্ড মিলস : নারায়ণগঞ্জ জেলার আদমজী জুট মিলের বিপরীতে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে এ মিলটি অবস্থিত। পাটখড়ি, পাটের টুকরা ও পরিত্যক্ত অংশ প্রভৃতি কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে এ মিলে পার্টেক্স, পার্টিকেল বোর্ড ইত্যাদি তৈরি হয়। এর মোট উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টন।
8
(চ) বাংলাদেশ বোর্ড মিলস ঃ বার্ষিক ৩৫০০ মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ বোর্ড মিলসটি টঙ্গীতে অবস্থিত। এ মিলে প্রধানত পরিত্যক্ত কাগজ, ছেঁড়া কাপড়, ধানের খড় ইত্যাদি কাঁচামাল হিসেবে
ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।
(ছ) কাণ্ডাই হার্ডবোর্ড মিলস : কাপ্তাই ও এর আশপাশের এলাকায় বাঁশ ও নরম কাঠ এবং পানি বিদ্যুতের উপর ভিত্তি করে এ মিলটি স্থাপিত হয়। এর বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৫০০০ মে. টন বিভিন্ন ধরনের বোর্ড । উপরে উল্লিখিত ৮টি কাগজ ও বোর্ড মিলস ছাড়া বাংলাদেশে আরও কয়েকটি ছোটখাট কাগজ কল রয়েছে এদের মধ্যে চট্টগ্রামের বাংলাদেশ পেপার প্রোডাক্টস, ঢাকার ঈগল বক্স কার্টুন কারখানা ও স্ট্রবোর্ড কারখানা অন্যতম ।
(জ) খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস : ১৯৬৬ সালে তৎকালীন পাকিস্তান শিল্পোন্নয়ন সংস্থা কর্তৃক খালিশপুরে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের পার্শ্বে বার্ষিক ১০,০০০ মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এ হার্ডবোর্ড মিলটি স্থাপিত হয় । সুন্দরবনের সুন্দরী, গেওয়া কাঠ হার্ডবোর্ড মিলের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয় । বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ হার্ডবোর্ড রপ্তানি করে থাকে ।
তাছাড়া ব্যক্তি মালিকানায় ইতোমধ্যে সোনালি পেপার মিল, হাক্কানি পেপার মিল, মাগুরা পেপার মিল, শাহজালাল পেপার মিল, হাসেম পেপার মিল, হোসেন পেপার মিল, বেঙ্গল পেপার মিল, ম্যাক পেপার ইন্ডাষ্ট্রিজ, করিম পেপার মিল, বসুন্ধরা পেপার মিল নামে কয়েকটি মিল চালু রয়েছে।

বাণিজ্য ঃ বাংলাদেশ কাগজ উৎপাদনে বর্তমানে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। পূর্বে প্রতি বছর প্রচুর নিউজপ্রিন্ট, ছাপা ও লেখার কাগজ, হার্ডবোর্ড এবং কাগজের মণ্ড বিদেশে রপ্তানি করা হতো। ভারত, শ্রীলংকা প্রভৃতি দেশে নিউজপ্রিন্ট রপ্তানি করা হয়। ২০০১-০২ সালে প্রায় ৩.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের কাগজ ও অন্যান্য দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। তন্মধ্যে প্রায় ২ মিলিয়ন ডলার মূল্যের নিউজপ্রিন্ট এবং প্রায় ১.৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের অন্যান্য লেখা ও ছাপার কাগজ ছিল। বর্তমানে কাগজ রপ্তানি করা হয় না। বরং আমদানি করা হয় ।
বাংলাদেশের কাগজ শিল্পের সমস্যা Problems of Paper Industries in Bangladesh
বাংলাদেশের কাগজ শিল্পের উন্নতির যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকলেও অব্যবস্থাপনা, সম্পদ ও শ্রমের অপচয়, উৎপাদনে অনিয়ম, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, পরিবহণ সংকট, অনিয়মিত কাঁচামাল সরবরাহ ইত্যাদি কারণে কাগজ ও বোর্ড মিলগুলো এদের উৎপাদন ক্ষমতার অনেক কম কাগজ ও কাগজজাত দ্রব্য উৎপাদন করছে। ফলে উৎপাদন ব্যয় ব্যাপকভাবে বেড়ে গিয়েছে। সাথে সাথে বণ্টন পদ্ধতিও বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।
• এছাড়া উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধিজনিত ক্ষতি পোষণের লক্ষ্যে বারবার অযৌক্তিকভাবে কাগজ ও কাগজজাত দ্রব্যগুলোর মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে দেশে কাগজের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও মূল্য বৃদ্ধিজনিত কারণে চাহিদা তেমন বৃদ্ধি পায়নি। আর তাই উৎপাদন হ্রাস করা সত্ত্বেও মিলের ও কর্পোরেশনের গুদামে প্রচুর কাগজ অবিক্রীত অবস্থায় রয়েছে। মোটকথা, প্রশাসনিক দুর্বলতাজনিত কারণে বাংলাদেশের কাগজ শিল্প আজ এক মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন। যা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতির বিশেষ অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশের কাগজ শিল্পের উন্নতির উপায় Means to Improve the Paper Industries of Bangladesh
বাংলাদেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় কাগজ শিল্পের বর্তমান সমস্যাগুলোর সমাধান করে একে একটি লাভজনক শিল্পে পরিণত করতে হলে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে ।
১ । অদক্ষ কর্মচারী, শ্রমিক ও ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে হবে । ২। কর্মচারীদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে ।
৩ । নিয়মিত কাঁচামাল ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে ।
৪। প্রয়োজনবোধে অন্যান্য শিল্পের ন্যায় 'কিছু কিছু কাগজ কল বিজাতীয়করণের মাধ্যমে ব্যক্তিমালিকানায় ছেড়ে দিতে হবে । এতে প্রতিযোগিতায় দক্ষতা বাড়বে ।
৫। বণ্টন ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে বর্তমান বণ্টন ব্যবস্থার পরিবর্তন করে প্রয়োজনে খোলা বাজারে কাগজ বিক্রি করতে হবে।
৬। বর্তমান প্রশাসনিক ব্যবস্থা কলুষমুক্ত করে নতুন, দক্ষ ও কার্যকর প্রশাসনিক কাঠামো দাঁড় করাতে হবে ।
৭। সম্পদ ও শ্রমের অপচয় রোধ করে অধিক উৎপাদনের মাধ্যমে কাগজের উৎপাদন খরচ কমাতে হবে। ৮। প্রয়োজনে কাগজ কলগুলোর সংস্করণ, সম্প্রসারণ ও পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে আধুনিকীকরণ করতে হবে।
৯। অযৌক্তিকভাবে বারবার মূল্য বৃদ্ধি রোধ করে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে বাজারে কাগজ বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে ।
১০। উৎপাদনে আধুনিকতম পদ্ধতি অবলম্বন করে কাগজ শিল্পের উৎপাদিত পণ্যের মান বৃদ্ধি করতে হবে।
মোটকথা কার্যকর ও দক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাগজের কলগুলোর সম্পদ এবং শ্রমের অপব্যয় রোধ করে অধিক উৎপাদন করতে পারলে আমাদের কাগজ শিল্পের উৎপাদন খরচ ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে। ফলে দেশে এবং বিদেশে কম মূল্যে অধিক কাগজ বিক্রি সম্ভব হবে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]