বাংলাদেশের চা শিল্পের বর্ণনা চা শিল্পের সমস্যা চা শিল্প উন্নয়নের উপায়/পদক্ষেপ

চা বাংলাদেশের দ্বিতীয় অর্থকারী ফসল। এ ফসলের উপর ভিত্তি করে এদেশে চা শিল্প গড়ে উঠেছে । বর্তমানে চা শিল্প বাংলাদেশের একটি উল্লেখযোগ্য শিল্প । কারণ চা রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। রপ্তানি বাণিজ্যে পূর্বে পাটের পরেই চায়ের স্থান ছিল। বাংলাদেশে চা শিল্প দিন দিনই উন্নতি লাভ করছে। বাংলাদেশে মোট ১,১৪,১১৩ হেক্টর জমি চা বাগানগুলোর জন্য বরাদ্দ আছে। তন্মধ্যে ৪৭,৩৩৬ হেক্টর জমিতে চায়ের চাষ হয় ।
মালিকানা ঃ মালিকানার দৃষ্টিকোণ থেকে চা বাগানগুলোকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। এর মধ্যে স্টার্লিং কোম্পানির আওতায় ২৫টি, ন্যাশনাল টি কোম্পানির আওতায় ১৩টি, বাংলাদেশ চা বোর্ডের আওতায় ৪টি এবং বাংলাদেশী কোম্পানি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন কোম্পানির সংখ্যা ১১৬টি ।
অবস্থান ঃ বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী দেশ। ফলে এ দেশ চা শিল্পে বেশ উন্নত। বাংলাদেশে মোট ১৫৮টি চা বাগান আছে। তন্মধ্যে ২০টি সিলেট, ২৩টি হবিগঞ্জ, ৯১টি মৌলভীবাজার জেলায় অবস্থিত । এ তিনটি জেলায় বাংলাদেশের প্রায় ৯০% চা উৎপাদন করা হয়। অবশিষ্ট ২৪টি চা বাগানের মধ্যে ২২টি চট্টগ্রাম, ১টি রাঙ্গামাটি এবং ১টি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় অবস্থিত। বাংলাদেশের চা বাগানগুলোর উপর নির্ভর করে এদেশের প্রায় ১৪৫টি চা কারখানা গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে প্রায় ১৩০টি সিলেট, হবিগঞ্জ ও মৌলভী বাজার জেলায় অবস্থিত । এর পরিমাণ দেশে স্থাপিত মোট শিল্প ইউনিটের প্রায় ৯০% । বাগানভিত্তিক চা উৎপাদন
উৎপাদন প্রক্রিয়া ঃ চা শিল্পে কাঁচা পাতাকে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে চা উৎপাদন করা হয় । সাধারণত প্রত্যেক চা বাগানেই চা শিল্প গড়ে তোলা হয় । প্রথমে বাগান থেকে মহিলা শ্রমিকগণ চা পাতা সংগ্রহ করে । পাতা সংগ্রহ করার সময় শ্রমিকগণ সাধারণত একটি কুঁড়ি ও দু'টি পাতা সংগ্রহ করে । তারপর সংগৃহীত পাতা কৃত্রিম উপায়ে শুকানো হয়। শুকানো পাতাগুলো বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে গুড়া করে বিভিন্ন ধরনের চা তৈরি করা হয় । পরে প্রস্তুতকৃত চাগুলোকে বাজারজাতকরণ করা হয় ।
প্রকারভেদ ঃ বাগান হতে চা পাতা সংগ্রহের পর বাগানের মধ্যে অবস্থিত কারখানায় এদের প্রসেস করা হয় । চা পাতা হতে প্রধানত তিন শ্রেণীর চা উৎপাদন করা হয়। যথাঃ পাতা চা, গুড়া চা এবং সবুজ চা । এর মধ্যে পাতা চায়ের পরিমাণ বেশি ।
উৎপাদন ঃ ২০১৩-১৪ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৬৬.৬০ হাজার মেঃ টন চা উৎপন্ন হয়। ২০০৯-১০ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৫৯.৪৪ হাজার মেঃ টন চা উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে একমাত্র পাতা চা উৎপন্ন হয় ৩৭ হাজার মেঃ টন। অবশিষ্ট ২১ হাজার মেঃ টন গুড়া এবং বাকিটা সবুজ চা । বর্তমানে চা শিল্পে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক কাজ করছে । তন্মধ্যে ১০ হাজার জন উৎপাদনকারী শ্রমিক ।
