তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ সেক্টর
Oil, Gas and Mineral Resources Sector
দেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণ করা, তেল ও গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান/আবিষ্কার, উত্তোলন, উন্নয়ন ও মূল্যায়ন করে জ্বালানি মজুদ বৃদ্ধি করা তেল, গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের মূল্য উদ্দেশ্য। জ্বালানির জন্য প্রাকৃতিক
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসের বিবরণ
Description of Natural Gas in Bangladesh
হয়েছে।
প্রাকৃতিক গ্যাসে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ । জুন ২০১৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৬টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত বাংলাদেশের সকল গ্যাসক্ষেত্রে উত্তোলনযোগ্য মোট গ্যাস সঞ্চিতির পরিমাণ প্রায় ২৭.১২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট বিশেষজ্ঞদের ধারণা বাংলাদেশে আরও অনেক গ্যাসক্ষেত্র অনাবিষ্কৃত রয়েছে ।
অবস্থান : বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলো দেশের পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাংশে অবস্থিত । এর মধ্যে ৬টি সিলেট জেলায়, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও নরসিংদীতে ২টি করে এবং হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, গাজীপুর ও ফেনীতে একটি করে অবস্থিত ।
উৎপাদন ঃ জুন ২০১৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৬টি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হলেও তিতাস, বাখরাবাদ, হবিগঞ্জ, মেঘনা, নরসিংদী, রশিদপুর, সিলেট, জালালাবাদ, কৈলাশটিলা, শালদা নদী, বিয়ানীবাজার, বিবিয়ানা, ফেঞ্চুগঞ্জ, মৌলভীবাজার, বাংগুরা, শাহবাজপুর, সেমুতাং, সুন্দলপুর, শ্রীকাইল এ ১৯টি গ্যাসক্ষেত্র হতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে ।
বাংলাদেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্যাস উত্তোলিত হয় তিতাস গ্যাসক্ষেত্র থেকে এবং সবচেয়ে কম গ্যাস উত্তোলিত হয় কামতা গ্যাসক্ষেত্র থেকে । সঞ্চিতির পরিমাণের দিক থেকে তিতাস বৃহত্তম এবং বেগমগঞ্জ সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম গ্যাসক্ষেত্র। বাংলাদেশে উত্তোলিত গ্যাসে মিথেনের পরিমাণ বেশি বলে অত্যন্ত উন্নতমানের । ফলে শোধন না করেই এগুলোকে ব্যবহার করা যায়। উত্তোলিত গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদনে, শিল্পকারখানার জ্বালানী ও কাঁচামাল হিসেবে, গৃহস্থালী ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয় ।
গ্যাসের ব্যবহার ঃ বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসকে বহুমুখী ব্যবহারের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে। বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস বিভিন্ন শিল্পকারখানা ও গৃহস্থালির জ্বালানি, কাঁচামাল, বিদ্যুৎ উৎপাদন, সিএনজি হিসেবে যানবাহনে এবং সার ও কীটনাশক ঔষধে ব্যবহার করা হয়। তবে সর্বাধিক গ্যাস ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে ।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাসক্ষেত্রসমূহ
Natural Gas Plants of Bangladesh
নিম্নে বিভিন্ন গ্যাসক্ষেত্রের বিবরণ দেওয়া হলো ।
(ক) বর্তমানে উৎপাদনে আছে
১। হবিগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র : হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জে ১৯৬২ সালে এ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। এ ক্ষেত্রে সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ ৩৮৫২ বিলিয়ন ঘনফুট এবং এটি বাংলাদেশের মোট গ্যাসের সঞ্চিতির ২৮.৫০ শতাংশ । হবিগঞ্জের গ্যাসক্ষেত্রে মিথেনের পরিমাণ ৯৭.৬০ শতাংশ। এ ক্ষেত্র হতে ১২ ইঞ্চি ব্যাসের ৫৬ কিঃমিঃ পাইপ লাইন দ্বারা আশুগঞ্জ সারকারখানা ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে ।
২। তিতাস গ্যাসক্ষেত্র ঃ ১৯৬২ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তিতাস নামক স্থানে এ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় । ফলে এর নাম হয় তিতাস গ্যাস। তিতাস গ্যাসক্ষেত্রে সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ ৫১২৭.৫০ বিলিয়ন ঘনফুট। এর পরিমাণ বাংলাদেশে মোট আবিষ্কৃত গ্যাসের ২৪.৬৩ শতাংশ। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গ্যাসক্ষত্রে। তিতাস গ্যাসে মিথেনের পরিমাণ ৯৭.৩৩ শতাংশ। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, আশুগঞ্জ, ঘোড়াশাল প্রভৃতি এলাকায় গৃহস্থালি ও শিল্পের জ্বালানি হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয় । এছাড়া আশুগঞ্জ, ঘোড়াশাল ও সিদ্ধিরগঞ্জের সার ও তাপ বিদ্যুৎ কারখানায় তিতাস গ্যাস প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয় ।
৩। কৈলাসটিয়া গ্যাসক্ষেত্র : ১৯৬২ সালে সিলেটের অদূরে কৈলাসটিলায় এ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় । এ ক্ষেত্রে সঞ্চিতির পরিমাণ ১৯০৩.৩০ বিলিয়ন ঘনফুট । এটি বাংলাদেশের মোট সঞ্চিত গ্যাসের ৯.১৪ শতাংশ এবং এতে মিথেনের পরিমাণ ৯৫.৫৭ শতাংশ । এ ক্ষেত্র হতে ৮ ইঞ্চি ব্যাসের ১৩ কিঃমিঃ পাইপ লাইন দ্বারা সিলেট শহরে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে ।
৪। বাখরাবাদ গ্যাসক্ষেত্র : এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ গ্যাসক্ষেত্র। ১৯৬৯ সালে কুমিল্লা জেলার বাখরাবাদে এটি আবিষ্কৃত হয়। এ গ্যাসক্ষেত্রের সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ ১০৪৯ বিলিয়ন ঘনফুট। এটি বাংলাদেশের মোট সঞ্চিত গ্যাসের প্রায় ৫.০৪ শতাংশ ।
বাখরাবাদ গ্যাসে মিথিনের পরিমাণ ৯৪.২০ শতাংশ। এ গ্যাসক্ষেত্র হতে ২৪ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ১৭৭ কিঃমিঃ লম্বা পাইপ লাইনের সাহায্যে চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সরবরাহ লাইন হতে কুমিল্লা, চাঁদপুর, লাকসাম, ফেনী ও সিতাকুণ্ডে গ্যাস সরবরাহ করা হবে ।
এছাড়া ২০ ইঞ্চি ব্যাসের ৬৯ কিঃমিঃ লম্বা বাখরাবাদ ডেমরা সিটি গেট গ্যাস পাইপ লাইনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে । এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহায়তায় এ প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় হয়েছে প্রায় ১২০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা ।
৫। রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্র ঃ ১৯৬০ সালে মৌলভীবাজারে রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। এ ক্ষেত্রের সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ ১৪০১ বিলিয়ন ঘনফুট। এটি বাংলাদেশের মোট সঞ্চিত গ্যাসের ৬.৭৩ শতাংশ । এতে ৯৮% ভাগ মিথেন রয়েছে। এ গ্যাসক্ষেত্র হতে গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে ।
