বাংলাদেশের শক্তি সম্পদ Power Resources of Bangladesh

যে সম্পদ কলকারখানা, পরিবহণ, যোগাযোগসহ সকল ক্ষেত্রে জ্বালানি ও শক্তির যোগান দেয় সেগুলোকে : বলা হয় শক্তি সম্পদ। শক্তি সম্পদের প্রধান উপাদান হচ্ছে দুটি। যথাঃ (ক) বিদ্যুৎ ও (খ) জ্বালানি ।
বাংলাদেশে শক্তি সম্পদ তেমন একটা নেই। অর্থাৎ বাংলাদেশ শক্তি সম্পদে সমৃদ্ধ নয়। বাংলাদেশের শক্তি সম্পদের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল, কয়লা, বিদ্যুৎ, আণবিক শক্তি, সূর্যকিরণ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে বেশকিছু গ্যাস ক্ষেত্র রয়েছে। তাছাড়া অনেক অনাবিষ্কৃত গ্যাস ও তেলক্ষেত্র রয়েছে। রয়েছে কর্ণফুলি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ গর্ব করার মত অনেকগুলো কয়লা খনি রয়েছে। তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও নানারকম আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য শক্তি সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষি উন্নয়ন, শিল্প উন্নয়ন, পল্লী উন্নয়ন, যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ব্যবসা বাণিজ্যের উন্নয়ন এবং শিক্ষা সংস্কৃতি উন্নয়নের জন্য শক্তি সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই শক্তি সম্পদের বিভিন্ন উৎসকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশও শক্তি সম্পদে সমৃদ্ধি জাতিতে পরিণত হবে ।
বাংলাদেশের শক্তি সম্পদের বিভিন্ন উৎস Different Sources of Power Resources in Bangladesh
কোন একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হলো শক্তি সম্পদ। যেসব সম্পদ থেকে তাপ ও বিদ্যুৎ শক্তি উৎপন্ন হয়, সেগুলোকে শক্তি সম্পদ বলে। যে দেশ শক্তি সম্পদে যত বেশি সমৃদ্ধ সেই দেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তত উন্নত। শক্তি সম্পদ ব্যতীত কোন দেশেরই অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব নয় । শক্তি সম্পদের উৎস ছয়টি । যথা- (১) কয়লা, (২) খনিজ তৈল, (৩) প্রাকৃতিক গ্যাস, (৪) বিদ্যুৎ, (৫) আণবিক শক্তি, (৬) সৌর শক্তি । নিম্নে এগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো ।
১। প্রাকৃতিক গ্যাস ঃ প্রাকৃতিক গ্যাস বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সম্পদ, যা দেশের মোট বাণিজ্যিক জ্বালানি ব্যবহারের শতকরা প্রায় ৭৫ ভাগ পূরণ করে । এ যাবৎ আবিষ্কৃত ২৩টি গ্যাস ফিল্ডের উত্তোলনযোগ্য সম্ভাব্য ও প্রমাণিত মজুদের পরিমাণ ২৬.৭৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে ডিসেম্বর ২০১১ পর্যন্ত ১০.১৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে । ফলে বর্তমানে (জানুয়ারি, ২০১২ সময়ে) ১৬.৬০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট প্রমাণিত মজুদ গ্যাস অবশিষ্ট রয়েছে ।
বিদ্যুৎ উৎপাদন, সার কারখানা, শিল্প ও গৃহস্থালি খাতে জ্বালানির প্রধান উৎস হলো প্রাকৃতিক গ্যাস। গ্যাসের ব্যাপক ব্যবহারের কারণে নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্রের অনুসন্ধন এবং আবিষ্কৃত গ্যাস ক্ষেত্রের উন্নয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গ্যাস সম্পদের দ্রুত অনুসন্ধান ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সারা দেশকে ২৩টি ব্লকে বিভক্ত করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে সুবিধাজনক শর্তে উৎপাদন বন্টন চুক্তি আওতায় বিদেশি বিনিয়োগের অনুমতি প্রদান করা হয়েছে । এর ফলে বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির পক্ষ থেকে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া গেছে ।
