বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকটের কারণ/বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণ

Causes of Electricity Crises in Bangladesh
বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি ভাল নয়। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত মাত্র এদেশে ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় এসেছে। বাকী ৫৩ শতাংশ মানুষ এখনও বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত। কিন্তু যারা বিদ্যুৎ সরবরাহের আওতায় এসেছে তারাও নিয়মিত বিদুৎ পাচ্ছে না। প্রতিদিনই কম বেশী লোডশেডিং করতে হয় । কারণ হচ্ছে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কম অর্থাৎ বিদ্যুৎ ঘাটতি। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণসমূহ নিম্নে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল ।
১। বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস : বাংলাদেশে ৫০/৬০ বছর আগে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগেরই আয়ু শেষ হবার পথে। ফলে উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে মারাত্মক ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে ।
২। বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি ঃ অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিল্পায়ন, নগরায়ণ ও জনসংখ্যা নানাবিধ কারণে বিদ্যুতের চাহিদা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়েনি বলে বিদ্যুৎ ঘাটতি ক্রমাগত বাড়ছে ।
৩। সিস্টেম লস ঃ উৎপাদনের পর যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ভোক্তাদের/গ্রাহকের কাছে পৌঁছায় না তাকে বলা হয় বিদ্যুতের সিস্টেম লস। বিদ্যুতের পরিচালন ও সঞ্চালন ক্ষেত্রে বিভিন্ন দূর্বলতার কারণে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছায় না। বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতির অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় সিস্টেম লস-কে। বর্তমান বাংলাদেশে বিদ্যুতের সিস্টেম লসের পরিমাণ ১৩.৩৪% এর উপরে ।
৪। বিদ্যুৎ ইউনিট বন্ধ ঃ আমাদের বেশকিছু বিদ্যুৎ কারখানা বা ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে । আবার চালু ইউনিটগুলোর কোনটি বছরের কোন কোন সময় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কিংবা জ্বালানির অভাবে বন্ধ থাকে। তাই উৎপাদন কম হয় এবং বিদ্যুৎ ঘাটতি তৈরি হয় ।
৫। ত্রুটিযুক্ত মিটার ঃ বাংলাদেশে বিদ্যুতের মিটারগুলো পুরাতন ও ত্রুটিযুক্ত। এরূপ মিটারের মাধ্যমে অনেক অসাধু গ্রাহক খুব সহজেই বিদ্যুৎ চুরি করতে পারে। তাছাড়া এসব মিটারের মাধ্যমে রিডিং সমস্যা হয় বলে বিদ্যুতের মিটার রিডারগণ বিদ্যুৎ বিলে কারসাজি করতে পারে ।
৬। বিদেশী বিনিয়োগ হ্রাস ও বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে প্রচুর অর্থ দরকার। কিন্তু দাতা ও বিদেশী সংস্থাগুলো নতুন করে কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে এগিয়ে আসছে না। যেসব কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে তারাও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও সরকারের সিদ্ধান্তের দীর্ঘসূত্রিতায় পিছিয়ে গেছে। ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না । তাই বিদ্যুৎ ঘাটতি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে গেছে ।
৭। প্রাকৃতিক গ্যাসের অভাব ঃ বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম উপাদান হল প্রাকৃতিক গ্যাস । কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোতে বিদ্যুতের উৎপাদন কমে যায়। ফলে বিদ্যুৎ সংকট ঘনীভূত হয় ।
৮। বিদ্যুৎ চুরি : বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যার জন্য দায়ী কারণগুলোর মধ্যে শিল্পকারখানায় ও বস্তি তে বিদ্যুৎ চুরি অন্যতম। শিল্পকারখানার মালিকেরা বিদ্যুৎ বিভাগের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যোগসাজশে মিটার টেম্পারিং করে বিদ্যুৎ চুরি করে । ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতি তৈরি হয় এবং সরকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় ।
৯। ফারনেস অনেলের অভাব ঃ বাংলাদেশে কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্রকল্প এবং অন্যান্য বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর বেশ কয়েকটিতে জ্বালানী হিসাবে ফারনেস অয়েল ব্যবহার করা হয় । বিগত বছরগুলোতে দাম বাড়ার কারণে ফারনেস অয়েল সরবরাহ কমে যায় এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনও কমে যায় বলে বিদ্যুৎ ঘাটতি ত্বরান্বিত হয়েছে।
১০ । অদক্ষতা ও দুর্নীতি ঃ বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিতরণ ও বিদ্যুৎ বিল আদায়ের সাথে জড়িত কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের অদক্ষতা ও দুর্নীতি বিদ্যুৎ ঘাটতির জন্য অনেকাংশে দায়ী । বাংলাদেশে সর্বাধিক দুর্নীতিগ্ৰস্ত খাতগুলোর মধ্যে বিদ্যুৎ খাত অন্যতম দুর্নীতিগ্ৰস্ত ।
১১ । প্রশিক্ষণের অভাব ঃ বিদ্যুৎ বিভাগে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না । কিন্তু প্রশিক্ষণ না দিলে তাদের মেধার বিকাশ ঘটবে না এবং বিদ্যুৎ পরিস্থিতিরও তেমন কোন উন্নতি হবে না।
১২। বণ্টন ব্যবস্থার ত্রুটি ঃ বাংলাদেশে বিদ্যুতের বন্টন ব্যবস্থায় যথেষ্ট ত্রুটি রয়েছে । ফলে বিদ্যুতের সরবরাহে মাঝে মাঝে বিঘ্ন ঘটে ।
১৩। কাপ্তাই হ্রদের পানি প্রবাহ হ্রাস : বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদের পানির উচ্চতা কমে যাওয়ায় কর্ণফুলি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবগুলো ইউনিট একত্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে না । তাই দেশের একমাত্র পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কর্ণফুলী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হয় এবং বিদ্যুৎ ঘাটতি দেখা যায় ।
১৪ । অনুন্নত ক্যাবল : আমাদের দেশের বিদ্যুতের ক্যাবলগুলো অনেক পুরাতন ও নিম্নমানের । অনুন্নত ও পুরাতন ক্যাবলের কারণে বৈদ্যুতিক সর্ট-সার্কিটের ক্যাবল পুড়ে যায় এবং দুর্ঘটনা ঘটে । মাঝে মাঝে দুর্ঘটনার ফলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় ।
১৫ । বিশেষজ্ঞের অভাব ঃ বাংলাদেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণে বিশেষজ্ঞের অভাব রয়েছে। এ কারণে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায় । উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতির বহুবিধ কারণ রয়েছে। তবে প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেলের সমস্যা, পুরাতন কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়া, নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু না হওয়া, দুর্নীতি ও অদক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক কমিটমেন্টের অভাবকেই মূলত বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ঘাটতির প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]