৬। সিলেট গ্যাসক্ষেত্র : সিলেট জেলার হরিপুর নামক স্থানে এ গ্যাসক্ষেত্র অবস্থিত। ফলে এটি হরিপুরের গ্যাস নামেই পরিচিত । ১৯৫৫ সালে এ গ্যাসক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়। এ ক্ষেত্রে মোট গ্যাস সঞ্চিতির পমিাণ ৪৭৮.৭০ বিলিয়ন ঘনফুট এবং এটি দেশে মোট গ্যাস সঞ্চয়ের প্রায় ২.৩০ শতাংশ। হরিপুরের গ্যাসক্ষেত্র অত্যন্ত উন্নতমানের এবং এতে মিথেনের পরিমাণ শতকরা ৯৬.৬৩ শতাংশ । হরিপুরের গ্যাসক্ষেত্র হতে ৫৩ কি:মি: লাইনের মাধ্যমে ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় ৮ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের পাইপের দ্বারা গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে । এ গ্যাস সার তৈরির কাঁচামাল ও জ্বালানি হিসেবে সার কারখানায় ব্যবহৃত হয় ।
৭। নরসিংদী গ্যাসক্ষেত্র ঃ এ গ্যাসক্ষেত্রে দেশের মোট গ্যাস সঞ্চিতির ০.৭৮ শতাংশ গ্যাস সঞ্চিত আছে এবং সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ ২১৫ বিলিয়ন ঘনফুট । ১৯৯০ সালে এ গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার হয়েছে ।
৮। জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র : ১৯৮৯ সালে সিলেট অঞ্চলে এ গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়েছে । এ গ্যাসক্ষেত্রে মোট সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ প্রায় ৮৩৬.৫০ বিলিয়ন ঘনফুট যা দেশের মোট সঞ্চিতির ৪.০২ শতাংশ । ৯। মেঘনা গ্যাসক্ষেত্র : ১৯৯০ সালে এ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এ গ্যাসক্ষেত্রে মোট সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ ১১৯.৬০ বিলিয়ন ঘনফুট। দেশের মোট গ্যাস সঞ্চিতির প্রায় ০.৫৭ শতাংশ এ গ্যাসক্ষেত্রে সঞ্চিত আছে ।
১০। বিয়ানীবাজার গ্যসক্ষেত্র : সিলেটের বিয়ানীবাজারে ১৯৮২ সালে আবিষ্কৃত এ গ্যাসক্ষেত্রে সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ ১৭০.১০ বিলিয়ন ঘনফুট। বাংলাদেশের মোট গ্যাস সঞ্চয়ের প্রায় ০.৮২ শতাংশ এ
ক্ষেত্রে মজুদ আছে ।
১১। মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র : ১৯৯৬ সালে মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জের মাগুরছড়ায় এই গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়। এই গ্যাসক্ষেত্রে মজুদ গ্যাসের পরিমাণ ৩৫৯.৬০ বিলিয়ন ঘনফুট। ১৯৯৭ সালে এই গ্যাসক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটলেও এটি বর্তমানে গ্যাস উৎপাদন রয়েছে ।
১২। সালদা নদী গ্যাসক্ষেত্র : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সালদা নদী গ্যাসক্ষেত্রে সঞ্চিতির পরিমাণ প্রায় ১১৬.১০ বিলিয়ন ঘনফুট ।
১৩। বাংগুরা গ্যাসক্ষেত্র : কুমিল্লা জেলার মুরাদনগরে এটি অবস্থিত। সম্প্রতি একটি কূপের মাধ্যমে এ ক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করা হচ্ছে। এ গ্যাস ক্ষেত্রে ৩০৯ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুত আছে ৷
১৪। ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র : ১৯৮৮ সালে এ ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এতে সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ ২৮২.৮০ বিলিয়ন ঘনফুট যা বাংলাদেশের মোট গ্যাসের প্রায় ১.৩৬ শতাংশ ।
১৫ । বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র ঃ সিলেটের বিবিয়ানাতে এই গ্যাসক্ষেত্রটি ১৯৯৮ সালে আবিষ্কৃত হয়। এই গ্যাসক্ষেত্রে মোট মজুদের পরিমাণ প্রায় ২৪০০.৮০ বিলিয়ন ঘনফুট।