২। বিদ্যুৎ : বিদ্যুৎ শক্তি উন্নয়নের চাবিকাঠি। যে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো বিদ্যুৎ শক্তির পরিকল্পিত ব্যবহার। এর ব্যবহার এখন শিল্পের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ নেই ৷ কৃষি উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ শক্তির চাহিদা সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে কৃষিখাতে প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিদ্যুৎ শক্তির অবদান অনস্বীকার্য। আমাদের দেশে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) এবং ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ (ডেসা) এবং পিজিসিবি এই সংস্থাগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার সাথে প্রধানত জড়িত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি খাতকেও এ ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত করে দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ক্তি উৎপাদন ও ব্যবহারের কার্যক্রমকে জোরদার করা হচ্ছে। আগামী ২০২০ সালে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়া সরকারের অভীষ্ট লক্ষ্য ।
৩। কয়লা ? কয়লা শক্তির অন্যতম ।
জামালগঞ্জে ১৯৬২ সালে বাংলাদেশের বৃহত্তম কাফেরটি আবিষ্কৃত পর্যন্ত অভাব সেখান থেকে কয়লা উত্তোলন সব
বড় পুকুরিয়া কয়লা খনির কাজ সমাপ্ত ১ মিলিয়ন
বলে আশা করা হয়েছে। অন্যদিকে মধ্যপাড়া কঠি
উত্তোলন করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলার পালঘাট, পামাকাঠী ও ফরম ान জেলার শিবগঞ্জ, বগুড়া জেলার কোচমা, নওগা জেলার পত্নীতলা, রংপুর জেলার খ্যাপালপুরে করলা সন্ধান পাওয়া গেছে ।
8 নিজ খনিজ তেল বাংলাদেশের শক্তি সম্পদের একটি অন্যতম উৎস। বাংলাদেশ খনিজ তেলের যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সম্প্রতি সিলেটের হরিপুরে একটি তুলে জেল পাওয়া যায় এবং সেই ক্ষেত্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০০ ব্যারেল অশোধিত তেল উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ছাा চট্টগ্রামের নামশবানী, সিলেটের পাথারিয়া এবং সমুদ্র উপকূল অঞ্চলে খনিজ তেলের অনুসন্ধান
৫। পানি বিদ্যুৎ ঃ বাংলাদেশে শক্তি সম্পদের অন্যতম উৎস হলো পানি বিদ্যুৎ। আধুনিক অনেক দেশেই নদীতে বাধ দিয়ে জল বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বাংলাদেশেও চট্টগ্রামের কাপ্তাই নামক স্থানে কর্ণফুলি নদীর স্রোত থেকে পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। জলবিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ অন্যান্য বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচের চেয়ে কম, তাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য জল বিদ্যুতের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে সাংব ও মাতামুহুরী, সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা নদীতে বাধ দিয়ে পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।
৬। সৌরশক্তি ও শক্তির অপর একটি উৎস হলো সৌরশক্তি। শক্তির এই উৎসের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। তবে বর্তমানে সৌরশক্তি উৎপাদন পরিকল্পনা রয়েছে। সে মোতাবেক ঢাকায় একটি সৌরশক্তি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।
৭। আণবিক শক্তি ও শক্তির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো- আণবিক শক্তি। উন্নত বিশ্বে আণবিক শক্তি, শক্তি উৎপাদনে প্রধান ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে আণবিক শক্তির অভাব থাকলেও বর্তমানে ঢাকায় একটি এবং সাভারে একটি আণবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া পাবনা জেলার রূপপুরে একটি আণবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপনের প্রাথমিক কাজ সমাপ্ত হয়েছে, যা থেকে ৭০ হাজার মেগাওয়াট আণবিক শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের শক্তি সম্পদের বর্তমান অবস্থা Present Scenario of Power Resources in Bangladesh
বাংলাদেশ শক্তি সম্পদে তত উন্নত নয়। বাংলাদেশে শক্তি সম্পদের মধ্যে বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস প্রধান । প্রাকৃতিক গ্যাস ও পানি সম্পদই এদেশের শক্তি সম্পদের প্রধান উৎস। আমাদের দেশে পানি ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বাংলাদেশে দুই ধরনের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে।
(ক) তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প (Thermal Power Project)
