বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যা বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যার সমাধান

Problems of Garment Industries in Bangladesh
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের নিম্নলিখিত সমস্যাগুলো বিরাজ করছে।
১। কাঁচামালের অভাব : বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বড় সমস্যা হলো পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাব । এছাড়া আমদানিকৃত কাঁচামাল নিম্নমানের । ফলে আমাদের পোশাক শিল্পের বাজার হারাতে হচ্ছে ।
২। দক্ষ শ্রমিকের অভাব ঃ এই শিল্পে কর্মরত ৮০ শতাংশ শ্রমিকই গ্রাম থেকে আগত অশিক্ষিত ও
মহিলা । ফলে দক্ষ শ্রমিকের অভাবে তৈরি পোশাকের গুণগত মান অন্যান্য দেশের তুলনায় কম ।
৩। রপ্তানিতে বিলম্ব : পরিবহণ, শুল্ক জটিলতা ধর্মঘটসহ অন্যান্য কারণে উৎপাদন ব্যাহত ও বিলম্বিত হয় । ফলে বিদেশি ক্রেতাদের সময় মতো পোশাক সামগ্রী সরবরাহ করতে না পারায় বাজার হারাতে হয় ।
৪। অনুন্নত বস্ত্র শিল্প : আমাদের দেশের বস্ত্র শিল্প ততটা উন্নত না । ফলে তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় । এর ফলে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না ।
৫। শক্তি সম্পদের অভাব : তৈরি পোশাক শিল্পে পর্যাপ্ত শক্তি সম্পদ বিশেষ করে বিদ্যুৎ সরবরাহে অনিশ্চিয়তার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হয় । ফলে পোশাক শিল্পের উন্নয়নে যথেষ্ট সমস্যার সৃষ্টি হয় ।
৬। আর্থিক ঋণের অভাব ঃ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের দ্রুত উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা থাকা প্রয়োজন । পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধার অভাবে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প উন্নয়নে বাধাগ্রস্থ হচ্ছে ।
৭। নিম্নমানের পোশাক : বাংলাদেশের তৈরি পোশাক অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশিদের অর্ডার বা চুক্তি অনুযায়ী হয় না । নিম্নমানের হয়ে থাকে। ফলে প্রায়ই বিদেশিরা তাঁদের প্রদত্ত অর্ডার বাতিল করে থাকে ।
৮। রপ্তানি আইটেম কম : বাংলাদেশে তৈরী পোশাক শিল্পে রপ্তানি আইটেম অনেক কম। বাংলাদেশ শুধুমাত্র কয়েকটি আইটেম যেমন- শার্ট, গেঞ্জি, টি শার্ট ইত্যাদি পোশাক রপ্তানি করে থাকে ।
৯। দেশি বিদেশি ইনডেনটিং ফার্মের শোষণ : আমাদের দেশের তৈরি পোশাক শিল্প দেশি বিদেশি দালালদের শোষণে উদ্যোক্তরা এই শিল্পে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে। কারণ, মুনাফার বেশির ভাগটাই দালালদের পকেটে চলে যায় ।
১০। কাজের প্রতিকূল পরিবেশ ঃ আমাদের পোশাক শিল্পে শ্রমিকরা যেসব কারখানাগুলোতে কাত করে, সেগুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ বিরাজ করে। ফলে শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয় ।
১১ । এস.এ. ৮০০০ না মানা ঃ এস.এ. ৮০০০ হলো ক্রেতা কর্তৃক কিছু শর্ত, যা রপ্তানিকারক পোশাক শিল্পকে মানতে হবে । কিন্তু এস.এ. ৮০০০ না মানার কারণে বিদেশিরা আমাদের দেশ থেকে তৈরি পোশাক ক্রয়ে আগ্রহী নয় ।
১২। অবাধ বাণিজ্য ঃ অবাধ বাণিজ্যের ফলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সমস্যা হচ্ছে, বিশেষ করে চীনের সাথে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতায় টিকতে কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যত নিয়ে খুব আশংকা রয়েছে ।
১৩। কোটা আরোপ ঃ বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের উপর আমদানিকারক দেশসমূহ কোটা আরোপ করেছে । ফলে রপ্তানি অনেকটা কমে গেছে ।
১৪। পরিবহণ সমস্যা ঃ আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের মালামাল রপ্তানির জন্য নিজস্ব কোন পরিবহণ নেই । ফলে দ্রব্য রপ্তানিতে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হয় ।
১৫ । রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ঃ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে বাংলাদেশ বিদেশের বাজার হারাচ্ছে ।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, বাংলাদেশের পোশাক শিল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প হওয়া সত্ত্বেও এ শিল্প বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানের পোশাক শিল্পের উন্নতির দ্বারা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব ।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের সমস্যার সমাধান Solution of the Problems of Bangladesh Garment Industries
পোশাক শিল্পের সমস্যা সমাধানের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে ।
১। দেশীয় কাঁচামালের উন্নয়ন : আমাদের বস্ত্র শিল্পের মান উন্নয়নের মাধ্যমে দেশীয় কাঁচামালের গুণগত মান বৃদ্ধি করে পোশাক শিল্পের উন্নতি সম্ভব ।
২। উৎপন্ন দ্রব্যের মান উন্নতকরণ ঃ বাংলাদেশে তৈরি পোশাকের মান উন্নত করতে হবে, যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধি পায় । তবেই পোশাক শিল্পের উন্নতি ঘটবে ।
৩ । কোটা নমনীয়করণ : বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে যেসব দেশ কোটা আরোপ করেছে তা বাতিল বা নমনীয় করার লক্ষ্যে সরকারি বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে এ শিল্পকে সম্প্রসারণ করা সম্ভব ।