১৬। শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র : ১৯৯৫ সালে এই গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। অত্যন্ত সম্ভাবনাময় গ্যাসক্ষেত্রটির মোট সঞ্চিতির পরিমাণ ৪৬৫.৬০ বিলিয়ন ঘনফুট ।
১৭। সেমুতাং গ্যাসক্ষেত্র : খাগড়াছড়ির সেমুতাং-এ অবস্থিত এই গ্যাসক্ষেত্রটি ১৯৬৯ সালে আবিষ্কৃত হয় । এ গ্যাসক্ষেত্রে সঞ্চয়ের পরিমাণ ১৫০.৩০ বিলিয়ন ঘনফুট। এতে মিথেনের পরিমাণ ৯৬.১৪ শতাংশ। এ গ্যাসক্ষেত্র হতে গ্যাস উত্তোলন শুরু হয়নি ।
১৮। সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র ঃ এই গ্যাসক্ষেত্রে প্রাথমিক মোট মজুদের পরিমাণ প্রায় ৬২.২০ বিলিয়ন ঘনফুট এবং প্রাথমিক উত্তোলনযোগ্য মজুদের পরিমাণ প্রায় ৩৫.১০ বিলিয়ন ঘনফুট ।
১৯। শ্রীকাইল গ্যাসক্ষেত্র ঃ এই গ্যাসক্ষেত্রে প্রাথমিক মোট মজুদের পরিমাণ প্রায় ২৩০ বিলিয়ন ঘনফুট এবং প্রাথমিক উত্তোলনযোগ্য মজুদের পরিমাণ প্রায় ১৬১ বিলিয়ন ঘনফুট । (খ) উৎপাদনে যায়নি
২০। কুতুবদিয়া গ্যাসক্ষেত্র ঃ কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া দ্বীপে ১৯৭৭ সালে ৪৫.৫০ বিলিয়ন ঘনফুট সঞ্চিতির এ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়। এটি বাংলাদেশে মোট সঞ্চিত গ্যাসের ০.২২ শতাংশ। কুতুবদিয়ার গ্যাসে ৯৫.৭২ শতাংশ মিথেন আছে ।
২১ । বেগমগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র : ১৯৮০ সালে নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জে এটি আবিষ্কৃত হয় । এই ক্ষেত্রে সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ ৩২.৭০ বিলিয়ন ঘনফুট । এটি বাংলাদেশের মোট সঞ্চিত গ্যাসের প্রায় ০.১৬ শতাংশ ।
২২। রূপগঞ্জ গ্যাসক্ষেত্র ঃ এই গ্যাসক্ষেত্রে প্রাথমিক মোট মজুদের পরিমাণ প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ঘনফুট এবং প্রাথমিক উত্তোলনযোগ্য মজুদের পরিমাণ প্রায় ৩৩.৬০ বিলিয়ন ঘনফুট ।
(গ) উৎপাদন স্থগিত
২৩। ছাতক গ্যাসক্ষেত্র ঃ ১৯৫৯ সালে সুনামগঞ্জের ছাতকে এ গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় । ছাতক গ্যাসক্ষেত্রে সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ ৪৭৩.৯০ বিলিয়ন ঘনফুট। এতে মিথেনের পরিমাণ ৯৭.৯০% । বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রের গ্যাসই সর্বোৎকৃষ্ট। এ ক্ষেত্র হতে ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ৪ ইঞ্চি পাইপের সাহায্যে ১৯ কিঃমিঃ পাইপ লাইন দ্বারা গ্যাস সরবরাহ করা হতো । বর্তমানে উৎপাদন স্থগিত ।
২৪ । সাংগু কূপ গ্যাসক্ষেত্র ঃ চট্টগ্রামের সন্নিকটে সাগর বক্ষে এই গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মোট সঞ্চিতির পরিমাণ ৮৪৮.৫০ বিলিয়ন ঘনফুট। এক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন বর্তমানে স্থগিত আছে । ২৫ । ফেনী গ্যাসক্ষেত্র ঃ ফেনীতে ১৯৬১ সালে এ গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয় । এতে মোট সঞ্চিত গ্যাসের পরিমাণ ১৩০ বিলিয়ন ঘনফুট এবং বাংলাদেশের সঞ্চিত গ্যাসের প্রায় ০.৬২ ভাগ। বর্তমানে উৎপাদন স্থগিত ।
২৬ । কামতা গ্যাসক্ষেত্র : ১৯৬২ সালে গাজীপুর জেলার টঙ্গীতে কামতা নামক স্থানে এ ক্ষেত্রটি আবিষ্কৃত হয়। এতে মোট গ্যাস সঞ্চয়ের পরিমাণ ৫০.৩০ বিলিয়ন ঘনফুট । এটি বাংলাদেশের মোট গ্যাস সঞ্চয়ের প্রায় ০.২৪ ভাগ। এক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন বর্তমানে স্থগিত আছে ।
১০.৩২ বর্তমান মজুত পরিস্থিতিতে গ্যাস রপ্তানী সমর্থনযোগ্য কি না?