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়া সত্ত্বেও নদ নদীগুলোর স্রোতের বেগ কম থাকায় বাংলাদেশ পানি বিদ্যুৎ শক্তিতে সমৃদ্ধি নয়। তাই বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা মিটানোর জন্য তাপ বিদ্যুৎতের উপর নির্ভর করতে হয়। নিম্নে বাংলাদেশের তাপ বিদ্যুতের প্রকল্পসমূহের বিবরণ দেওয়া হলো ।
১। আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর তীরে এই প্রকল্পটি অবস্থিত । এই প্রকল্পটিতে বিদ্যুৎ-উৎপাদনের জ্বালানি হিসাবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে এই প্রকল্পের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১ লক্ষ ২০ হাজার কিলোওয়াট। '
২। ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঃ এই কেন্দ্রটি ঘোড়াশাল নামক স্থানে গড়ে উঠেছে। এই প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা ১ লক্ষ ১০ হাজার কিলোওয়াট। এই প্রকল্পটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা । এই প্রকল্পে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহৃত হয় ।
৩। ভেড়ামারা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঃ কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা নামক স্থানে পদ্মা নদীর তীরে এই প্রকল্পটি গড়ে উঠেছে। এই প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৮৯ কোটি টাকা । ৬০ হাজার কিলোওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এই ফার্নেস প্রকল্পের মাধ্যমে কুষ্টিয়া, পাবনা, যশোর বিদ্যুতায়ন করা হয়ছে। এ কেন্দ্রে জ্বালানী হিসাবে লে, অয়েল, ন্যাপতা ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় ।
৪। সিদ্ধিরগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র : শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে সিদ্ধিরগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবস্থিত। আমেরিকার সাহায্যে কাঁচামাল হিসাবে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে এই প্রকল্পে ৮০ হাজার কিলোওয়াট তাপ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ১২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে।
৫। শাহাজী বাজার তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঃ প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সিলেটের শাহাজী বাজার নামক স্থানে কেন্দ্রটি গড়ে উঠে। এর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ১ লক্ষ ৮০ হাজার কিলোওয়াট। এই প্রকল্পে প্রাকৃতিক গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় ।
৬। চট্টগ্রাম তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঃ চট্টগ্রামের শিকল বাহারে অবস্থিত এই কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ৬০ হাজার কিলোওয়াট । এই কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুতের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকার চাহিদা পূরণ করা হয়। এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি টাকা ।
৭ । গোয়াল পাড়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঃ খুলনা জেলার গোয়াল পাড়ায় ভৈরব নদীর তীরে গড়ে উঠেছে এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র । এই প্রকল্পের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৮০ হাজার কিলোওয়াট । এই প্রকল্পের মাধ্যমে খুলনা শহরের শিল্প এলাকার বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা হয়। প্রকল্পটিতে জ্বালানি হিসাবে ফারনেস ওয়েল, ন্যাপতা, ব্যবহার করা হয় ।
৮। সৈয়দপুর তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র ঃ নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরে অবস্থিত এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ২৭,৫০০ কিলোওয়াট। রংপুর অঞ্চলের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা হয় এই প্রকল্পের মাধ্যমে ।
