বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি দূরীকরণের উপায়

Means to Reduce Power Shortage in Bangladesh
একটি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে বিদ্যুৎ। বাংলাদেশ এর ব্যতিক্রম নয়। কাজেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে চাইলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট/ঘাটতি দূরীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সমস্যা দূরীকরণের জন্য নিম্নোক্ত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করা যায়।
১। উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি : পুরনো/বিদ্যমান বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সকল ইউনিট যেন সবসময় চালু থাকে তার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । প্রয়োজনে পুরনো ইউনিটগুলোর যান্ত্রিক ত্রুটি মেরামত করে উৎপাদন বাড়াতে হবে ।
২। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি : ক্রমবর্ধমান চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারলে বিদ্যুৎ ঘাটতি দূর করা সম্ভব হবে । উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া বিদ্যুৎ সংকট দূর করার কোন উপায় নেই ।
৩। বন্ধ ইউনিটগুলো চালু : যে সকল বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট বা কারখানা বন্ধ রয়েছে সেগুলো চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে । বন্ধ ইউনিটগুলো চালু করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারলে বিদ্যুতের ঘাটতি দূর করা সম্ভব হবে ।
৪। সিস্টেম লস দূরীকরণ ঃ সিস্টেম লসের কারণে প্রতি বছর বিপুল পরিমাণে অর্থ প্রাপ্তি থেকে বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো বঞ্চিত হচ্ছে। এই কারণে বিদ্যুৎ সংকট কাটিয়ে উঠা যাচ্ছে না। তাই বিদ্যুতের সিস্টেম লস কমিয়ে আনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে ।
৫। বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য সচেতনতা তৈরি : বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার জন্য জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে । প্রয়োজনে প্রচার মাধ্যমে, পত্রিকা, টেলিভিশন ইত্যাদির মাধ্যমে জনগণকে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হবার পরামর্শ দিতে হবে।
৬। পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ ঃ বিদ্যুৎ উৎপাদনের অন্যতম উপাদান হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস। গ্যাস নির্ভর বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় গ্যাস সরবরাহ করা গেলে বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে । ফলে বিদ্যুৎ সংকট নিরসন করা সম্ভব হবে।
৭। প্রিপেইড মিটারের ব্যবস্থা ঃ পুরানো ত্রুটিযুক্ত মিটারের পরিবর্তে প্রিপেইড মিটার প্রতিস্থাপন করলে বিল জালিয়াতি করা সম্ভব হবে না। বিল সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা গেলে বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন আরও দ্রুত হবে ।
৮। দুর্নীতি দমন ঃ বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ বিভাগে বিরাজমান সীমাহীন দুর্নীতি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তা করা সম্ভব হলে বিদ্যুতের উৎপাদন ও রাজস্ব আয় বাড়বে। সেই সাথে বিদ্যুতের অপচয় ও ঘাটতি কমে আসবে ।
৯। নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্ৰ তৈরি : পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো চালু রাখার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নতুন নতুন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে। শুধু গ্যাস নির্ভর না থেকে কয়লা নির্ভর ও পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
১০। বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ : বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে সরকারকে আন্তরিকভাবে সহ শর্তে বিদেশী বিনিয়োগকে আমন্ত্রণ জানাতে হবে। এক্ষেত্রে সরকার সিদ্ধান্তহীনতায় না থেকে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার দিকে মনোযোগী হবে। আমলাতিন্ত্রক জটিলতা দূর করতে হবে।
১১। অবৈধ বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ : শহরাঞ্চলে বিশেষ করে বিভাগীয় শহরগুলোতে কারখানা, শপিং মল, মার্কেট ও বস্তিসহ আবাসিক ও অনাবাসিক উভয়ক্ষেত্রে প্রচুর অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। যার কারণে বিদ্যুতের ঘাটতি হচ্ছে। তাই কঠোর হস্তে এ সকল অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তা করা সম্ভব হলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট বহুলাংশে হ্রাস পাবে।
১২। বিদ্যুৎ চুরি রোধ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের সাথে যোগসাজশ করে কিছু অসাধু গ্রাহক বিদ্যুৎ চুরি করে। এর ফলে সৎ ও নিষ্ঠাবান গ্রাহকরা ভোগান্তির স্বীকার হয়। তাই বিদ্যুৎ চুরি বন্ধে নিয়মিত মনিটরিং ও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৩। বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহ প্রদান ও সরকারের একার পক্ষে বিদ্যুৎ সংকট কাটানো সম্ভব না হলে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদেরকে বিদ্যুৎখাতে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা যেতে পারে। ঋণ সুবিধা, কর অব্যাহতিসহ অন্যান্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে বেসরকারী উদ্যোক্তারাও বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এগিয়ে আসবে এবং বিদ্যুৎ সংকট দূর করা সহজ হবে।
১৪। আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন : বহু আগের পুরনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে বিকল ও ত্রুটিযুক্ত যন্ত্রপাতি সরিয়ে আধুনিক ও উন্নত যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন করা দরকার। তাহলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে এবং বিদ্যুৎ ঘাটতি কমে আসবে।
১৫। ফার্নেস অয়েল সরবরাহ : জ্বালানি তেল নির্ভর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনমত ও নিয়মিত ফার্নেস অয়েল সরবরাহ করা সম্ভব হলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়বে এবং বিদ্যুৎ সংকট দূর করা সহজ হবে। উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের বিদ্যুৎ সংকট দূর করা কিংবা বিদ্যুৎ খাতের রাতারাতি উন্নয়ন করার কোন উপায় নেই । তবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধানে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে পারলে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে । মনে রাখা দরকার যে, আধুনিক শিল্পোন্নত ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাইলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
১৬। দক্ষতা বৃদ্ধি : বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ বিভাগে কর্মরত সকল প্রকৌশলী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও কারিগরদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য দেশে-বিদেশে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে প্রকৌশলী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠানো যেতে পারে। আবার বিদেশ থেকে দক্ষ প্রকৌশলী ও কারিগর এনেও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা যেতে পারে ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]