Is gas export supportable in the current gas reserve scenario? বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান খনিজ সম্পদ হচ্ছে প্রাকৃতিক গ্যাস, সাম্প্রতিকালে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানী নিয়ে জোরালো বিতর্ক চলছে। রাজনীতিবিদ, প্রকৌশলী, সুশীল সমাজ ও পত্র পত্রিকাগুলো গ্যাস রপ্তানি নিয়ে নানারকম তর্কবিতর্ক করছে। নিমে বাংলাদেশের গ্যাস রপ্তানির পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিসমূহ সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল।
গ্যাস রপ্তানির পক্ষে যুক্তি
১। প্রাকৃতিক গ্যাস যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে তাহলে সেগুলো উত্তোলন করে বিদেশে রপ্তানি করা গেলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব এবং বৈদেশিক মুদ্রা কাজে লাগিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা যায় ।
২। গ্যাস রপ্তানি করতে পারলে দেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ও জীবযাত্রার মান বাড়বে।
৩। যেভাবে বিকল্প জ্বালানী আবিষ্কার হচ্ছে তাতে গ্যাস এখনই রপ্তানি না করলে গ্যাসের দাম ভবিষ্যতে কমে যেতে পারে।
৪। উত্তোলন বাড়ালে গ্যাসের রিজার্ভও বাড়বে। যেমন- তিতাস গ্যাস ফিল্ডের শুরুতে ৩৫০০ পিএসআই চাপ ছিল । এতদিন গ্যাস উত্তোলনের পর গ্যাসের চাপ কমে আসার কথা। কিন্তু বর্তমানে তিতাস গ্যাস ফিল্ডে এখনও ২৭০০ পিএসআই চাপ রয়েছে। কাজেই পুরনো গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে এবং অনাবিষ্কৃত গ্যাস ক্ষেত্রগুলো আবিষ্কার করে উৎপাদনে আসলে গ্যাস রপ্তানি করা সম্ভব ।
৫। বেশি সময়ের জন্য গ্যাসের মজুদ রাখা ঠিক হবে না । কাজেই ৫০ বছরের মজুদের ধারণাটি বিবেচনা করার কোন যৌক্তিক কারণ নেই ।
গ্যাস রপ্তানির বিপক্ষে যুক্তি
১। গ্যাসের বর্তমান যে মজুদ আছে এবং যে হারে বর্তমানে গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে তাতে আগামী ১৫-২০ বছর পরে গ্যাসের মজুত শেষ হয়ে যাবে । তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে গ্যাস রপ্তানি করা ঠিক হবে না ।
২। গ্যাসের অভাবে গ্যাসভিত্তিক সার কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। সার আমদানির জন্য বিপুল অর্থ খরচ করতে হবে । সারের অভাবে আমাদের কৃষি উৎপাদনে এক চরম বিপর্যয় দেখা দেবে ।
৩। বাসগৃহের বিদ্যুৎ বিল ৪/৫ গুণ বৃদ্ধি পাবে । যেমন- একজন যিনি মাসে ১০০০ টাকা বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছেন, তাকে তখন দিতে হবে ৩৫০০-৪০০০ টাকা। রান্নার জন্য এখন গ্যাস বিল মাসে ৪৫০ টাকা তখন কাঠ দিয়ে রান্না করতে অন্তত ২০০০/২৫০০ টাকা খরচ হবে । অধিকাংশ লোকের পক্ষে এই ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হবে না । এমতাবস্থায় কোন অবস্থাতেই গ্যাস রপ্তানি করা যাবে না ।
৪। গ্যাস রপ্তানি করলে এক সময় আমাদেরকে শুধুমাত্র আমদানিকৃত জ্বালানি তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে । বিদ্যুতের মূল্য ৩/৪ গুণ বা তারও বেশি বৃদ্ধি পাবে, ফলে শিল্প কারখানার উৎপাদন ব্যয় ২/৩ গুণ বেড়ে যাবে। এতে এদেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই গ্যাস রপ্তানি করা উচিত হবে না ।
৫। নোবেল জয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ প্রফেসর স্টিগলিজ বাংলাদেশ সফরকালে বাংলাদেশকে গ্যাস রপ্তানির ব্যাপারে সর্তক করে দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের গ্যাস রপ্তানি হবে চরম বোকামী ও আত্মঘাতী ।
শক্তি ও জ্বালানি
689
৬। বাংলাদেশের বেশীর ভাগ মানুষ এখনও গ্যাসের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাই গ্যাস রপ্তানির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলে সাধারণ জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়বে যা নিয়ন্ত্রণ করা যে কোন সরকারের জন্য কষ্টকর হতে পারে ।