৪ । মজুরি বৃদ্ধি ঃ শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করে তাদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্রব্যের গুণগত মান বাড়ানো সম্ভব ।
৫। শ্রমিক প্রশিক্ষণ ঃ এ শিল্পে যেসব শ্রমিকরা কাজ করতে আসে, তারা অশিক্ষিত ও অদক্ষ, তাদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দক্ষ শ্রমিকে পরিণত করতে পারলে এ শিল্পের উন্নতি হবে ।
৬। রপ্তানি আইটেম বৃদ্ধি : বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে রপ্তানি আইটেম মাত্র কয়েকটি। রপ্তানি আইটেম বৃদ্ধি করে এ শিল্পের উন্নয়ন সম্ভব ।
৭। শর্ত অনুযায়ী দ্রব্য উৎপাদন ঃ বিদেশিদের দেয়া শর্ত অনুযায়ী দ্রব্য উৎপাদন করলে এ শিল্পে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে ।
৮। নিজস্ব পরিবহণের ব্যবস্থা করা : অনেক সময় পরিবহণ ব্যবস্থার অসুবিধার কারণে বিদেশিদের শর্তে বা চুক্তি অনুযায়ী দ্রব্যের যোগান দেয়া সম্ভব হয় না। ফলে তাঁদের দেয়া অর্ডার বাতিল হয়ে যায় : অতএব, সরকারি বা বেসরাকরিভাবে এই শিল্পের নিজস্ব পরিবহণ ব্যবস্থা থাকলে রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে ।
৯। পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা ঃ এ শিল্পের উদ্যোক্তাদের পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে এ শিল্পের উন্নতি সম্ভব ।
১০। এজেন্টদের দৌরাত্ম হ্রাসকরণ ঃ দেশি বিদেশি দালাল ও এজেন্টদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের উন্নতি সাধন করা সম্ভব ।
১১। বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ : দেশের বিভিন্ন প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমাদের তৈরি পোশাকের বাজারের বিস্তৃতি ঘটানো যায় ।
১২। শ্রমিক আইন : এ শিল্পে যথাযথভাবে শ্রমিক আইন মেনে চললে শ্রমিকরা কাজে উৎসাহ পাবে । ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে ।
১৩। বিদেশি উদ্যোক্তাদের সুবিধা প্রদান ঃ বিদেশি উদ্যোক্তাদের এ শিল্পে বিনিয়োগের জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে এ শিল্পের উন্নতি সম্ভব ।
১৪। রপ্তানি বাণিজ্যিকে উৎসাহিতকরণ : বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের রপ্তানি ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ, যেমন- করমুক্ত, শক্তি সম্পদে ভর্তুকী ইত্যাদি সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে সাহায্য করলে এ শিল্পের প্রসার ঘটাবে ।
১৫। স্বায়ত্বশাসিত ব্যুরো গঠন : বাংলাদেশের পোশাক শিল্পকে রপ্তানি বহুমুখী করার লক্ষ্যে একটি স্বায়ত্বশাসিত ব্যুরো গঠন করা প্রয়োজন ।
১৬। স্থানীয় বেসরকারি উদ্যোগ ঃ এ শিল্পে স্থানীয় বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধার মাধ্যমে উৎসাহী করে তুলতে হবে ।
১৭। গবেষণা ঃ পোশাক শিল্পের উন্নতির জন্য গবেষণামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করে সময় উপযোগী উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, শ্রম-মজুরি নীতি ইত্যাদি গ্রহণ করে পোশাক শিল্পের উন্নত করা সম্ভব ।
বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের ভবিষ্যত সম্ভাবনা Future Prospects of Bangladesh Garment Industries
পোশাক শিল্প বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প । বাংলাদেশে পোশাক শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনার কারণসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো ।
১। পর্যাপ্ত শ্রমের যোগান : বাংলাদেশে শ্রমের পর্যাপ্ত যোগান রয়েছে, যা অতি সস্তায় পাওয়া যায় । এর ফলে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় কম হয় ।
২। স্বল্প মজুরি : আমাদের দেশের শ্রমিকদের মুজরি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম । তাই দেশে পোশাক শিল্পের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে ।
৩। নারী শ্রমিক : আমাদের পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিক নিয়োগের সুযোগ রয়েছে এবং বর্তমানে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে নারী শ্রমিকদের হার শতকরা ৮৫ ভাগ। ভবিষ্যতে আমরা এই বিপুল নারী শ্রমিকদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে পারলে পোশাক শিল্পের অনেক উন্নতি হবে ।
৪ । শ্রমের দক্ষতা ঃ আমাদের দশের শ্রমিকদের দক্ষতা মজুরির তুলনায় বেশি তাই এদেশের পোশাক শিল্পে উন্নতি সম্ভাবনা রয়েছে ।
৫। উদার শিল্প নীতি ঃ বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের দ্রুত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার উদার শিল্পনীতি গ্রহণ করেছে।
৬। স্বল্প মূলধনে শিল্প স্থাপন : এ শিল্প অধিক মূলধনের প্রয়োজন হয় না। এ কারণে অনেক উদ্যোক্তাই এই শিল্পে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসছে ।
৭। সরকারি পররাষ্ট্র নীতি ঃ বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি অনুযায়ী বিশ্বের সকল দেশের সাথেই সুসম্পর্ক রয়েছে, যা আমাদের পোশাক শিল্পের বাজার সম্প্রসারণে সহায়ক ।
৮। অধিক মুনাফার সম্ভাবনা : এ শিল্প খুব স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব । তাই উদ্যোক্তারা এ শিল্পে বিনিয়োগে অধিক আগ্রহী ।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের এক উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]