চা এর বাণিজ্য ও চা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি পণ্য ছিল। পূর্বে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়ে প্রচুর চা প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানে রপ্তানি করা হতো। ২০১৩-১৪ সালে বাংলাদেশ মাত্র ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চা বিদেশে রপ্তানি করে। বাংলাদেশের চা শিল্পের সমস্যাগুলো দূর করে অধিক পরিমাণে চা উৎপাদন করতে পারলে রপ্তানির পরিমাণও বৃদ্ধি পাবে।
চা শিল্পের সমস্যা Problems of Tea Industries
বাংলাদেশ চা শিল্পে সমৃদ্ধ হলেও এদেশের চা শিল্প বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। বাংলাদেশের চা শিল্পের সমস্যাগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো ।
১। খরা ও বৃষ্টিহীনতার ফলে অকালেই চা বাগানগুলো বিনষ্ট হয়। অনেক সময় নতুন নতুন চারা লাগানো সম্ভবপর হয়ে ওঠে না ।
২। অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের ফলে উৎপাদন হ্রাস এবং উৎপাদিত চা-এর গুণগত মানের পরিবর্তন। ৩। চয়ন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ করতে বহু দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। দক্ষ শ্রমিকের সরবরাহ বাংলাদেশে অপর্যাপ্ত ।
৪ । বর্তমানে বহুদেশ বিদেশে চা রপ্তানি করে বলে বাংলাদেশের চা এর বাজার অনিশ্চিত ।
৫। বাংলাদেশের চা শিল্পে মান্ধাতার আমলের যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়। ফলে শিল্পে ইউনিটের উৎপাদশীলতা কম ।
৬। দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব বাংলাদেশের চা শিল্পের অন্যতম সমস্যা ।
৭। বাংলাদেশে প্যাকিং সুবিধা ও গুদামজাতকরণের স্বল্পতাও চা শিল্পের অন্যতম সমস্যা ।
৮ । চা বাগানগুলোর পরিচর্যার জন্য প্রচুর পরিমাণ সার ও কীটনাশক ঔষধের প্রয়োজন । বাংলাদেশে সার ও কীটনাশক ঔষধের অভাব রয়েছে ।
৯। বাংলাদেশে চা বাগান স্থাপন, পরিচর্যা, শিল্প ইউনিট স্থাপন প্রতিটি ক্ষেত্রেই মূলধনের অভাব পরিলক্ষিত হয় ।
১০। বাংলাদেশের চা বাগানগুলো পাহাড়িয়া এলাকায় অবস্থিত বলে যোগাযোগ ও পরিবহণ ব্যবস্থায় অনুন্নত ।
চা শিল্প উন্নয়নের উপায়/পদক্ষেপ Steps for the Development of Tea Industries
নিম্নোক্ত পদেক্ষপসমূহ গ্রহণ করলে বাংলাদেশের চা শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব হবে।
১। অনিয়মিত বৃষ্টিপাত ও খরার জন্য পর্যাপ্ত পানি সেচের ব্যবস্থা।
২। প্যাকিং ও গুদামজাতকরণ ব্যবস্থা উন্নতি করতে হবে। ৩। প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত সারের ব্যবস্থা করতে হবে। ৪। প্রয়োজনীয় মূলধন সরবরাহ করতে হবে।
৫। ব্যাংক হতে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রদান করতে হবে।
৬। বর্তমান চা কারখানাগুলোর আধুনিকীকরণ করতে হবে।
৭। চা শিল্প এলাকায় পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ।
৮। সরকারি উদ্যোগে বিদেশে অধিক পরিমাণে চা রপ্তানির ব্যবস্থা করতে হবে।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]