৭'। জ্বালানি হিসেবে কাঠের ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বনাঞ্চল উজার হয়ে যাবে। যার জন্য আমাদের পরিবেশ বিপন্ন হবে।
৮। গ্যাস রপ্তানি করে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব, দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে তার চেয়ে অনেক বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব। কাজেই গ্যাস রপ্তানির চিন্তা বাদ দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার আরও বাড়াতে হবে ।
প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহারের কতিপয় প্রস্তাবনা/সুপারিশ
Some Proposals/Prescriptions about the Consumption of Natural Gas
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন প্রসঙ্গে নিম্নোক্ত পদক্ষেপসমূহ অবলম্বনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি সমৃদ্ধশালী ও উন্নত দেশে পরিণত করা সম্ভব ।
১। দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে মানুষের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ বাজার সৃষ্টি করে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়া যেতে পারে।
২। প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে এদেশের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ, সার, শিল্প ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প কমপ্লেক্স তৈরি করা সম্ভব ।
৩। প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলসহ সমগ্রদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিতকরণ করা যেতে পারে ।
৪। স্বার্থান্বেষী বিদেশী বেনিয়াদের উৎপাদন ও বন্টন চুক্তি (পিএসসি) বাতিল করে দেশীয় কোম্পানির (বাপেক্স, পেট্রোবাংলা) মাধ্যমে প্রতিবছর অন্তত একটি অনুসন্ধান কূপ খনন করে দেশীয় প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন ও ব্যবহারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ করা যেতে পারে ।
৫। খনিজ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অধ্যায়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকারি উদ্যোগে উন্নত দেশসমূহের আধুনিক প্রযুক্তি ও উন্নত কৌশল সম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাকরণের মাধ্যমে এদেশকে একটি স্বয়ম্ভর ও আত্মনির্ভরশীল গ্যাস অনুসন্ধান, উত্তোলন ও ব্যবহারকারী স্বনির্ভর দেশে পরিণত
করা যেতে পারে।
৬। প্রাকৃতিক গ্যাসকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তরলীকরণ করে ব্যাপকভাবে বাস, ট্রাক, টেম্পু, স্কুটার প্রভৃতি যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে এদেশের পরিবেশ দূষণমুক্ত ও গ্যাস নির্ভর অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা সম্ভব।
৭। খনিজ সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারকে পরামর্শ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতামত প্রদানের জন্য ভূ-তত্ত্ববিদ, পরিবেশবিদ, অর্থনীতিবিদ, খনি বিশেষজ্ঞ, আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ এবং নিঃস্বার্থ দেশ প্রেমিক সরকারি ও বিরোধী দলীয় জনপ্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী স্থায়ী প্রাথমিক জ্বালানি শক্তি কমিশন গঠন করা যেতে পারে ।
পরিশেষে বলা যায়, প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের অন্যতম প্রাথমিক জ্বালানি শক্তি সম্পদ । এটা নবায়নযোগ্য সম্পদ নয়। কাজেই উত্তোলন ও ব্যবহারজনিত কারণে প্রাকৃতিক গ্যাস এক সময় অবশ্যই নিঃশেষিত হয়ে যাবে। সুতরাং বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম মূল চালিকাশক্তি প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু উত্তোলন ও ব্যবহারের মাধ্যমেই এদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করে একটি উন্নত ও স্বনির্ভর দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।
FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত