বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সুপারিশ কর ।

মধ্যম আয়ের দেশ (বাংলাদেশ) Medium Income Country (Bangladesh)
LDC ভূক্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। LDC ভূক্ত দেশগুলোর তালিকা থেকে বাংলাদেশ বেরিয়ে আসতে পারবে কিনা এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদগণের মধ্যে তর্কবিতর্ক চলছে । বাংলাদেশ বিগত কয়েক বছর ধরে ৬ শতাংশের উপরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সত্ত্বেত্ত এখনও মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারেনি । দেশ স্বাধীনতা লাভের চার দশক পরে বাংলাদেশ LDC-এর তালিকা থেকে বেরিয়ে মাধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারেনি কেন এ বিষয়টি অর্থনীতিবিদগণকে ভাবিয়ে তোলছে। তবে যথাযথ পরিকল্পনা উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হলে বাংলাদেশও ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবে- এ ব্যাপারে সকল অর্থনীতিবিদ একমত।

বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাইলে আমাদের করণীয়/পরামর্শ

বিশাল জনগোষ্ঠীর এই দেশে সীমিত সম্পদকে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে অভ্যন্তরীণ পুঁজির স্বল্পতা। পুঁজির স্বল্পতার জন্য আমাদের নির্ভর করতে হয় বিদেশী ঋণ ও সাহায্যের উপর। বাংলাদেশের পরে স্বাধীনতা লাভ করেও অনেক দেশ ইর্ষনীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বাংলাদেশ যদি ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চায় তবে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে ।
১। সরকার ঋণ গ্রহণ হ্রাস ঃ বিগত কয়েক বছর ধরে সরকার তার বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্ত বায়ন করার জন্য বৈদেশিক উৎস ও অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করেছে। ২০১১-১৩ অর্থবছরের বাজেটের বিপুল পরিমাণ ঘাটতি ব্যয় মেটাতে সরকারের ঋণ গ্রহণ যে আরও বাড়বে তা হলফ করেই বলা যায় । সরকারের এ রকম ঋণ গ্রহণ অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া কঠিন হবে।
২। রেমিট্যান্স প্রবাহ ধরে রাখা : বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান দুটি খাত হলো প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও তৈরি পোশাক রপ্তানী । ২০০৮ সালে আমেরিকা ও গোটা ইউরোপ জুড়ে যে মন্দা শুরু হয়েছিল সেটা দ্বারা বাংলাদেশ সরাসরি আক্রান্ত না হলেও ২০১০ সালের দিকে এসে তে মন্দার কিছুটা প্রভাব পড়তে শুরু করে । কারণ মন্দার কারণে ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক বাংলাদেশী চাকুরি হারায়; ফলে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যায় । অন্যদিকে, ইউরোপ ও আমেরিকায় মন্দার কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোষাক রপ্তানীর প্রবৃদ্ধি কমে যায়। এ দুটি প্রধান কারণে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়। আশার কথা হলো ২০১২ সালের শুরু থেকে বাংলাদেশে আবার রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে যা আমাদের রিজার্ভ পরিস্থিতিকে সন্তোষজনক অবস্থায় নিয়ে এসেছে। তাই ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চাইলে অবশ্যই রেমিট্যান্স প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে ।
৩। সরকারী নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারী হ্রাস করা : বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন ছাড়া বেসরকারী খাতের কর্মকাণ্ডের উপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ কমাতে হবে । বেসরকারী খাত যেন নির্বিঘ্নে উৎপাদনমূলক খাতে বিনিয়োগ করতে পারে সে ব্যাপারে নিয়ন্ত্রণ নয় বরং সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করতে হবে ।
.
৪। মাইক্রো ও ম্যাক্রো অর্থনীতির সমন্বয় সাধন : মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চাইলে মাইক্রো ও ম্যাক্রো অর্থনীতি- উভয় ধরনের নীতি অনুসরণ করতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার শুধু মাইক্রো অর্থনীতির নীতি অনুসরণ করে মম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে চাইছে।
ম্যাক্রো অর্থনীতিকে অবজ্ঞা করে শুধু মাইক্রো অর্থনীতির উপর জোর দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে না । তাই ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাইলে মাইক্রো এবং ম্যাক্রো অর্থনীতির সমন্বয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৫। দুর্নীতি নির্মূল ঃ বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবার পথে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে দুর্নীতি । তাই সরকারকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে দুর্নীতি বন্ধের উপর । তা না হলে কোন পরিকল্পনাই কাজে আসবে না লক্ষ্য অর্জনে
৬। নিজস্ব পরিকল্পনা গ্রহণ : বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হতে চাইলে আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামো ও সম্পদের উপর ভিত্তি করে নিজস্ব পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ কিংবা কোনো দাতাগোষ্ঠীর চাপিয়ে দেওয়া পরিকল্পনার উপর ভিত্তি করে ২০২১ সালে কেন ২০৩০ সালেও বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবে না ।
৭। পরিকল্পনা প্রণয়নে দক্ষা ও যোগ্য লোক নিয়োগ ঃ পরিকল্পনা প্রণয়ন কাজে এমন অনেক অযোগ্য ও অদক্ষ লোক বসানো হয় যারা আদৌ পরিকল্পনার বোঝে না । তাই দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলী দিয়ে এরা দাতাগোষ্ঠীদের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত । এজন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কাজে দক্ষ ও যোগ্য লোক নিয়োগ করতে হবে যারা পরিকল্পনা বোঝে এবং দেশের স্বার্থ উদ্ধার করতে সক্ষম । তাহলে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানো সহজতর হবে ।
"
৮ । খাতভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ : ১৯৭১ সালে যেসকল দেশের অবস্থা আমাদের চেয়েও খারাপ ছিল তারা আজ অর্থনৈতিকভাবে অনেক দূরে এগিয়ে গেছে। যেমন- মালেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান ইত্যাদি । অথচ, আমরা এসব দেশ থেকে কোনো শিক্ষা গ্রহণ করিনি । মালেশিয়া, ইন্দোনিশয়ার মতো দেশে তারা প্রত্যেকটি খাতের জন্য আলাদা খাতভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছে। আসলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর সম্পদ সীমিত হবার কারণে সামগ্রীক অর্থনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে বাস্তবায়ন করা একটা স্বল্পবিলাস ছাড়া কিছুই নয় । তাই আমাদেরকে খাতভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে । যেমন- আগামী ৫ বছরে আমরা শুধু কৃষি, শিক্ষা ও শিল্প উন্নয়নে কাজ করব। অর্থাৎ ৫ বছর পর্যন্ত আমরা এ তিনটি খাতে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য পূর্ণ মনোনিবেশ করব । তাহলে সাফল্য আসবেই । তারপর আবার অন্যখাতের উন্নয়নে পরিকল্পনা গ্রহণ করব । এভাবে খাতভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করলে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাতে সক্ষম হবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তবে এ ধরনের পরিকল্পনার সাথে দাতাগোষ্ঠী একমত হবে কিনা এ নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে ।
৯ । রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ঃ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অত্যন্ত জরুরী । বিশেষ করে উন্নয়নের ব্যাপারে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য দরকার । কারণ একটি রাজনৈতিক দলের নেয়া পরিকল্পনার অবশিষ্ট অংশ অন্য রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে যদি অব্যাহত রাখে তাহলে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে।' এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবে।
উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করলে এবং তদনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ২০২১ সালের মধ্যে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশও মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]