৯। ঠাকুরগাঁও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র : ঠাকুরগাঁয়ে অবস্থিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় । এই কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ১০ হাজার কিলোওয়াট । এই কেন্দ্রে জ্বালানি হিসাবে তৈল, ফারনেস ওয়েল, ন্যাপতা ব্যবহার করা হয় ।
বাংলাদেশে বর্তমানে যে হারে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই অনুপাতে মোট উৎপাদন বাড়ছে না। ফলে বিদ্যুতের ঘাটতি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং লোডশেডিং একটি স্বাভাবিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সরকার বিদ্যুৎ ঘাটতি কমানোর জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এবং বিদ্যুৎ খাতের লোকসান কমানোর জন্য বেসরকারি উদোগে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিদ্যুৎ উৎপাদনে এগিয়ে আসছে। দেশের প্রথম বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্প বার্জ মাউন্টেন উৎপাদন শুরু করেছে। এই ধরনের প্রকল্প আরো নির্মিত হচ্ছে ।
(খ) পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প (Hydro Electric Project )
পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, এদের মধ্যে শুধু কর্ণফুলী প্রকল্পেই বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে, বাকিগুলোতে এখনোও উৎপাদন শুরু হয়নি। নিম্নে বাংলাদেশের পানি বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো
১। কর্ণফুলী পরিকল্পনা ও এটি একটি বহুমুখী পরিকল্পনা। পাবর্ত্য চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ১৯৬২ সালে এ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। প্রথমে এ প্রকল্পে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৮০,০০০ কিলোওয়াট। পরে এর ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে ১ লক্ষ ১০ হাজার কিলোওয়াট । এই প্রকল্প থেকে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, নোয়াখালী, ঢাকা ও খুলনা অঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। এ প্রকল্পের সাহায্যে ১০ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ ব্যবস্থা, ১২০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং ১৫০ কিলোমিটার এলাকায় নৌচলাচলের সুবিধা প্রদান করা হয়েছে।
২। সাংগু নদীর পরিকল্পনা ও এ পরিকল্পনার আওতায় সাত নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করে প্রায়
৪৫০০০ কিলোওয়াট পানি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
৩। ব্রহ্মপুত্র পরিকল্পনা : ময়মনসিংহ শহরের নিকটে ব্রহ্মপুত্র নদীর উপর বাঁধ নির্মাণ করে বাঁধের উভয় তীরে ১৬৫ কিলোমিটার খাল খনন করে পানি সেচের ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং এই প্রকল্পের মাধ্যমে বছরে ৮০,০০০ কিলোওয়াট পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ।
১০.৪৯ তে শক্তি সম্পদের গুরুত্ব/ভূমিকা
Importance or Role of Power Resources in the Economy of Bangladesh শক্তি সম্পদ যে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । কৃষি উন্নয়ন, শিল্প উন্নয়ন, খনিজ সম্পদ আহরণ, যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সকল কর্মকান্ড শক্তি সম্পদের উপর নির্ভরশীল । বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে শক্তি সম্পদের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো ।
১। কৃষি উন্নয়ন ঃ বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ । শতকরা ৭৫ জন লোক প্রত্যক্ষভাবে কৃষির উপর নির্ভরশীল । কিন্তু আমাদের দেশে একর প্রতি উৎপাদন অনেক কম। কারণ এ দেশের কৃষিতে ব্যবহার করা হয় পুরাতন পদ্ধতির চাষাবাদ। বিদ্যুৎ শক্তি সহজলভ্য হলে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, সেচ ইত্যাদি ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষিতে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব । আর এই জন্য দরকার শক্তি সম্পদের সহজলভ্যতা ।
২। ব্যবসা বাণিজ্য : দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও বিদ্যুৎ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। মোট বিদ্যুৎ শক্তির প্রায় ১৫ ভাগ বাণিজ্যিক প্রয়োজনে ব্যবহার করা হয় ।
৩। শিল্পোন্নয়ন ঃ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দ্রুত শিল্পোন্নয়ন। আর এই শিল্পোন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শক্তি সম্পদের বিশেষ করে বিদ্যুৎ শক্তির। নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন, পুরাতন শিল্পের আধুনিকীকরণ ও সম্প্রসারণ এবং শিল্পকারখানা সচল রাখতে শক্তি সম্পদের বিশেষ প্রয়োজন ।
৪। জ্বালানি : শক্তি সম্পদের একটি বিরাট অংশ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি সম্পদ, যা দেশের মোট বাণিজ্যিক জ্বালানি ব্যবহারের শতকরা প্রায় ৭০% পূরণ করে ।
৫। আবাসিক কাজের ক্ষেত্রে ৪ আবাসিক কাজের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ঘরবাড়ি আলোকিত করা, রান্না, কাপড় ইস্ত্রি করা ইত্যাদি কাজে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। তাছাড়াও টেলিভিশন, রিফ্রিজারেটর, ভিসিআর, ভিসিডি এবং পানি উত্তোলন কাজে বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়।
৬। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও শক্তি সম্পদ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখে। রেডিও, টেলিভিশন, টেলিফোন, টেলেক্স, টেলিপ্রিন্টার, ই-মেইল এই সবই শক্তি সম্পদের উপর নির্ভরশীল
৭। খনিজ সম্পদের ব্যবহার ও খনিজ সম্পদের উত্তোলন ও পরিশোধনের কাজে শক্তি সম্পদ
ব্যবহৃত হয়।
৮। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও শক্তি সম্পদ সহজলভ্য হলে দেশের গ্রামাঞ্চলে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সহজেই গড়ে উঠবে। ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
৯। পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি ঃ বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টিমার, বিমান এসব শক্তি সম্পদের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস চালিত সিএনজি একটি জনপ্রিয় যানবাহন। এই প্রাকৃতিক গ্যাস বাস, ট্রাকেও ব্যবহার করা হচ্ছে ।
১০। কৃষি ও শিল্পের উপাদান : শক্তি সম্পদের মধ্যে বিশেষ করে প্রাকৃতিক গ্যাস কৃষি ও শিল্পের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহৃত হয় । যেমন- সার উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হলো প্রাকৃতিক গ্যাস ।
১১। সরকারি আয়ের উৎস : শক্তি সম্পদ বর্তমানে সরকারি আয়ের উৎস হিসাবে কাজ করে। কয়লা প্রাকৃতিক গ্যাস, বিদ্যুৎ, পেট্রোল ইত্যাদি বিক্রি করে প্রতি বছর সরকার বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করে ।
১২। পল্লী উন্নয়ন : বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন পল্লী উন্নয়ন । কারণ দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ লোক পল্লী এলাকায় বাস করে । আর পল্লী উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শক্তি সম্পদের, বিশেষ করে বিদ্যুৎ সহজলভ্য হলে গ্রাম শহরায়ন হবে এবং পল্লী এলাকার জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে । উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, র উন্নয়নের জন্য শক্তি সম্পদের গুরুত্ব অনেক। অর্থনীতিকে আধুনিকায়ন করার জন্যও শক্তি সম্পদের গুরুত্ব অপরিসীম ।

FOR MORE CLICK HERE
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস মাদার্স পাবলিকেশন্স
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস ১ম পর্ব
আধুনিক ইউরোপের ইতিহাস
আমেরিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস
বাংলাদেশের ইতিহাস মধ্যযুগ
ভারতে মুসলমানদের ইতিহাস
মুঘল রাজবংশের ইতিহাস
সমাজবিজ্ঞান পরিচিতি
ভূগোল ও পরিবেশ পরিচিতি
অনার্স রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম বর্ষ
পৌরনীতি ও সুশাসন
অর্থনীতি
অনার্স ইসলামিক স্টাডিজ প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত
অনার্স দর্শন পরিচিতি প্রথম বর্ষ থেকে চতুর্থ বর্ষ পর্যন্ত

Copyright © Quality Can Do Soft.
Designed and developed by Sohel Rana, Assistant Professor, Kumudini Government College, Tangail. Email: [email protected]