আমদানি বিকল্প শিল্পায়ন কৌশল রপ্তানি তাড়িত শিল্পায়ন কৌশল

Import Substitution Industrialization Strategy
বিদেশ থেকে যেসব দ্রব্য আমদানি করা হয় সেগুলো আমদানি না করে দেশের অভ্যন্তরে উৎপাদন করার জন্য শিল্প স্থাপন করা হলে তাকে বলা হয় আমদানি বিকল্পন শিল্পায়ন কৌশল । দেশের জনগণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করার জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করলে আমাদের বাণিজ্য ভারসাম্য ও লেনদেন ভারসাম্যে ক্রমাগত ঘাটতি দেখা দেবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপ পড়বে এবং প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর জন্য বিদেশীদের উপর নির্ভরশীল থাকতে হবে। তাই বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে দেশকে স্বাবলম্বী করার জন্য যদি এমন কোন নীতি গ্রহণ করা হয় যার মাধ্যমে আমদানিযোগ্য পণ্যের উৎপাদন দেশের অভ্যন্তরে বেশি পরিমাণে হয়, তাকে আমরা আমদানি বিকল্প নীতি বলতে পারি। শুধু আমদানি বিকল্প পণ্যের শিল্প স্থাপনই করা হয় না বরং বিদেশি প্রতিযোগিতার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমদানির উপর উচ্চহারে শুল্ক ও নানা অশুল্ক বাধা আরোপ করা হয় । আমদানি বিকল্পন শিল্পায়ন কৌশল গ্রহণের প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ ।
১। আমদানি ব্যয় কমানো;
২। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ কমানো;

868


৩। নিজ দেশকে স্বাবলম্বী ও আত্মনির্ভরশীল করে তোলা;
৪। বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করা;
৫। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা
৬। দেশের জনগণের চাহিদা পূরণ করা;
৭ । বৈদেশিক নির্ভরশীলতা কমানো;
৮। দেশের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান বাড়ানো;
৯। দেশের অভ্যন্তরীণ সকল সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার;
১০। বৈদেশিক লেনদেনের ঘাটতি কমানো;
১১। সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এশিয়া ও আফ্রিকার বহুদেশ স্বাধীনতা লাভের পর আমদানি বিকল্পন শিল্পনীতি গ্রহণ করে। দীর্ঘদিন পরাধীন থাকার পর দেশগুলো স্বাধীনতা প্রাপ্তির সাথে সাথেই আমদানি বিকল্প শিল্পনীতি ঘোষণা করে । বিশেষ করে ১৯৫০ এর দশকে ল্যাটিন আমেরিকার কতিপয় দেশ এবং এশিয়ার কয়েকটি দেশ আমদানি বিকল্প শিল্পায়ন কৌশল গ্রহণ করে ইন্সিত সাফল্য লাভ করে। তারই অনুকরণে বাংলাদেশও বাণিজ্য ঘাটতি ও পরনির্ভরতা কমানোর জন্য সাম্প্রতিক শিল্পনীতিগুলোতে আমদানি বিকল্পন শিল্প স্থাপনের উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছে ।
রপ্তানি তাড়িত শিল্পায়ন কৌশল Export Led Industrialization Strategy
বিদেশে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য যে শিল্পনীতি বা কৌশল গ্রহণ করা হয়, তাকে বলা হয় রপ্তানি তাড়িত শিল্পায়ন কৌশল । সাধারণত দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, কাঁচামাল ও উৎপাদনের উপকরণের সহজলভ্যতা এবং সস্তা শ্রম ইত্যাদিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে কম খরচে উৎপাদন করার জন্য রপ্তানি পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প স্থাপন করা হয়। রপ্তানি তাড়িত শিল্পনীতি গ্রহণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি বাড়ানো যায় এবং প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তা কাজে লাগানো যায়। যে সকল উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে একটি দেশ রপ্তানি তাড়িত শিল্পায়ন কৌশল গ্রহণ করে সেগুলো নিম্নরূপ ৷
১। রপ্তানী আয় বাড়ানো;
২। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা;
৩। শিল্পোন্নয়ন;
৪ । বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো;
৫। কর্মসংস্থান সৃষ্টি;
৬ । দেশের কাঁচামাল, প্রাকৃতিক সম্পদ ও শ্রমের পরিপূর্ণ ব্যবহার করা;
। আমদানি ব্যয় মেটানো;
৮। পরনির্ভরশীলতা কমিয়ে আনা ;
৯। সর্বোপরি অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করা ।
রপ্তানী তাড়িত শিল্পায়ন কৌশল বাস্তবায়নের জন্য সরকার নিম্নোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে ।
১। রপ্তানি শিল্প থেকে শুল্ক প্রত্যাহার;
২। রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত উপকরণের উপর আরও বেশি করে ভর্তুকি প্রদান; ৩। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন গুলোকে সক্রিয় করা;
৪ । রপ্তানি শিল্পের উদ্যোক্তাদের কর অবকাশ (tax holiday) সহ বিভিন্ন সুবিধা প্রদান; ৫ । বিভিন্ন আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন;
৬। আরও বেশি ইপিজেড ও শিল্প পার্ক স্থাপন করা ও বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ করা ।
৭। শিল্প উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের স্বল্প সুদে পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা ও আর্থিক প্রণোদনা প্রদান;
৪৮৫
৮। নিয়মিত দেশে বাণিজ্য মেলার আয়োজন এবং বিদেশে আয়োজিত বাণিজ্য মেয়ায় অংশগ্রহণ ও দেশীয় শিল্প প্রতিনিধি দল পাঠানো;
৯ । মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘোষণা ।
উল্লেখ্য, বহুকাল আগ থেকেই উন্নত দেশগুলো বাংলাদেশসহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশ থেকে স্বল্পমূল্যে কাঁচামাল ও উৎপাদনের উপকরণ সংগ্রহ করে । সেগুলো দিয়ে পণ্য উৎপাদন করে উন্নত দেশগুলো আবার আমাদের কাছে অনেক বেশি মূল্যে বিক্রি করে মুনাফার পাহাড় গড়ে তোলে । অথচ এইসব কাঁচামাল ও সম্পদ কাজে লাগিয়েও সস্তা শ্রম ব্যবহার করে যদি আমরা রপ্তানি ভিত্তিক শিল্পস্থাপন করি তাহলে উৎপাদন খরচ কম হবে। অল্পদামে প্রচুর পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। এতে একদিকে পণ্য বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে । এতে একদিন সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে শিল্পায়ন হবে, আর অন্যদিকে বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই বিষয়টির প্রতি লক্ষ্যরেখেই বাংলাদেশ সরকার সাম্প্রতিকালের শিল্পনীতিতে রপ্তানি ভিত্তিক শিল্পায়ন কৌশল গ্রহণ করেছে।
আমদানি বিকল্পন শিল্পায়ন ও রপ্তানি ভিত্তিক শিল্পায়ন কৌশলের মধ্যে পার্থক্য Differences between Import Substitution Industries (ISI) and Export Led Industries (ELI)
বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি না করে সেসব পণ্য দেশের ভিতরে উৎপাদন করার জন্য শিল্প স্থাপন করার কৌশলকে বলা হয় আমদানি বিকল্প শিল্প কৌশল। অন্যদিকে, রপ্তানি বাড়ানোর জন্য রপ্তানি পণ্য উৎপাদনকারি শিল্প স্থাপন করার কৌশল বা নীতিকে বলা হয় রপ্তানি শিল্পায়ন কৌশল (ELI)। আমদানি বিকল্পন ও রপ্তানি ভিত্তিক শিল্পায়ন উভয় কৌশলেরই উদ্দেশ্য হচ্ছে বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে শিল্পায়নের মাধ্যমে দেশকে স্বাবলম্বী ও সমৃদ্ধশালী করা । তা সত্ত্বেও এই দু'টি শিল্পায়ন কৌশলের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। নিম্নে আমদানি বিকল্পন শিল্পয়ন (ISI) এবং রপ্তানি ভিত্তিক শিল্পায়ন (ELI) কৌশলের মধ্যে পার্থক্যসমূহ তুলে ধরা হল ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]